২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

শবেবরাত ও জাতির বরাত

- ফাইল ছবি

বিশেষ করে আমাদের এই উপমহাদেশে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে তিনটি ‘শব’ বা রাত বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো হচ্ছে শবে বরাত, শবে কদর ও শবে মিরাজ। ‘শব’ কথাটির অর্থ রাত এবং এটি ফারসি ভাষার একটি শব্দ। আরবিতে এটাকে বলা হয় ‘লাইলাতুন’। আমাদের দেশে ‘শবে বরাত’ (ভাগ্য রজনী) কথাটা বহুলপ্রচলিত। মাহে রমজানের আগের মাস, শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে পবিত্র ‘শবে বরাত’ অতীত থেকে পালিত হয়ে আসছে। এবারো তা হয়েছে তবে কিছু বিতর্ক ও বিভ্রান্তির মধ্য দিয়ে।

ইসলামের প্রকৃত আদর্শ ও মৌলিক শিক্ষার সাথে যারা পরিচিত তারা মনে করেন- পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে যে বিষয়ের যতটা গুরুত্ব প্রাপ্য, তাকে সে অনুপাতে গুরুত্ব ও মর্যাদা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে শরিয়াহ নির্ধারিত নিয়মের অনুসরণ এবং সর্বপ্রকার বিতণ্ডা ও বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত থাকাই সমীচীন। এবার শবে বরাতের সময় নির্ধারণ নিয়ে যে মতভেদের সূচনা হয়েছিল, তা যাতে ভবিষ্যতে আর না হয় এবং সেই সাথে রোজা ও ঈদ পালনের সময় নিয়েও যেন কোনো সমস্যা দেখা না দেয়, সে ব্যাপারে সরকারসহ সবার সচেতনতা ও সংযম, তথা দায়িত্ববোধ জরুরি। অন্যথায় আমাদের সমাজে অনৈক্য ও অশান্তি বাড়তে পারে এবং ধর্মের মূল চেতনার আবেদন সে অবস্থায় ম্লান হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে যখন ঢাকায় কর্মজীবন শুরু করলাম, তখন শবে বরাতের এক নতুন ও বিশেষ রূপের সাথে পরিচয় ঘটে। এর কারণ, ঢাকা নগরীর ঐতিহ্য তথা এর আদিবাসিন্দাদের জনজীবন ও কৃষ্টি-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ‘সুবরাত’ বা শবে বরাত একটা বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। পুরান ঢাকা ছাড়িয়ে এর ব্যাপক প্রভাব দেখা যায় নতুন ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়ও। সেই আশির দশকে নতুন ঢাকার একটা এলাকায় থাকার সময়ে দেখলাম শবে বরাতের নানান আয়োজন। বেকারি ও কনফেকশনারি দোকানগুলো বিশেষ খাবারের অর্ডার নিয়ে থাকে। দোকানের সামনে ‘সুবরাতি রুটি’ অর্থাৎ শবেবরাতের বিশেষ ধরনের বনরুটি সাজিয়ে বসতেও দেখা যায়।

কাচের টুকরা বসানো এই রুটি দেখতে আকর্ষণীয়। তবে অভ্যস্ত না হলে কেউ কেউ এটা কিনে খেতে গিয়ে কিছু অসুবিধা বোধ করতে পারেন। মিষ্টি স্বাদের এই খাবার নানা প্রাণীর আকৃতির হয়ে থাকে। অনেকে শবে বরাত উপলক্ষে হালুয়ার অর্ডারও দেন। মফস্বলে শৈশবে রুটি-হালুয়া বানিয়ে গরিবদের মাঝে বিলি করতে দেখেছি। শবে বরাতে ঢাকার মতো বড় শহরে সাধারণত নিজেরা খাওয়ার জন্য বরফি-হালুয়া, রুটি-পরোটা ইত্যাদি তৈরি করতে দেখা যায়। এখন দেশে দারিদ্র্য কতটা কমেছে জানি না; তবে শবে বরাতে ভিক্ষুকদের সারি বেঁধে বাসাবাড়িতে আসা অনেক কমে গেছে। ঢাকায় এসে শবেবরাতে বিশেষ করে বুটের ডালের বরফি বানানোর হিড়িক দেখে আসছি।

তেমনি আজিমপুর গোরস্থানে কবর জিয়ারতের ভিড়ের সাথে ‘ফকিরের মেলা’ও পরিলক্ষিত হয়েছে। অনেক বছর আগে একবার আজিমপুর গোরস্থানে গিয়েছিলাম শবে বরাতে। সেখানে দেখি ‘এলাহি কাণ্ড’- শত শত মানুষের সমাগম। ‘বিশিষ্ট’ ব্যক্তিদের কারো কারো কবরে জ্বলছিল মোমবাতি। অথচ সেখানে জিয়ারত কিংবা তেলাওয়াত করতে কাউকে দেখা গেল না। সবচেয়ে স্মরণীয় হলো, সে রাতে গোরস্থানের গেটে দেশের বিভিন্ন স্থানের ভিক্ষুকদের ভিড়। ঢাকা থেকে দূরে অবস্থিত, আমাদের এলাকার পরিচিত এক ভিক্ষুককেও দেখলাম। আজিমপুরে বাড়তি রোজগারের জন্য এসেছে। জানি না, সে বছর শবে বরাতে এই বিরাট গোরস্থানে তার বরাত কেমন খুলেছিল। হয়তো কিছু ধান্ধাবাজ-অসৎ লোককে কিছু টাকার বিনিময়ে ‘ম্যানেজ’ করে ফকিররা এ ধরনের বড় গোরস্থানের গেটে জায়গা পেয়ে থাকে।

শবে বরাতে সবার বরাত খোলে না। এটা শুধু কথার কথা নয়। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘খাঁটি মনে তাওবা না করা পর্যন্ত কয়েক ধরনের লোককে শবে বরাতে আল্লাহ তায়ালা মাফ করবেন না। এক. মুশরিক অর্থাৎ যারা এক আল্লাহর সাথে শিরক করে। দুই. অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যাকারী। তিন. মনে হিংসাবিদ্বেষ পোষণকারী। চার. মা-বাবার অবাধ্য সন্তান। পাঁচ. রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী। ছয়. ব্যভিচারী নারী-পুরুষ। সাত. ডাকাত-দুর্বৃত্ত। আট. পায়ের টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী পুরুষ এবং নয়. মদপানে আসক্ত ব্যক্তি (মুসনাদে আহমদ ও শোয়াবুল ঈমান)।

বর্তমান যুগে মানুষ শিরক-বিদয়াত, হত্যা, ধর্ষণ, হিংসা-হানাহানি, স্বার্থসঙ্কীর্ণতা, ভোগবিলাস, নৈতিক অধঃপতন, মাদকাসক্তিসহ নানা অপরাধে নিমজ্জিত। শবে বরাতে তাদের ক’জনের বোধোদয় হচ্ছে?

ছোটবেলায় দেখতাম, প্রধানত গরিব-মিসকিনের জন্যই শবে বরাতের খাবার তৈরি করা হতো। দীন-দরিদ্রদের অনেকে এ দিনের রুটি বেঁচে গেলে শুকিয়ে রাখত পরে পানিতে ভিজিয়ে খেত ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য। আর আজকাল বাজারে রকমারি কেনাকাটার তোড়জোড় দেখে ধারণা হতে পারে, শবে বরাত হলো শুধু ‘নিজের বরাত’ ফেরানো উপলক্ষ। তা-ও এমন ভ্রান্ত বিশ্বাসের ভিত্তিতে যে, ‘এ দিন ভালো খেলে সারা বছর ভালো খাওয়া সম্ভব হবে।’ তাই ‘নিসফু শাবান’ বা শাবান মাসের মধ্যরজনীতে খানাপিনার এত ধুমধাড়াক্কা। এ দিন নির্দিষ্ট উপকরণ দিয়ে নির্দিষ্ট আইটেমের খাবার বানাতে হবে- এমন ধারণার ভিত্তি নেই।

তবুও তা চলছে ঘরে ঘরে। মহানগরীর ফ্ল্যাট বিল্ডিংগুলোতে একই ভবনের এক বাসা থেকে আরেক বাসায় উপাদেয় খাবার পাঠানো হয়। তবে ফকির-মিসকিনের জন্য তাতে বরাদ্দ থাকেই না বলা যায়। আর অমুক ডাল দিয়ে তমুক খাবার বানানোর যে রেওয়াজ, এর পেছনে অতীতে বিশেষ কোনো মহলের স্বার্থ জড়িত থাকা অসম্ভব নয়। অনেকেরই জানা আছে, এক সময় হাদিসের নামে বলা হতো, ‘আল বাজানজানু শিফাউন লিকুল্লি দাওয়া’। অর্থাৎ ‘বেগুন সকল রোগের ওষুধ।’ কথাটা অবাস্তব ও কাণ্ডজ্ঞানবিরোধী। বহুদিন পরে গবেষকেরা উদঘাটন করলেন, এটা একটা জাল হাদিস। ফলে আর এ ধরনের উদ্ভট কথা মহানবী সা:-এর নামে চালিয়ে দেয়া সম্ভব হলো না।

পবিত্র শবে বরাত আসে পবিত্র মাহে রমজানের প্রস্তুতির তাগিদ নিয়ে। আমাদের ক’জনই বা এটা উপলব্ধি করে সে মোতাবেক নিজেকে তৈরি করতে প্রয়াস পাই? এ রাতে ইবাদত-বন্দেগি করলে বরাত ভালো হবে, অর্থাৎ সৌভাগ্যের দুয়ার খুলে যাবে- এমন একটা বিশ্বাসে অনেকেই মসজিদে থাকেন সন্ধ্যারাত থেকে ভোর অবধি। কিন্তু এরপর তেমন ইবাদত করা দূরের কথা, আমাদের বেশির ভাগের আমল বা কাজকর্ম দ্বীনি ঈমান অর্থাৎ ইসলামের শিক্ষা ও নির্দেশ অনুসারে হয় না। এ কারণে বিশেষত শবে বরাতে যতই নফল নামাজ, জিকির-আজকার, ওয়াজ নসিহত হোক, ব্যক্তি থেকে জাতি- কোনো পর্যায়েই বরাত ফেরে না এবং আমরা সব পরিসরেই দুর্ভাগ্যের কাদায় হাবুডুবু খেতে থাকি।

শবে বরাতের একটা বড় গুরুত্ব এটাই যে, মাহে রমজানের দুই সপ্তাহ আগের এ রাত আমাদেরকে কুরআন নাজিলের মহান মাসটির মর্যাদা ও করণীয় সম্পর্কে সচেতন ও সক্রিয় করে তুলবে। কার্যত তা দেখা যায় না। রাতভর মসজিদে জেগে থেকে, কোনো মতে ফজরের জামাত শেষ করে বেরিয়ে এসেই দলে দলে ধূমপান ও চা পানসহ আড্ডায় মেতে ওঠে কিশোর-তরুণদের বিরাট অংশ। এবারো এ দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়েছে। অথচ শবে বরাতের বড় কাজ ব্যক্তিগত ইবাদত-বন্দেগি। এটা করার জন্য মসজিদে আসা বাধ্যতামূলক নয়। এ রাতে কবর জিয়ারত করা খুবই সওয়াবের কাজ। অথচ এ সুযোগে দেশের বড় গোরস্থানগুলোতে ভিক্ষাবাণিজ্যের চিত্র চোখে পড়ে বৈকি।

শবে বরাত মানে হালুয়া-রুটি, এই ভুল ধারণা আছে অনেকেরই। এ রাতের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ইবাদতের বিধান যেখানে নেই, নির্দিষ্ট কোনো খাবারের নির্দেশ তো থাকার প্রশ্নই ওঠে না। ‘হালুয়া-রুটি’র প্রথা কিভাবে প্রচলিত হয়েছে, সে প্রসঙ্গে এবার একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় লেখা হয়েছে, ‘হালুয়া-রুটি তৈরি ও বিতরণ শবে বরাত উদযাপনের অংশে পরিণত হয়েছে। ...এই রাতে দলবদ্ধ হয়ে মসজিদে ইবাদত করার পাশাপাশি ঘরে ঘরে হালুয়া-রুটির বিশেষ আয়োজন থাকে। মুসলিম পরিবারগুলো নিজেদের মধ্যে হালুয়া-রুটি বিতরণ করে। তবে ইসলামী শরিয়তে এর কোনো ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই ইবাদতের অংশ হিসেবে হালুয়া-রুটি তৈরি ও বিতরণ করাও উচিত হবে না। শবে বরাতের সাথে হালুয়ার সংযোগ স্থাপন করেন মূলত ঢাকার নবাবরা। ঢাকায় নিজেদের আধিপত্য প্রকাশের জন্য নবাবরা ইসলামের বিভিন্ন দিবসকে জমকালো আয়োজনে উদযাপন করতেন।’ পত্রিকাটি আরো লিখেছে, ‘এখন অনেক মুসলিম জানেন যে, এটা ধর্মের অংশ নয়; হালুয়া-রুটি বিতরণ করা ইবাদত নয় বরং সংস্কৃতির অংশ।’

প্রতি বছরের ঈদের চাঁদ দেখা নিয়ে বিতর্ক ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে দেখা যায়। সাধারণত আমাদের দেশে মক্কা-মদিনার দেশের চেয়ে এক দিন (অনেক সময়ে দুই দিন) পরে ঈদ উদযাপিত হয়ে থাকে। জনগণের বেশির ভাগই এটাকে অনেকটা স্বাভাবিক বলে গ্রহণ করেছেন এবং তারা এ ব্যাপারে নীরবতা অবলম্বন করে আসছেন। তবে ‘সারা বিশ্বে একই দিন রোজা রাখা ও ঈদ উদযাপন’ করার পক্ষে অনেকেই মত দিচ্ছেন। তাদের প্রচারণা দিন দিন বাড়ছে বলে প্রতীয়মান হয়। এবার শবে বরাতের তারিখ নিয়ে যে মতভেদ ও বিতর্ক দেখা গেল, তাতে বিশ্বে একই দিনে ইসলামী দিবসগুলো পালনের বিষয়ে তৎপরতা ও বিভ্রান্তি দুটোই বৃদ্ধি পেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে এ বিষয়ে বাস্তবসম্মত অভিমত ও কার্যকর ঐকমত্যই সময়ের দাবি। অন্যথায় মুসলিম সমাজে অনৈক্য, বিশৃঙ্খলা ও বিভ্রান্তি বাড়তে পারে যা মোটেও কাম্য ও কল্যাণকর নয়।

এবার বাংলাদেশে শবে বরাতের তারিখ নির্ধারণ নিয়ে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা অনাকাক্সিক্ষত ও অপ্রত্যাশিত। জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি সরকারের উদ্যোগে এবং তার মনোনীত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত। এই কমিটি নির্ধারিত নিয়ম মোতাবেক, হিজরি বর্ষপঞ্জির মাসগুলোর চাঁদ দেশে দেখা গেছে কি না, সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। এবারো তারা শাবান মাসের চাঁদ দেখার বিষয়ে নিয়মিত ও পূর্বনির্ধারিত বৈঠকে বসেছিলেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সূত্রে এরপর জানানো হয়, ‘নিয়মমাফিক প্রাপ্ত তথ্যাদির ভিত্তিতে আলোচনা-পর্যালোচনা ক্রমে স্থির হয়েছে, ২১ এপ্রিল দিবাগত রাতে ১৪ শাবান বা পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে।’ কিন্তু শাবানের চাঁদ দেখার ব্যাপারে জোরালো ভিন্নমত প্রকাশ করা হয় একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে। স্বল্পপরিচিত সংগঠনটির পরিচয় কী অথবা কারা এর নেতৃত্বে রয়েছেন, তা জানা যায়নি।

তাদের আপত্তির বর্ণিত কারণ হলো, সরকারি চাঁদ দেখা কমিটির নির্ধারিত বৈঠক চলাকালে তারা নিয়মমাফিক অবগত করেছিলেন যে, সেদিন মানে ৬ এপ্রিল কয়েকটি জেলায় শাবানের চাঁদ দেখা গেছে। তাই ২১ তারিখ নয়, ২০ তারিখ দিবাগত রাতই শবে বরাত।’ কোন কোন জেলায় চাঁদ দেখা গেছে এবং কারা দেখেছেন, এসব তথ্য ও সুনির্দিষ্টভাবে জানানো সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ তাকে গুরুত্ব না দিয়ে ২১ এপ্রিল দিবাগত রাতে শবে বরাত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে এ নিয়ে ওই সংগঠন সংবাদ সম্মেলনও করেছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, সরকার এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে ১৭ এপ্রিল আবার বৈঠকে বসার কথা জানায়। ইতোমধ্যে চলমান এইচএসসি পরীক্ষার সময়সূচিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে শবে বরাতের ঘোষিত তারিখের সাথে সামঞ্জস্য রেখে। অনেকে শবে বরাতের ছুটিতে বাড়ি যাবেন বলে স্থির করেছিলেন। তারা মনে করেছিলেন ২০ তারিখ রাতে শবে বরাত; অতএব ১৯ ও ২০ এপ্রিলের সাপ্তাহিক ছুটির সাথে ২১ এপ্রিল শবে বরাতের ছুটি যোগ হলে পর পর তিন দিনের অবকাশ মিলবে। কিন্তু সরকার প্রথমে ২২ এপ্রিল শবে বরাতের ছুটি ঘোষণা করে, পরে আবার ১৭ তারিখে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানায়। এতে যারা বাড়ি যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন, তারা যানবাহনের টিকিট কাটাসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির ব্যাপারে বিভ্রান্তির শিকার হলেন।

১৭ তারিখের বৈঠকে চাঁদ দেখা কমিটি আগের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে এবং কর্তৃপক্ষ জানায়, ২১ এপ্রিল দিবাগত রাতই পবিত্র শবে বরাত। কিন্তু ‘মজলিসে রুইয়াতুল হিলাল’ বা চাঁদ দেখার সংগঠন নামে যারা প্রথমেই আপত্তি করেছিলেন, তারা এবার অভিযোগ করেন, ‘১৭ এপ্রিলের বৈঠকের খবর তাদের দেয়া হয় মাত্র আগের রাতে। তবুও প্রয়োজনীয় সাক্ষ্যপ্রমাণসহ তারা ঢাকায় এসে নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হন। তবে তাদের অপরাহ্ণ পর্যন্ত বাইরে অপেক্ষমাণ রাখা হয়। তারা লিখিত বক্তব্য পেশ করা সত্ত্বেও বৈঠকে তা উপেক্ষিত হয়েছে।’ অপর দিকে সরকারি সূত্রে বলা হয়, এই সংগঠনের লোকেরা ১৭ তারিখের বৈঠকে অংশ নেয়ার ব্যাপারে শর্ত দিয়েছিলেন যা গ্রহণযোগ্য নয়।

অপর দিকে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর একটি বক্তব্য ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি ১৩ এপ্রিল চাঁদ দেখা কমিটির বিশেষ সভার পর বলেন, সংশ্লিষ্ট সবার মতের ভিত্তিতেই শবে বরাতের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু এর এক দিন পর এ ব্যাপারে আপত্তি করা হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য আমাদের কাছে ভালো মনে হয়নি। তবুও কোনো বিভ্রান্তি যেন না থাকে, এজন্য তাদের নিয়েই বৈঠক করলাম।’ কিন্তু মন্ত্রীর এ কথায় বিভ্রান্তির অবসান হয়নি। শবে বরাত, রোজা, ঈদ প্রভৃতি নিয়ে শুধু ইসলাম নির্দেশিত পন্থায় যথাযথ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেই সবাই প্রত্যাশা করেন।

পাদটীকা : মিডিয়ায় দায়িত্বশীল লোকজনের যদি পর্যাপ্ত জ্ঞানের ঘাটতি থাকে, তাহলে মিডিয়ার দায়িত্ব পালন কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। বরং তা ক্ষেত্রবিশেষে বিভ্রান্তিকর ও হাস্যস্পদ হয়ে ওঠে। একটি উদাহরণ : এবার পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে একটি প্রভাবশালী টিভি চ্যানেলে বারবার বলা হয়েছে এবং পর্দায় বারবার দেখানো হলো ‘নফল ইবাদত ও জিকির-আসগারের মধ্য দিয়ে লাইলাতুল বরাত পালিত হয়েছে।’ এখানে দু’টি ভুল লক্ষণীয়। জিকিরের বহুবচন ‘আসগার’ নয়, ‘আজকার’ এবং উপলক্ষ ‘লাইলাতুল বরাত’ নয়, ‘শবে বরাত’। লাইলাতুন (রাত) শব্দটি আরবি এবং ‘বরাত’ (ভাগ্য) ফারসি শব্দ। এ দুটো এক করার অর্থ, জগাখিচুড়ি বানানো।


আরো সংবাদ



premium cement