২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মানুষ খুনের ব্যাপকতা ও করণীয়

- ফাইল ছবি

খুন সবচেয়ে বড় অপরাধগুলোর একটি। আল কুরআনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, যে কেউ কোনো ঈমানদার ব্যক্তিকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করবে, তার শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম, সেখানে সে চিরদিন থাকবে, আল্লাহ তায়ালা তার ওপর ভীষণ অসন্তুষ্ট হন এবং তার ওপর অভিশাপ দেন, তিনি তার জন্য যন্ত্রণাদায়ক আজাব প্রস্তুত করে রেখেছেন (সূরা নিসা ৯৩ আয়াত)। অমুসলিম ব্যক্তিকে হত্যা করলেও একই গোনাহ ও শাস্তি হবে। ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করলে দুনিয়াতে কী শাস্তি হবে, এ সম্পর্কে কুরআন বলেছে, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য নরহত্যার ক্ষেত্রে (ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য) কিসাসের বিধান (হত্যার বদলে হত্যার বিধান) ফরজ করে দেয়া হয়েছে। কোনো স্বাধীন ব্যক্তি হত্যা করলে তাকেই হত্যা করা হবে। কোনো দাস হত্যা করলে তাকেই হত্যা করা হবে। কোনো নারী হত্যা করলে তাকেই হত্যা করা হবে। অবশ্য অপরাধীকে যদি নিহত ব্যক্তির পরিবারের লোকেরা ক্ষমা করে দেয় তাহলে তার শাস্তি হলো, নিহত ব্যক্তির পরিবারকে রক্তমূল্য দিয়ে দিতে হবে। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুগ্রহ এবং দণ্ড হ্রাস (সূরা বাকারা ১৭৮ আয়াত)।

কুরআনে আরেক ধরনের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে বলা হয়েছে। তা হচ্ছে, কতলে খাতা (অনিচ্ছাকৃত হত্যা হয়ে যাওয়া)। যেমন- ছাদ থেকে পড়ে কেউ নিহত হলো, গাড়ির নিচে পড়ে কেউ নিহত হলো ইত্যাদি। এ সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে, কোনো ঈমানদার ব্যক্তির কাজ নয় যে, অন্য কোনো ঈমানদার ব্যক্তিকে হত্যা করবে, তবে ভুলবশত তা হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে একজন দাসকে মুক্ত করে দিতে হবে এবং নিহত ব্যক্তির পরিবারকে রক্তমূল্য দিতে হবে (দিয়াত)। তবে নিহত ব্যক্তির পরিবার রক্তমূল্য মাফ করে দিতে পারে (সূরা নিসা ৯২ আয়াত)। উল্লেখ্য, যে দাসের কথা বলা হয়েছে সে যুগের পরিপ্রেক্ষিতে তখন দাস প্রথা ছিল। ইসলাম দাস মুক্তির মাধ্যমে দ্রুত এই প্রথা তুলে দিয়েছিল। এখন আর নতুন করে কাউকে দাস করার কোনো অবকাশ নেই (সূরা মুহাম্মদ ১-৪ আয়াত)। আরো উল্লেখ্য, অমুসলিমদের ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য। কারণ পরে বলা হয়েছে, নিহত ব্যক্তি অমুসলিম হলেও তাকে হত্যার দায়ে রক্তমূল্য দিতে হবে।

কুরআনে হত্যাকে দুই ভাগেই ভাগ করা হয়েছে। কিন্তু ফিকাহের গ্রন্থাবলিতে আরো ব্যাপকভাবে হত্যার শ্রেণীকরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এসব বিধান সম্পর্কে জানেন না। হত্যাকারী সুনিশ্চিতভাবে জাহান্নামি। এ কথা জানা থাকলে বাংলাদেশে এত হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে না। বাংলাদেশে খুনের ভয়াবহতা ও ব্যাপকতা অকল্পনীয়। কথায় কথায় মানুষ খুন হয়ে যাচ্ছে। দুনিয়াতে শাস্তি হয়তো বা হয় কিংবা হয় না। কিন্তু আখেরাতে এ জন্য শাস্তি সুনিশ্চিত জাহান্নাম। এ বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচার করা দরকার। কিন্তু আমাদের দেশের ইমাম ও আলেমরা তাদের খুতবাতে, ওয়াজ মাহফিলে বিস্তারিতভাবে এটা মানুষকে বুঝাতে সক্ষম হননি।

এত খুনের তাণ্ডব থেকে বাংলাদেশকে বের করে আনার জন্য যা করণীয় তার প্রথমটা হচ্ছে- কুরআনের উল্লিখিত শাস্তিগুলো ব্যাপকভাবে প্রচার করা। এটা এক দিকে প্রচার করতে পারেন আলেম এবং ইমামরা; অন্য দিকে প্রাইমারি স্কুল, হাইস্কুল এবং মাদরাসার শিক্ষকেরা অল্প বয়সের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এ কথা বদ্ধমূল করে দিতে পারেন যে, খুনের শাস্তি হচ্ছে আখেরাতে সুনিশ্চিত জাহান্নাম। শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল ও মাদরাসার পাঠ্যবইতে নিজেরা উদ্যোগী হয়ে খুনের ভয়াবহ শাস্তির ব্যাপারটি অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। এটা গেল এক দিক। অন্য দিকে, পুলিশ কর্তৃপক্ষ খুনের মামলার দ্রুত তদন্ত করে চার্জশিট দেয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে দেরি করা মূলত খুনকে উৎসাহিত করার শামিল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায়, ১০ কিংবা ১৫ বছরেও চার্জশিট দেয়া হচ্ছে না। পুলিশ বাহিনীকে এ ব্যাপারে অনেক বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। কোর্টও খুনের মামলাগুলো দ্রুত নিরসন করার চেষ্টা করবেন। বারবার মামলার তারিখ দেবেন না। তারিখ দেয়ার প্রয়োজন হলে যত কম দেয়া যায়, তাই দেবেন। আমরা আশা করব, দেশ থেকে খুনের ভয়াবহতা নিরসন করার জন্য আলেম সমাজ, পুলিশ বাহিনী ও আদালত দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন।

লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার


আরো সংবাদ



premium cement
অবৈধ সম্পদ : এস কে সিনহার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ২৬ জুন টি-টোয়েন্টি র‌্যাংকিংয়ে চাপম্যান-আফ্রিদির উন্নতি থানচিতে ট্রাকে দুর্বৃত্তদের গুলি চীনের আনহুই প্রদেশের সাথে ডিএনসিসি’র সমঝোতা স্মারক সই আ’লীগের ২ গ্রুপের সংঘর্ষ : ২ শতাধিক ককটেল বিষ্ফোরণ, আহত ৫ রাঙ্গামাটিতে ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে নিহত ৬, আহত ৮ প্রতিবাদ সমাবেশকারীদের গ্রেফতারের নিন্দা জামায়াতের ‘সংসদ সদস্যরা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না’ ফরিদপুরে বেইলি ব্রিজ অপসারণ করে স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন ঈশ্বরদীতে তাপমাত্রা ৪১.২ ডিগ্রি বাংলাদেশকে এভিয়েশন হাব হিসেবে গড়তে সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাজ্য

সকল