২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দারিদ্র্যবিমোচন সম্পর্কে ড. কারযাভী

ড. ইউসুফ আল কারযাভী - ছবি : সংগৃহীত

আপনারা অনেকে ড. ইউসুফ আল কারযাভীর নাম জানেন এবং তার বই পড়েছেন। কারো কারো মতে, তিনি বর্তমান দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ আলেম। তার অনেক গুরুত্বপূর্ণ বই রয়েছে। তার মধ্যে তিনটি বইয়ের নাম উল্লেখ করছি : জাকাতের বিধান, ইসলামের হালাল হারামের বিধান ও জেহাদের ফিকাহ। তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বই হচ্ছে ‘দারিদ্র্যবিমোচনে ইসলাম (আল মাসালাতুল ফাকর ওয়া ইয়াযাতুহা ফিল ইসলাম)। এই বইয়ের সারসংক্ষেপ পাঠকদের খেদমতে উল্লেখ করছি।

দারিদ্র্যের সমস্যা সবার। পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র কেউ এর সমাধান দিতে পারেনি। ইসলামের ইতিহাস থেকে দেখা যায়, প্রথম শতকেই ইসলাম এর সমাধান দিয়েছে। তাই এই সমস্যার ইসলাম কিভাবে সমাধান করেছে তা সবার জানা প্রয়োজন। এই বইয়ে উস্তাদ ইউসুফ কারযাভী দারিদ্র্য সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদের বিবরণ দিয়েছেন।

কোনো কোনো ধর্ম বা ধর্মীয় গোষ্ঠীর মতে দারিদ্র্য একটি আশীর্বাদ। ড. ইউসুফ এ ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জাবারিয়া চিন্তাবিদেরা মনে করেন, দারিদ্র্য বা সচ্ছছলতা আল্লাহর দান; তাই এর প্রতিরোধ করা যায় না। তিনি এই ধারণাও প্রত্যাখ্যান করে বলেন, আল্লাহ আমাদের ব্যবসা বা কাজ করার জন্য বলেছেন এবং নিজের অবস্থার উন্নয়ন করতে বলেছেন।

পুঁজিবাদীরা মনে করেন, দারিদ্র্য হলো ব্যক্তির দোষের কারণে সৃষ্ট। কারযাভী এই মতও অস্বীকার করেন এবং বলেন, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই দারিদ্র্যের জন্ম দেয়। সমাজতন্ত্রীদের মতবাদ, বিপ্লবের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচনের ধারণাও তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।

অতঃপর কারযাভী দারিদ্র্যের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। ইসলাম এই ধারণা অনুমোদন করে না যে, দারিদ্র্য একটি আশীর্বাদ। তিনি বলেন, ইসলাম মনে করে দারিদ্র্য ঈমানকে দুর্বল করে দেয় এবং নৈতিক আচরণ, পারিবারিক বন্ধন ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকে বিধ্বস্ত করে। এরপর তিনি ইসলামের কর্মকৌশল নিয়ে আলোচনা করেছেন, যার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব।
এর প্রথম পদক্ষেপ হলো কাজ করা, কর্ম খুঁজে নেয়া, নিজের মাঠে কাজ করা ও আত্মকর্মসংস্থান করা। রাষ্ট্র উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির মাধমে এ ব্যাপারে সুযোগ বাড়াতে পারে। ইসলামে দ্বিতীয় যে সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে তা হলো, নিকটাত্মীয়রা তাদের প্রতিবন্ধী বা অস্থায়ীভাবে বেকার হয়ে পড়া আত্মীয়দের দেখাশোনা করবে। তৃতীয় পর্যায়ের পদক্ষেপ হচ্ছে- রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক পর্যায়ে জাকাত ব্যবস্থাপনা করা হবে এবং জাকাতের মাধ্যমে জনগণকে আত্মকর্মসংস্থানের উপযুক্ত করে তোলা হবে। জাকাত দেয়ার সর্বোত্তম পন্থা হলো কাউকে এমনভাবে সক্ষম করে তোলা যেন সে আর কখনো জাকাতের জন্য আবেদন জানাতে না আসে। পৃথিবীর সর্বপ্রথম সামাজিক ইন্স্যুরেন্স স্কিম হচ্ছে, জাকাত। চতুর্থ কৌশল হলো রাষ্ট্র তার রাজস্ব আয় থেকে বাদবাকি দারিদ্র্যবিমোচনের জন্য যা অর্থায়ন প্রয়োজন তা করবে। পঞ্চমত, স্বেচ্ছাপ্রণোদিত সাদাকাহ ও ওয়াক্ফের আয় থেকে এই কাজে ব্যবহার করা হবে।

ড. কারযাভী এরপর ইসলামের প্রাথমিক ইতিহাসে ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাদির ফলে কিভাবে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জিত হয়েছিল, তার বর্ণনা দিয়েছেন। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর রা:-এ আমলে ইয়েমেন থেকে দারিদ্র্য পুরোপুরি নির্মূল হয়ে গিয়েছিল, যার ফলে ইয়েমেনের গভর্নর অতিরিক্ত জাকাত মদিনায় ফেরত পাঠিয়েছিলেন। উমাইয়া খলিফা ওমর ইবনে আবদুল আযিযের আমলে আফ্রিকার মুসলিম এলাকায় এবং কার্যত পুরো মুসলিম দুনিয়া থেকে দারিদ্র্য নির্বাসিত হয়ে গিয়েছিল। ওই সময় এমন কাউকে পাওয়া যায়নি যে জাকাতের বা দানের প্রত্যাশী ছিল।

আশা করি, বাংলাদেশের সব ইসলামী সংগঠন দারিদ্র্যবিমোচনে ড. ইউসুফ আল কারযাভীর প্রদর্শিত পথে সাধ্যমতো কাজ করবে।হ

লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার


আরো সংবাদ



premium cement