২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চিকিৎসার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ অসহায়

-

একটি ঘটনার উল্লেখ করে শুরু করছি। একজন মধ্যবিত্ত ব্যক্তি একটি ওষুধ কোম্পানিতে মধ্য পর্যায়ে চাকরি করেন। তার স্ত্রীর ঘাড়ে একটি টিউমার হয়েছিল। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হলেন। তার চিকিৎসা খরচ, ভাড়া এবং ওষুধ খরচ বাবদ প্রায় তিন লাখ টাকা প্রয়োজন। একজন নিউরো সার্জন ঘাড়ের এই টিউমারের অপারেশন করেন। তিনি অপারেশন ফি দাবি করেন দুই লাখ টাকা। শেষ পর্যন্ত দেড় লাখ টাকায় রফা হয়। এই সার্জন তার অপারেশন ফি হাসপাতালের মাধ্যমে নেননি, সরাসরি নিয়েছেন। অর্থাৎ এই টাকার ওপর তিনি ইনকাম ট্যাক্স দেবেন না। এই ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার জন্য হাসপাতালের মাধ্যমে না নিয়ে সরাসরি নিয়েছেন, যার কোনো হিসাব কোথাও থাকবে না। এভাবেই অনেকে ইনকাম ট্যাক্স ফাঁকি দিচ্ছেন। এর জন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট বিধি তৈরি করা, যেন ডাক্তার হাসপাতালে যেসব অপারেশন করেন, তার ফি হাসপাতালের মাধ্যমে নেন, যাতে হিসাব রক্ষিত থাকে। তাহলে তারা ইনকাম ট্যাক্স দিতে বাধ্য হবেন। বিষয়টি এক দিকে আর্থিক অন্য দিকে নৈতিকও বটে।

ওই ভদ্রলোকের এত টাকা দেয়ার ক্ষমতা ছিল না। তিনি বেশ কিছু উৎস থেকে ধার-কর্জ করে হাসপাতালের বিল এবং অপারেশন ফি শোধ করেন।

দু’টি বিষয় খুব প্রয়োজন। একটি হচ্ছে সরকারি চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধি করা। এতে সরকারি হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসাসেবা পাওয়া যাবে এবং নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত লোকেরা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন। কয়েকটি ব্যয়বহুল রোগের চিকিৎসার সুবিধা সরকারি হাসপাতালে বাড়াতে হবে। যেমন ক্যান্সার, কিডনি ডায়ালাইসিস, হার্টের বাইপাস সার্জারি, হার্টের রিং পরানো ইত্যাদি।

এসব চিকিৎসা দেশের হাসপাতালে অপ্রতুল হওয়ায় সাধারণ জনগণ প্রাইভেট বা বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধ্য হচ্ছেন এবং অনেক কষ্ট করে চিকিৎসা ব্যয় মেটাচ্ছেন। এমনকি অনেকে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। আগে লিখেছি যে, এসব ব্যয়বহুল রোগের চিকিৎসা খরচ তা সরকারি হাসপাতালেই হোক আর প্রাইভেট হাসপাতালে, এটা সরকারের বহন করা উচিত। এ ক্ষেত্রে প্রতি বছর সরকারের ৫০০ কোটি টাকার বেশি খরচ করতে হবে না। বাংলাদেশের বাজেট প্রায় পাঁচ লাখ কোটি টাকা। এ থেকে ৫০ কোটি টাকা বের করা বড় ব্যাপার নয়।

এবার বলছি সার্জনদের অপারেশন ফি সম্পর্কে। এই ফি এত বেশি হওয়ার, কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই; বিশেষ করে আমাদের মতো দেশে। সুতরাং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অপারেশন ফি নির্ধারণে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে শতকরা ১০ ভাগ রোগী, যারা বেশি দরিদ্র, তাদের চিকিৎসা ফ্রি করা উচিত, অর্থাৎ বিনা মূল্যে করা উচিত। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অনেক ঝামেলার ব্যাপার। আউটডোরের মাধ্যমে গেলে ভর্তি হতে অনেক সময় লাগে। আবার ইমার্জেন্সিতে সব রোগী যেতে পারে না। তাদের রোগের ধরন ইমার্জেন্সি নয়। এ জন্য খুব প্রয়োজন হলো, প্রত্যেক সরকারি হাসপাতালে কিছু কাউন্টার চালু করা, যার মাধ্যমে ৫০ শতাংশ রোগী ভর্তি হতে পারবেন, তাদের কেবল কোনো ডাক্তারের ভর্তি হওয়ার সুপারিশ দেখাতে হবে। অন্য ৫০ শতাংশ রোগী আউটডোরের বা ইমার্জেন্সির মাধ্যমে ভর্তি হতে পারবেন। কিন্তু আমাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শগুলো দেখার জন্য হয়তো মন্ত্রণালয়ে কেউ নেই। এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়া খুব দরকার।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই, কারণ কী কী কারণে বাংলাদেশের মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে, কিছু রোগের চিকিৎসা ব্যয়। এ ক্ষেত্রে প্রস্তাব হলো, সরকারি হাসপাতালে এসব রোগের চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধি করা এবং সামগ্রিকভাবে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ বাড়ানো। এ ছাড়া মানুষ নিঃস্ব হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে নদীভাঙন। এই ভাঙনগ্রস্ত এলাকাগুলো চিহ্নিত। সরকারের একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকতে হবে, যেন যখনই যেখানে ভাঙন হয় সেখানে সাথে সাথে ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের পুনর্বাসন করা হবে। এ দিকে, মামলার কারণে অসংখ্য মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে। বেশির ভাগ মামলাই ভিত্তিহীন। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইজিপিকে অনুরোধ করব, এ ধরনের মামলার ক্ষেত্রে তারা যেন আরো তদারকি করেন, যেন অহেতুক মামলা না হয় এবং লিগ্যাল এইড ফান্ড সরকারি উদ্যোগে চালু করা হয়। আমরা আশা করি, এই বিষয়গুলো নিয়ে কর্তৃপক্ষ এবং এনজিও নেতারা ভেবে দেখবেন।

লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার


আরো সংবাদ



premium cement
‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ সংবিধান বিরোধী নয় ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মিজানুরের ইন্তেকাল থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সাথেপ্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ গ্যাস বিতরণে সিস্টেম লস ২২ শতাংশ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশে নেমে এসেছে : নসরুল হামিদ গণকবরে প্রিয়জনদের খোঁজ কক্সবাজারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, স্বজনদের হাসপাতাল ঘেরাও বঙ্গোপসাগরে ১২ নাবিকসহ কার্গো জাহাজডুবি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি রাজশাহীতে টানা তাপদাহ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা শরীয়তপুরে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ জামায়াতের

সকল