২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মিথ্যাচারের স্বরূপ প্রকাশ

-

আওয়ামী লীগ যখন কোনো কিছু বলে, তখন দিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য হয়ে বলে। অগ্র-পশ্চাৎ, ডান-বাম বিবেচনা করে বলে না। আর একটা কথা শতকণ্ঠে গোয়েবলসীয় কায়দায় এমনভাবে বলতে থাকে যে, সংশয় হয়, কি জানি, আওয়ামী লীগের কথাই বোধকরি সত্য। গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে তারা প্রচার করতে থাকে। তার আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলো নিয়েও তারা মিথ্যাচার করেছে। সে নির্বাচনে ভোট ডাকাতির এক নতুন যুগের সূচনা করা হয়েছিল।

সে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে একটি সিটিতে দায়িত্বে ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। বেলা ১১টার মধ্যেই তিনি দেখতে পান, নির্বাচনে যে হারে কারচুপি-জালিয়াতি হচ্ছে, তাতে একে আর নির্বাচন বলে অভিহিত করা যায় না। তিনি তার সহকর্মী অন্য কমিশনার ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে একমত হন, এই নির্বাচন বন্ধ করে দেয়া দরকার। কিন্তু পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারার আশঙ্কায় সে নির্বাচন বন্ধ বা বাতিল করা সম্ভব হয়নি। সেটি বরিশাল সিটি নির্বাচনের কথা। কিন্তু সব সিটিতেই ওইভাবে ভোট ডাকাতি, জালিয়াতি হয়েছে। কমিশন তাকে নিয়তি বলে মেনে নিয়েছে। বিপুল সাংবিধানিক ক্ষমতা নিয়ে এমন নিয়তিনির্ভর নির্বাচন কমিশন পৃথিবীর কোথাও আছে বলে আমাদের জানা নেই।

এলো জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাডোল। আওয়ামী লীগ ও তাদের ধামাধরা নির্বাচন কমিশন জানত যে, জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে এলে সিটি নির্বাচনের জালিয়াতি চাপা পড়ে যাবে। অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন, সিটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতার পর প্রধান বিরোধী দল বিএনপি একাদশ জাতীয় নির্বাচনে না-ও আসতে পারে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনও বর্জন করেছিল বিএনপি। বিএনপির বক্তব্য ছিল- আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না। কিন্তু কিছু পণ্ডিত পরবর্তী পাঁচ বছর ধরে একটিই গীত গাইলেন যে, ওই নির্বাচনে না গিয়ে বিএনপি ‘মারাত্মক ভুল’ করেছে। সে কথা বলে যেতে থাকে বাম দলগুলোও। এ ছাড়াও বললেন এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী। সম্ভবত সে কারণে এবং নির্বাচন করতে দলের ভেতরকার চাপে শেষ পর্যন্ত বিএনপি একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠন করে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’। ড. কামাল বলেছিলেন, ‘ঐক্যফ্রন্টের লক্ষ্য দেশের মালিকানা কিছু লোকের হাত থেকে নিয়ে জনগণের হাতে তুলে দেবেন।’ অতি ন্যায্য কথা।

কিন্তু তার সে আশা পূরণ হয়নি। প্রশাসন, পুলিশ আর নির্বাচন কমিশনের ‘ঐক্যজোট’ ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে দিলো। ভোটের আগে থেকেই বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর ব্যাপক হামলা, হুমকি, গ্রেফতার, জেল-জুলুম এমন পর্যায়ে গেল যে, নির্বাচনের মাঠে তারা কেউ দাঁড়াতেই পারছিলেন না, এলাকায় থাকতে, ভোট চাইতে ভোটারদের দ্বারে যেতে পারছিলেন না, কমপক্ষে ১৮ জন প্রার্থী শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। পুলিশ ও সরকারদলীয় মাস্তানদের হাতে অবরুদ্ধ ছিলেন ডজন ডজন প্রার্থী। এখানেই শেষ নয়, সাধারণ ভোটারদের ভোট দিতে বাধা, বুথে ডামি লাইন তৈরি করে ভোটারদের বাধা দেয়া এবং সর্বোপরি, আগের রাতে পুলিশ আর প্রশাসন মিলে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখা হলো। রচিত হলো ‘গণতন্ত্রের কবর’।

ভাঁড়েরা নানা রকম কথাবার্তা বলে যাচ্ছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এখন স্বীকার করে নিয়েছেন, নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স পূর্ণ করে রাখা হয়েছিল। তিনি বলেছেন, ‘১০ মার্চ যে উপজেলা নির্বাচন হয়েছে, তাতেও আগের রাতে ব্যালট বাক্স পূর্ণ করে রাখার চেষ্টা হয়েছিল।’ এটা যদি তিনি টের পেয়ে থাকেন, তাহলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল করেননি কেন? এর কারণ কি এই, যেকোনো প্রকারেই হোক আওয়ামী লীগকে জেতানোই ছিল তার মিশন? এখন ভালো সাজার চেষ্টা। আর আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে ফেলা সম্পর্কে তার মন্তব্য ইঙ্গিত করে, ওই ষড়যন্ত্রে তিনিও জড়িত।

কারণ, আগের রাতে ভোটে ব্যালট বাক্স পূর্ণ করে রাখা সম্পর্কে এই ছি: ছি: (সিইসি) বলেছেন, এই আগের রাতে ভোটের জন্য কারা দায়ী, তাদের কী করা যাবে- সেই দীক্ষা-শিক্ষা দেয়ার ক্ষমতা-যোগ্যতা আমাদের কমিশনের নেই এবং সেভাবে আমারও সুযোগ নেই। কী কারণে হচ্ছে, কাদের কারণে হচ্ছে, কারা দায়ী। কী সাঙ্ঘাতিক কথা! তার এ কথার অর্থ হলো, যারা এই অপকর্ম করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন না সিইসি। এমনই বশংবদ হয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তার ওপর নাগরিকদের ধিক্কার। সত্তরের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়ালে একটি চিকা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। ‘যারা গণবিরোধী তাদের চিহ্নিত করে ধাওয়া করুন।’ এদের বোধ করি ধাওয়া করার সময় হয়ে গেছে।

আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরার নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জিতিয়ে দিয়ে সিইসি বলছেন, নির্বাচনে তিনি সন্তুষ্ট। খুব ভালো নির্বাচন হয়েছে। ৮০ ভাগ ভোট পড়েছে। সরকার তো তাতিয়েই ছিল। তারাও বলতে থাকেন, ‘ভালো নির্বাচন হয়েছে। বিরোধী দল নির্বাচনকে কলঙ্কিত করার জন্য এখন অভিযোগ করছে।’ সিইসিও সেই সুরে তাল মিলিয়ে যেতে থাকলেন। আগের রাতে ভোটের বাক্স পূর্ণ করার কথা স্বীকার করা ছাড়া সম্ভবত আর কোনো পথও ছিল না। কারণ, তার এই স্বীকারোক্তির আগেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশ জাসদ বলেছে, আগের রাতে ব্যালট বাক্স পূর্ণ করা হয়েছে।

কিছু অতি ‘উৎসাহী লোক’ এই কাজ করেছে, যা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে বিপন্ন করে তুলেছে। দেশে গণতন্ত্রের স্বার্থে এই লোকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। ১৪ দলীয় জোটের শরিক রাশেদ খান মেনন আগের রাতে ভোটের কথা স্বীকার করে বলেছেন, যদি ‘রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন অংশ’ দেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে, তাহলে রাজনৈতিক দল কেবল নির্বাচন নয়, রাষ্ট্র পরিচালনায়ও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে। এটা যেমন আমাদের জন্য প্রযোজ্য, তেমনি সরকারি দলের জন্যও তা প্রযোজ্য। নির্বাচনকে তাই যথাযথ মর্যাদায় ফিরিয়ে আনতে হবে।’

সন্দেহ নেই, রাজনৈতিকভাবে জনাব মেনন দেউলিয়া। নইলে নৌকা প্রতীক নিয়ে তাকে জিততে হতো না এবং কোনো সংশয় নেই যে, তিনি আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরাট প্রক্রিয়ায়ই ‘নির্বাচিত’। এটি তার জন্য নেত্রীর দয়ার দান। নিজ প্রতীকে সুষ্ঠু নির্বাচনে জীবদ্দশায় তার সংসদে নির্বাচিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তারপরও তিনি যে সত্য উপলব্ধি করেছেন, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ‘রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন অংশ’ বলেছেন। কিন্তু সবাই জানে, তারা পুলিশ ও প্রশাসন। তারাই নির্বাচনে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছিল। সরকার ও ইসিকে এ জন্য জনগণ শুধু ধিক্কারই জানাতে পারে।

এরপর শুরু হয়েছিল সরকারের ঢ্যাঁড়া পেটানো। সরকার বারবার অহঙ্কার করে বলছিল, সারা বিশ্ব এই নির্বাচনকে স্বীকার করে নিয়েছে। কিন্তু আমরা দেখেছি, পৃথিবীর প্রধান প্রধান গণতান্ত্রিক দেশের কেউই এই নির্বাচনকে যথাযথ বলেনি। যুক্তরাষ্ট্র বলেনি, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন- তারা বলেছে, এ সরকারের সাথে তারা কাজ করে যাবে। এ কথা কূটনৈতিক শিষ্টাচার। এর মধ্যে সিরিয়াস কিছু নেই। সরকার পররাষ্ট্র সচিবকে ওয়াশিংটনে পাঠিয়ে দেখাতে চাইল যে, যুক্তরাষ্ট্র এই সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু তা মোটেও সত্য ছিল না। হ্যাঁ, অগণতান্ত্রিক চীন-রাশিয়া ও ভারত এই সরকারকে স্বীকার করে নিয়েছে। ভারত কেন বর্তমান ক্ষমতাসীনদের ফুলায়, সেটা স্কুলছাত্রও এখন বোঝে। কিন্তু গণতান্ত্রিক বিশ্বে এই সরকারের ভুয়া নির্বাচন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি অস্পষ্ট থাকেনি।

সরকার ও নির্বাচন কমিশনের এসব জারিজুরি ফাঁস হয়ে গেছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানবাধিকারবিষয়ক প্রতিবেদনে। সেই রিপোর্টে বিশ্বের দেশগুলোতে সহিংসতা, দমন-পীড়ন ও নিষ্ঠুরতার উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে বাংলাদেশের নানা ঘটনা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধানে সরকারের সংসদীয় কাঠামোর উল্লেখ থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষমতা থাকে প্রধানমন্ত্রীর হাতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ একাধারে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায়। কিন্তু এই নির্বাচন কোনো বিবেচনাতেই অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না। একই সাথে ভোটার ও বিরোধী দলকে হুমকি ও ভীতি প্রদর্শনের মতো নানা অনিয়মের অভিযোগও পাওয়া গেছে, যা বিরোধী দল ও তার সমর্থকদের স্বাধীনভাবে প্রচারণা ও সমাবেশে বাধা সৃষ্টি করেছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও সঠিক সময়ে বাংলাদেশে প্রবেশের ভিসা পাননি। শুধু ২২টি সংস্থা অভ্যন্তরীণভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়- রাজনৈতিক পরিচয়ও অনেক সময় গ্রেফতারের কারণ হিসেবে দেখানো হয়। বিএনপি দাবি করেছে, গত বছর তাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির দায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ আইন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, তাকে অভিযুক্ত করার জন্য প্রমাণের অভাব ছিল। তাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই এ রায় দেয়া হয়েছে বলে তারা জানান। এরপর তাকে আরো একটি অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, খালেদা জিয়ার রায়ের সময় প্রায় এক হাজার ৭৮৬ বিএনপি কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। বিএনপির একজন মুখপাত্র হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানিয়েছেন, তাদের ও জামায়াতের হাজার হাজার সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এবার রিপোর্টটি প্রকাশ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতায় বাধা দেয়া হয়। সাংবাদিকেরা হয়রানির ভয়ে সেলফ সেন্সরশিপের দিকে ঝুঁকছেন। আইনে বলা আছে, ঘৃণামূলক বক্তব্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। কিন্তু এর দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে, তা স্পষ্ট করা হয়নি। যেসব গণমাধ্যম সরকারের সমালোচনা করে থাকে, তারা নানাভাবে সরকারের চাপের মুখে পড়ে। সাংবাদিকেরা নানাভাবে আক্রান্তও হন। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের সময় ২৩ জন সাংবাদিক হামলার শিকার হয়েছিলেন।

মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম হয়েছে। মানবাধিকার রক্ষায় সরকারের রয়েছে নানা ব্যর্থতা। এর মধ্যে আছে হত্যা, জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন, অযথা গ্রেফতার, আইনবহির্ভূতভাবে ব্যক্তিগত তথ্যে প্রবেশ, বাকস্বাধীনতা হরণ প্রভৃতি। বছরজুড়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সন্ত্রাসবাদ থামাতে নানা অভিযান পরিচালনা করেছে। কিছু অভিযানে সন্দেহভাজনরা নিহত ও গ্রেফতার হয়েছে।

নিরাপত্তা বাহিনী প্রায়ই এ ধরনের মৃত্যুর কারণ হিসেবে সন্দেহভাজনদের নিয়ে ‘অস্ত্র উদ্ধারে যাওয়া’র কথা বলে থাকে। সেখানে তার সতীর্থদের সাথে বন্দুকযুদ্ধে অভিযুক্ত ব্যক্তি নিহত হন। সরকার এই ঘটনাগুলোকে বন্দুকযুদ্ধ বা এনকাউন্টার বলে আখ্যায়িত করে থাকে। মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যমগুলো দাবি করেছে, বন্দুকযুদ্ধের অনেক ঘটনাই আসলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। দেশের একটি মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, গত বছর জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৪০০ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ জানিয়েছে, জানুয়ারি থেকে অক্টোবরের মধ্যে ৪১৫টি বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে। দেখা যায়, এর আগের বছরের তুলনায় বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, প্রায় ২৩০ জন মাদক ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়েছে। একই সাথে গ্রেফতার করা হয়েছে আরো ১৭ হাজার জনকে। মানবাধিকার সংস্থা ও সুশীলসমাজ বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গ্রেফতার নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। তাদের দাবি, এদের মধ্যে অনেকেই নিরপরাধ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ক্ষমতার অপব্যবহার করে সন্দেহভাজনদের আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ ও নির্যাতন চালায়। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয় খুব কম। ওই রিপোর্টে বাংলাদেশের কারাগারের চিত্রও তুলে ধরা হয়। নির্যাতন ও অমানবিক পরিবেশের কারণে গত বছর কারাগারে ৭৪ বন্দীর মৃত্যু হয়। আরো উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে বিচার বিভাগ নামমাত্র স্বাধীন। স্বাধীন বিচারের জন্যই আইন। কিন্তু দুর্নীতি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ সেই স্বাধীনতাকে খর্ব করে। বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা পার্লামেন্টের হাতে থাকবে- ২০১৪ সালে এ সংক্রান্ত সংবিধানের ১৬তম সংশোধনী পাস করে পার্লামেন্ট। ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট একে অসাংবিধানিক বলে রায় দেন। এতে সরকার ও সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে দ্বন্দ্বে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সিনহাকে পদত্যাগ করতে হয়।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘বছরজুড়ে বিএনপিকে কোনো মিছিল ও সমাবেশ করতে দেয়নি সরকার। গত বছর মার্চের ১১, ১৯ ও ২৯ তারিখে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির সমাবেশ করার আবেদন বাতিল করেছে সরকার। বলা হয়েছে, নিরাপত্তাজনিত কারণ। রাজনৈতিক দলগুলো প্রায়ই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে সভা-সমাবেশের জন্য ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু বিএনপিকে তখন অন্য স্থানে সমাবেশ করতে বাধ্য করা হয়। বিএনপি জানিয়েছে, ১ সেপ্টেম্বর তাদের মৌখিকভাবে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। ১০ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে তারা মানববন্ধন করেছিল। এ দুই কর্মসূচিতে দলটির শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর দিকে, আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো বছরজুড়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ তাদের পছন্দমতো সব স্থানে সমাবেশ করেছে।’

বাংলাদেশে নির্বাচন, গণতন্ত্র, মানবাধিকারের এই খণ্ডচিত্রই প্রকাশ করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। বাস্তবে এই চিত্র আরো ভয়াবহ। এভাবেই চতুর্দিকে সত্যের ঢাক বেজে উঠতে শুরু করেছে। সরকার মুখ লুকাবে কোথায়?

লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
rezwansiddiqui@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement
শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির মৃত্যু নীলফামারীতে তিন হাজার ১৭০ চাষির মাঝে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ কারাগারে কয়েদির মৃত্যু উজ্জ্বল হত্যার বিচার দাবিতে সরিষাবাড়ীতে মানববন্ধন পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১ আহত ২১ খাবারের সন্ধানে বসতবাড়িতে হরিণ, মহামায়ায় অবমুক্ত সিঙ্গাপুর প্রবাসী ফিরোজ মাহমুদের লাশ দেশে ফিরেছে ফরিদপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের মৃত্যু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সব ধর্মের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে: ড. সুকোমল বড়ুয়া

সকল