২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নিস্তরঙ্গ রাজনীতির অঙ্গনে যা হচ্ছে

নিস্তরঙ্গ রাজনীতির অঙ্গনে - ছবি : সংগ্রহ

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন এখন নীরব নিস্তরঙ্গ হয়ে আছে। আগের সেই প্রাণবন্ততা ও মুখরতা আর নেই। এই নির্জীবতার হেতু অবশ্য আছে। মাত্র কিছু দিন আগে একাদশ জাতীয় সংসদের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে যারা এক অসম্ভব ‘বিজয়’ হাতিয়ে নিয়েছেন, সেই অস্বাভাবিক বিজয় নিয়ে তারা এখন হতভম্ব। যারা সেই নির্বাচনের শুদ্ধতা নিয়ে ঘোর আপত্তি তুলে তার ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন, তারা এই সময়ে ক্ষুব্ধচিত্তে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করছেন। যারা এই নির্বাচন পরিচালনা এবং ভোটের আয়োজন করেছেন, তারা অপ্রত্যাশিত এত বেশি ‘ভালো’ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে এখন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। আর দেশের সাধারণ মানুষ নির্বাচন নিয়ে যে প্রহসন হয়েছে, তাতে হতাশ ও বিস্ময়ে বিহ্বল। যারা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক তাদের ধারণা হচ্ছে, এমন ভোটারবঞ্চিত নির্বাচন গণতন্ত্রের নির্বাসনকে এখন অনিবার্য করবে।

এই প্রেক্ষাপটে এখন যে পটভূমি তৈরি হয়েছে তাতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশ্বসমাজ উদ্বিগ্ন। এসব কিছুর প্রেক্ষাপটে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে গুমট অবস্থার সৃষ্টি করেছে তা কোনোভাবেই অস্বাভাবিক বলা যাবে না। এহেন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া খুব সহজ নয়। কেননা আমাদের দেশের রাজনীতিকদের মধ্যে অনেকে দল ও ব্যক্তিস্বার্থের পরিধি অতিক্রম করে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়ার মতো উদারতা প্রদর্শনে সক্ষম হবেন না। আমাদের স্বাধীনতার কাল প্রায় অর্ধশতাব্দী হতে চলল। এই দীর্ঘ সময়েও দেশের নেতৃবৃন্দ রাষ্ট্র পরিচালনায় কোনো সাবলীল ‘সিস্টেম’-এর প্রচলন করতে পারেননি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর অধিকতর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হিসেবে সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ব্যবস্থা সংবিধানে সংযোজন করা হয়েছিল। কিন্তু এই শাসন পদ্ধতির অভিজ্ঞতা ও এর শৈলী রপ্ত না থাকায় তাতে এই ভূমিতে সংসদীয় ব্যবস্থা বিকশিত হতে পারেনি। মাঝে এই ব্যবস্থা পরিত্যক্ত হয়েছিল, পরে তা আবার গ্রহণ করা হয়। তবে এই গ্রহণ নিছক ‘নামকাওয়াস্তে’। এর সত্যিকার রূপ পরিগ্রহ করতে পারেনি, এটিই একটা কঙ্কাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাষ্ট্রের পথচলার ক্ষেত্রে নীতিপদ্ধতি অনুসরণ যদি না করা হয় তবে সর্বত্র তার প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। সেটি এখন এ দেশে হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে কারো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। এমন নির্লিপ্ততা যদি না কাটানো যায়, ধীরে ধীরে সব কিছু অকেজো হয়ে পড়বে।

অথচ পরিস্থিতি এমন হওয়ার কথা ছিল না। দশম সংসদের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ছিল না বলে সেই ভোট নিয়ে কারো আগ্রহ-উৎসাহ ছিল না। কিন্তু এবার একাদশ জাতীয় সংসদ অংশগ্রহণমূলক ছিল। দেশের মানুষ আশা করেছিল, এতে রাজনীতিতে একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে। গত পাঁচ বছর দেশ পরিচালনায় ছিল একক কর্তৃত্ব। ফলে সরকারের কোনো জবাবদিহিতা ছিল না। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশে নানা অনিয়ম চলেছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর সংসদীয় গণতন্ত্র প্রাণ পাবে, জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের উপস্থিতি এবং তাদের ভূমিকার ফলে সংসদ দেশের রাজনীতির মূল প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হবে; কিন্তু এমন সব আশা নির্বাচনের পর মরীচিকার মতো মিলিয়ে গেছে। এখন চরম হতাশা নিয়ে দেখতে হবে, গত পাঁচ বছরের মতো আগামী পাঁচও তেমনি অর্থহীনভাবে কেটে যাবে।

রাজনীতিতে তরঙ্গ সৃষ্টি করবেন এই অঙ্গনের পাত্রমিত্ররা, অর্থাৎ রাজনৈতিক দলের সদস্য ও নেতৃবৃন্দ। কিন্তু দলেই যদি সঙ্কট থাকে তবে আর তরঙ্গ সৃষ্টির আশা করা যায় না। এই লেখায় আগেই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, দেশের প্রধান দল নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে ঝিমিয়ে রয়েছে। অথচ নির্বাচনে তাদের জেগে ওঠার আশা করাই ছিল স্বাভাবিক। রাজনীতিতে নতুন গতিপ্রবাহ সৃষ্টি করার কথা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। এ জন্য তাদের যে ভূমিকা রাখার কথা, বাস্তব কারণেই এখন তা সম্ভব নয়। কারণ, নির্বাচনে তাদের যে ‘ভূমিধস’ বিজয় হয়েছে, তাতেই তারা এখন ধসে আছে। তাদের এই বিজয় যেহেতু সরলপথে আসেনি, তা নিয়ে ঘরে-বাইরে তাদের প্রতি হাজারো প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া হচ্ছে। তার কোনো সদুত্তর ক্ষমতাসীনদের কাছে নেই। এমন অবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় তাদের ‘বিজয়ের’ আনন্দ ম্লান কবে হয়ে গেছে। সংসদে এখন ক্ষমতাসীনদের এমন একচ্ছত্র আধিপত্য যে, সেখানে ‘আহা বেশ বেশ’ ধ্বনি ছাড়া আর কোনো ধ্বনি শোনা যায় না। জাতীয় সংসদ সে কারণে একটা স্থবির প্রতিষ্ঠানে পর্যবসিত এবং একঘেয়েমি বিরক্তি সৃষ্টি করছে। একাদশ জাতীয় সংসদ সম্পর্কে ওপরে সামান্য বলা হয়েছে। এই আইনসভা কেবল ক্ষমতাসীন দল ও তাদের জোট নিয়ে গঠিত হয়েছে। তাই সেই সভায় সবাই এখন সম্মিলিত কণ্ঠে সরকারের প্রশংসায় কোরাস গাইছেন। এর আগেও দশম সংসদের সেই একই চরিত্র ছিল, সেখানে কোনো বিরোধী কণ্ঠ ছিল না। ফলে গত পাঁচ বছরের মতো আগামী পাঁচ বছরে সংসদের পক্ষে সরকারের জবাবদিহি নেয়ার কোনো ব্যবস্থা থাকছে না। এর ফলে সংসদ আর কোনো গুরুত্ব বহন করবে না। তাই এ নিয়ে লক্ষ করা যায় না জনগণের কোনো আগ্রহ। তা ছাড়া, এই আইন সভা সংগঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে দেশের মানুষের যেহেতু কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না, তাই এর ভালো-মন্দ নিয়ে তাদের তেমন কোনো আগ্রহ নেই।

কিন্তু দুঃখ হচ্ছে, একটি দেশের শাসনব্যবস্থায় সরকারের কোনো জবাবদিহি না থাকা। রাষ্ট্রের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যদি জিজ্ঞাসার বাইরে থেকে যায়, তবে নির্বাহী বিভাগ সম্পর্কেও কারো আর কিছু জানার সুযোগ থাকবে না। বলতে গেলে বিগত পাঁচ বছর যেমন সরকারের একক কর্তৃত্বে দেশ চলেছে, তেমনি আগামী পাঁচ বছরও সেভাবে কাটাবে। নির্বাচনে এত বড় ‘বিজয়’ পাওয়ার পরও সংসদীয় ব্যবস্থা ব্যর্থ হতে চলেছে, এর কারণ আছে। সংসদীয় ব্যবস্থায় বিরোধী দলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্ববহ, অথচ সেই বিরোধী দলের এখন কোনো অস্তিত্ব নেই।
সংসদে সাজানো বিরোধী দল দিয়ে কোনো দিক থেকেই মুখ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না বলে উপায়ান্তর না দেখে বিএনপির যে কয়েকজন সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের সংসদে আসার জন্য সরকারি মহল থেকে নানাভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে। যেকোনো সরকারব্যবস্থায় বিরোধী দলের অপরিহার্যতা স্বীকার না করে উপায় নেই। আর সংসদীয় ব্যবস্থায় বিরোধী দলকে সরকারের সহযোগী ভাবা হয়। বিরোধী দলের অভাব আওয়ামী লীগ এখন উপলব্ধি করছে বটে, সেই সাথে এই বলয়ের কলামিস্ট ও বুদ্ধিজীবীরা এর প্রয়োজনীয়তা আরো তীব্রভাবে অনুভব করছেন। তারা পত্রপত্রিকায় কলাম লিখে সরকারকে বিরোধী দলের প্রয়োজনীয় উপলব্ধির পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু সময় ফুরিয়ে গেছে। তাই এমন সৎ পরামর্শ আগামী পাঁচ বছরের জন্য সিকায় তুলে রাখতে হবে।

নির্বাচনের আগে তারা কেবলই বড় বিজয়ের কথা না বলে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের যদি পরামর্শ দিতেন, তবে এখন আর এই অরণ্যে রোদন করতে হতো না। তারা তখন সরকারের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে কেবল ‘উন্নয়নের পাঁচালি’ গেয়েছেন। কিন্তু এ কথা স্মরণ করিয়ে দেননি যে, উন্নয়ন আর গণতন্ত্র পাশাপাশি হাত ধরে চলে এবং একটি ছাড়া অন্যটি অর্থহীন। গণতন্ত্র থাকলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা পায়। আর সুশাসন কায়েম থাকলে অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে থাকে। অথচ আজ গণতন্ত্রের অভাবে অনিয়ম-দুর্নীতিতে দেশ সয়লাব হতে চলেছে। বাংলাদেশ একটি বড় দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বিশ্বের দরবারে নিন্দিত হচ্ছে। দেশের বাইরে বহু অর্থ ব্যয় করে দূতদের নিযুক্ত করা হয়েছে ভাবমর্যাদা বৃদ্ধির জন। কিন্তু ভেতরে অনিয়ম রেখে বাইরে প্রলেপ দিলে কোনো কাজে আসবে না। তাতে নিছক অর্থ ও সময়ের দণ্ড হবে। তাই সময় এখন বলছে, সামগ্রিক একটি শুদ্ধাচারের আন্দোলন সৃষ্টি করা উচিত। আত্মশুদ্ধির জন্য নীতি-নৈতিকতার শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা, দেশ থেকে সুনীতি নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে। এই শ্লাঘা সবাইকে বণ্টন করে নিতে হবে।

দল হিসেবে জাতীয় পার্টি আত্মপরিচয় নিয়ে একটা বিভ্রান্তিতে রয়েছে। সরকার থেকে পড়ে যাওয়ার পর থেকেই তাদের এই অবস্থা। দশম সংসদে তারা আওয়ামী লীগের সাথে জোট বেঁধে নির্বাচন করেছিল এবং নির্বাচনের পর সরকারের মন্ত্রিসভায় যোগ দেয়। সংসদে তাদের ভূমিকা ছিল সরকারি দলের মতোই। দলের প্রধান জনাব এরশাদ মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হলেন। আবার বেগম এরশাদ দশম সংসদে মন্ত্রীর মর্যাদায় বিরোধী দলের নেত্রী হয়েছিলেন। তাই তাদের সঠিক অবস্থান নিয়ে একটা ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছিল। এবারো জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ আওয়ামী লীগের জোট থেকে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সংসদে বসেছেন। তাদের এবারো সংসদে বিরোধী দল হিসেবে পরিচয় দেয়া হচ্ছে। নির্বাচন করলেন আওয়ামী জোট থেকে আর সেই নির্বাচনের পর হয়ে গেলেন ‘বিরোধী দলের সদস্য’। তাদের এই অবস্থান সাংবিধানিক দিক থেকে ত্রুটিপূর্ণ। তদুপরি, সংসদে তাদের বিরোধী দলের সদস্য হিসেবে কোনো ভূমিকা নেই। এটা এক অদ্ভুত ব্যাপার। জাতীয় পার্টিকে বস্তুত একটি আঞ্চলিক দল হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। কেননা দেশের সর্বত্র তাদের কোনো ভূমিকা নেই। বস্তুত আওয়ামী লীগের আশীর্বাদ নিয়েই তারা চলছেন। আর এই আশীর্বাদ উঠে গেলে তাদের পক্ষে অস্তিত্ব রক্ষা করা কঠিন হবে। আর দলটি চলে কার্যত এরশাদের একক কর্তৃত্বে। তাই ভবিষ্যতে শূন্যতা সৃষ্টির আশঙ্কা যথেষ্ট। রাজনীতিতে তাদের তেমন ভূমিকা নেই, ভবিষ্যতেও তেমনি তাদের জেগে ওঠার কোনো সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। জনাব এরশাদ এখন অসুস্থ, তার পক্ষে আগের মতো দল পরিচালনা করা কতটুকু সম্ভব হবে, সেটি বিবেচনার বিষয়।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) অবদান বিরাট। দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান রাজনীতিতে এসে অনেক উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন। তিনি এ দেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতির বাইরে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির প্রবর্তন করেন। এই ভিন্ন ধারার রাজনীতির লক্ষ্য হিসেবে তিনি গণতন্ত্র ও উন্নয়নকে গ্রহণ করেছিলেন। তার এই রাজনৈতিক ধারা দেশের জনগণের মধ্যে বিপুল সাড়া জাগায়। তিনি আওয়ামী লীগের একদলীয় শাসনব্যবস্থার বিপরীতে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দেশের রাজনীতিতে তার এসব অবদান ইতিহাসে গুরুত্বের সাথে সংযোজিত হয়েছে। উদার গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি জাতীয় রাজনীতিতে সহিষ্ণুতা, ঐক্য এবং বাক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নীতি গ্রহণ করেছে। গণতন্ত্রের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বিএনপি এ দেশে প্রশ্নমুক্ত নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে তা সংবিধানে সন্নিবেশিত করে নিয়েছিল; যা গণতন্ত্রের সুষ্ঠু বিকাশে বিরাট অবদান রেখেছিল।

সেই বিএনপি এখন ক্ষমতাসীনদের রোষের শিকার হয়ে ম্রিয়মাণ। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কবলে পড়ে দলের চেয়ারপারসনসহ সংগঠনটির অসংখ্য নেতাকর্মী কারারুদ্ধ। ভুয়া মামলায় জড়িয়ে তাদের চরমভাবে নিগৃহীত করা হচ্ছে। বিএনপি ও এই দলের নেতাকর্মীদের ওপর এমন নিষ্পেষণ আসলে দেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারার পথ রুদ্ধ করছে। উদার গণতান্ত্রিক এই দলের এমন দুরবস্থা অপশাসনের ধারা বহমান থাকারই অশনিসঙ্কেত। বিএনপির যে রাজনীতি, তা মূলত ইতিবাচক। তাদের যদি সত্যিকার ভূমিকা রাখার সুযোগ দেয়া হতো, তাদের অবস্থান যেখানেই হতো তাতে কল্যাণই হতো দেশ ও সরকারের। একটি দায়িত্বশীল দল যদি ক্ষমতায় থাকে তবে সেটি ভালো কথা। গণরায়ে যদি বিরোধী দলের আসনে বসতে হয়, তবে সেখান থেকেও তাদের পক্ষে জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ থাকে।

বাংলাদেশের আরেকটি বড় দল জামায়াতে ইসলামী। এই দলটি যেমন দেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শরিক ছিল, তেমনি বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। দলটির আরো একটি বৈশিষ্ট্য হলো, এর কর্মীরা সংগঠনে নিষ্ঠার সাথে গণতন্ত্রের চর্চা করে থাকে। দেশে পুনর্বার সংসদীয় ব্যবস্থা কায়েমে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংবিধানে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংযোজিত করার আন্দোলনে এ দলটির অবদান অনেক। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জামায়াত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানার থেকে নির্বাচন করেছে। বেশ কিছুকাল ধরে এ দলটিকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা চলছে। এমনকি দলের নাম এবং এর নীতি-কর্মসূচিসহ দলের বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে সংগঠনটির ভেতরে নেতাকর্মীদের আলোচনা চলছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, দলের নাম ও বিভিন্ন ইস্যুতে পরিবর্তনের জন্য এই কথা চালাচালি হচ্ছে। এ সময় দলের অন্যতম সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক (বর্তমানে লন্ডন প্রবাসী) দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। তার এই পদত্যাগ নিয়ে বাংলাদেশের মিডিয়াসহ ব্রিটিশ মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনার সূত্রপাত হয়।

যাই হোক, জামায়াতের রাজনীতির পর্যবেক্ষকেরা বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে মনে করেন, দলটির ভেতর যেহেতু গণতন্ত্রের চর্চা রয়েছে এবং দলের নীতিনির্ধারণে ও বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে; তাই তারা মনে করেন দলের বর্তমান সঙ্কট উত্তরণের ব্যাপারে তারা অভ্যন্তরীণ সংলাপের মাধ্যমেই নিষ্পত্তি করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে সময়ের বাস্তবতা, কর্মীদের মনমানসিকতাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি বিবেচনায় রাখলে এ নিয়ে দুর্ভাবনার কিছু না থাকাই স্বাভাবিক।

ndigantababor@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement