২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইসলাম বোঝা ও গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা

-

ইসলামকে বুঝার ক্ষেত্রে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা আছে। বুঝার জন্য যে প্রচেষ্টা দরকার, তা না থাকা এর একটি কারণ। ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচারণাও একটি বড় কারণ। সে প্রচারণা ইসলামের বিরুদ্ধেও হতে পারে অথবা ইসলামী সংগঠনের বিরুদ্ধে হতে পারে। ইসলামী সংগঠনের বিরুদ্ধে প্রচারণা চূড়ান্ত পর্যায়ে ইসলামের প্রগতির প্রতিবন্ধক। এ সব বিষয়ে একে একে আলোচনা করব। তবে প্রথমে ব্যক্তির মানসিক প্রতিবন্ধকতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এটা সবচেয়ে বেশি বড় প্রতিবন্ধক। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা সূরা হজ্জে বলেছেন :
তারা কি জমিনের বুকে পরিভ্রমণ করে না? আর তাদের যদি আকলওয়ালা কলব থাকত এবং শুনার মতো কান থাকতো! আর তাদের চোখ তো অন্ধ নয়, মূলত অন্ধ হলো তাদের বুকের মধ্যকার কলব (হৃদয়)। আয়াত ৪৬

এ আয়াতে প্রমাণিত হয় যে, আরবের মুশরিক ও কাফেররা চোখ দিয়ে দেখতে পেত না এবং শিক্ষা নিতে পারত না। কেননা তাদের অন্তর অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অন্তর অন্ধ হওয়া মানে, অন্তরের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়া, অন্তর খোলা না থাকা। ফলে অন্তর ইসলামের বাণী বুঝতে পারত না।

আজকের যুগেও ইসলামের ব্যাপারে একই রকমের ঘটনা ঘটছে। মুসলিম নামধারী সেকুলার ও বামপন্থী মহলের একই অবস্থা। তাদের অন্তরে মোহর পড়ে আছে। ফলে তারা ইসলামের বক্তব্য খোলা মনে শোনেন না। তারা ইসলামের কথা শুনতে চান না। ইসলামের বই পড়তে চান না। তাদের উচিত, উন্নত মানের যেসব ইসলামী পুস্তক আছে তা পড়া। কিন্তু তাদের অন্তর খোলা না থাকার কারণে তারা এসব বই কেনেন না, দিলেও তা পড়েন না। মানসিক প্রতিবন্ধকতা (ইষড়পশ) খুবই মারাত্মক। এটা কেবল ইসলামের ব্যাপারেই সত্য, তা কিন্তু নয়! মন খোলা না থাকলে বিরোধী মতের কোনো কথাই বুঝতে পারা যায় না। এমনকি, তাদের সঠিক কথারও মূল্যায়ন করা যায় না।

আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর বেশির ভাগ একে অপরের সাথে কথা বলতে চায় না। বিভিন্ন ধর্মীয় দল একে অপরের কথা শুনতে চায় না। ছোটখাটো বিরোধকে বড় করে দেখে। এটা ইসলামের জন্য কল্যাণকর নয়।
ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মিথ্যা প্রচারণা আর একটি বড় প্রতিবন্ধকতা, যার ফলে অনেক মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে যায় এবং ইসলামের পথে আসতে চায় না। নানা রকম প্রচারণা আছে।

তার মধ্যে একটি হচ্ছে, ‘ইসলাম সন্ত্রাসের সমর্থন করে এবং ইসলামী শক্তি সন্ত্রাসে জড়িত’। এগুলো সবই মিথ্যা। ইসলাম শান্তির ধর্ম। রাসূল সা:-এর যুগে সব সময় কাফেররা বারবার মদিনায় হামলা করেছে। রাসূল সা: কখনো হামলা করেননি। এ যুগের প্রধান ইসলামী দলগুলো সন্ত্রাসের নিন্দা করেছে।

আরেকটি প্রচারণা হচ্ছে, ইসলাম নারীদের অধিকার দেয়নি। অথচ ইসলামে পুরুষ ও নারী নির্বিশেষে সবাই একই মর্যাদার অধিকারী। কেননা পুরুষ-নারী সবাই আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি। কিছু কিছু পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও। সার্বিক বিচারে, পুরুষ ও নারীর একই সম্মান ও অধিকার রয়েছে।

ইসলামের ওপর লেখা বইগুলোকে ‘জিহাদি বই’ বলে অপপ্রচার করা হয়। অথচ ইসলামের বইয়ের বিরুদ্ধে অপপ্রচার নিন্দনীয়। জিহাদ ইসলামের অংশ। কুরআনে জিহাদের কথা অনেক বার বলা হয়েছে। তবে ‘জিহাদ’ অর্থ কেবল যুদ্ধ নয়। জিহাদ অনেক রকম। নফসের বা রিপুর বিরুদ্ধে যুদ্ধও জিহাদ। এর একটি রূপ হচ্ছে কিতাল বা যুদ্ধ যা সর্বশেষ উপায়। কিন্তু বর্তমানকালে সব রাষ্ট্র জাতিসঙ্ঘের সদস্য হওয়ার কারণে এখন যুদ্ধ শুরু করা অপরাধ। আশা করি, সবাই বিষয়টি উপলব্ধি করবেন।

লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার


আরো সংবাদ



premium cement