রাজনীতির বিভ্রান্তি এবং আখেরাতের আকুতি
- গোলাম মাওলা রনি
- ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৯:২৭
এ বিষয়ে বিএনপির কারো মধ্যে সামান্য বিভ্রান্তি নেই যে, একাদশ সংসদ নির্বাচনকে ‘মঞ্চায়িত’ করার জন্য আওয়ামী লীগ এবং তাদের সহযোগীদের যে পূর্বপ্রস্তুতি ছিল, তার হাজার ভাগের এক ভাগও ছিল না বিএনপি এবং তাদের সহযোগীদের। তারা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এমন কিছু আজগুবি স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়েছিলেন, যা সাধারণত বড় বড় কবি-সাহিত্যিক এবং ভাববাদী ও কল্পনাপ্রবণ মানুষেরাই করে থাকেন। তারা প্রতিটি বিষয়কে এমনভাবে বিশ্বাস করেছিলেন এবং প্রতিপক্ষের তৈরি করা ফাঁদে অভিনবভাবে, বিপুল উৎসাহে এমনভাবে পা দিয়েছিলেন যা সাধারণত দুই শ্রণীর মানুষই করতে পারেন। প্রথম শ্রণীটি হলো দেবশিশু এবং দ্বিতীয় শ্রেণীটির নাম মাজনুন বা দিওয়ানা, যারা কোনো কিছুর প্রেমে পড়ে ভালোবাসার ‘নবম স্তরে’ পৌঁছে বাস্তব দুনিয়ার জটিলতা থেকে নিজের মন ও মস্তিষ্ককে দূরে রাখতে পারেন।
যেহেতু বিএনপির একজন সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলাম এবং আমার সারা জীবনের রাজনৈতিক আদর্শ এবং আওয়ামী লীগের প্রতি দাদা-বাবা ও আমার, অর্থাৎ তিন প্রজন্মের আনুগত্য ত্যাগ করে সংসদ নির্বাচনের কয়েক দিন আগে বিএনপিতে যোগদান করেছি, সেহেতু নিবন্ধের শিরোনামের বাস্তবতা ও সূচনাবক্তব্যের তাৎপর্য পাঠকদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য আমার উচিত, নিজের বিভ্রান্তি সম্পর্কে খোলামেলা কিছু কথা বলা। অর্থাৎ আমি ভালোবাসার ‘কত নম্বর স্তর’ ভেদ করে কী রকম মাজনুন বা দিওয়ানা হয়ে পড়েছিলাম যে, নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে হঠাৎ ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে উল্টো দৌড় দিয়ে বিএনপিতে যোগদান করেছি। এটি কি নিছক পাগলামি ছিল? নাকি কোনো দুরন্ত লোভ অর্থাৎ মন্ত্রী-এমপি হওয়ার নিদারুণ বাসনা, কামনা ও উত্তেজনা আমাকে তাড়া করেছিল? নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল?
এ বিষয়ে বলার আগে একজন রাজনীতিবিদ, লেখক ও বক্তা হিসেবে আমার বিগত ১০ বছরের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কিছু বলা আবশ্যক। অতীতকালে যেসব কর্মকাণ্ড দ্বারা সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা ও সমর্থন যেমন পেয়েছি, তেমনি একই কর্ম দ্বারা আওয়ামী লীগের একশ্রেণীর প্রভাবশালীর বিরক্তির কারণে পরিণত হয়েছি। যেসব লোকের বিরুদ্ধে ২০১২-১৩ সাল পর্যন্ত দুর্বার সাহস নিয়ে নিজের কণ্ঠ ও কলমযুদ্ধ চালিয়েছিলাম, তারা শক্তিশালী হতে হতে ২০১৪-১৫ সালে ততটাই বিস্তৃত হয়ে পড়েন, যাদের দাপটে আওয়ামী লীগের মধ্যে আমার মতো নির্বোধের দাঁড়ানোর উপায় ছিল না। দ্বিতীয়ত, সেই শক্তিশালী চক্রটি ২০১৮-১৯ সালে এসে এমন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ থেকে তাদের বিরুদ্ধে টুঁ-শব্দটি উচ্চরণ তো সম্ভবই নয়, বরং আমার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি এমন দাঁড়াত যে, রোজ সকালে তাদের দরবারে উপস্থিত হয়ে তাদের পদধূলি এবং কদম ধোয়া পানি হাসিল করে বেঁচে থাকার সার্থকতা খুঁজতে হতো। তাদের সামনে দিয়ে হাঁটতে গেলে নাকে খত দিয়ে আমার অতীত কর্মের জন্য আহাজারি করে তাদের দিল শীতল করার চেষ্টা-তদবির করতে হতো।
একাদশ সংসদকে ঘিরে আওয়ামী লীগে আমার অস্তিত্ব নানাভাবে ঘুরপাক খাচ্ছিল। দশম সংসদের বিনা ভোটের নির্বাচন বর্জন করে এমনিতেই দলের মধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলাম, যার দায় আমাকে ও আমার পরিবারকে নানাভাবে বহন করতে হয়েছে। তারপরও আমি গণতন্ত্রের স্বার্থে, একটিবারের জন্যও হতাশ হইনি। অথবা নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে দুর্নীতিবাজদের কাছে গিয়ে আত্মসমর্পণ করে কোনো আকুতি জানাইনি। একাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দুই ধরনের আশঙ্কা করতাম। প্রথমত, আওয়ামী লীগ গত ৩০ ডিসেম্বর যা করেছে, ঠিক ততটা না হলেও অন্তত ১৫০ সিট কনফার্ম করার জন্য যাবতীয় ‘ইঞ্জিনিয়ারিং’য়ের চেষ্টা করবে এবং সেটি না পারলেই দ্বিতীয় অপশন, অর্থাৎ অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধ্য হবে। আমার গত পাঁচ বছরের টকশো ও লেখালেখির মধ্যে বহুবার আমার আশঙ্কার কথা বলেছি। অন্য দিকে, বিএনপিতে যোগ দিলে আমার কী পরিণতি হবে, তা নিয়েও বহুবার আমার নিকটতম বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনকে বলেছি। ফলে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে নিজের নির্বাচনী এলাকায় কাজ করতে গিয়ে আমি এমন কোনো পরিস্থিতির মোকাবেলা করিনি; যা আমার পূর্বধারণায় ছিল না।
এখন প্রশ্ন হলো- সব কিছু জেনেশুনে কেন বিপজ্জনক পথে পা বাড়ালাম? কিছু শুভাকাক্সক্ষী আমাকে দুই ধরনের পরামর্শ দিতেন। প্রথমত, রাজনীতি বাদ দিয়ে কেবল লেখালেখি এবং সভা-সমিতি-সেমিনার ও টকশোতে নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ কথা বলে দেশ-জাতিকে সেবা করা।
দ্বিতীয়ত, বিএনপিতে যোগদান করে রাজনীতি ও অন্যান্য কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া। দুটো ব্যাপারেই আমার দ্বিধা ছিল। আওয়ামী লীগে থেকে যাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলাম কয়েকটি কারণে। প্রথমত, দলটির সাথে আমার সম্পর্ক ছিল রক্ত-মাংস ও আত্মার। দ্বিতীয়ত, নৈতিকভাবে দলকে বিব্রত করার মতো কুকর্ম অর্থাৎ ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম ইত্যাদির অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে শত্রুরাও কোনো দিন করেনি। তৃতীয়ত, নির্বাচনী এলাকায় আমার জনপ্রিয়তা এমন একটা পর্যায়ে রয়েছে, যা দিয়ে যেকোনো নিরপেক্ষ ভোটে জয় লাভ করা সম্ভব। কাজেই আওয়ামী লীগ যদি সত্যিকার অর্থে নির্বাচনের কথা ভাবে, তবে পটুয়াখালী-৩ আসনে আমিই হবো তাদের উত্তম প্রার্থী। নির্বাচনপূর্ব সব জরিপ, এলাকার জনমত, রাজনৈতিক নেতৃত্বের সমর্থন ইত্যাদি সব কিছুই আমার অনুকূলে ছিল। ফলে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জয়লাভ এবং পরবর্তী সময়ে দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হয়ে আমার শত্রুদের মুখে চুনকালি মাখার আশায় একাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করি।
তবে আমি যখন মনোনয়নবঞ্চিত হলাম, তখনই ধরে নিলাম, নির্বাচন সুষ্ঠু ও প্রতিযোগিতামূলক হবে না। কারণ, আমার পরিবর্তে যাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, তার প্রধান পরিচয় হলো তিনি সিইসির ভাগিনা। সিইসি অর্থাৎ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা আমার পূর্বপরিচিত। নবম সংসদ নির্বাচনে তিনি পটুয়াখালী জেলার আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন। তিনি বেশ কয়েক দিন আমার গ্রামের বাড়িতে থেকে আমার নির্বাচনের প্রচার-প্রপাগান্ডায় অনেক মেধা ও শ্রম দিয়েছেন, যা আজো কৃতজ্ঞভরে স্মরণ করি। ফলে ভালোভাবেই তাকে চিনতাম। কিন্তু তার কোনো ভাগিনাকে মোটেও চিনতাম না। হুদা সাহেব সিইসি হিসেবে নিয়োগ লাভের পর তার ভাগিনা পরিচয়ে পটুয়াখালী-৩ আসনে জনৈক যুবক এমপি প্রার্থী হিসেবে কর্মকাণ্ড শুরু করলে লোকজন নানামুখী মন্তব্য করে। তখন লোকমুখে জানতে পারি, ভাগিনা পরিচয়ধারী যুবক একটি টাইলস কোম্পানির বিক্রয় ব্যবস্থাপক অথবা ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে কাজ করতেন। তার মামা সিইসি হওয়ার পর তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে এমপি হওয়ার চেষ্টা করছেন।
আমি নিজের স্বভাবমতো সিইসির ভাগিনা নিয়ে কোনো বিরূপ মন্তব্য করা বা তার ব্যাপারে অনাহূূত খোঁজ নেয়া কিংবা তার কর্মকাণ্ডে বাধা দেয়ার মতো ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকলাম। আমার ধারণা ছিল, আওয়ামী লীগ যদি সত্যিকার নির্বাচন চায় তবে আমি মনোনয়ন পাব’ আর যদি আওয়ামী লীগের অন্য কোনো চিন্তা থাকে তবে সিইসির ভাগিনাই মনোনয়ন পাবেন। সুতরাং তিনি যখন মনোনয়ন পেলেন তখন ধরে নিলাম, নির্বাচনের ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কে আমি যে আশঙ্কার কথা বিগত দিনে বলে আসছিলাম, তা হয়তো রেকর্ড ব্রেক করবে। সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ আওয়ামী সরকারে যারা শক্তিশালী হবেন, তাদের মেনে নিয়ে যদি দলের কর্মকাণ্ডে নিজেকে সক্রিয় করি তবে আমার নীতি-নৈতিকতার পতন ঘটবে। অন্য দিকে, আমি যদি অতীতের মতো কাজকর্ম করি, তবে হররোজ বিপদ-বিপত্তি মোকাবেলা করতে হবে।
উপরিউক্ত অবস্থায় আমার কাছে দুটো অপশন ছিল। প্রথমটি হলো- দলীয় আদর্শ ধারণ করে লেখালেখি, কথাবার্তা বন্ধ করে চুপচাপ থাকা অথবা অন্য সব নেতাকর্মীর মতো নাকমুখ বুজে অন্ধের মতো সব কিছু অনুসরণ করা এবং ন্যায়-অন্যায় বিচার না করে দলের তাঁবেদারি করা। দ্বিতীয়ত, আমি যদি রাজনীতি করতে চাই এবং নিজের কথা বলা ও লেখনীর গতি অব্যাহতভাবে শাণিত রাখতে চাই, অবশ্যই দল ত্যাগ করতে হবে। কারণ, আওয়ামী লীগে থেকে অতীতের মতো আমার পক্ষে সব কিছু করা আর সম্ভব নয়।
২০০৯-২০১৩ সালের আওয়ামী লীগের গণতান্ত্রিক মনোভাব এবং ২০১৮ সালের মনোভাব এক নয়। অধিকন্তু, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার কেন্দ্রে যাদের অভিষেক হবে, তারা আর যাই হোন- দুর্নীতি, ব্যাংকলুট ও শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি নিয়ে উচ্চকণ্ঠের লোকজনকে দলের মধ্যে থাকতে দেবেন না। সুতরাং বিএনপিতে যোগ দেয়ার ক্ষণে অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায়, ধীর ও স্থিরভাবে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেছিলাম, আমি বুঝে-শুনে এবং চিন্তাভাবনা করেই বিএনপিতে যোগ দিয়েছি...। কাজেই বিএনপিতে যোগদান, নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্পর্কে অন্য কারো বিভ্রান্তি থাকলেও থাকতে পারে- কিন্তু আমার নিজের কোনো বিভ্রান্তি ছিল না।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের পূর্বাপর ঘটনা এবং ফলাফল নিয়ে বিএনপির মধ্যে কতগুলো বিভ্রান্তি দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নানামুখী হতাশা ও দুর্ভোগের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। নির্বাচনপূর্ব সময়ে হঠাৎ করে ঐক্যফ্রন্ট-যুক্তফ্রন্ট নিয়ে তোড়জোড় এবং সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে ঐক্যফ্রন্টের অনেকগুলো সিদ্ধান্তের কারণে ফ্রন্টের ৩০০ জন প্রার্থী কমবেশি সবাই ক্ষতিগ্রস্ত, লাঞ্ছিত ও অপমান হয়েছেন। কতগুলো নাটকীয় সিদ্ধান্ত; যেমনÑ বিনা শর্তে সংলাপে অংশগ্রহণের জন্য গণভবনে গমন এবং অশ্বডিম্বসহ ‘সগৌরবে’ ফিরে এসে বিশাল স্বপ্ন নিয়ে দ্বিতীয়বার অধিক অশ্বডিম্ব প্রাপ্তির নিশ্চয়তার জন্য সেথায় গমন বিএনপির মধ্যে অনেক বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। গণভবনে দাওয়াত করে নিয়ে ব্যারিস্টার মওদুদকে গ্রেফতারের হুমকি দিয়ে অপমান করা এবং আওয়ামী লীগের আশ্বাস ও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে দলীয় মামলা ও আসামিদের তালিকা ওবায়দুল কাদেরের কাছে হস্তান্তরের ঘটনা অনেক বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।
গণভবনের বৈঠকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যেসব নিশ্চয়তা ও আশ্বাস দেয়া হয়েছিল, তার একটিরও বাস্তবায়ন না সত্ত্বেও কেন একটি ঝুঁকিপূর্ণ, বিপজ্জনক এবং অনিশ্চিত পথের পানে লাখ লাখ নেতাকর্মীকে ঠেলে দিয়ে তাদের জীবনকে মামলা-হামলা-মারধর, জখম ও আর্থিক ক্ষতির মধ্যে ফেলে দেয়া হলো, তা নিয়েও ব্যাপক বিভ্রান্তি দলের মধ্যে রয়েছে। নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে অর্থাৎ ১২ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে, প্রতিদিনই পরিস্থিতি গুরুতর ক্রমাবনতির দিকে যাচ্ছিল। ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বেশির ভাগ প্রার্থী বুঝে যান যে, সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তারা একটি পাতানো নির্বাচনের ‘বলির পাঁঠা’ হওয়ার ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে যান ২৫ ডিসেম্বর। ফলে প্রায় সব প্রার্থীর আশা ছিল, ২৬ ডিসেম্বর যুক্তফ্রন্ট হয়তো ঘোষণা দেবে নির্বাচন বর্জনের।
এমন অবস্থার প্রেক্ষাপটে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকা থেকে নিরাপদে রাজধানীতে পৌঁছা এবং প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় শত শত নেতাকর্মী গ্রেফতার, হাজার হাজার নেতাকর্মীর ওপর পুলিশসহ অন্যান্য-আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ক্যাডার বাহিনীর হামলা ও নির্যাতনে বাড়িছাড়া পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং প্রতি রাতে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ ও দলীয় ক্যাডারদের তল্লাশির নামে ভয়ভীতি দেখানো ও নির্যাতনের ঘটনায় যে হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো, তা মোকাবেলা করতে গিয়ে ঐক্যফ্রন্টের সব প্রার্থীকে কমবেশি ওয়ার ট্রমা, অর্থাৎ যুদ্ধকালীন মনোবেদনা নামক রোগের শিকার হতে হয়েছে। এই সময়ে তারা নিজ নিজ দল অথবা ঐক্যফ্রন্ট থেকে সামান্য সাহায্য-সহযোগিতা কিংবা দিকনির্দেশনাও পাননি। ফলে ২৬ ডিসেম্বরের পরে বাংলাদেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা এমনভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিপদের সাগরে নিপতিত হন, ঠিক যেভাবে একজন পথিক সাহারা মরুভূমির মধ্যে পথহারা হয়ে, মরুঝড় সাইমুমের কবলে পড়ে বেঁচে থাকার বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন।
৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ সালের দিনটি ঐক্যফ্রন্টের সব এমপি প্রার্থীর জন্য সর্বনিকৃষ্ট যুদ্ধকালীন বেদনা হিসেবে আমৃত্যু তাদের তাড়া করবে। ১২ থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে এ দেশের সরকারি কর্মচারীদের একাংশ এবং আওয়ামী লীগের একশ্রেণীর নেতাকর্মী যা করেছেন, তা কোনো ভুক্তভোগী কিয়ামত পর্যন্ত ভুলবেন না।
অর্থাৎ তারা দুনিয়ায় যদি বিচার না পান, তবে আল্লাহর দরবারে কিয়ামতের দিন দাঁড়িয়ে বলবেন- হে আমাদের রব! তুমি না বলেছ- সব ক্ষমতার মালিক তুমি এবং তুমিই যাকে ইচ্ছে, ক্ষমতায় বসাও। সুতরাং ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তা পরিচালনার জন্য বাংলাদেশে তুমি যাদের ক্ষমতা দিয়েছিলে, তাদের একাংশ তোমার দেয়া সেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাদের সব কিছু জার জার করে দিয়েছিলেন- আমরা নির্যাতিত হয়েছি, যার প্রতিকার কোনো বিচারক দেননি। তোমার কাছ থেকে প্রাপ্ত ক্ষমতায় বলীয়ান হয়ে তোমার কোনো প্রতিনিধি আমাদের আশ্রয় দেননি, ইহসান করেননি, তারা আমাদের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছেন এবং তোমার দেয়া শ্রেষ্ঠ নিয়ামত জবান ও বয়ান দুটোই নষ্ট করে দিয়েছেন। তারা আমাদের সুখশান্তি নষ্ট করেছেন এবং বেঁচে থাকার আনন্দ মাটি করে দিয়েছেন। সুতরাং আজকের এই শেষ বিচার দিনে আমরা ওই সব পাপীর বিচার চাই, যারা আমাদের দুনিয়ার জীবনের শ্রেষ্ঠতম সব সম্পদ কেড়ে নিয়েছে।
লেখক: সাবেক সংসদ সদস্য
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা