২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সার্কুলার ইকোনমির ভেতর-বাইর

-

অর্থনীতিতে এ সময়ের এক বহুল আলোচিত বিষয় হচ্ছে ‘সার্কুলার ইকোনমি’। অনেক সরকার, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি ও পরিবেশ সংগঠনের পরিকল্পনার একটি মুখ্য উপাদান হয়ে উঠেছে এই ‘সার্কুলার ইকোনমি’। উদ্দেশ্য, কার্বনের উদগীরণ কমিয়ে আনা। আমাদের দেশে এখনো সার্কুলার ইকোনমি ততটা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য হয়ে ওঠেনি। তবে হওয়া উচিত বলে অনেকে মনে করেন। পরিবেশবাদীরা তো অবশ্যই এমনটি মনে করেন। কারণ, যুক্তরাজ্যের ‘ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট’ (ডিএফআইডি) সম্প্রতি ২০১৯ সালের উন্নয়নের জন্য যে সেরা দশ আইসিটি প্রবণতার কথা এক জরিপের মাধ্যম জানতে পেরেছে, তার মধ্যে ২ নম্বর অবস্থানে রয়েছে এই সার্কুলার ইকোনমি।

অবস্থানক্রমে এই সেরা দশ প্রবণতা হচ্ছে : বিগডাটা, সার্কুলার ইকোনমি, ফিন্যান্সিয়াল টেকনোলজি, ব্লকচেইন, এআই ও মেশন লার্নিং, স্যাটেলাইট টেকনোলজি, রিফিউজ অ্যাপলিকেশন, মাইক্রো-গ্রিড ব্যাটারি, থ্রিডি প্রিন্টিং এবং অল্টারনেট ইন্টারনেট ডেলিভারি। অতএব প্রযুক্তির এই যুগে সার্কুলার ইকোনমিকে এড়িয়ে চলে উন্নয়ন নিশ্চিত করা যাবে না বলে ভাবছেন প্রযুক্তি জগতের সাথে সংশ্লিষ্টরা।

সার্কুলার ইকোনমিতে সম্পদের বারবার চক্রাকারে ব্যবহার চলে। এর অর্থ হচ্ছে, এখন থেকে আর খনি খননের কাজ চলবে না অথবা বর্জ্য উৎপাদন করা যাবে না। জোর তাগিদ দেয়া হবে রিসাইক্লিংয়ের ওপর। আর তা সম্ভব করে তোলা হবে এমন পণ্য উৎপাদন করার মাধ্যমে, যা সহজেই দূরে সরিয়ে ফেলা যাবে। তা ছাড়া মনোযোগ দেয়া হবে একটি বিকল্প ভোক্তা সংস্কৃতি তথা ‘অল্টারনেটিভ কনজিউমার কালচার’ গড়ে তোলার ব্যাপারে। সার্কুলার ইকোনমিতে আমরা আর কোনো পণ্যের মালিকানা রাখব না। বরং তা ঋণ দেবো। যেমন : একজন ভোক্তা আলো তৈরির কোনো যন্ত্রের অর্থাৎ লাইটিং ডিভাইসের জন্য দাম দেবে না। এরা শুধু পরিশোধ করবে বিদ্যুৎ বিল। এভাবেই সার্কুলার ইকোনমিতে একটি পণ্য হয়ে উঠবে সেবা। মনে করা হচ্ছে, এতে ব্যবসায়ীরা উৎসাহিত হবে তাদের পণ্যের রিসাইক্লেবিলিটি বাড়িয়ে তুলতে।

সার্কুলার ইকোনমি উপস্থাপন করা হচ্ছে ‘লিনিয়ার ইকোনমি’র বিকল্প হিসেবে। ‘লিনিয়ার ইকোনমি’ পদবাচ্যটি চালু করেছেন সার্কুলারিটির সমর্থকেরাই। এই লিনিয়ার ইকোনমিতে জোর দিয়ে বলা হচ্ছে : শিল্প খাতের সমাজ মূল্যবান সম্পদকে পরিণত করে বর্জ্য।ে তা সত্ত্বেও, এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই, বর্তমান শিল্প মডেল টেকসই নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, কথিত সার্কুলার ইকোনমি কী ধরনের পরিবর্তনটা আনবে? বেশ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক সমীক্ষায় এই ধারণাটিকে বর্ণনা করা হয়েছে একটি ‘আদর্শায়িত ধারণা’ বা ‘আইডিয়ালাইজড ভিশন’ হিসেবে। বলা হয়েছে, এটি হচ্ছে বিভিন্ন ডোমেনের বিভিন্ন ধারণাকে এক সাথে মিশিয়ে তৈরি করা একটি ধারণা। অন্য সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এটি মেকি-বৈজ্ঞানিক ধারণাভিত্তিক একটি অস্পষ্ট ধারণা। সার্কুলার ইকোনমির সমালোচনার তিনটি বিষয় হতে পারে : ০১. রিসাইকেল করাটা খুবই জটিল, ০২. জ্বালানিসম্পদ কী করে রিসাইকেল করা হবে, এবং ০৩. ইনপুট ছাড়িয়ে যাবে আউটপুটকে।

সার্কুলার ইকোনমির ওপর নির্ভরতার ক্ষেত্রে প্রথম আঘাতটা হচ্ছে, আধুনিক পণ্যের রিসাইক্লিং প্রক্রিয়া শতভাগ দক্ষতা অর্জন থেকে এখনো অনেক দূরে। আসলে সার্কুলার ইকোনমি নিয়ে এখন আলোচনা জোরদার হলেও এটি নতুন কোনো বিষয় নয়। মধ্যযুগে প্রাচীন কাপড়কে রিসাইকেল করে তৈরি করা হতো কাগজ। বর্জ্য খাবার খাওয়ানো হতো মুরগিকে বা শূকরকে। আর পুরনো ভবনের ধ্বংসাবশেষ দিয়ে তৈরি হতো নতুন নতুন ভবন। সেকাল ও একালের মধ্যে পার্থক্যটা হচ্ছে শুধু ব্যবহৃত সম্পদের মধ্যে।

শিল্পায়নের আগে বিভিন্ন দ্রব্য থেকে যেসব পণ্য তৈরি করা হতো, সেগুলো গলে গিয়ে পরিবেশে মিশে যাওয়ার উপযোগী ছিল, নয়তো সেগুলো রিসাইকেল করার বা পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী ছিল। গলে যাওয়ার উপযোগী দ্রব্যের মধ্যে আছে কাঠ, নলখাগড়া অথবা শনজাতীয় গাছ। অন্যদিকে রিসাইকেল বা পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী দ্রব্যের মধ্যে আছে লোহা বা পাথর। আধুনিক পণ্যে আছে আরো বেশি বৈচিত্র্যময় নতুন বস্তু, যেগুলোর বেশির ভাগই গলে যায় না এবং সহজে রিসাইকেলও করা যায় না। উদাহরণ টেনে বলা যায়, মডেলার ফেয়ারফোন-২-এর ওপর পরিচালিত এক সাম্প্রতিক সমীক্ষা মতে, এই স্মার্টফোন ডিজাইন করা হয়েছে এমনভাবে, যাতে এটি রিসাইকেল করা যায় এবং এটি সচল থাকে দীর্ঘকাল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় সিনথেটিক ম্যাটেরিয়াল, মাইক্রোচিপ এবং ব্যাটারি রিসাইকলের কাজকে অসম্ভব করে তুলেছে। ফেয়ারফোন-২-এ ব্যবহৃত বস্তুর মাত্র ৩০ শতাংশ রিসাইকেল করা সম্ভব হয়। এলইডি লাইট নিয়ে পরিচালিত সমীক্ষায়ও একই ধরনের ফল পাওয়া যায়।

আজকের দিনের একটি পণ্য যত বেশি জটিল হয়, রিসাইকেল প্রক্রিয়ায়ও তত বেশি ধাপের প্রয়োজন হয়। এই প্রক্রিয়ার প্রতি ধাপে সম্পদ ও এনার্জি কিছুটা হারিয়ে যায়। অধিকন্তু, ইলেকট্রনিকের বেলায় উৎপাদন প্রক্রিয়া হয় কাঁচামালের তুলনায় আরো বেশি সম্পদ-ঘন উদ্যোগ। এর অর্থ দাঁড়ায়, কোনো পণ্যের একটি অংশ মাত্র রিসাইকেল করা সম্ভব। কিছু প্লাস্টিক অবশ্য রিসাইকেল করা হচ্ছে, তবে রিসাইকেল করা বস্তু দিয়ে তৈরি করা পণ্য কম মানসম্পন্ন হয় এবং তা শেষ পর্যন্ত বর্জ্যইে পরিণত হয়। রিসাইক্লিং প্রসেসের কম দক্ষতা সার্কুলার ইকোনমি ধারণার গুরুত্ব কমানোর জন্য যথেষ্ট। রিসাইক্লিং প্রসেসের সময়ে সম্পদের অপচয়ের ক্ষতিপূরণ সম্ভব হবে পৃথিবীর সম্পদের একমাত্র অতিমাত্রিক আহরণের মধ্য দিয়ে। রিসাইক্লিং প্রসেসের উন্নয়ন ঘটবে, কিন্তু রিসাইক্লিংয়ে সব সময়ই সবচেয়ে বেশি বস্তু উদ্ধার ও সবচেয়ে কম জ্বালানি ব্যবহারের মধ্যে একটি ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা থাকে, তবে তা কখনোই সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না। আর তাই আমাদের ভাবতে হয়, কী করে জ্বালানি রিসাইকেল করতে হয়।

দ্বিতীয় প্রশ্নটি হচ্ছে : কী করে জ্বালানিসম্পদ রিসাইকেল করা যাবে? কারণ বিশ্বে যে জ্বালানি সম্পদের ব্যবহার হয়, এর ২০ শতাংশই ফসিল জ্বালানি। এর ৯৮ শতাংশের বেশি জ্বালানিকে সম্পদ হিসেবে পুড়িয়ে ফেলা হয়, যা পুনরায় ব্যবহার বা রিসাইকেল করা সম্ভব নয়। উদাহরণ দিয়ে বলা চলে, বেশির পক্ষে বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে আসা অতিরিক্ত তাপ প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে অন্যান্য তাপ সম্পদের জায়গায়।

থার্মোডিনামিকসের দ্বিতীয় সূত্র অনুযায়ীর যখন কোনো জ্বালানি স্থানান্তর বা রূপান্তর করা হয়, তখন এর মানের পতন ঘটে। যেমন : একটি গাড়ি অথবা একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো সম্ভব নয়, একটির অতিরিক্ত তাপ দিয়ে অন্যটিকে। এর ফলে, সব সময়েই প্রয়োজন হবে ফসিল জ্বালানি উত্তোলন। তা ছাড়া, বস্তু রিসাইকেল করতে প্রয়োজন জ্বালানির, রিসাইক্লিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এবং রিসাইকল্ড ও টু-বি রিসাইকেলড ম্যাটেরিয়েলের রূপান্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমেও।

এ ক্ষেত্রে সার্কুলার ইকোনমির সমর্থকদের পক্ষ থেকে বলা হয় : ‘আমরা চলে যাবো ১০০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে।’ কিন্তু তা সার্কুলার ইকোনমির সার্কল বা চক্রকে চক্রায়িত রাখতে পারবে না : নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন কেন্দ্র ও এতদসংশ্লিষ্ট অবকাঠামো নির্মাণ ও পরিচালনা করতে গেলেও আমাদের প্রয়োজন হবে সম্পদের, জ্বালানিসম্পদ ও বস্তুগত সম্পদ উভয়ই। অধিকন্তু, নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন ও মজুদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিনির্ভর করে এমন বস্তুর ওপর, যা রিসাইকেল করা জটিল। এ কারণে সোলার প্যানেল, উইন্ড টারবাইন ও লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি রিসাইকেল করা হয় না। এগুলো মাটিচাপা দেয়া হয়, অথবা ভস্মীভূত করা হয়।
তৃতীয় বাধা হচ্ছে, ইনপুট ছাড়িয়ে যায় আউটপুটকে, যা সার্কুলার ইকোনমির নির্ভরযোগ্যতাকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে। বৈশ্বিক সম্পদের ব্যবহার- জ্বালানি কিংবা বস্তুগত- বছরের পর বছর বেড়ে চলেছে। বিগত শতাব্দীতে সম্পদের ব্যবহার বেড়েছে ১৪০০ শতাংশ। ১৯০০ সালে যেখানে সম্পদ ব্যবহার করা হয়েছে ৭ গিগাটন, সেখানে ২০০৫ সালে তা পৌঁছে যায় ৬২ গিগাটনে এবং ২০১০ সালে ৭৮ গিগাটনে। অর্থাৎ প্রতি বছর গড়ে সম্পদের ব্যবহার বাড়ছে ৩ শতাংশ হারে, যা জনসংখ্যা বেড়ে চলার হারের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।

প্রবৃদ্ধি সার্কুলার ইকোনমিকে অসম্ভব করে তুলেছে। এমনকি যদি সব কাঁচামালকে রিসাইকেল করা হয় এবং রিসাইকেল করাটা শতভাগ দক্ষও হয়। ব্যবহৃত দ্রব্যের যে পরিমাণ রিসাইকেল করা হয়, সব সময়ই তা প্রবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের চেয়ে কম হবে। এই ঘাটতি পূরণে আমাদের অব্যাহতভাবে আরো অধিক পরিমাণে সম্পদ বের করতে হবে। এই চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে যে পার্থক্য এতটাই বেশি হতে পারে, যা আমরা কল্পনা করতে পারছি না। আমরা যদি সম্পদের পুরো জীবনচক্রের দিকে তাকাই, তখন এটি স্পষ্ট হয়ে পড়বে, সার্কুলার ইকোনমির সমর্থকেরা বড় একটি ব্যবস্থার শুধু ছোট্ট একটি অংশকেই গুরুত্ব দেন। এর ফলে তারা সার্কুলার ইকোনমি কী করে চলে, সে সম্পর্কে তা ভুল ধারণা রাখেন।

আসলে সব সম্পদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ- অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশ রিসাইকেল করা হয় না, অথবা ভস্মীভূত করা হয় না, অথবা আবর্জনা স্তূপে ফেলে দেয়া হয়। এগুলো পুঞ্জীভূত হয় ভবনে, অবকাঠামোয় অথবা ভোগ্যপণ্যে। ২০০৫ সালে বিশ্বে ৬২ গিগাটন সম্পদ ব্যবহার করা হয়। খনি খাতের সম্পদ থেকে জ্বালানি সম্পদ (ফসিল জ্বালানি ও জৈব জ্বালানি) ও বর্জ্য বাদ দেয়ার পর অবশিষ্ট ৩০ গিগাটন ব্যবহার হয় বস্তুপণ্য তৈরিতে। এর মধ্যে ৪ গিগাটন ব্যবহার করা হয় এমন পণ্য তৈরিতে, যা স্থায়ী থাকে মাত্র এক বছর। এগুলো আমাদের কাছে পরিচিত ডিসপোজেবল প্রডাক্ট বা পরিত্যাজ্য পণ্য হিসেবে। ২৬ গিগাটন পুঞ্জীভূত হয় ভবনে, অবকাঠামোয় ও ভোগ্যপণ্যে, যেগুলো স্থায়ী হয় এক বছরে বেশি সময়। একই বছরে ৯ গিগাটন সারপ্লাস তথা অতিরিক্ত সম্পদ পরিত্যাজ্য হচ্ছে। এর অর্থ, ২০০৫ সালে পণ্যের মজুদ বেড়েছে ১৭ গিগাটন। যেখানে ২০০৫ সালে ১৩ গিগাটন (৪ গিগাটন পরিত্যাজ্য পণ্য ও ৯ গিগাটন ব্যবহারের অতিরিক্ত পণ্য) সম্পদের মধ্যে মাত্র ৪ গিগাটন কার্যকরভাবে রিসাইকেল করা সম্ভব হয়। মোট সম্পদের এক-তৃতীয়াংশই রিসাইকেল করা কিংবা ভস্মীভূত কিংবা আবর্জনাস্তূপে ফেলা সম্ভব হয়নি। এগুলো জমা হচ্ছে ভবনে, অবকাঠামোয় কিংবা ভোগ্যপণ্যে।

মাত্রা ৯ গিগাটন মাটিচাপা দেয়া হয়, নয়তো ভস্মীভূত করা হয় অথবা আবর্জনাস্তূপে ফেলা হয়। সার্কুলার ইকোনমিতে গুরুত্ব দেয়া হয় এই ৯ গিগাটন সম্পদের ওপর। কিন্তু যদি ওই সব সম্পদও রিসাইকেল করা হয় এবং রিসাইকেল প্রক্রিয়া শতভাগ দক্ষতাপূর্ণ হয়, তখনো এই সার্কল বা চক্র পূর্ণতা পাবে না, আর এর জন্য ৬৩ গিগাটন কাঁচামাল ও ৩০ গিগাটন বস্ত্র পণ্য আরো প্রয়োজন হবে।

যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা কাঁচামাল রাখব, মালের জীবনচক্র আবদ্ধ করা থেকে যাবে একটি ধূম্রজাল হিসেবেই, যদি বস্তু নীতিগতভাবে রিসাইকেলের যোগ্য ধরেও নেয়া হয়। যেমন : রিসাইকেল করা ধাতু সরবরাহ করতে পারবে বছরে মাত্র ৩৬ শতাংশ নয়া ধাতু। যদিও ধাতুর রয়েছে তুলনামূলকভাবে উচ্চ রিসাইকেল ক্যাপাসিটি, প্রায় ৭০ শতাংশ। এরপরও আমরা ব্যবহার করি অধিক পরিমাণ কাঁচামাল, যা রিসাইকেল করা বস্তুর তুলনায় বেশি। এমনিতেই শুরু থেকে সম্পদ আহরণের অর্থনীতিরও সম্প্রসারণ ঘটছে।

তা হলে সার্কুলার ইকোনমির সত্যিকারের চিত্রটা কী দাঁড়াল? এ কথা ঠিক, সম্পদের দায়িত্বশীল ব্যবহারের বিষয়টি অবশ্য একটি চমৎকার ধারণা। তবে তা অর্জন করতে রিসাইক্লিং বা পুনর্ব্যবহার এ ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত নয়। কারণ, সব সম্পদের ৭১ শতাংশই রিসাইকেল কিংবা পুনর্ব্যবহার করা সম্ভব নয়। এর মধ্যে ৪৪ শতাংশ সম্পদ হচ্ছে জ্বালানি সম্পদ আর ২৭ শতাংশ যোগ হচ্ছে বিদ্যমান মজুদে। অতএব, সার্কুলার ইকোনমির দাবি হবে- আমরা ব্যবহার করব আরো কম ফসিল, আর আমরা পণ্যে কম পরিমাণ কাঁচামাল ব্যবহার কমিয়ে আনব। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আমরা তৈরি বা ব্যবহার করব আরো কম গাড়ি, কম মাইক্রোচিপ, কম ভবন। এর ফলে ভারী হবে আমাদের লাভের পাল্লা, আমাদের প্রয়োজন হবে আরো কম সম্পদ।


আরো সংবাদ



premium cement