২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

একুশ মানে, অন্যায়ের প্রতিবাদ

-

কৃষ্ণচূড়ার পাতার ফাঁকে ফুল ফুটেছে রক্তবরণ / ফেব্রুয়ারির শহীদ ভাইয়ের মুখগুলোকে করছি স্মরণ।

এ জাতির মুখে যারা দিয়ে গেল ভাষা / বক্ষেতে দিলো আশা; / যারা দিলো প্রাণ, /তাদের স্মরণে আজি এই দিন হলো মহীয়ান।

কবিতার প্রথম দু’টি লাইন কবি আল মাহমুদের এবং পরের লাইনগুলো কবি সুফিয়া কামালের।  আমাদের মহান একুশে ফেব্রুয়ারিকে যারা মহান করেছেন, যাদের কারণে ভাষা আন্দোলন আজ এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, সেই শহীদদের পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছেন কবিদ্বয়।

রাঙা পলাশ-শিমুলের বসন্তের দিনেই সংঘটিত হয়েছিল অগ্নিঝরা ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির সেই দিনটিতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ নাম না জানা অসংখ্য শহীদ বুকের তাজা রক্ত অকাতরে ঢেলে দিয়ে রাজপথে প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন। তাদের আত্মদানেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মায়ের ভাষা বাংলার অধিকার। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’- বাঙালির এ দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়। সৃষ্টি হলো অমর একুশে।

সেই মহান সংগ্রামের শিক্ষা হচ্ছে- ‘একুশ মানে, মাথা নত না করা।’ বছর ঘুরে ফেব্রুয়ারি আসে, আর ফেব্রুয়ারির সিঁড়ি বেয়ে একুশ আসে। সময়ের আবর্তনে এবারো ফেব্রুয়ারি এসেছে এবং এসেছে অমর একুশে। আমাদের গর্ব ‘অমর একুশে’ এবার পূর্ণ করবে ৬৭ বছর। রক্তরঞ্জিত একুশে এখন শুধু বাঙালির নয়, গোটা বিশ্ববাসীর সম্পদ, ঐতিহ্য ও গর্বের উৎস। একুশে ফেব্রুয়ারি স্বীকৃতি লাভ করেছে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে। উনিশ শ’ বায়ান্নর এই ভাষা আন্দোলন ছিল নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুকঠিন লড়াই। ভাষা সংগ্রামের মধ্য দিয়েই সেদিন রোপিত হয়েছিল মহান স্বাধীনতার বীজ। রক্তসিঁড়ি বেয়ে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমরা অর্জন করেছি চূড়ান্ত বিজয়। লাল সবুজ পতাকা শোভিত নতুন মানচিত্রের বাংলাদেশ।

একুশে ফেব্রুয়ারি পরবর্তী সময়েও আমাদের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক ঘটনার মোড় পরিবর্তনের সাথে একুশে ফেব্রুয়ারির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পর্ক ছিল এবং আছে। ‘একুশে’ মানুষকে স্বৈরাচার এবং গণবিরোধী শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সাহসী করেছে। একুশের শহীদ মিনারে শপথ নিয়েই এ দেশের মানুষ পথ চলেছে প্রতিটি সংগ্রামে। বাংলাদেশের সাহিত্য, নাটক, সঙ্গীতসহ চিত্রকলা ও সংস্কৃতির সব মাধ্যমে একুশ যতখানি প্রভাব ফেলেছে, অন্য কোনো আন্দোলন বা সংগ্রাম ততখানি প্রভাব ফেলতে পারেনি। একুশের সাথে ভাষার সম্পর্ক থাকার কারণেই সেটি সম্ভব হয়েছে।

অমর একুশের আজ ৬৭ বছর হলেও, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সেøাগান ‘সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করার’ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। কবি আল মাহমুদ বলেছেন, বাংলা ভাষার রাজধানী ঢাকা। অর্থাৎ বাংলা ভাষাই বাংলাদেশের প্রাণ বা মূল কেন্দ্র। এই কথা যথার্থ। ভাষাই জগতকে আধুনিক করে তোলে। আমাদের মায়ের ভাষা বাংলাও সমাজকে আধুনিক ও সুন্দর করবে।

ভাষা নিয়ে, বাংলা সাহিত্য নিয়ে সারাটা জীবন যিনি কাজ করেছেন, আমাদের সেই অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ আর আমাদের মধ্যে নেই। ১৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার তিনি রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি... রাজিউন)। আমাদের গ্রাম প্রকৃতির এই শেকড়সন্ধানী কবির দীর্ঘ ৫০ বছরের কাব্য ও সাহিত্য চর্চা দেশের জন্য অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকল।

ইংরেজরা ২০০ বছর রাজত্ব করার পর ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ছেড়ে যায়। এ সময় তারা দেশকে দুই ভাগ করে দিয়ে গেছে। ’৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগ হয়। ভারত ও পাকিস্তান নামে দু’টি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হলো। আমাদের এই বাংলাদেশ তদানীন্তন পাকিস্তানের একটি অংশ ছিল। তখন এর নাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান’। আরেকটি অংশ পশ্চিম পাকিস্তান। পাকিস্তানের মানুষের ছিল নানা ভাষা। পাঞ্জাবের লোকদের ভাষা পাঞ্জাবি, সিন্ধুর লোকদের ভাষা সিন্ধি, অল্প কিছু মানুষের ভাষা উর্দু আর পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ভাষা বাংলা। ১৯৪৭-এর স্বাধীনতার পরপরই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় শাসকেরা শুরু করে চক্রান্ত। পাকিস্তানের বেশির ভাগ মানুষের ভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দু ও ইংরেজিকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা প্রদান করা হলো।

পূর্ব পাকিস্তানের নেতারা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানালেন। কিন্তু প্রধানত পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকেরা তা মানতে চাইলেন না। তাই ভাষার দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়। তমদ্দুন মজলিস নামের একটি সংগঠন এ আন্দোলন শুরু করে, যার নেতৃত্বে ছিলেন অধ্যাপক আবুল কাসেম। এরপর ছাত্রছাত্রীরা রাজপথে নেমে আসে। ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পূর্ব পাকিস্তান সফরে আসেন। ২১ মার্চ ঢাকার রমনার মাঠে (রেসকোর্স ময়দান, বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক জনসভায় জিন্নাহ ঘোষণা করেন- ‘উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’। ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কার্জন হলের বিশেষ সমাবর্তনে দেয়া ভাষণেও তিনি একই উক্তি করেছিলেন। এর বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়।

কার্জন হলে উর্দুর পক্ষে জিন্নাহর বক্তব্যের প্রতিবাদে ‘নো নো’ বলে প্রতিবাদ জানান ভাষাসংগ্রামী আবদুল মতিন। তিনি ‘ভাষা মতিন’ নামে পরিচিত। একই সাথে অন্যরাও প্রতিবাদ জানান। এ সময় কিছুক্ষণের জন্য জিন্নাহ চুপ থেকে আবার বক্তব্য শুরু করেন এবং তার মন্তব্যে অটল থাকেন। তবে এ ঘটনার পর গোটা পূর্ব পাকিস্তানে শুরু হয় আন্দোলন। ভাষার জন্য এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে শহরে, গ্রামগঞ্জে। পেরিয়ে যায় কয়েকটি বছর। ১৯৫০ সালের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়; এর আহ্বায়ক ছিলেন আবদুল মতিন।

এরপর আসে ১৯৫২ সাল। ভাষা আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিতে থাকে। ওই সময় জিন্নাহ ও লিয়াকত আলী খান বেঁচে নেই। প্রধানমন্ত্রী তখন খাজা নাজিম উদ্দিন। ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি তিনি রাজধানী করাচি থেকে ঢাকায় আসেন। পল্টন ময়দানে মুসলিম লীগের সমাবেশে বলেন, ‘প্রাদেশিক ভাষা কী হবে, তা ঠিক করবে প্রাদেশিক পরিষদ। তবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু।’ তার এই বক্তব্য তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ সেøাগানে ছাত্ররা বিক্ষোভ শুরু করে দেয়। ৩০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট পালিত হয়। ৩১ জানুয়ারি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে বার লাইব্রেরিতে ‘সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হলে এর আহ্বায়ক হন ছাত্র নেতা কাজী গোলাম মাহবুব। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারি সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল, জনসভা ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। কিন্তু এ কর্মসূচি বানচাল করার জন্য প্রদেশের নুরুল আমীন সরকার ২০ ফেব্রুয়ারি আকস্মিকভাবে ১৪৪ ধারা জারি করে।

ওই দিনই মাইকযোগে ২১ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি ঢাকার সর্বত্র প্রচার করা হয়। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ নবাবপুরে আওয়ামী লীগ অফিসে ১৪৪ ধারা ভাঙা হবে কি হবে না- এ ব্যাপারে বৈঠকে বসে। অলি আহাদসহ কয়েকজন ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে জোরালো বক্তব্য দেন। তবে ওই বৈঠকে ১১-৪ ভোটে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করা এবং হরতাল প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে কয়েকজন সংগ্রামী ছাত্রনেতার উদ্যোগে বিভিন্ন হলের ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের প্রতিনিধিরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের পুকুরপাড়ে মিলিত হন। এদের মধ্যে ছিলেন গাজীউল হক, আবদুল মোমেন, মোহাম্মদ সুলতান, এম আর আখতার মুকুল, আহমদ রফিক, জিল্লুর রহমান প্রমুখ।

তারা যেকোনো মূল্যে ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন। পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকেই বিভিন্ন স্কুল-কলেজ থেকে ছোট ছোট মিছিল এসে জড়ো হতে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের আমতলায়, যা এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ইমার্জেন্সির সামনের জায়গা। এই আমতলায় গাজীউল হকের সভাপতিত্বে ছাত্রদের সমাবেশ হয়। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগানে কেঁপে ওঠে চার দিক। সমাবেশ থেকে ছাত্রনেতারা বিশেষ করে ‘ভাষা মতিন’ খ্যাত আবদুল মতিন ঘোষণা করেন, ১৪৪ ধারা আমরা ভাঙবই। আবদুস সামাদ আজাদ তার বক্তব্যে ১৪৪ ধারা ভাঙার কৌশল বর্ণনা করে বলেন, ১০ জন ১০ জন করে মিছিল নিয়ে আমরা ১৪৪ ধারা ভাঙব। প্রথম ১০ জনের মিছিলের নেতৃত্ব দেন মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান শেলী (যিনি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়েছিলেন)।

এভাবেই সেদিন মিছিল নিয়ে ১৪৪ ধারা ভেঙে এগিয়ে যেতে থাকেন ছাত্রছাত্রীরা। পুলিশ তাদের বাধা দেয়, লাঠিপেটা করে এবং কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররাও পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছোড়ে। এ অবস্থায় বহু ছাত্রকে পুলিশ গ্রেফতার করে জেলে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি এতটাই ঘটে যে, বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের সামলাতে ব্যর্থ হয়ে আইনপরিষদ ভবনের দিকে অগ্রসরমান মিছিলের ওপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান রফিউদ্দিন আহমদ, আবদুল জব্বার, আবুল বরকত (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান এম এ শ্রেণীর ছাত্র)। আবদুস সালাম আহত হয়ে হাসপাতালে মারা যান। আহত হন আরো অনেকে। এ ঘটনার পর সারা পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল পালিত হয়। ছাত্রদের আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে এবং গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়।

ভাষার জন্য এভাবে প্রাণ দেয়া এবং রাজপথে রক্ত দেয়ার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে নতুন নজির সৃষ্টি করে। রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে, প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলা ভাষার মর্যাদা। আমাদের এই ভাষা আন্দোলন জাতিসঙ্ঘের স্বীকৃতি লাভ করেছে। ১৯৯৯ সালে জাতিসঙ্ঘ ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদ দিবস অমর একুশের দিনটি দেশে দেশে পালিত হচ্ছে। বাংলা ভাষার আন্দোলনকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য প্রতিষ্ঠিত বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এ বছরও চলছে এ মেলা। বাংলা ভাষায় প্রকাশিত হচ্ছে শত শত বই।

বায়ান্নর মহান ভাষা আন্দোলন ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ। সেদিন জীবন দিয়ে এ দেশের মানুষ তার মায়ের ভাষার অধিকার রক্ষা করেছিল। তেমনি একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি বাংলাদেশের স্বাধীনতা। সত্তরের নির্বাচনের ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করে পাকিস্তানি শাসকরা যে অন্যায় করেছিলেন তারই জোরালো প্রতিবাদ ছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সেই অন্যায় থেকে আজো আমরা মুক্ত হতে পারিনি। দেশের জনগণ এখনো অন্যায়ের শিকার হচ্ছে। দেশে গণতন্ত্র নেই, সুশাসন নেই, আইনের শাসন নেই। নেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের অধিকার। কর্তৃত্ববাদী শাসন চেপে বসেছে বাংলাদেশের ওপর।

জনগণ রাষ্ট্রীয় প্রতারণার শিকার হয়েছে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনে। পাঁচ বছর পরপর মানুষ একবার ভোটের অধিকার প্রয়োগের সুযোগ পায়। কিন্তু গত দু’টি নির্বাচনে সেই অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪ জনকে ‘নির্বাচিত’ বলে ঘোষণা দেয়া হয়। আর সংসদের বাকি ১৪৬ আসনে ৫ শতাংশেরও কম ভোটে প্রার্থী নির্বাচন করা হলো। এবার ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনটি হয়ে যায় ২৯ ডিসেম্বর। অর্থাৎ আগের রাতে ব্যালট পেপার সিল মেরে বাক্সভর্তি করে রাখা হয় এবং ৩০ ডিসেম্বর সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে জনগণ ভোট দেয়ার কোনো সুযোগই পায়নি। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় বাহিনী মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। বোবা দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখা ছাড়া অসহায় জনগণের করার আর কিছুই ছিল না। এত বড় অন্যায় করার পরও ক্ষমতাসীন দলটির কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। জনগণের ভোটে নাকি তাদের ভূমিধস বিজয় হয়েছে! এমনটাই প্রচার করছে।

অর্থ ও পেশিশক্তির বলে দেশ এবং জনগণকে জিম্মি করে এত বড় অন্যায় করা হয়েছে। সরকারি দলের বাইরে কোনো রাজনীতি নেই। মূলত একদলীয় শাসন চলছে। ক্ষমতাসীন দলের বাইরে অন্যদের কার্যত কথা বলার অধিকার নেই। তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। খুন, গুম ও গুপ্তহত্যা আজো চলছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা একের পর এক সংঘটিত হচ্ছে। ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা উধাও হয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে যেন কিছুই করার নেই। একুশ অন্যায়ের প্রতিবাদ করার ভাষা আমাদের শিখিয়েছিল। সেই ভাষা যেন আমরা ভুলে গেছি।

কিন্তু না, সেটা ভুললে চলবে না। মনে রাখতে হবে, একুশ আমাদের অস্তিত্ব। একুশকে কেন আমরা ভুলব? একুশ মানে ‘মাথা নত না করা’। একুশের ৬৭ বার্ষিকীতে, আবারো আমাদের উচ্চারণ হোক অন্যায়ের প্রতিবাদ আমরা করবই।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় প্রেস ক্লাব


আরো সংবাদ



premium cement