অসুবিধাগ্রস্তদের জন্য ইসলামের অর্থনৈতিক বিধান
- শাহ্ আব্দুল হান্নান
- ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৯:৩৩
কিছু দিন আগে নয়া দিগন্তে করজে হাসানা সম্পর্কে লিখেছি। তার মূল কথাগুলো নিম্নে উল্লেখ করেছি। পবিত্র কুরআনের কয়েকটি আয়াতে করজে হাসানার কথা বলা হয়েছে। ‘করজে হাসানা’র অর্থ হচ্ছে এমন ঋণ বা করজ দেয়া, যেটা সময়মতো পরিশোধ করা হবে; কিন্তু দাতা কোনো অতিরিক্ত অর্থ বা বেনিফিট নিতে পারবেন না। এটার উদ্দেশ্য ছিল সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন পূর্ণ করা। সেটি হচ্ছে, ব্যবসাবাণিজ্যের বাইরেও নানা কারণে মানুষের বা প্রতিষ্ঠানের করজে হাসানার প্রয়োজন হতে পারে। সব সময় ব্যক্তির কাছে প্রয়োজনীয় অর্থ থাকে না, কিন্তু সম্ভাবনা থাকে যে পরে তা থাকবে এবং সেই অর্থ দিয়ে করজ বা ঋণ পরিশোধ করা যাবে। সুদকে ইসলাম হারাম করেছে। ফলে কোনো ব্যক্তির পক্ষে সুদে অর্থ নেয়া সম্ভব নয় বা উচিত হবে না।
এ জন্যই আল্লাহ তায়ালা করজে হাসানার বিধান দিয়েছেন, যেন মানুষ সাময়িকভাবে করজে হাসানা নিতে পারে সুদ ছাড়া এবং পরে তা শোধ করে দিতে পারে। এ প্রসঙ্গে করজে হাসানার ওপর কুরআনের দু’টি আয়াত উল্লেখ করছি : ‘তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে আল্লাহকে করজে হাসানা দিতে প্রস্তুত। তাহলে আল্লাহ তাকে কয়েক গুণ বেশি ফিরিয়ে দেবেন। হ্রাস-বৃদ্ধি উভয়ই আল্লাহর হাতে নিহিত। আর তাদের নিকট তোমাদের ফিরে যেতে হবে। (বাকারা-২৪৫)।
আল্লাহ তায়ালা বনি ইসরাইলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন ‘এবং আমি তাদের মধ্য থেকে ১২ জন সরদার নিযুক্ত করেছিলাম।’ আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদের সাথে আছি। যদি তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করো, জাকাত দিতে থাকো, আমার নবীদের প্রতি বিশ্বাস রাখো, তাঁদের সাহায্য করো এবং আল্লাহকে উত্তম পন্থায় করজে হাসানা দিতে থাকো; তবে আমি অবশ্যই তোমাদের গুনাহ দূর করে দেবো এবং অবশ্যই তোমাদেরকে উদ্যানসমূহে প্রবিষ্ট করব, যেগুলোর তলদেশ দিয়ে নির্ঝরিনীসমূহ প্রবাহিত হয়। অতঃপর, তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি এরপরও কাফের হয়, সে নিশ্চিতভাবেই সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে।’ (আল মায়েদাহ-১২)।
ওপরের কুরআনের আয়াতগুলো থেকে আপনারা করজে হাসানার ব্যাপারে জানতে পারলেন। প্রতিটিতে করজে হাসানা দেয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আল্লাহ এত আয়াতে কেন করজে হাসানার বিষয়টি বললেন, এটা আমাদের চিন্তা করা দরকার। ‘আল্লাহকে ঋণ দেয়া’র অর্থ হচ্ছে গরিব-দুঃখীদের, অভাবীদের, যাদের প্রয়োজন তাদের ঋণ দেয়া। এটা ইসলামী অর্থনীতির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য, যা কমে গেছে। করজে হাসানা না থাকলে সুদের প্রচলন বাড়ে, বাংলাদেশে এটাই হয়েছে। এখানে মহাজনী সুদ ব্যবসায় বা ব্যক্তিপর্যায়ে সুদের ব্যবসা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের সুদের হার মাসিক ১০ শতাংশ।
অর্থাৎ বছরে ১২০ শতাংশ, যা খুবই ভয়াবহ। এই ব্যবসায় বাংলাদেশের কিছু মুসলিম নামধারী ব্যক্তি করছে। পত্রিকায় বিভিন্ন সময় রিপোর্টে দেখা যায়, এসব সুদখোরের তাড়নায় মানুষ পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কেউ কেউ আত্মহত্যা পর্যন্ত করছে। তাই করজে হাসানার ব্যাপক প্রচলন করতে হবে ব্যক্তিপর্যায়ে ও প্রতিষ্ঠানপর্যায়ে। প্রত্যেক ব্যাংক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে একটি আলাদা ‘করজে হাসানা ফান্ড’ থাকা দরকার। আশা করি, এ ব্যাপারে আপনারা জনমত সৃষ্টি করবেন।
এখন আজকের বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করব। ইসলামে যাদের আর্থিক সহায়তা দরকার, তাদের জন্য তিনটি ব্যবস্থা রয়েছে। একটি হচ্ছে জাকাত, যার মাধ্যমে দরিদ্রের সমস্যার সমাধান করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জাকাতের খাতের মধ্যে ‘ফির রিকাব’ রয়েছে। অর্থাৎ যারা কোনোভাবে বন্দী তাদেরকে মুক্ত করা। এ থেকে জেলের অসহায় বন্দীদের মুক্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ ছাড়া রয়েছে ‘ফিল গারেমিন’ (ঋণগ্রস্তদের মুক্ত করা), এ থেকে সব ঋণগ্রস্তকে ঋণ থেকে মুক্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা যায়। জাকাতের আরেকটি খাত হচ্ছে ‘ইবনুস সাবিল’ (পথের লোকদের জন্য), অর্থাৎ পথিকদের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা করা; যার মধ্যে রাস্তায় আশ্রয়কেন্দ্র বা সরাইখানা বানানো অন্তর্ভুক্ত। এসব স্থানে পথিকদের খাবারের ও ঘুমানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে।
ইসলামের আর্থিক সহায়তার দ্বিতীয় দিক হচ্ছে সাদকা বা দান, যা ফেরত নেয়া হয় না। এ থেকে যারা ফেরত দিতে সক্ষম নয়, তাদের সহায়তার ব্যবস্থা করা যায়। এর ব্যাপক প্রচলন প্রয়োজন।
আর্থিক সহায়তার তৃতীয় দিক হচ্ছে কারজুল হাসানা। তার ওপর আলোচনা আগেই করা হয়েছে। অনেকে বলেন, কারজুল হাসানা দিলে ফেরত পাওয়া যায় না। এ বিষয়ে উত্তর হচ্ছে- কারজুল হাসানা শুধু তাদেরকেই দেবেন, যাদের অসুবিধা সাময়িক এবং পরবর্তীকালে তা ফেরত দিতে সক্ষম। তাদেরকে ফেরত দেয়ার জন্য উপযুক্ত সময় বেঁধে দিতে হবে এবং কিস্তির মাধ্যমে ফেরতের ব্যবস্থাও থাকতে হবে। যারা ফেরত দিতে পারে না, তাদের জন্য করজে হাসানা নয়। তাদের জন্য ইসলামের বিধান হচ্ছে সাদকা বা জাকাত, যা ফেরত দিতে হয় না।
ইসলামী অর্থনীতির অন্যান্য দিক হচ্ছে উন্নয়নের অর্থনীতি, ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা, ইসলামী বীমা বা ইন্স্যুরেন্স, কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা-যাতে রাষ্ট্র সব অসহায়ের দায়িত্ব গ্রহণ করে। ইসলামী অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য হলো- উন্নয়ন, একই সাথে দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনীতিতে সমতা সৃষ্টি করা, অতি ধনী যাতে তৈরি না হয় সে দিকে খেয়াল রাখা, বেকার সমস্যার সমাধান ইত্যাদি।
আশা করি, পাঠকেরা ইসলামের সামগ্রিক অর্থনীতি, একই সাথে সহায়তার অর্থনীতির বিষয়ে বুঝতে পেরেছেন। এ জন্য সম্ভব হলে ড. উমর চাপরার লিখিত অর্থনীতির ওপর চারটি বই আছে, এগুলো পড়তে পারেন।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা