২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

রাজনৈতিক উত্তরাধিকার ও ডাকসু নির্বাচন

-

রাজনীতি বাংলাদেশের সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করছে। উন্নত বিশ্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক বিবাদ-বিসংবাদ থেকে দূরে রাখা হয়। আর বাংলাদেশে রাজনীতিবিদেরা শিক্ষার্থীদের ‘ক্ষমতায় আরোহণের সিঁড়ি’ হিসেবে ব্যবহার করছেন। ডাকসু নির্বাচনের মতো শিক্ষাঙ্গনভিত্তিক কার্যক্রমকেও রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের সূত্রে বিবেচনা করা হচ্ছে। একটি প্রহসনমূলক জাতীয় নির্বাচনের পর একই কৌশলে ডাকসু নির্বাচনে ‘তাদের’ জিতিয়ে আনার কৌশলগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠছে। জাতীয় নির্বাচনের মতোই বিরোধী পক্ষকে যথেষ্ট সময় না দিয়ে তড়িঘড়ি করে এর তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।

বিরোধী ছাত্রসংগঠনগুলোর উত্থাপিত, একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের দাবি উপেক্ষা করে শাসক দলের ছাত্রসংগঠনের চাহিদা মোতাবেক আবাসিক হলগুলোতে ডাকসুর ভোটকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ১১ ফেব্রুয়ারি ডাকসু নির্বাচনের প্রধান কর্মকর্তা অধ্যাপক মো: এস এম মাহফুজুর রহমান এসব ঘোষণা দিয়েছেন। ডাকসু নির্বাচন পরিচালনার জন্য তার নেতৃত্বে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে, এর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী ছাত্রসংগঠনগুলো। কারণ, ওই কমিশনে ভিন্ন মতের কাউকে স্থান দেয়া হয়নি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিরোধী ছাত্রসংগঠনগুলো একপেশে সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মিছিল বের করেছে। সরকার সমর্থক ছাত্রসংগঠন ঘোষিত তফসিলকে স্বাগত জানায় সাথে সাথেই। বিএনপি সমর্থক জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল অভিযোগ করে, ‘সরকার সমর্থক ছাত্রসংগঠনকে জেতানোর আয়োজন করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।’ উল্লেখ্য, বিগত জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও সরকারি প্রশাসনকে ক্ষমতাসীনদের জেতানোর কাজে ন্যক্কারজনকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। অবশ্য ক্ষমতাসীন দলের এই আচরণ নতুন নয়। অতীতে ফিরে যাওয়া যাক।

১৯৭৩ সালের কথা। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রবলভাবে আন্দোলিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৭২ সালে স্বাধীন দেশে প্রথম ডাকসু নির্বাচনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এবং মাহবুব জামান যথাক্রমে ভিপি এবং জিএস নির্বাচিত হন। স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয় গৌরব নিয়েও ছাত্রলীগ ডাকসু জয় করতে পারেনি। ডাকসুর প্রথম নির্বাচনের মাধ্যমে বামপন্থীদের একটি বুদ্ধিবৃত্তিক বিজয় সূচিত হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে সরকারের লেজুড়বৃত্তির কারণে তারা সেই অগ্রযাত্রাকে ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়। একই সময়ে, জাসদ ছাত্রলীগের প্রবল প্রতিবাদী ভূমিকা ছাত্রসমাজের মধ্যে তাদের অসম্ভব জনপ্রিয় করে তোলে। আমার মনে পড়ে, মাহমুদুর রহমান মান্না এবং আফতাব আহমদের সেই বটতলা কাঁপানো বক্তৃতা। ১৯৭৩ সালে ডাকসু নির্বাচনে সরকারপক্ষ তাদের ভরাডুবির শঙ্কায় ছাত্রলীগ-ছাত্র ইউনিয়ন সমন্বয়ে যৌথ প্যানেল দেয়। সে সময় ছাত্র ইউনিয়ন থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, আজকের আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য নূহ উল আলম লেনিন। জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন রাজনৈতিকভাবে হারিয়ে যাওয়া ছাত্রনেতা ইসমত কাদের গামা। তাদের স্লোগানটি আজো কানে বাজে- ‘গামারে গামা-লেনিন গামা’।

অপর দিকে জাসদ ছাত্রলীগের স্লোগান ছিল- ‘ভরাডুবি জেনে তারা যৌথ প্যানেল দিলো গো’। ডাকসু নির্বাচনের দিনটি ছিল আনন্দ-উৎসবমুখর। কিন্তু দিনশেষে সেই আনন্দ-উৎসব সম্পূর্ণ ম্লান হয়ে যায়। ছাত্রলীগের সে দিনের ‘সোনার ছেলে’রা ব্যালট বাক্স হাইজ্যাক করে তাদের পরাজয়কে ‘পরাভূত’ করেছিল। সময় যতই অতিক্রান্ত হয়, ততই তাদের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। পরবর্তী ডাকসু নির্বাচনে মান্না-আখতারের নিরঙ্কুশ বিজয়কে হাইজ্যাক করার মুরোদ আর তাদের ছিল না। বরং বাকশাল ঘোষণা করে তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকতে হয়। ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরও ডাকসুর নির্বাচন অব্যাহত থাকে। এরশাদের সামরিক শাসনও ডাকসু নির্বাচনকে ব্যাহত করেনি। ১৯৯০ সালে ডাকসুর সর্বশেষ নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বিপুল ভোটে বিজয় ছিল একটি রাজনৈতিক মাইলফলক। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ডাকসু ভিপি আমানুল্লাহ আমান এবং জিএস খায়রুল কবির খোকন ভাগ্যনির্ধারণী ভূমিকা পালন করেন।

প্রতিষ্ঠিত হয় গণতন্ত্র। ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত- এই দীর্ঘ ২৮ বছরেও ডাকসু নির্বাচন না হওয়া জাতির ইতিহাসে একটি দুর্ভাগ্যজনক অধ্যায়। সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, গণতান্ত্রিক শাসনের দাবিদারেরা কেন গণতন্ত্রের ওই গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলনকে এড়িয়ে গেলেন? মূল উত্তরটি সম্ভবত, এ দেশের ছাত্র যুবাদের প্রতিবাদী চরিত্র। এখন সুবিধাবাদ আমাদের ছাত্র যুবাদের অনেককে বশীভূত করে ফেলেছে। কিন্তু তখন কায়েমি স্বার্থবাদের বিপক্ষে তাদের একটি সতত স্বাভাবিক ভূমিকা ছিল। প্রতিষ্ঠিত সরকারের অন্যায় ও অনাচারের বিরুদ্ধে ছাত্র যুবাদের প্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠান ডাকসুকে সব সরকারই ভয় পেয়েছে। বিশেষ করে, বিগত ১০ বছরে জনবিচ্ছিন্ন এবং শুধু শক্তি প্রয়োগে টিকে থাকা সরকারের জন্য ডাকসু হতে পারত একটি অবশ্যম্ভাবী চ্যালেঞ্জ।

‘বেটার লেট দ্যান নেভার’- ২৮ বছর পরে হলেও ডাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে মার্চের ১১ তারিখে। তাহলে কি সরকারি দল ডাকসুকে তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ মনে করছে না? এর উত্তরে পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, জাতীয় রাজনীতির যথার্থ উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে ডাকসু নির্বাচনে-এটি নিশ্চিত হওয়ার পরই সরকার ডাকসু নির্বাচনে ‘সবুজ সঙ্কেত’ দিয়েছে। সবাই জানে, উচ্চ আদালতের রায়ের বাধ্যবাধকতাও এ ক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করেছে। বিগত ৪৭ বছরের মধ্যে এই সময়টিই মনে হয় সবচেয়ে ‘নিরাপদ’ বর্তমান ক্ষমতাসীনদের জন্য। ইতোমধ্যে তারা রাষ্ট্রের অপরিহার্য অঙ্গ সংগঠন- আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগকে শতভাগ দলীয়করণ করতে সক্ষম হয়েছেন। গত ৩০ ডিসেম্বরের স্টেট মেশিনারিকে আজ্ঞাবহ বানিয়ে নিঃশব্দে নিরাপদে নির্বাচনে ‘বিজয়’ অর্জন করেছে।

এর আগে খুন, জখম, গুম, হামলা ও মামলা দিয়ে গোটা দেশকে কারাগারে পরিণত করেছে। জাতীয় নির্বাচনে এই ভীতির রাজত্ব কায়েম করার আগে ডাকসুর মতো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। বাংলাদেশের এমন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই যা তাদের অন্যায়, নির্যাতন ও সন্ত্রাসে আক্রান্ত হয়নি। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে কী পরিবেশ বিরাজ করছে, গণমাধ্যমের বদৌলতে সচেতন সবাই কমবেশি তা জানেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক শিক্ষার্থী এবং অপর একটি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার সুবাদে আমার নিজের আরেকটু বেশি জানার কথা। ডাকসু নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধীদের জন্য নিষিদ্ধ আবাসিক হলগুলোতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার জোরালো দাবি উঠেছে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, সহাবস্থানের সব গল্প জানার পরও অন্তত মুখে মুখে তা নিশ্চিত করেছেন। কী রকম সহাবস্থান?

একটি গল্প বলি। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে যখন আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে তখন আগের ট্রাডিশন মতো ছাত্রলীগের ছেলেরা ছাত্রদলের ছেলেদেরকে হল থেকে বিতাড়ন করে। আমি তখন একটি হলের আবাসিক শিক্ষক। প্রশাসনের তরফ থেকে আমাদের সহাবস্থান নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। আমরা উভয়পক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনা করে ইচ্ছুক ছাত্রদল নেতাকর্মীদের হলে উঠিয়ে দিই। ছাত্রলীগ আমাদের আশ্বস্ত করেছিল। সংশ্লিষ্ট হলের ছাত্রদলের সভাপতি পরদিন সকালে যে ঘটনা শোনায় তা রীতিমতো ভীতিপ্রদ ও বিব্রতকর। রাত ১টার সময় ছাত্রলীগের কিছু জুনিয়র নেতাকর্মী ওই ছাত্রদল নেতার রুমে যায়। তারা তাকে বলে, সিনিয়ররা তার ভালো-মন্দ দেখভাল করার নির্দেশ দিয়েছেন তাদের। তারা এসেছে তার কোনো ‘অসুবিধা’ হচ্ছে কি না তা জানতে। এভাবে ছাত্রলীগ ওই কক্ষে রাত ২টা, ৪টা ও সকাল ৬টায় হানা দেয়। সকালে ছাত্রদলের ওই নেতা আমার বাসায় এসে কান্নায় ভেঙে পড়ে।

এভাবে ছলে-বলে-কৌশলে আল্টিমেটলি ছাত্রলীগ, ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রদলকে বিতাড়ন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এর চেয়ে আরো লোমহর্ষক, বিপজ্জনক ও বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটছে। সেখানে ছাদ থেকে ফেলে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ‘শিবির’ বলে গণপিটুনি দেয়ার সংবাদ আছে। নারী কেলেঙ্কারির বদনাম দিয়ে বিতাড়ন করা হয়েছে। আত্মহত্যার অভিযোগ রয়েছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও শিক্ষকদের কলামে এসব অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে। অসহিষ্ণুতার মাত্রা এতটা তীব্র হয়েছে যে, ছাত্রলীগের ছেলেরা কোটা আন্দোলনের মতো সাধারণ ছাত্রদের স্বার্থ আদায়ের আন্দোলনকেও প্রতিরোধ করতে চেয়েছে। ‘নিরাপদ সড়ক’ আন্দোলনে তারা সরকারের ‘হেলমেট বাহিনী’ হিসেবে কাজ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এখন তারা এতটাই বেপরোয়া যে, পুলিশকে পর্যন্ত পিটুনি দিচ্ছে। এ অবস্থায় এটা প্রতীয়মান হচ্ছে যে, ছাত্রলীগ এ রকম নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে জাতীয় নির্বাচন কৌশলের অনুসরণে ডাকসু নির্বাচনে জয়লাভের পাঁয়তারা করছে। সেখানে আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করার সুযোগ নেই। কিন্তু ভয়-ভীতি দেখিয়ে সাধারণ ছাত্রদের ভোটদানে বিরত রাখা, জাল ভোট দেয়া এবং প্রকাশ্যে ভোট দেয়ার কৌশল অনুসরণের সুযোগ রয়েছে।

জাতীয় নির্বাচনে যেমন বিরোধী দলকে সুদূরপ্রসারী কৌশলে এবং সংলাপ প্রতারণার মাধ্যমে অংশীজন করা হয়েছে, তেমনি ডাকসু নির্বাচনে আলাপ-আলোচনা এবং লোক দেখানো ভদ্রতার আবরণ দিয়ে ছাত্রদলকে নির্বাচনে আনার কৌশল আঁটা হচ্ছে। ছাত্রদলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগের বিজয় নিশ্চিত করতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের এবং সরকারের ‘কৃতিত্ব’ বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। সরকারের সরাসরি আনুকূল্যে যেমন তারা জাতীয় নির্বাচনে ‘নিরঙ্কুশ বিজয়’ অর্জন করেছে, তেমনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগকে আনুকূল্য দেয়ার জন্য রাখঢাক না করেই খোলাখুলি মাঠে নেমেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির রাজনৈতিক বক্তৃতা-বিবৃতি শুনে বোঝার উপায় নেই যে, তিনি একটি ঐতিহ্যবাহী ও মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং তিনি রাজনৈতিক পদাধিকারী নন।

তাদের আনুকূল্যের প্রমাণ হিসেবে সিন্ডিকেটে গৃহীত সর্বশেষ সিদ্ধান্তের উল্লেখ করা যায়। বিরোধী দলের সব ছাত্রসংগঠনের দাবি ছিল, যারা সরাসরি ছাত্র নয় তাদের ভোটাধিকার এবং প্রার্থী হওয়ার সুযোগ না দেয়া। কিন্তু ২৯ জানুয়ারি সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩০ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরাও ভোট দিতে এবং প্রার্থী হতে পারবেন। এর অর্থ হলো ছাত্র রাজনীতিতে বহুল কথিত চাচা-খালুদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেয়া হলো। ইতপূর্বে একটি সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সরাসরি শিক্ষার্থীর নীতি গ্রহণ করলে ছাত্রলীগসহ অনেক ছাত্রসংগঠনের বড় নেতারা প্রার্থিতার সুযোগ পাবেন না। বিরোধী ছাত্রসংগঠনগুলোর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি ছিল, আবাসিক হলের পরিবর্তে অ্যাকাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন। সিন্ডিকেট সে দাবিও নাকচ করে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রার্থিতা এবং ভোটকেন্দ্র উভয় সিদ্ধান্তই ছাত্রলীগের দাবির অনুকূলে গ্রহণ করেছে।

আরো উদ্বেগের বিষয় এই যে, ডাকসু নির্বাচন পরিচালনার জন্য যে তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে তার মধ্যে প্রায় সবাই সরকারি দলের লোক। সাবেক ডাকসু ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না এদের ‘দলবাজ’ শিক্ষক বলে অভিহিত করেছেন। সুতরাং তাদের তত্ত্বাবধানে ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ছাত্রলীগকে ‘আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন’ বলে অভিহিত করেন।

তিনি আরো বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ দেশে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে। শুধু উন্নয়নই নয়, বিশেষ করে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে ছাত্রসমাজের মধ্যে সরকার বেশ সাড়া ফেলেছে। সে কারণে ছাত্রলীগ সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে বলে বিশ্বাস করি।’ অপর দিকে তফসিল ঘোষণার পর এক ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান বলেন, ডাকসু নির্বাচন যেন জাতীয় নির্বাচন বা বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মতো না হয়। তিনি আরো বলেন, ‘সরকার ক্ষমতায় আসীন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারের নিয়োজিত। ফলে দুশ্চিন্তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।’ সরকার ও বিরোধী দলের এই বক্তব্য জাতীয় নির্বাচনের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার।

গোটা জাতি ও রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান জবরদখলের পর, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতিবাদী কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য এখন ক্ষমতাসীন সরকার ডাকসু দখলের পরিকল্পনা আঁটছে। জাতীয় নির্বাচনের মতো এটি উভয় সঙ্কট বটে। অংশগ্রহণ করলে প্রকারান্তরে ক্ষমতাসীন দলের অবৈধ বিজয়কে বৈধতা দেয়া হয়। অপর দিকে, অংশগ্রহণ না করলে বিজয়ের সম্ভাবনাকে পরখ করা যায় না। বলতে গেলে, জাতি ক্ষমতাসীনদের ওপর মনে মনে বিগড়ে আছে। কোটা আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন প্রজন্ম দৃশ্যত তাদের ওপর ক্ষুব্ধ। আগামী ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের এ ক্ষোভের প্রকাশ ঘটা স্বাভাবিক। তাই সময়ের দাবি হচ্ছে- দলমত নির্বিশেষে বিরোধী সব ছাত্রসংগঠনের সুদৃঢ় ঐক্য। দৃশ্যত মনে হচ্ছে, কোটা আন্দোলনকারীদের প্রতি সাধারণ ছাত্রদের নীরব সমর্থন রয়েছে। আরো সোজা কথায়, সবার প্রতিনিধিত্বশীল একটি যৌথ প্যানেল দেয়া গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য একটি অপরিহার্য দাবি। নাগরিক সাধারণ আশা করে, নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব সব ভেদাভেদ ভুলে রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে পরিবেশ ও পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবনে সক্ষম হবে।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement
সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : মন্ত্রী গাজীপুরে গাঁজার বড় চালানসহ আটক ২ দুই ঘণ্টায় বিক্রি হয়ে গেল ২৫০০ তরমুজ ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের সেতু ভাঙ্গার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে! নাশকতার মামলায় চুয়াডাঙ্গা বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মী কারাগারে হারল্যানের পণ্য কিনে লাখপতি হলেন ফাহিম-উর্বানা দম্পতি

সকল