২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সুনীতির প্রত্যাশা

-

ব্যক্তি সমাজ ভিন্নতায় প্রত্যাশারও পরিবর্তন হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি ও সমাজ ইতিবাচক ধারণার চর্চা ও অনুশীলন করে, তাদের ভাব-ভাবনায় সুনীতি ও সততার প্রতিফলন ঘটবে। কিন্তু যারা সততা ন্যায়নিষ্ঠতার ধার ধারে না, তাদের আকাক্সক্ষা এবং প্রত্যাশায় ভালো-মন্দের বাছবিচারের কোনো প্রতিফলন লক্ষ করা যাবে না। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ তাদের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে অন্যায়ের প্রশ্রয় দেয় না। কিন্তু তাদের এই সুনীতির পৃষ্ঠপোষকতায় রাষ্ট্রযন্ত্রের ভূমিকা রাখার বিষয়টি নজরে বিশেষ আসে না। এর ফলে মানুষের ইতিবাচক ধারণাগুলো বিকশিত হতে পারে না। মানুষ ভাবে রাষ্ট্রে আইন সর্বোচ্চ প্রাধান্য পাবে এবং এর ফলে তারা সুবিচার লাভ করবে।

দেশের প্রধান আইনগ্রন্থ সংবিধানে মানুষের যে মৌলিক অধিকারগুলো বর্ণিত রয়েছে, সেগুলো আইনের সুরক্ষা পেয়ে নাগরিকদের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে আসবে। এসব অধিকারসংক্রান্ত বিধানাবলি সমাজের নেতিবাচক ধারণা পোষণকারীদের কারণে কার্যকর হতে পারছে না। ফলে সমাজে নীতি-নৈতিকতার চর্চা বাধাগ্রস্ত হয়। শুধু তাই নয়, এ কারণে অন্যায়-অনিয়ম-অনাচার এতটা বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে যে, নিরপরাধ মানুষ জেল-জুলুম-অবিচারের শিকার হয়ে চরমভাবে নিগৃহীত হচ্ছে। তার এক জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে বহুলালোচিত জাহালম। দুর্ভাগা এই সাধারণ মানুষটি পেশায় একজন পাটকল শ্রমিক। নিরপরাধ এই মানুষটিকে সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির মামলায় গ্রেফতার করে তিন বছর আটক রাখা হয়েছিল। পরে উচ্চ আদালতের অনুসন্ধানে সে মুক্তি পেয়েছে। অবাক হওয়ার বিষয়- আসল দোষী ব্যক্তি ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেল, আর নিরপরাধ সাধারণ শ্রমিক জাহালম তিন বছর জেল খাটানো। এতবড় অন্যায় ঘটল, অথচ সোনালী ব্যাংক ও দুদকের নজর কিভাবে এড়িয়ে গেল? আসলে তা নিছক কোনো ভুল নয়, এর পেছনে অবশ্যই ঘটনা রয়েছে। শোনা গেছে, এ বিষয় তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এই কমিটি সত্য অনুসন্ধান করে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করবে।

দেশে যেহেতু সুষ্ঠু আইনের শাসনের বেজায় ঘাটতি রয়েছে, তাই এটা ধারণা করা অসঙ্গত নয় যে, এমন আরো বহু জাহালম সমাজের আনাচে কানাচে চোখের আড়ালে থেকে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। দেশের মানবাধিকার সংরক্ষণে সোচ্চার প্রতিষ্ঠানগুলো এমন অবিচারের শিকার বহু মানুষের খোঁজখবর রাখে। দেশের বিচার বিভাগ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের নৈতিক দায়িত্ব এসব মজলুমকে খুঁজে বের করে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা এবং যাদের কারণে এ মানুষগুলো নিগৃহীত, তাদের শাস্তির বিধান করা। তা না হলে আইনের শাসন কার্যকর হতে পারবে না। এ ছাড়া খবরের কাগজে প্রায়ই এমন প্রতিবেদন প্রকাশ পায় যে, সাধারণ নিম্ন বেতনভুক সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের পাহাড় তৈরি হয়েছে। এমন অনাকাঙ্খিত সব খবর পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার আগে সরকারি সংস্থাগুলো কেন এসব টের পায় না সেটা এক আশ্চর্য ব্যাপার। রাষ্ট্রযন্ত্রের এসব দুর্বলতা প্রমাণ করে দেশ ঠিকঠাকভাবে চলছে না।

অথচ রাষ্ট্রযন্ত্রের চালক সরকারের দেশ পরিচালনায় মুখ্য লক্ষ্য হওয়া উচিত সুশাসন কায়েম করে জনভোগান্তির অবসান ঘটানো। যখন যে সরকার ক্ষমতায় গেছে তারা সবাই সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছে। কিন্তু তাদের নিত্যদিনের কার্য তালিকায় তা কখনো প্রাধান্য পায়নি। হয়তো তারা মনে করেন, প্রতিদিনের রুটিনমাফিক কাজ করলেই সুশাসন প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব শেষ হয়ে গেল। আসলে তা নয়, প্রকৃতপক্ষে সুশাসন একটি ব্যাপক সাধনা। এর পরিধি অনেক বড়। দেশকে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে পরিণত করাই প্রধানত সুশাসনের লক্ষ্য। কোনো কাজ করার পরিকল্পনা থেকে এর লক্ষ্যে পৌঁছা পর্যন্ত সততার পরিচয় দিতে হবে। কিন্তু এখন কাজ করা হয় বিশেষ গোষ্ঠীর কল্যাণ সমৃদ্ধির জন্য, তাতে সব মানুষ অন্তর্ভুক্ত হয় না। এমন একদেশদর্শিতা যদি লক্ষ্য হয় তবে তা থেকে সব মানুষ উপকৃত হবে না।

রাষ্ট্রের পক্ষে কার্য পরিচালনা করে সরকার। তাই যত ভুলত্রুটি ও অনাকাঙ্খিত ঘটনা সংঘটিত হয়, তার দায় আর কেউ নয় কেবল সরকারকেই নিতে হবে। আর বর্তমান সরকারের দায় এ কারণেই একটু বেশি, কেননা তারা ধারাবাহিকভাবে এবার নিয়ে তিন মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছে। বিগত দিনে তাদের ভালোমন্দ সব কাজের জবাবদিহি তাদেরই করতে হবে। তাদের কাজগুলো যদি জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করে তবে সে প্রশংসায় কেউ ভাগ বসাবে না, আর যদি তাদের কর্মকাণ্ডগুলো অনাকাঙ্খিত হয় এবং তাতে জনভোগান্তি বাড়ে, তবে এই ব্যর্থতা মেনে নিয়ে তাদের অনুশোচনার মানসিকতা থাকতে হবে। এখন যদি বিগত দশ বছরের তাদের কাজের মূল্যায়ন বিবেচনায় নেয়া যায়, তবে দেখা যাবে তারা ঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। সরকারের কাজের এসব ত্রুটিবিচ্যুতি ধরা রাষ্ট্রের অপর অঙ্গ আইন বিভাগের কাজ। কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সাম্প্রতিককালের আইন সভাগুলো তাদের সঠিক চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়নি। সংসদ তথা আইনসভার সদস্যরা সবাই এক জোটের হওয়ায় সেখানে ক্ষমতাসীনদের কাজের কোনো জবাবদিহি নেই। এর ফলে দেশের সমস্যাগুলো সম্পর্কে অবহিত হওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

যেমন দেশের অর্থনৈতিক বৈষম্য ক্রমাগত বাড়ছে কিন্তু এসব বিষয় জানতে হয় ভিন্ন সূত্র থেকে। একটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিকালের অর্থনীতির বেশির ভাগ সূচক নিম্নমুখী। বিনিয়োগে স্থবিরতা, কর্মসংস্থান কমে যাওয়া, মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়া। এসব নিম্নমুখী সূচক এটাই নির্দেশনা দেয় দেশের স্বল্প আয়ের মানুষের জীবন ধারণ অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়েছে সরকারের অদূরদর্শী নীতির ফলে। বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা আর্থিক খাতের সুশাসন ব্যাহত করছে।

এই অপ্রত্যাশিত ব্যবস্থা বৈষম্য বৃদ্ধি, সীমিত উৎপাদন সক্ষমতা, দেশ থেকে টাকা পাচার বৃদ্ধি এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি কাঠামোর অদক্ষতা অর্থনীতিতে মধ্যমেয়াদি সমস্যার সৃষ্টি করেছে। এসব নেতিবাচক বিষয়ের কারণে সম্পদের সঞ্চালন ধনীদের কাছে গিয়ে থেমে যাচ্ছে। ফলে উচ্চশ্রেণীর মানুষের জীবনে কোনো বিরূপ প্রভাব না পড়লেও সাধারণের জীবনধারণ ক্রমাগত কষ্টকর হয়ে উঠছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি অবশ্য বাড়ছে। গত পাঁচ বছর ধরে এই প্রবৃদ্ধি ছয় শতাংশের উপরে। কিন্তু এর সুফল সাধারণ জনগণের নাগালে পৌঁছানোর জন্য দূরদর্শী সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতিমালা নেয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রে অনেক বাগাড়ম্বর শোনা যায় বটে কিন্তু প্রকৃত বিষয় হচ্ছে সমাজে বৈষম্য কেবল বাড়ছে। সম্পদ ধনীদের কাছে পুঞ্জীভূত হচ্ছে পক্ষান্তরে নিম্নআয়ের মানুষের জীবনে সঙ্কট বাড়ছে। কয়েক বছর আগে দেশের দশ শতাংশ দরিদ্র মানুষের মোট জাতীয় আয়ে দুই শতাংশ অবদান ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা হ্রাস পেয়ে এক দশমিক শূন্য এক শতাংশে নেমে এসেছে।

সম্প্রতি আরো এক অপ্রীতিকর খবর অনেকের নজরে এসেছে। সে খবরে বলা হয়েছে, বিগত দশ বছরে কয়েকটি ব্যাংক থেকে বাইশ হাজার ৫০২ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। যুগ্মভাবে সব নিয়ম কানুন ভঙ্গ করে লুটপাট করে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এসব তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর এখন সাধারণভাবে প্রশ্ন উঠেছে কারা এবং কাদের মদদে এই অর্থ লোপাটের ঘটনা ঘটল। গত দশ বছর যারা সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন এবং সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন এই অর্থ লোপাট হওয়ার জন্য তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তির বিধান হয়নি। শুধু সাধারণ ব্যাংক নয় এমনকি রাষ্ট্রীয় ব্যাংক থেকেও অর্থ লোপাট হওয়ার খবর মশহুর হয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাংকে অর্থ রাখা নিয়ে অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে যদি সাধারণের আস্থা নষ্ট হতে থাকে তবে দেশের গোটা ব্যাংকব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। নিজেদের আমানত নিয়ে যদি নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি হয়, তবে কেন মানুষ ব্যাংকে জমা টাকার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হবে না।

একই সাথে আরো একটি খবর নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণের অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। অথচ দেশের নীতিনির্ধারকেরা অর্থ পাচারকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া এবং পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে যে পথে চলা উচিত ছিল সে পথ অনুসরণ করেননি বলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদেরা অভিযোগ করেন। দেশের ব্যাংকগুলোয় টাকা রাখা নিয়ে নিরাপত্তাহীনতা রয়েছে বটে কিন্তু সেটাই পাচারের একমাত্র কারণ নয়। দেশে অর্থ বিনিয়োগ করা নানা কারণে সম্ভব নয় বলে ধরে নেয়া যায়। আর অর্থ পাচারের এটি একটি বড় কারণ বলে মনে করা হয়। দেশে বিনিয়োগবান্ধব নীতির অভাব রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিনিয়োগের ওপর গুরুত্ব আরোপ করলেও এ জন্য বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করার উদ্যোগ নেই।

এজন্য যে সামগ্রিক অবকাঠামো তৈরি করা প্রথম কাজ সেটা হচ্ছে না। শিল্প গড়ার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান বিষয় হচ্ছে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন। কিন্তু দেশে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে বাগাড়ম্বর রয়েছে কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে এটা কতটা নাজুক তা পত্রপত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদনে প্রকাশ পাচ্ছে। পাশাপাশি বিনিয়োগের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়াও কষ্টকর। শিল্পপ্রতিষ্ঠার জন্য জ্বালানি একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। কিন্তু দেশে শিল্পের জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানিপ্রাপ্তির সঙ্কট রয়েছে। শিল্পের প্রয়োজনীয়তা কতটা তা সবাই বোঝেন। শিল্প না হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ ঘটবে না। অথচ দেশে এখন বেকার জনশক্তি বেসুমার। এসব বেকারের কর্মসংস্থান না করা হলে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। উন্নয়নের ব্যাপারে সরকারের অঙ্গীকার আছে বটে কিন্তু তা শুধু মুখে উল্লেখ করলে চলবে না। দেশে শিল্প এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টা হলে তা সম্ভব হবে।

শিল্প গড়ার সাথে দেশে উন্নয়ননীতির সম্পর্ক গভীর। আর এই নীতি প্রণীত হবে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে। কেননা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কোনো সরকারই স্থায়ী হয় না। তাই মৌলিক জাতীয় নীতি যদি কোনো সরকার এককভাবে প্রণয়ন করে, তবে তা স্থায়ী হবে না এবং সেটার ধারাবাহিকতাও থাকবে না। সে ক্ষেত্রে যদি সব প্রধান দল এসব জাতীয় নীতি তৈরির ক্ষেত্রে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে পারে তাতে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে কোনো বাধা সৃষ্টি হবে না। সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি মনে করেন, জাতীয় উন্নয়ন ও গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে মৌলিক ইস্যুতে সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে ঐক্য অপরিহার্য। এই ঐক্য রচিত হলে দেশের অনেক বড় সমস্যার সমাধান সহজতর হবে, যা কিনা সবার একান্ত কামনা। জাতীয় ঐক্যের মজবুত ভিত্তির জন্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে পরস্পর শ্রদ্ধা সহমর্মিতা সহাবস্থানের যে নীতি রয়েছে সেটা অনুসরণ করা জরুরি। বড় কিছু পেতে ছোট অনেক কিছুর ব্যাপারে ছাড় দেয়ার মানসিকতা সৃষ্টি করতে হবে।
ndigantababor@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement