১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঢাকার রোহিঙ্গা ডিলেমা

ঢাকার রোহিঙ্গা ডিলেমা - ছবি : সংগৃহীত

ঢাকায় শেখ হাসিনা সরকারের নতুন মেয়াদে রোহিঙ্গা ইস্যু এবার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রূপ নিতে পারে। নতুন সরকারের নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পেছনে যেসব বিশ্ব ও আঞ্চলিক শক্তি ক্ষমতাসীন দলকে বিশেষ সহায়তা করেছে বলে ধারণা করা হয়, রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের সবার অবস্থান কাছাকাছি। অন্য দিকে, রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকারসহ মিয়ানমারেই যথাযথ পুনর্বাসনের পক্ষে যারা, তারা বাংলাদেশে কার্যকরভাবে মুক্ত, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চেয়েছেন। নির্বাচনের পরও ভোটের আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করা এবং অন্যান্য কারসাজিমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে ৯৭ শতাংশ আসন শাসক দলের দখল করার বিষয়টিকে তারা গ্রহণ করেনি। এমনও বলা হয়েছে, সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের পর গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ইতিহাসে এটি ‘সবচেয়ে নিকৃষ্ট নির্বাচন’। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা শক্তিগুলোর অবস্থান রয়েছে এই ধারায়। কিন্তু তারা বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করে যাওয়ার কথাই বলেছে।

সর্বশেষ, জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসও বলেছেন, ‘এ বিষয়টি স্পষ্ট যে, বাংলাদেশে সঠিক নির্বাচন হয়নি। তবে এ নিয়ে জাতিসঙ্ঘের পক্ষে তদন্তের জন্য কাউকে পাঠানো সম্ভব নয়। কারণ, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে প্রশংসনীয় মানবিকতার কাজ করেছে এবং এ ইস্যুটি বেশ সংবেদনশীল।’ জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের বক্তব্যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বেশ উদ্বেগও সুপ্তভাবে লক্ষ করা যায়।
বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত অঞ্চল থেকে নোয়াখালীর উপকূলীয় এক নির্জন দ্বীপ ঠেঙ্গার চরে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেয়ার কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। জলোচ্ছ্বাসপ্রবণ এলাকার এ প্রত্যন্ত দ্বীপে মানুষের বসবাস সম্ভব কি না তা নিয়ে ব্যাপক বিতর্কও রয়েছে। জাতিসঙ্ঘ বিষয়টি যাচাই করে দেখার জন্য বিশ্বসংস্থার বিশেষ দূত ইয়াং লিকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছিল। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাথে কথা বলা এবং নিকট অতীতে জেগে ওঠা সেই নির্জন দ্বীপটি দেখতে যাওয়া তার কর্মসূচিতে রয়েছে।

মিয়ানমারে মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের নিয়ে সঙ্কট সৃষ্টি করার মূল কারণ হলো, দেশটিতে তাদের নাগরিকত্ব অন্যায়ভাবে অস্বীকার করা। উগ্র বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী সাম্প্রদায়িক গ্রুপ এ ব্যাপারে অব্যাহত প্রচারণা চালিয়ে আসছে। এই কট্টর জাতীয়তাবাদীরা সুসংগঠিত, সামাজিকভাবে প্রভাবশালী এবং নিয়ন্ত্রণে কঠিন। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা সামাজিক মিডিয়ায় বিশেষভাবে সক্রিয়, যেখানে তারা জন-আলোচনার এজেন্ডা নির্ধারণ বা মত গঠন করে থাকে।

রোহিঙ্গাদের দমন ও জাতিগত নির্মূল কার্যক্রমের ভিত্তি নৃতাত্ত্বিক পরিচয় কিংবা রাজনীতির চেয়ে অনেক বেশি গভীর। এটি প্রাকৃতিক সম্পদ ও কৌশলগত গুরুত্বের সাথেও সম্পর্কিত। হাজার বছর যদি নাও হয়, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যকার আরাকান এলাকায় যে বসবাস করেছে, তা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। ঐতিহাসিকভাবে কৃষক সম্প্রদায় হিসেবে পরিচিত রোহিঙ্গারা ব্রিটিশ ভারতের সময় অবাধে চলাচল করেছে। দেশটির স্বাধীনতার আগে ও পরে সরকারে তাদের মন্ত্রী ও একাধিক সংসদ সদস্য ছিলেন রোহিঙ্গা। কিন্তু জেনারেল নে উইনের আমলে মিয়ানমার বা বার্মার আধুনিক রাষ্ট্র সীমানা প্রতিষ্ঠিত হলে পর্যায়ক্রমে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার নিয়ে বিতর্ক তোলা হয়। একসময়ে এ অঞ্চলের জমি মূল্যবান ও লাভজনক সম্পদ হয়ে ওঠে। কৌশলগতভাবে আরাকান উপকূল হয়ে পড়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

গত ৫০ বছরে বার্মার সামরিক বাহিনী, রাষ্ট্র এবং বৃহৎ করপোরেশনগুলো রোহিঙ্গাদের জমি দখল করেছে। খনিজসম্পদ, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, কাঠ ও অন্যান্য অর্থনৈতিক স্বার্থকে কৃষির ওপর অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করার জন্য সেনাবাহিনী চীনা, কোরিয়ান, জাপানি এবং বহুজাতিক অন্যান্য বিনিয়োগকারীর জন্য রোহিঙ্গা, কারেন, সোম ও শান হিসেবে পরিচিত জাতিগত সংখ্যালঘুদের বসবাসের এলাকায় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর মধ্যে চীন এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে বিকল্প তেল ও গ্যাসের পাইপলাইন নিয়ে যাওয়ার বিশাল প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ফলে এখানে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্বার্থের নতুন মেরুকরণ ঘটে।

এসব কারণে রোহিঙ্গা ইস্যুটি এখন জটিল রূপ পরিগ্রহ করেছে। এর সমাধান বাংলাদেশের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক ‘স্টেকহোল্ডার’ যাদের মিয়ানমারের সাথে ব্যবসা ও কৌশলগত স্বার্থের সম্পৃক্ততা রয়েছে- তাদের এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট করতে হবে। তবে এর সমাধানে দীর্ঘ সময় নেয়া হলে ক্রমাগত সহিংসতা এবং উদ্বাস্তুদের একটি বিস্ফোরণ এ অঞ্চলকে আরো অস্থির করে তুলতে পারে।
বাংলাদেশের এবারের নির্বাচনের পর রোহিঙ্গা ইস্যুটি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনের আগে ও পরে ভারত ও সৌদি আরব থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর একাধিক রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে। সর্বশেষ খবরে, সৌদি আরবের আড়াই শ’ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর কথা জানানো হয়েছে। স্বভাবতই এমন একটি ধারণা সৃষ্টি হতে পারে যে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের আরেক দফা ক্ষমতায় যাওয়ার সাথে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কোনো বোঝাপড়ার সম্পর্ক রয়েছে কি না।

শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বহীন করে বাংলাদেশে জোর করে ঠেলে দেয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারের ভূমিকাকে সমর্থন করেছে চীন ও রাশিয়া। এমনকি, বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত ভারতও এই ইস্যুতে মিয়ানমারের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে। অন্য দিকে, রোহিঙ্গাদের জন্মগত নাগরিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়ে তাদের আরাকানে সম্মানের সাথে বসবাসের ব্যবস্থা করার ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থানকে সমর্থন করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য পাশ্চাত্য শক্তি আর ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য দেশগুলো।

বাংলাদেশের বর্তমান সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুটিতে বেশ পরিণামদর্শী ও ভারসাম্যপূর্ণ নীতি গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছিল। ঢাকা এক দিকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে, যথাসম্ভব শান্তিপূর্ণভাবে সাময়িক বসবাসের জন্য তাদের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করেছে, অন্য দিকে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজস্ব বাসভূমিতে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে চাপ সৃষ্টি করেছে। একই সাথে এ ইস্যু নিয়ে যাতে মিয়ানমারের সাথে কোনো যুদ্ধ-সঙ্ঘাত দেখা না দেয়, তা নিশ্চিত করার জন্য বেইজিংয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। এই নীতির কারণে বাংলাদেশ এক দিকে জাতিসঙ্ঘ ও অন্যান্য বিশ্বসংস্থা এবং নেতৃস্থানীয় দেশগুলোর অর্থনৈতিক সহায়তা পেয়েছে। অন্য দিকে, বিশ্বফোরাম থেকে মিয়ানমারের ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। ওআইসিও এ ক্ষেত্রে বেশ ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।

এখন প্রশ্ন হলো- বাংলাদেশের সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনের পর রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানে কি কোনো পরিবর্তন আসবে? এই নির্বাচনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের পক্ষের শক্তি চীন, ভারত ও রাশিয়া শেখ হাসিনার, তথা তার দলের ক্ষমতার ধারাবাহিকতার ব্যাপারে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করেছে। ওআইসির নেতৃস্থানীয় শক্তি সৌদি আরবও এ ব্যাপারে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের উল্লেখযোগ্যভাবে সমর্থন দিয়েছে। সোস্যাল মিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বশেষ রিয়াদ সফরের সময় সৌদি আরব ১০০ মিলিয়ন ডলারের ব্যক্তিগত অনুদান দিয়েছে। নির্বাচনের পর উইনিং গিফট হিসেবে আরো ৩০০ মিলিয়ন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতিও দিয়ে রেখেছে সে সময়।

সত্তরের দশকের শেষ প্রান্তে রোহিঙ্গা ইস্যুটি সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে রাষ্ট্রহীন এ সম্প্রদায়ের জন্য সর্বাধিক কার্যকর মানবিক, আর্থিক ও অভিবাসনের সুবিধাপত্র দানকারী দেশ হলো- সৌদি আরব। উম্মাহর একটি নিগৃহীত জাতিগোষ্ঠীর প্রতি দেশটির দায়িত্ব পালনের নজির অবিস্মরণীয়; কিন্তু সেই দেশ থেকে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর খবর পাওয়া যাচ্ছে। এটি এমন একসময় ঘটছে যখন সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডের ইস্যুতে পাশ্চাত্য শক্তি সৌদি বাদশাহর উত্তরাধিকারের ব্যাপারে চাপ সৃষ্টি করছে। সৌদি পত্রিকায় বলা হয়েছে, ‘এ ধরনের চাপ চলতে থাকলে রিয়াদ রুশ-চীন বলয়ের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর বিষয় বিবেচনা করবে।’ রোহিঙ্গা ইস্যুতে সৌদি আরব তার প্রায় চার দশকের অবস্থানে পরিবর্তন আনবে- এমনটি এখনো স্বাভাবিক মনে হয় না। তবে অস্বাভাবিক অনেক কিছুই এখন দেশটিতে নানা ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়।

আদর্শগত বিবেচনায় পাশ্চাত্যের একান্ত নির্ভর করার শক্তি হলো সেকুলার ধারার দলগুলো। গত দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে বাংলাদেশে সেকুলার রাজনৈতিক শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে পাশ্চাত্যের নেতৃস্থানীয়রা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদের শেষ দিকে এসে সরকারের অগ্রাধিকারে বেশ পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। এ সময় রাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী বিনিয়োগ প্রকল্পে ভারতের পাশাপাশি চীন ও রাশিয়ার সংশ্লিষ্টতা অনেক বেশি লক্ষ করা গেছে। ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনের পর সরকার কৌশলগত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অনেকখানি মুক্তিযুদ্ধকালীন ধারায় চলে যায়। কেবল চীনকে বিনিয়োগকারী ও বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে কাছে টানা হয়। সাথে থাকে ভারত ও রাশিয়া। এবারের নির্বাচনের আগে ও পরে এ মেরুকরণটি আরো বেশ কিছুটা তীক্ষè হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
এ বিষয়টির প্রভাব সংবেদনশীল রোহিঙ্গা ইস্যুতে কতখানি কিভাবে পড়ে, সেটিই হলো এখন দেখায় বিষয়। যেভাবেই দেখা হোক না কেন, এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা ইস্যুটি বাংলাদেশ সরকার বেশ পরিণামদর্শিতার সাথে মোকাবেলা করেছে। অবশ্য এ ইস্যুতে অমানবিকতার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সমালোচিত চীন এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অংশীদার।

২০০১ সালের পরবর্তী মেয়াদে সরকারের একজন শীর্ষপর্যায়ের নীতিনির্ধারক আমাকে বলেছিলেন, বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে ঢাকার কাছে রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পুনর্বাসনের প্রস্তাব দিয়ে বলা হয়েছিল, এ ব্যাপারে সব ধরনের আর্থিক সহায়তা চীন দেবে। তখনকার সরকার এই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। তাইওয়ান ইস্যুর বাইরে, সেই সরকারের সাথে বেইজিংয়ের সম্পর্কে ব্যবধান সৃষ্টি হওয়ার পেছনে এ ইস্যুটিও একটি কারণ হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে তেমন কোনো সমঝোতার প্রস্তাব এখন আছে কি না অথবা হাতিয়ার নির্জন দ্বীপে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন উদ্যোগের সাথে এর কোনো সম্পর্ক আছে কি না, জানা যায় না। তবে এই ইস্যুতে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় প্রতীয়মান হয়, তাৎপর্যপূর্ণ ‘উন্নয়ন’ ওই ইস্যুতে হয়ে থাকতে পারে।

এখন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের চেষ্টা করা হচ্ছে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের কোনো পরিবেশ সৃষ্টি না করেই। কিছু দিন আগেও অনেকেই মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছেন বাংলাদেশের শরণার্থী ক্যাম্পে এবং থাইল্যান্ড-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায়। তবুও মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সরকার প্রত্যাবাসন বিষয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছে। ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে ইচ্ছুক, এমন কোনো রোহিঙ্গাকে তখন বাংলাদেশ খুঁজে পায়নি। ২০১৯ সাল নাগাদ প্রত্যাবাসনের এ চাপ চলবে। তবে বাস্তবতা হচ্ছেÑ ২০১৯ সালের শেষ নাগাদ বেশির ভাগ রোহিঙ্গা ফিরে যেতে সক্ষম হবে না। এ প্রত্যাবাসন নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক এবং মর্যাদাকর হওয়ার বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড শেষ পর্যন্ত নিশ্চিত হবে কি না তা মিয়ানমার সরকার এ ব্যাপারে কী করে না করে তার ওপরই নির্ভর করবে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া হলো এ সঙ্কট সমাধানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। একই সাথে এটি সবচেয়ে বিতর্কিত একটি বিষয়ও। রোহিঙ্গারা তাদের বাড়িঘরে ফিরে যেতে সক্ষম কি না তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, তাদের প্রত্যাবাসনের অনুকূল অবস্থা সেখানে আছে কি না। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি। তাদের শত শত বাড়িঘর ধ্বংস করা হয়েছে। নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা ও অসম আচরণের মুখোমুখি হচ্ছে রোহিঙ্গারা। আর পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা দেশে ফিরে গিয়ে নাগরিক অধিকার পাবে- এমন কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। বিদায়ী ২০১৮ সালেই মিয়ানমার থেকে ১৫ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাশিবিরে কাজ করা ৪০টিরও বেশি মানবাধিকার সংগঠন সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, বিদ্যমান পরিবেশে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হবে বিপজ্জনক এবং অপরিপক্ব কাজ। জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী সংস্থাও (ইউএনএইচসিআর) পরিষ্কারভাবে বলেছে, মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি শরণার্থী ও স্বেচ্ছাসেবকদের ফিরে যাওয়া বা কাজ করার জন্য নিরাপদ, সম্মানজনক কিংবা টেকসই নয়।
রোহিঙ্গা ইস্যুর সমাধানের ব্যাপারে বেশ কিছু বিকল্প পন্থা বিবেচনা বা আলোচনায় রয়েছে বলে মনে হয়। প্রথমত, শত শত বছর ধরে মিয়ানমারে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার দিয়ে নিজ নিজ আবাসস্থলে পুনর্বাসন। এ ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাইয়ের ব্যাপারে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ অনুসরণ করা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, মিয়ানমারের ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের বিষয়’টি আমলে নিয়ে রোহিঙ্গাদের পরিকল্পিত স্থানে বাড়িঘর নির্মাণ করে পুনর্বাসন। এতে আদি আবাসভূমিতে রোহিঙ্গারা ফেরার সুযোগ না পেলেও তাদের জীবন নির্বাহের পর্যাপ্ত সুযোগ রাখা হবে বলে মনে করা যায়। তৃতীয়ত, আবাস পরিবর্তন। এর আওতায় পার্বত্য চট্টগ্রামে যেসব বৌদ্ধ উপজাতির বসবাস রয়েছে তাদের মধ্যে আগ্রহীদের মিয়ানমারের রাখাইনে পুনর্বাসনের বিপরীতে রোহিঙ্গাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে পুনর্বাসন করা।

জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব এ প্রসঙ্গে বলেছেন, রাখাইনে সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তাদের মধ্যে যতটা সম্ভব পুনরেকত্রীকরণ করতে হবে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিরাপত্তা দিতে হবে। এ জন্য মিয়ানমার সরকারের শক্তিশালী প্রতিশ্রুতি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, পরিস্থিতি যেমন হওয়ার কথা ছিল আজ পর্যন্ত তেমন হয়নি। সব কিছুই চলছে খুবই ধীর গতিতে। এ সমস্যার মূল কারণ নিরসনে ব্যর্থ হলে সহিংসতা ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। সম্প্রতি এমনটি আমরা মিয়ানমারে দেখেছি। তাই অনেকেই মিয়ানমারের সাথে সম্পর্কের অগ্রগতির ক্ষেত্রে ঘাটতি এবং মানুষের দুর্ভোগের জন্য ভীষণ হতাশ। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বিপুল মানুষ অত্যন্ত কঠিন অবস্থার মধ্যে বাংলাদেশে বসবাস করছে। আমরা তাদের ভুলে যেতে পারি না।

mrkmmb@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
গাজা যুদ্ধে নতুন যে কৌশল অবলম্বন করল ইসরাইল হাসপাতালের শৌচাগারে মিলল নবজাতক শিশু ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিসিডিপি গঠন করা হবে : পরিবেশমন্ত্রী অননুমোদিত জমি ভরাট কার্যক্রমের সন্ধান পেলে দ্রুত ব্যবস্থার নির্দেশ ভূমিমন্ত্রীর ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যা ইসরাইলকে পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাতের ব্যাপারে সতর্ক করলো আইআরজিসি সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের ১২৮তম প্রয়াণ দিবসে স্মরণ সভা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের শূন্য পদ দ্রুত পূরণের নির্দেশ ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনে ঝুলন্ত নারীর লাশ উদ্ধার মধুর প্রতিশোধে সিটিকে বিদায় করে সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ

সকল