২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

খেলাপি ঋণ নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সরল সিদ্ধান্ত

খেলাপি ঋণ নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সরল সিদ্ধান্ত - ছবি : সংগৃহীত

গত ১০ জানুয়ারি নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনে ব্যাংক মালিকদের সংগঠন ‘ব্যাংকারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (বিএবি) নেতাদের সাথে এক বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘ধীরে ধীরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনা হবে। এ বিষয়ে ব্যাংকের মালিকেরা আমাকে কথা দিয়েছেন।’ অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘বৈঠকে বসার আগেই আমার একটাই শর্ত ছিল। কোনো কিছু বলার আগে আমার এক দফা। আজকের পর থেকে খেলাপি ঋণ এক টাকাও বাড়াতে পারবেন না। খেলাপি ঋণ আপনারা কিভাবে বন্ধ করবেন, কিভাবে টেক কেয়ার করবেন, কিভাবে ম্যানেজ করবেন, সেটি আপনাদের ব্যাপার। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন বলেই বলছি, আজকের পর থেকে খেলাপি ঋণ আর এক টাকাও বাড়বে না ইনশা আল্লাহ।’ তিনি বলেন, ‘আমরা একটা ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছি- নন-পারফর্মিং লোন তথা খেলাপি ঋণ তাদের উৎকণ্ঠা, জাতির উৎকণ্ঠা। তবে আমার উৎকণ্ঠা কিছুটা কম। কারণ এরই মধ্যে আমি দেখেছিÑ যে পরিমাণ পত্রপত্রিকায় লেখা হয়, সে পরিমাণ নন-পারফর্মিং লোন নেই। নন-পারফর্মিং লোন এখনো ম্যানেজেবল। এই ম্যানেজেবল লোন সম্পর্কে আজ সিদ্ধান্ত হয়েছে, এটি আর বাড়াতে পারবে না।’

আমরাও অর্থমন্ত্রীর মতো আশাবাদী হয়ে বলতে চাই, সরকার আন্তরিক হয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশ ঋণখেলাপি নামের অপসংস্কৃতি থেকে মুক্ত হতে বাধ্য। কিন্তু বাস্তব অতীত অভিজ্ঞতার ওপর ভর করে এও বলতে চাই, অতীতে অনেক অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকে খেলাপি ঋণসংস্কৃতি অবসানের অনেক প্রতিশ্রুতি শুনেছি। এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে শুরুতে অর্থমন্ত্রীদের সুদৃঢ় পদক্ষেপ ঘোষণার কথাও বহুবার শুনেছি। কিন্তু মাঝপথে এসে এসব পদক্ষেপ নানা রহস্যজনক কারণে হারিয়ে যেতেও দেখেছি। যার ফলে সুদীর্ঘকাল ধরে জাতিকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে এই অপসংস্কৃতির দখল। নতুন অর্থমন্ত্রীর সদ্য ঘোষিত প্রতিশ্রুতির বেলায় ভিন্নতর কিছু ঘটুক, সেটাই জাতির কামনা।

উল্লিখিত বৈঠকটির আগের দিন আমরা এ সম্পর্কিত আরেকটি ইতিবাচক সিদ্ধান্তের কথা অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকে জানতে পারি। ৯ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে অর্থমন্ত্রীর বৈঠকে কতগুলো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে ১৯৭২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যাদের ঋণ অবলোপন করা হয়েছে, তাদের সব ফাইল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ঋণখেলাপি হওয়ার পেছনে কোনো সরকারি কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। আর খেলাপি ঋণ দ্রুত আদায়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনসাপেক্ষে ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন’ সংশোধন করা হবে। বৈঠকের পর অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে আমরা নির্দয় হবো না। আমাদের টাকা আদায়ই মূল লক্ষ্য। আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, যারা সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের ঋণের অর্থ সুদসহ পরিশোধ করবেন। এ বিষয়টি নিশ্চিত করব এবং এ জন্য আমরা আইনে কিছু পরিবর্তন আনব।

অর্থমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্ত যথার্থ। পুরো জাতি চায় অর্থমন্ত্রীর যৌক্তিক এ সিদ্ধান্তের শতভাগ বাস্তবায়ন হোক। কিন্তু অর্থমন্ত্রীকে সতর্কবার্তা দিতে চাই, তার এ সিদ্ধান্ত যতটা সহজ-সরল, অর্থ বাস্তবায়ন তার চেয়ে অনেক বেশি জটিল-কঠিন। কারণ বাস্তবায়নের মাঠ সমতল নয়। তা বাস্তবায়ন করতে অনেক বাধা আসবে। অনেক অপশক্তি এর বিরুদ্ধে কাজ করবে। এসব বাধা অতিক্রমে করতে হলে তাকে রীতিমতো পাহাড় ঠেলতে হবে, তবেই যদি এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সূত্রে জাতি খেলাপ ঋণ নামের অপসংস্কৃতি থেকে মুক্তি পায়। তা ছাড়া এজন্য অর্থমন্ত্রীকে রীতিমতো এক যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামতে হবে। নইলে ‘যথা পূর্বং তথা পরং’ পরিস্থিতি অবধারিত হয়ে উঠবে। আমরা অতীতে দেখেছিÑ যখনই কোনো সরকার খেলাপি ঋণ আদায়ে কোনো কঠিন আইন করতে উদ্যোগী হয়েছে তখনই তা বাধার মুখে পড়েছে তাদের কাছ থেকে, যারা ঋণখেলাপিদের স্বার্থ রক্ষায় সদাব্যস্ত। পরিণতিতে তাদের বাধার কাছে পরাজিত হয়েছে এসব শুভ উদ্যোগ; যে কারণে ঋণখেলাপি সংস্কৃতি এতটা দীর্ঘায়ু হতে পেরেছে। সমালোচকেরা বলছেন, নতুন জাতীয় সংসদে এবার ব্যসায়ীদের যে সংখ্যা-প্রাধান্য দেখা গেছে, তাতে করে অর্থমন্ত্রীকে ঋণখেলাপিবিরোধী পদক্ষেপ নেয়ার কাজটিকে আরো কঠিন করে তুলবে। তা ছাড়া এ ক্ষেত্রে যেসব কায়েমি সিন্ডিকেট রয়েছে, তা ভাঙা অর্থমন্ত্রীর পক্ষে কতটা সম্ভব হবে তা নিয়েও আশঙ্কা রয়ে গেছে।
আসলে অর্থমন্ত্রীকে আমাদের দেশের খেলাপি ঋণ নামের উপসর্গটির ঐতিহাসিক গতি-প্রকৃতিটা ভালো করে জানতে হবে। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে, দেশে কার্যকর বিনিয়োগ ও সঞ্চয় সংস্কৃতি গড়ে তোলা। এ সংস্কৃতি অভাব দেশে প্রবল। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে এর বিপরীতে মোকাবেলা করতে হয় খেলাপি ঋণ সংস্কৃতি। আমাদের মূলধন বাজারও থেকে গেছে অনুন্নত। সে কারণে মূলধন বাজারটা নির্ভরশীল ব্যাংকগুলোর সংগৃহীত আমানত থেকে আসা বিনিয়োগের ওপর।

তা ছাড়া আমরা অনেকেই জানি, খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলোর মুনাফা কমে আসছে। ব্যাংকগুলো শ্রেণীবদ্ধ ঋণ থেকে সুদ আয় করতে পারে না। তা ছাড়া খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনে ব্যাংকের ঋণযোগ্য তহবিলের পরিমাণ। অধিকন্তু ব্যাংকগুলো বন্ধ করে দেয় রিসাইক্লিং ব্যাংক ব্যবসায়কে। কুঋণ পোষানোর জন্য ব্যাংকগুলো সব সময় চেষ্টা করে একটি রিজার্ভ ফান্ড সৃষ্টি করতে। আর এই ফান্ড গঠিত হয় ব্যাংকের আয়ের অর্থে। একটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের অতি উচ্চ শতাংশ হারের জন্য ব্যাংটিকে উচ্চ হারে প্রভিশন জোগাতে হয়। সব ধরনের খেলাপি ঋণই একটি ব্যাংকের মুনাফা কমিয়ে আনে। তখন ব্যাংকটি নিচু মূলধন ভিত্তি সমস্যায় ভোগে। এর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দেশের গোটা ব্যাংক খাতে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খেলাপি ঋণের বিষয়টি গণমাধ্যমে ও শিক্ষাবিদদের মাঝে একটি বড় ধরনের আলোচনা-সমালোচনার বিষয় হয়ে উঠছে। কারণ খেলাপি ঋণের বিষয়টি একটি দেশের ব্যাংক খাতের অর্থনৈতিক সুষ্ঠুতার ওপর বড় ধরনের প্রভাব সৃষ্টিকর একটি বিষয়। আর বাংলাদেশের ব্যাংক খাত থেকেই আসে বাস্তব খাতগুলোর অর্থায়ন। ফলে বিনিয়োগ, প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনের মতো বিষয়গুলোর সাথে ঘনিষ্ঠ সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এই ব্যাংক খাতের। অথচ গোটা ব্যাংক খাতকেই নড়বড় করে দিচ্ছে খেলাপি ঋণ নামের অপসংস্কৃতি।

বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে ঋণখেলাপি হওয়ার নানা কারণ থাকে। সব ব্যাংকে একই কারণে ঋণখেলাপি হয় না। তবে কিছু সাধারণ কারণকে আমরা খেলাপির জন্য চিহ্নিত করতে পারি। ব্যাংক কর্মকর্তাদের অদক্ষতা ও অযোগ্যতার কারণে ঋণখেলাপি হতে পারে। অযোগ্য ও অদক্ষ কর্মকর্তারা অনেক সময় কোলেটারেলের সঠিকভাবে মূল্যাবধারণ করতে পারেন না। বিকশিত দেশীয় ও বৈদেশিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিসাপেক্ষে ঋণগ্রহীতা কোম্পানির ভবিষ্যৎ রাজস্ব সম্ভাবনা মূল্যায়ন করার কাজটি এরা সঠিকভাবে করতে পারেন না। এ কারণে কোনো কোনো সময় দেখা যায়, লোন ম্যাচুরিটি পিরিয়ড ও প্রকল্পের প্রত্যাশিত ভবিষ্যৎ রাজস্ব সৃষ্টি করা যায় না সময়ের সাথে সাযুজ্য রেখে। এর ফলে যারা ঋণ পাওয়ার যোগ্য নন, তারাও ঋণ পাচ্ছেন। আর এরাই বেশি হারে ব্যর্থ হচ্ছেন যথাসময়ে ঋণচুক্তি অনুযায়ী ঋণ পরিশোধ করায়। তা ছাড়া সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ত্রুটি রয়েছে ঋণখেলাপিদের ওপর প্রয়োজনীয় তদারকিতেও। বিভিন্ন ব্যাংকে রয়েছে দুর্বল প্রশাসন। ঋণসংক্রান্ত ব্যাপারে এই প্রশাসনিক দুর্বলতা খেলাপি ঋণ বেড়ে চলার একটি বড় কারণ। প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে একশ্রেণীর কর্মকর্তারা বাছ-বিচারহীনভাবে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও রাজনীতি সংশ্লিষ্ট কিংবা অন্যান্য প্রভাবশালীর ঋণ মঞ্জুর করেন কোনো ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই। অনেক সময় এ ঋণের অঙ্কটাও অনেক বড় হয়। মূলত এসব ঋণই সবচেয়ে বেশি হারে খেলাপি হয়।

তা ছাড়া এটি অস্বীকার করাই উপায় নেই, ব্যাংকগুলোতে বোর্ড মেম্বার বাছাই করা হয় যথাযথভাবে যোগ্যতা যাচাই না করেই। অডিট কমিটিও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটি হয় অস্তিত্বহীন, নয়তো কার্যকরভাবে ক্রিয়াশীল নয়। বোর্ড মেম্বাররা সুনির্দিষ্ট কিছু ঋণ মঞ্জুরির ব্যাপার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কিংবা এরা কাজ করেন ঋণ পুনঃতফসিল করার কাজ নিয়ে, এদের নজর বেশি ঋণগ্রহীতাদের নানা সুযোগ দেয়ার দিকে। খেলাপি ঋণ সৃষ্টি ও ঋণসংক্রান্ত নানা অনিয়মের অভিযোগ প্রধানত বোর্ড মেম্বার ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যায়।

রাজনৈতিক প্রভাবে ঋণ মঞ্জুরি ও ঋণসংক্রান্ত নানা সিদ্ধান্ত ঋণখেলাপি হওয়ার একটি বড় কারণ। অনেক ব্যাংক কর্মকর্তা রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের চাপে অনেকটা বাধ্য হয়ে ঋণ মঞ্জুর করেন। ঋণ পুনঃতফসিল করা ও পুনর্গঠন করার অনেক কাজই চলে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের চাপে এবং রাজনৈতিক বিবেচনায়। এ ধরনের সুযোগ পাওয়া ব্যক্তিরাই সাধারণত অব্যাহতভাবে ঋণখেলাপি হয়। এ সমস্যাটি বিশেষ করে প্রকট সরকারি ব্যাংকগুলোতে।

ঋণখেলাপি হওয়ার পেছনে আরেকটি কারণ হচ্ছে অকার্যকর বিচারব্যবস্থা। ঋণ আদায়সংক্রান্ত হাজার হাজার মামলা বিচারাধীন হয়ে পড়ে আছে আদালতে। অনেক বড় বড় ঋণখেলাপি সহজেই উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে ঋণ আদায়কে আটকে দিতে পারছে। এর ফলে ব্যাংকগুলো চাইলেও ঋণ আদায় অভিযান জোরদার করতে পারছে না। ঋণ আদায় কর্মসূচি যথাসময়ে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। এর সুযোগ নিয়ে অনেক ঋণখেলাপি উৎসাহিত হচ্ছে ঋণ পরিশোধ না করায়।

আরো বিবিধ কারণ রয়েছে ঋণ খেলাপি হওয়ার পেছনে। বিশ্লেষকেরা ক্ষেত্রবিশেষে এসব কারণের কথা উল্লেখ করে থাকেন। এসব কারণের মধ্যে আছে : কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে খেলাপি ঋণ আদায়ের দূরদর্শী কোনো নিয়মনীতি না থাকা; খেলাপি ঋণ প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে কার্যকর কোনো কর্মকৌশল না থাকা; দেশে ব্যাংকের সংখ্যা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি হওয়া, যার ফলে কোনো কোনো সময় ব্যাংকগুলোর মধ্যে অসুষ্ঠু প্রতিযোগিতা ও আগ্রাসীভাবে চলে ঋণ প্রক্রিয়ার অনুশীলন এবং অগ্রাধিকার সুদহারে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ঋণ দেয়ার অশুভ অনুশীলন। দেশে ব্যাংকের সংখ্যা প্রয়োজনের বেশি থাকার বিষয়টির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত রাজনৈতিক চাপের উপসর্গটি। আমরা দেখেছি, বেশ কয়েক বারই রাজনৈতিক বিবেচনায় অপ্রয়োজনে দেশে ব্যাংক কোম্পানি খোলার অনুমতি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী, তার নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রীকে উষ্মা প্রকাশ করতেও দেখা গেছে। কাকে ব্যাংক কোম্পানি খোলার অনুমতি দেয়া হবে, আর কাকে দেয়া হবে না, সেখানেও রাজনৈতিক বিবেচনা প্রাধান্য পেতে দেখা গেছে। আমাদের নতুন অর্থমন্ত্রী যখন খেলাপি ঋণসংস্কৃতি থেকে দেশকে মুক্ত করতে প্রয়াসী হয়েছেন, তখন তাকে এসব উপসর্গ তাড়ানোর ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি করে সচেতন ও কঠোর অবস্থানে থাকার তাগিদটুকু দিতেই হয়।

খেলাপি ঋণ সমস্যার অবসানে নয়া অর্থমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম এ সমস্যার অবসানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তার এসব সুচিন্তিত পদক্ষেপ গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেয়ার দাবি রাখে। তিনি বলেছেন, ব্যাংক ও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এ ব্যাপারে একসাথে মিলে কাজ করতে হবে। এ তিনটি প্রতিষ্ঠান প্রধান বিচারপতির সাথে কথা বলে এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনি জটিলতার নিরসন করতে হবে। তিনি তার নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে আরো বলেছেন, আমাদের ব্যাংক খাত দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন অনিয়ম আর দুর্নীতিতে নিমজ্জিত।

সরকার বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার কথা বললেও এর বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাই না। উল্টো বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটে। ব্যাংক ও আর্থিক খাতেরই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে চাইলে পাঁচটি বড় পদক্ষেপ নিতে হবে : ০১. ব্যাংক খাতে নিয়োগ ও ঋণদান কোনো ধরনের রাজনৈতিক বিবেচনায় করা যাবে না; ০২ ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে তদবিরকে প্রশ্রয় ও নমনীয়তা দেখানো যাবে না; ০৩. স্বচ্ছতার জন্য সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে; ০৪. ঋণ বিতরণের বেলায় সঠিক প্রতিষ্ঠান বাছাই করতে হবে; এবং ০৫. ঋণ আদায়ে আইনি জটিলতার অবসান ঘটাতে হবে। তা ছাড়া তিনি তার অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, ঋণ নিয়ে যারা ফেরত দেয় না, তারাই উল্টো ব্যাংকের বিরুদ্ধে রিট মামলা দায়ের করে। এরা মামলা করে ঋণ পরিশোধের ওপর স্থগিতাদেশ আদায় করে জটিলতার সৃষ্টি করে। এ কারণে এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের আইনি জটিলতা আছে। এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের সাথে কথা বলে ব্যাপারটি কী করে দ্রুত সমাধান করা যায় তা যৌথভাবে অর্থ মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও বিচার বিভাগকে পদক্ষেপ নিতে হবে। এসব কাজ বলা যত সহজ, তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি কঠিন। সেই জনই আমরা বলছিÑ অর্থমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত যতটা সরল, এর বাস্তবায়ন তার চেয়ে আরো বেশি জটিল ও কঠিন। একমাত্র সরকারের আন্তরিক সুদৃঢ় প্রতিশ্রুতিই তা বাস্তবায়ন করতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement