২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আমার অপমান আমার গ্লানি

-

গত ৩০ ডিসেম্বর এ দেশে নির্বাচনের নামে মহাসমারোহে এক ভোট ডাকাতির মহোৎসব হয়ে গেছে বলেই জনগণ দেখেছে। একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে এর চেয়ে বড় গ্লানি আর কী হতে পারে? স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন নির্লজ্জ ‘ঝাড়–-দেয়া ভোট ডাকাতি’র ঘটনা আর কখনো ঘটেনি। কার্যত এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার অস্বীকার করা হয়েছে। বেশির ভাগ মানুষ ভোটকেন্দ্রে যেতেই পারেননি। আগে থেকেই ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের ভোটকেন্দ্র থেকে দূরে রাখা হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও প্রশাসনের সহযোগিতায় মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। ফলে ভোট দিতে পারেননি অসংখ্য ভোটার।

এ আয়োজন ছিল সর্বব্যাপী। পরিকল্পনা ছিল অত্যন্ত নিখুঁত। বেশ কয়েক মাস আগ থেকেই অত্যন্ত সুচারুভাবে সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করা হচ্ছিল। কয়েক মাস আগে থেকেই বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের সারা দেশে পাইকারিভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছিল এবং তারা যাতে জামিন নিয়ে বাইরে এসে পুনরায় নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন, সে জন্য নিম্ন আদালতগুলোতে জামিনের ক্ষেত্রেও ছিল কড়াকড়ি ব্যবস্থা। তা ছাড়া সরকার পুলিশকে আটক, গ্রেফতার ও নাজেহাল করার অপরিমেয় ক্ষমতা দিয়েছে; দলীয়করণকৃত পুলিশবাহিনী সেই ক্ষমতা পুরোপুরি ব্যবহার করেছে। ফলে সরকারের আশার চেয়েও অধিক মাত্রায় ভোট ডাকাতি হয়েছে। ৩০ তারিখের নির্বাচনে প্রধান দু’টি পক্ষ ছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট বা ১৪ দলীয় জোট, অপর দিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এ ফ্রন্টের সম্ভাব্য প্রার্থী ও নেতাদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান চরম স্বেচ্ছাচারিতায় পর্যবসিত হয়েছিল।

এর বিরেুদ্ধে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যতই সোচ্চার বক্তব্য দিয়েছে, ততই সরকার তার কৌশলে টুকটাক পরিবর্তন এনেছে। দেখা গেছে, নানা মামলায় অজুহাতে, পুরনো মামলায় বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে বা তাদের প্রার্থীদের সরকার কারাগারে পুরেছে। কোথাও কোথাও তাদের ওপর সন্ত্রাসী বাহিনী বেপরোয়া হামলা চালিয়েছে এসব হামলা দেখেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের চিরুনি অভিযান চালিয়ে এমনভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাতে তারা ভোটকেন্দ্রে হাজির হতে না পারেন। কর্মীদের পুলিশবাহিনী এমনভাবে তাড়া করেছে, যাতে প্রার্থীরা ভোটকেন্দ্রে তাদের কোনো পোলিং এজেন্ট দিতে না পারেন। পাশাপাশি দলের ক্যাডারবাহিনীকে এমনভাবে সাজিয়েছে, যাতে ভোটকেন্দ্রে কেউ প্রবেশ করতে না পারেন। পুলিশ বিরোধী দলের সম্ভাব্য এজেন্টদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আগাম জানিয়ে দিয়েছে, ভোটকেন্দ্রে গেলে পরিণতি ‘ভয়াবহ’ হতে পারে।

দেখা গেছে, যে কেন্দ্রে ১০টি বুথ থাকার কথা, সেখানে বুথ খোলা রাখা হয়েছিল একটি বা দু’টি। বাকিগুলোর দরজা ছিল বন্ধ। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে মাস্তানরা ছিল; যারা ভোট দিতে বাধা দিয়েছে কিংবা কাকে ভোট দিচ্ছেন দেখিয়ে দিতে বাধ্য করেছে কিংবা ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে বাধ্য করেছে।

এই দিকটা ছিল বাহ্যিক, ভেতরটা ছিল আরো ভয়াবহ। ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে বারবার আহ্বান জানানো হচ্ছিল, তাদের কর্মীরা যেন দিনভর ভোটকেন্দ্র পাহারা দেয়। আওয়ামী লীগ নেতারা সাবধান করছিলেন, এরা যদি ভোটকেন্দ্র পাহারা দিতে যায়, তারাও বসে থাকবেন না। তারাও লোক পাঠাবেন। অর্থাৎ ভোটকেন্দ্রে যাতে হানাহানির পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়, সেটা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা ছিল। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছিল একটি ‘রাজচালাকি’র নির্বাচন। তিনি বলেন, ‘আমি সরলভাবে বলেছিলাম, সকাল সকাল ভোট দিন এবং কেন্দ্র পাহারা দিন। কিন্তু ভোট তো রাতেই হয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘সত্যি, খুব দুঃখ লাগে। ৩০ ডিসেম্বর যে ঘটনা ঘটল, স্বাধীনতার ৪৮ বছরে এসে তা দেখতে হলো। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। এটা তো হওয়ার কথা নয়। কেন এটা হবে?’ কামাল হোসেন আরো বলেন, ‘যেভাবে হলো, আমরা কেউ টেরও পেলাম না যে, আমাদের ভোট ‘দেয়া’ হয়ে যাচ্ছে। এটা কেন এভাবে করতে হবে? এ রকম অস্বাভাবিক কাজ কেন হচ্ছে?’

তার বিবেচনায়- ‘এর চেয়ে বরং ঘোষণা দিয়ে দিলে হতো- একজন প্রধানমন্ত্রী এবং ৩০০ জন সংসদ সদস্য হয়েছেন। ১৭ কোটি মানুষ নিয়ে কি খেলা করা যায়? রাষ্ট্র নিয়ে এভাবে খেলা করা চলে না। যারা এগুলো করছেন, না ঝুঝে করছেন। আমি মনে করি, মানসিকভাবে ভারসাম্য না হারালে কেউ এভাবে করতে পারে না।’

এই ঘটনা যে কতভাবে ঘটেছে তা পত্রপত্রিকায় যেমন এসেছে, তেমনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা দেখতে পেয়েছি। কত ধরনের অনিয়ম-জালিয়াতির ঘটনা যে ঘটেছে, তা বলে শেষ করা যাবে না। গ্রামাঞ্চলে কোথাও কোথাও দুর্বৃত্তদল, পুলিশবাহিনী ভোটকেন্দ্রে না যেতে সাবধান করে ভোটারদের বাধা দিয়েছে। কোথাও কোথাও বলেছে, ‘তোমাদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নেই; তোমাদের ভোট দেয়া হয়ে গেছে।’ কোথাও বলেছে- ‘ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছো। কেন্দ্র তো পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কোথায় ভোট দিবা? বাড়ি চলে যাও।’ কোথাও কোথাও ধানের শীষের সম্ভাব্য ভোটারদের বেদম মারধর করা হয়েছে। এক অঞ্চলে মারধর হলে অন্য অঞ্চলে তার প্রভাব পড়েছে।

এ অবস্থায়, স্বাভাবিকভাবেই মানুষ ভোট দিতে ভয় পেয়েছে। তারপরও অনেকে ভোটকেন্দ্রে হাজির হয়েছেন, গিয়ে দেখেছেন তার ‘ভোট হয়ে গেছে’। যদিও তিনি হোন সিনিয়র সিটিজেন বা এবারই প্রথম ভোটার। কেউ কেউ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখেছেন, ভেতর থেকে তা বন্ধ। দরজা ধাক্কাধাক্কির অনেকক্ষণ পর পোলিং কর্মকর্তা বেরিয়ে বলেছেন, ‘একটু কাজ করছিলাম। তাই কেন্দ্র বন্ধ ছিল।’ কোথাও দেখা গেছে, দুপুরের দিকে অল্প কিছু ভোটের ব্যালট বাক্স পরিবর্তন করে ভরা বাক্স পোলিং অফিসারের সামনে রেখে দেয়া হচ্ছে। কারো কারো আঙুলে কালি লেপন করে বলে দেয়া হয়েছে- ‘এবার চলে যান, ভোট দেয়া হয়ে গেছে।’ কোথাও বা পর্দাঘেরা স্থানে আওয়ামী লীগ সমর্থকেরা দাঁড়িয়ে থেকেছে, যে প্রবীণ ভোটার তাদের কথা শোনেননি তাকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সিল দেয়া ব্যালট হাত থেকে কেড়ে নিয়ে চিৎকার করে বলা হয়েছে, এই যে আপনারা দেখেন, ইনি ধানের শীষে ভোট দিয়েছেন। তারপর ওই ভোটারকে টানাহেঁচড়া করা থেকে মারামারি পর্যায়ে পর্যন্ত গড়িয়েছে ঘটনা, যেন তিনি ‘মারাত্মক’ কোনো অপরাধ করে ফেলেছেন। এতে পরিবারের অন্য ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে সাহস পাননি। কিন্তু দেশের নাগরিকদের এই অবমাননা প্রকৃতি কতটুকু সহ্য করবে, বলা কঠিন।

এগুলো ছিল সারা দেশে সে দিনের ভোটের সাধারণ ঘটনা। চেষ্টা একটাই ছিল- যাতে মানুষ ভোট দিতে না যায়, ভোট দিতে না পারে। অনেক ভোটকেন্দ্রের সামনে ক্ষমতাসীন দল সমর্থকেরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থেকে ভোটকেন্দ্র দখল করে রেখেছিলেন। তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা ডজন ডজন ভোটার ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও ভোট দিতে পারেননি। বাড়ি ফিরে গেছেন। ইলেকট্রনিক মিডিয়া এ খবর প্রকাশ করতে পারেনি। এর কারণ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খড়গ। স্মর্তব্য, প্রধানমন্ত্রী এর আগে ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে এই বলে সাবধান করেছিলেন, ‘এই মিডিয়ার অনুমোদন তিনিই দিয়েছেন, তাই যেকোনো সময় কেড়েও নিতে পারবেন।’ ইলেকট্রনিক মিডিয়ার আইনও এমন যে, শত কোটি টাকার বিনিয়োগ করা প্রতিষ্ঠান কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই এক কথায় বন্ধ করে দেয়া যায়। ফলে ইলেকট্রনিক মিডিয়া বলতে গেলে চুপ করেই ছিল। বিরোধী দলকে সমর্থন করে, এমন কোনো মিডিয়ার অস্তিত্ব এখন আর দেশে নেই। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সবাই সরকারপন্থী এবং তাদের মধ্যে আটজনই ছিলেন এই সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী। প্রিন্ট মিডিয়াও যে খুব মুক্ত ছিল তা নয়। তারপরও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে খবর এসেছে, কী ভয়াবহ ভোট ডাকাতি হয়েছে। তবে এর সবটুকুই ছিল বাইরের দিক।

ভেতরের দিক ছিল ২৯ তারিখ দিবাগত রাতের ঘটনা। ভোটের দিন ভোট বাধাগ্রস্ত করার জন্য মূল দায়িত্বে ছিল সন্ত্রাসী কর্মীরা। তারা যতটা পেরেছে সিল মেরেছে, মাস্তানি করেছে, জালিয়াতি করেছে; কিন্তু ‘সাগরচুরি’ হয়েছে আগের রাতেই। সে রাতে কোনো কোনো বোদ্ধা ব্যক্তি বলেছেন, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ‘বিনিদ্র রজনী’ যাপন করে সম্ভবত প্রতিটি কেন্দ্রের ব্যালটে সিল মেরেছে। গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক আওয়ামী যুবলীগ নেতা মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেছেন, বাহিনীর প্রতি নির্দেশ ছিল ৪০ শতাংশ ব্যালটে সিল মারার; কিন্তু সিল মেরে বসেছে ৮০ শতাংশ ব্যালটে। সুতরাং ভোট প্রদানের হারও ‘৮০ শতাংশ’ দেখিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কেন্দ্রে ভোটারদের কোনো নিরাপত্তা ছিল না। উপরন্তু সব ব্যালট বাক্স ছিল পরিপূর্ণ। বিবিসি চট্টগ্রামের একটি কেন্দ্রের ছবি দেখিয়েছে, সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে সেই কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর একজন সদস্য ভরা ব্যালট বাক্স এনে পোলিং অফিসারের সামনে রাখছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এটা ফেইক।’ কিন্তু বিবিসি তার রিপোর্ট সমর্থন করেছে। পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজধানীর মূক ও বধির কেন্দ্রে প্রায় শূন্য ব্যালট বাক্স উঠিয়ে ভরা ব্যালট বাক্স রাখা হয়। যেখানে রাতে ব্যালটে সিল মারা হয়নি, সেখানে দিনে ‘মধ্যাহ্নভোজের বিরতি’ দিয়ে ব্যালটে সিল মারা হয়েছে। যদিও ভোট চলার কথা সকাল ৮টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে। বিশ্বের প্রধান প্রধান মিডিয়া এই ভোট ডক্টরিংয়ের খবর ফলাও করে ছেপেছে। আগেই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, দেশী-বিদেশী যারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন, তারা কেন্দ্রে ‘পাথরের মতো’ দাঁড়িয়ে থাকবেন; কোনো ছবি তুলতে পারবেন না; কথা বলতে পারবেন না। ফলে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে যে ব্যাপক জালিয়াতি হয়েছে তা প্রকাশ পায়নি; কিন্তু কেন্দ্রের বাইরে যা ঘটেছে তা অপ্রকাশিত থাকেনি।

এখন একদল বুদ্ধিজীবী টেলিভিশন টকশোতে বলে বেড়াচ্ছেন যে, ভোট কারচুপি হয়নি। বিএনপি যেহেতু জামায়াতের সাথে ঐক্য করেছিল, সে কারণে তাদের এই ভরাডুবি হয়েছে। আমরা দেখতে পাই, টেলিভিশগুলোতে ঘুরে ঘুরে ওইসব আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবী একই কথা প্রচার করছেন। এখানে আমাদের বিবেক, আমাদের মনন, বিদ্যাবুদ্ধি কোনো কিছুই এই অপকর্ম থেকে আমাদের বিরত রাখতে পারছে না। কর্তৃত্ববাদী শক্তি কিছু উচ্ছিষ্ট দিয়ে এভাবে কথিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর মগজ ধোলাই করে দেয়। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ নয়।

এ দিকে, ‘আন্তর্জাতিক মানে’র নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য পুলিশের সদর দফতর থেকে ধন্যবাদ জানিয়ে পুলিশ সুপারদের ভোজের বিশেষ আয়োজন করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের চিঠিতে বলা হয়, এসপিরা তাদের ওপর অর্পিত গুরুদায়িত্ব ‘সুষ্ঠু পরিকল্পনার দ্বারা’ পালনে সক্ষম হয়েছেন। সে জন্য ৫০টি থানা ও ইউনিটে গত ৫ জানুয়ারি একযোগে ভোজের আয়োজন করা হয়। সারা দেশেই এই ভোজের আয়োজন করা হয়েছিল। পুলিশ সূত্র জানায়, ২০ নভেম্বর সদর দফতরের এক আদেশে সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলার পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয়ের জন্য পুলিশের উপমহাপরিদর্শকের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সারা দেশকে চারটি ভাগে ভাগ করে আটজন কর্মকর্তাকে তদারকির দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। নির্বাচনের পরদিন, ৩১ ডিসেম্বর ওই কর্মকর্তারাই পুলিশ সুপারদের ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। সে চিঠিতে বলা হয়েছে- ‘সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য আপনাকে আন্তরিকভাবে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আপনার সুদৃঢ় নেতৃত্ব, পেশাদারি কর্মকৌশল ও দক্ষতা, কর্মনিষ্ঠা, দূরদর্শিতা এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনার দ্বারা অর্পিত গুরুদায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়েছেন।’

চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ পরিবেশে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করা, নির্বাচন-পূর্ববর্তী আইনশৃঙ্খলা, নির্বাচন চলাকালীন ও পরবর্তী পরিস্থিতি দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করা এবং স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখতে সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। জননিরাপত্তা বিধানসহ দেশ ও জাতির প্রয়োজনে আপনার জনবান্ধব এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ আত্মপ্রত্যয়ী বাংলাদেশ গড়ার অগ্রযাত্রায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।’ চিঠির শেষে বলা হয়েছে, ‘সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে যে অবদান রেখেছেন, তা জনগণের প্রতি আপনার দায়বদ্ধতা, দেশপ্রেম ও পেশাদারিত্বের সর্বোত্তম প্রতিফলন। একবিংশ শতাব্দীর উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে আপনার জনকল্যাণকর ভূমিকার সফলতা কামনা করছি।’

এই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘পুরো নির্বাচনপ্রক্রিয়াটি তদন্ত করে দেখা উচিত।’
এ দিকে ইউনিট-ভিত্তিক ভোজে সব পুলিশ সদস্যের জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল। প্রতিটি থানায় এই রান্নার আয়োজন করা হয়। খাবারের মধ্যে ছিল পোলাও, মুরগির রোস্ট, মুসলিম পুলিশ সদস্যদের জন্য গরুর গোশত, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য খাসির গোশত, ডিম ভুনা, ডাল এবং কোমল পানীয়।

ভোজের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের উপমহাপরিদর্শক (মিডিয়া) রুহুল আমিন বলেন, ‘এটা পুলিশের একটা রেগুলার প্র্যাকটিস। বড় ধরনের স্ট্যান্ড ওয়ার্ক বা টায়ারিং ডিউটির পর ফোর্সকে রিফ্রেশ করার জন্য এ ধরনের প্রোগ্রাম সব সময়ই নেয়া হয়। এটা নতুন কিছু নয়। দীর্ঘ দিন ধরে নির্বাচনসংক্রান্ত দায়িত্ব নিয়ে ফোর্স খুব টায়ার্ড ছিল, বিজি ছিল। জাস্ট, সেটার পর একটা বিনোদনের ব্যবস্থা।’

একাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করার পুরস্কার হিসেবে পুলিশ কর্মকর্তাদের পদক দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ পদক দেয়া হচ্ছে পুলিশের সব রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার ও জেলা পুলিশ সুপারদের। এ ব্যাপারে একটি প্রস্তাব যাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সরকার প্রস্তাবটি অনুমোদন করলে পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হাতে এ পদক তুলে দেয়া হবে বলে জানা গেছে। তবে নির্বাচন কিভাবে হয়েছে, সে কথা কি আর বলে দেয়ার প্রয়োজন আছে?
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
rezwansiddiqui@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement