১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নতুন লক্ষ্যে, নতুন উচ্চতায় বাংলাদেশ

শেখ হাসিনা এবং নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ - ছবি : বাসস

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার পরপর তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেছে। বাংলাদেশে এর আগে তিনবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রেকর্ড ছিল বেগম খালেদা জিয়ার, যার মধ্যে একবারের মেয়াদ ছিল একেবারে অল্প। এর বিপরীতে, শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছেন। তার আগের তিনটি মেয়াদই ছিল পুরো সময়ের। আর সর্বশেষ মেয়াদ ক্ষণস্থায়ী হবে, এমন কোনো সম্ভাবনা এখনই দেখা যাচ্ছে না।

ক্ষমতার দীর্ঘমেয়াদের ইতিবাচক-নেতিবাচক দুই ধরনের প্রভাবই দৃশ্যমান হয়ে থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকলে এক ধরনের কর্তৃত্ববাদ প্রশ্রয় পায়; অন্য দিকে রাষ্ট্র পরিচালনায় আস্থা ও ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। বাংলাদেশের মতো অধিক জনসংখ্যার এবং স্বল্প সম্পদসমৃদ্ধ দেশ পরিচালনার ব্যাপারে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকে। এই গাঙ্গেয় বদ্বীপের মিশ্র বর্ণসমৃদ্ধ বাঙালি জাতির এমন কিছু নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যাদের শাসন বা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের প্রয়োজন বেশি বলে মনে করা হয়। এই ভূখণ্ডের ইতিহাসে অন্য জাতির কর্তৃত্ব কবুল করার পৌনঃপুনিক দৃষ্টান্ত যেমন রয়েছে, তেমনি পরাধীনতার শৃঙ্খল ছুড়ে ফেলার গৌরবময় উদাহরণও রয়েছে। স্বাধীনতা অর্জনের পর প্রায় পাঁচ দশক পার হয়েছে বাংলাদেশের। ২০২১ সাল হবে স্বাধীনতার অর্ধশতবার্ষিকী। কোনো জাতির ইতিহাসে ধীর হলেও ধারাবাহিক অগ্রগতির মধ্য দিয়ে এতটা সময় পার করা কম গৌরবের নয়।

বাংলাদেশের প্রতিটি নির্বাচনই হয় কোনো-না-কোনো দিক থেকে ব্যতিক্রমী। এবারের নির্বাচনটি সেই দিক থেকে অধিকতর ব্যতিক্রমধর্মী। এই নির্বাচনে প্রায় সব দলই অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু এই অংশগ্রহণ একেবারে মুক্ত ও অবাধ ছিল না। একনাগাড়ে ১০ বছর একটি দল ক্ষমতায় থাকলে রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর তাদের এক ধরনের কর্তৃত্ব চলে আসে। সেই সুবিধা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ পুরোপুরি পেয়েছে। কিন্তু বিরোধী পক্ষের সামনে, প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক পক্ষের সাথে রাষ্ট্রযন্ত্রের একাত্ম ভূমিকা পালনের বিষয়টি এর আগে এভাবে আর দেখা যায়নি। এর ফলে ক্ষমতাসীনেরা এবার ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২৮৮টি আসন প্রাপ্তির রেকর্ড যেমন করতে পেরেছেন, তেমনিভাবে নির্বাচনটি মুক্ত, অবাধ ও বিতর্কহীন হওয়ার ক্ষেত্রে বৈধতার সঙ্কটও সৃষ্টি হয়েছে।

ক্ষমতাসীনেরা নির্বাচনে নিরঙ্কুশভাবে জয়ী হওয়ার পর সংসদে কার্যত বিরোধী দলের অস্তিত্বহীন ধরনের অবস্থা তৈরি হয়েছে। এরপরও বাংলাদেশের দুই প্রধান কূটনৈতিক অংশীদার, চীন ও ভারত বিজয় অর্জনের সাথে সাথেই অভিনন্দন জানিয়েছে। এর পরই অভিনন্দন জানিয়েছে নেপাল, সৌদি আরব, কাতার, শ্রীলঙ্কা, ইরান ও রাশিয়া। লক্ষণীয় হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানায়নি। জাতিসঙ্ঘের পাশাপাশি এই তিন পক্ষ নির্বাচনী অনিয়মগুলোর আইনি নিষ্পত্তি করার আহ্বান জানিয়েছে।

অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রধান বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নজিরবিহীন অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে নতুন নির্বাচন দাবি করেছে। তবে বিরোধী পক্ষের এই দাবি নির্বাচন কমিশন সাথে সাথেই খারিজ করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ বলেছে, এ হলো তাদের ‘মামার বাড়ির আবদার’।

জাতিসঙ্ঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য মুক্ত, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়ে আসছিল শুরু থেকেই। দলীয় সরকারের অধীনে মুক্ত ও অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয় বলে বারবার উল্লেখ করার পরও বিরোধী দলকে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন প্রক্রিয়ায় থেকে যেতে উৎসাহিত করেছে এ পক্ষগুলো। তারা অন্তরালে থেকে সরকারের ওপর যে নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য চাপ দিয়ে গেছে, তাতে অস্পষ্টতা থাকেনি। তবে তাদের চাপের পরও বিরোধী পক্ষ নির্বাচনে প্রচারপত্র বিলি বা পোস্টার পর্যন্ত লাগাতে পারেনি। নির্বাচনে এজেন্ট দিতে পারেনি পুলিশের হাতে নির্বিচারে গ্রেফতার হওয়ার কারণে। প্রচার সমাবেশ করাও তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি।

এ অবস্থায় মনে হয়েছিল, ‘সমতল সুবিধা’র ওপর দাঁড়িয়ে নির্বাচন বাস্তব কারণেই অনুষ্ঠিত হবে না। তবে শেষ পর্যন্ত ৩০ ডিসেম্বর যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তা সব ধরনের অনুমানকে ছাড়িয়ে গেছে। সারা দেশে একেবারে স্বল্পসংখ্যক আসনে মুক্ত ও অবাধভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এরপরও যে নির্বাচনটি হয়ে গেছে তার গেজেট প্রজ্ঞাপন এর মধ্যে জারি হয়েছে। শপথ অনুষ্ঠানও ইতোমধ্যে হয়ে যাওয়ার কথা। কালবিলম্ব না করে নতুন সরকারও গঠন হয়ে যেতে পারে।

এরপর নতুন সরকার ও বিরোধী দল উভয়ের সামনে কতগুলো বাস্তব চ্যালেঞ্জ থাকবে। সরকারের সামনে প্রথম চ্যালেঞ্জ হবে নির্বাচনের বৈধতার ব্যাপারে যে প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়েছে, তা নিষ্পত্তি করা। এ নিষ্পত্তির ধরন কী হবে, স্পষ্ট নয়। তবে এ ব্যাপারে বিরোধী দলের অভিযোগের মূলকথা হলো, সরকারপক্ষ পরিকল্পনা করে রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় নির্বাচনের আগের রাতেই ৫০ শতাংশ ব্যালটে নৌকা প্রতীকে সিল মেরেছে। তাদের মতে, আওয়ামী লীগ রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট অন্য সব কর্মচারীকে তাদের নির্দেশমতো ভোট জালিয়াতি করতে বাধ্য করেছে। এই জাল ভোটের প্রকৃতি এটা নয় যে, এক ব্যক্তি গিয়ে অন্য ব্যক্তির নামে ভোট দিয়েছে; বরং এর প্রকৃতি হচ্ছে এক বা একাধিক দলীয় ব্যক্তি হাজার হাজার জাল ভোট নৌকার পক্ষে দিয়েছে। নির্বাচনের দিন সকালে বিরোধী দলের পোলিং এজেন্টদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কাজ করতে দেয়া হয়নি। ব্যতিক্রম ছাড়া, যারা ভোট দিতে গেছেন তাদের ভোটদানে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। অনেককে জোর করে বের করে দেয়া হয়েছে।
অভিযোগ অনুসারে, আয়োজন সাজানো হওয়ার কারণে ইতিহাসে বিরল ফল পাওয়া গেছে নির্বাচনের।

কোনো কোনো আসনে প্রদত্ত ভোট সংখ্যা মোট ভোট সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে। শতাধিক আসনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর দুই বা তিন লক্ষাধিক ভোটের বিপরীতে বিরোধী পক্ষের প্রার্থী ভোট পেয়েছেন মাত্র কয়েক হাজার। বহু আসনে ৯০ শতাংশের ওপর ভোট পড়েছে। এসব নজির অতীতের দৃষ্টান্তের সাথে মেলে না। অভিযোগকারীরা তাদের বক্তব্যের পক্ষে অনেক প্রমাণও উপস্থাপন করছেন।

অভিযোগের আইনি নিষ্পত্তি বলতে জাতিসঙ্ঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র যে কথা বলছে তা সম্ভবত এসব ইস্যুর সুরাহা করার প্রতিই ইঙ্গিত করেছে। প্রশ্ন হলো, এ বিষয়গুলোর সুরাহা কি নির্বাচন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন করতে পারবে? আইনের কাঠামো অনুসারে নির্বাচন কমিশন, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট এসব বিষয় নিষ্পত্তি করার কথা। এই ধারায় নির্বাচনের বৈধতার সঙ্কটের নিষ্পত্তি হলে সরকারের জন্য উদ্বেগের কিছু নেই। নির্বাচনপূর্ব প্রক্রিয়ার সাথে এসব প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের গন্তব্যে কোনো ব্যত্যয় সৃষ্টি করেনি।

কিন্তু এর পরিসর জাতীয় প্রতিষ্ঠান ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গেলে বাংলাদেশ সরকারের জন্য উদ্বেগের কারণ সৃষ্টি হতে পারে। আন্তর্জাতিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিললে পুনর্নির্বাচনের যে চাপ বিরোধী পক্ষ সৃষ্টি করছে, তা একটি ভিত্তি খুঁজে পাবে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধের যে শঙ্কার কথা বলেছেন; সে বিষয় সামনে চলে আসতে পারে। আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের পুনর্বিবেচনার ইস্যুও চলে আসতে পারে আলোচনায়।

বাস্তবে এ ধরনের অবস্থা যাতে সামনে না আসে, তা নিশ্চিত করা সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। পাশ্চাত্যের যেসব শীর্ষ দেশ এক লাইনে কাজ করছে, তাদের প্রভাবিত করে সরকারের নতুন অভিযাত্রার আইনানুগ স্বীকৃতি আদায় করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের সামনে দু’টি সুযোগ রয়েছে। একটি হলো প্রতিবেশী দেশ ভারতের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের সহায়তা পাওয়া যেতে পারে এ প্রচেষ্টায়। ঢাকায় দায়িত্ব পালনকারী দেশটির হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়ে ভারত খুব খুশি।’ এ ছাড়া সরকারে থাকলে অনেক টুলই লক্ষ্য অর্জনে কাজে লাগানো সম্ভব। সেই সুবিধাও সরকারের হাতে রয়েছে।

পাশ্চাত্যের ওপর বাংলাদেশের মূল নির্ভরতা নিরাপত্তার চেয়েও বেশি হলো অর্থনৈতিক। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের ওপর পাশ্চাত্যের বিশেষ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। জাতিসঙ্ঘসহ বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে রয়েছে পাশ্চাত্যের বিশেষ নিয়ামক প্রভাব। বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্য এবং শান্তি মিশন থেকে প্রাপ্ত নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের রেমিট্যান্সের ওপর তাদের সিদ্ধান্তের বেশ প্রভাব রয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে তাদের মূল্যায়নকে অনেকে গুরুত্ব দিতে চান। সিএনএনের মাইকেল কুগেলম্যান নির্বাচনোত্তর বাংলাদেশ পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অস্পষ্ট।

এক দিক থেকে, একধরনের স্বাভাবিকতা ফিরে আসতে পারে। ঢাকা তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও শক্তিশালী উন্নয়ন প্রয়াস অব্যাহত রাখবে। একই সাথে নির্বাচনী সাফল্যে উদ্দীপ্ত হয়ে ভিন্নমতালম্বীদের ওপর দমনপীড়ন জোরদার না করলেও অব্যাহত রাখবে, যতক্ষণ না তার মনে হবে যে, এ ধরনের কঠোর ব্যবস্থা তার আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে। বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। বিরোধীরা পিছু হটতেই থাকবে যতটা তার দুর্বল সামর্থ্য অনুমোদন করে। তবে বিরোধীদের ক্রমবর্ধমান দম বন্ধ করা পরিবেশে আরো কট্টরপন্থী বিরোধী উপাদানগুলো চরমপন্থা গ্রহণের মতো অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে আরো অশুভ বিষয় হলো, বাংলাদেশের তরুণ জনসাধারণ (এ দেশে ৪০ বছরের কম বয়স্ক লোকের সংখ্যা ৮০ শতাংশ) গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস হারানো শুরু করতে পারে। আপনি এ বিষয়টিকে যেভাবেই নিন না কেন, বাংলাদেশের সামনে রয়েছে গোলযোগ আর গোলমেলে দিন।’

এ ধরনের মূল্যায়ন পাশ্চাত্যের অনেক গণমাধ্যমেই করা হচ্ছে। এসব উপেক্ষা করে এখন নতুন মিত্রদের কাছ থেকে সহযোগিতার প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে। বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক সহায়তা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় সৃষ্টি হলে চীনের অর্থনৈতিক সহায়তা পাওয়া যেতে পারে। নতুন ধরনের গণতন্ত্রে পদার্পণের কারণে জাতিসঙ্ঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশের ভূমিকা রাখার অবকাশ না থাকলে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের পাঠানো যেতে পারে। এসব দেশ ইতোমধ্যে বাংলাদেশের নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীকে সবার আগে অভিনন্দন জানানো, চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর অর্থনীতির দেশই শুধু নয়; একই সাথে দেশটির কাছে বিনিয়োগযোগ্য সবচেয়ে বেশি তহবিল রয়েছে। বাংলাদেশে ২৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি রয়েছে দেশটির। অনেকগুলো বড় প্রকল্প চীনা বিনিয়োগে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। মনে করা হয়, বাংলাদেশ অঞ্চলে আমেরিকা তথা পাশ্চাত্যের প্রভাব রোধ করতে রাশিয়া, চীন ও ভারত এক ধরনের সমঝোতায় যাওয়ার প্রভাব বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে কাজ করেছে। এই মেরুকরণের পর রাষ্ট্রযন্ত্র সরকারি দলকে আবারো সরকারে রাখতে বিশেষভাবে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। ভারত তার কৌশলগত ও নিরাপত্তা স্বার্থ নিশ্চিত করতে চেয়েছে। রাশিয়া তার অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং এই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে চাইতে পারে আর চীন হয়তো তার বাণিজ্য ও বিনিয়োগের স্বার্থকে বড় করে দেখেছে। এই তিন শক্তির মধ্যে এমন সহাবস্থানের সমঝোতাও হয়ে থাকতে পারে যে, এখানে পশ্চিমা শক্তিধরদের প্রভাব বিস্তার করতে দেয়া হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের দাপটের ক্রমহ্রাসমান অবস্থা এবং সহযোগী দেশগুলোর সাথে নানা ইস্যুতে দূরত্ব তৈরি হওয়ার কারণে অনেক দেশই এখন তাকে চ্যালেঞ্জ করছে। সিরিয়ার মতো দেশ এই চ্যালেঞ্জে জয়ীও হয়েছে বলা চলে রাশিয়ার হস্তক্ষেপে। এ জন্য সিরীয়দের কত মূল্য দিতে হয়েছে, সেই হিসাব না করে বাশার আসাদের ক্ষমতায় থেকে যাওয়াকে তার বিজয় হিসেবে মূল্যায়ন করাই যায়।

এটি ঠিক, বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং এর নির্ভরতার ক্ষেত্রগুলো সিরিয়ার মতো দেশ থেকে বেশ আলাদা। বাংলাদেশের রফতানি-বাণিজ্য ইউরোপ-আমেরিকানির্ভর। তবে পাশ্চাত্যের যেকোনো অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ ও অবরোধে চীন, রাশিয়া ও ভারতের মতো দেশের সর্বাত্মক সহায়তা পেলে বাংলাদেশ নিশ্চয়ই টিকে থাকতে পারবে। পাশ্চাত্য তাদের স্বার্থেই একসময় বাংলাদেশের সাথে সমঝোতায় আসতে বাধ্য হবে। বাংলাদেশ এই চ্যালেঞ্জও নিশ্চয়ই জয় করতে পারবে।

বাংলাদেশের জন্য এবারের নির্বাচনে নতুন কিছু করার গৌরবও রয়েছে। বাংলাদেশ এবারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে চূড়ান্তভাবে একটি ‘নতুন মডেলের গণতন্ত্রে’ প্রবেশ করেছে। মডেলটি কয়েক দশক ধরে মিসর ও আলজেরিয়ার মতো দেশে কাজ করে এসেছে, যেখানে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে। আর রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন অঙ্গের সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে নেয়। গণতন্ত্রের এ মডেলটি কর্তৃত্ববাদের কোন পর্যায়ে দেশকে নিয়ে যায়, সেটি বিবেচনার চেয়ে বড় বিষয় হলো, এতে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থাকে। কথা বলা বা ভোট দেয়ার স্বাধীনতার চেয়ে পেট ভরে খেতে পারার বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। পাশ্চাত্যের অবাধ ও মুক্ত গণতন্ত্র বিদায় হলো কি হলো না, তার চেয়ে জনগণের ভাত-কাপড় থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারা অনেক বেশি দরকার। সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশের গণতন্ত্রের নতুন মডেলটির সাফল্যে এটি ছড়িয়ে পড়বে অন্যান্য দেশেও। এতে পথ দেখানোর নতুন উচ্চতায় আরোহণ করতে পারে বাংলাদেশ।
mrkmmb@gmail.com

 


আরো সংবাদ



premium cement