দারিদ্র্য- বিমোচনের সর্বশ্রেষ্ঠ উপায়
- শাহ্ আব্দুল হান্নান
- ০৩ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:০১
বিশ্ব গত ১০০০ বছরেও দারিদ্র্য দূর করতে পারেনি। বরং বলা যায়, দারিদ্র্য বেড়েছে। ভারত উপমহাদেশ, আফ্রিকা, মধ্য এশিয়া, রাশিয়া, ইউরোপের কোনো কোনো অংশ যেমন- কসোভো, সার্বিয়া এসব জায়গায় অন্তত ১০০ কোটি লোক দারিদ্র্যে আক্রান্ত।
‘ক্যাপিটালিজম’ (পুঁজিবাদ) দারিদ্র্যবিমোচনের ক্ষেত্রে কিছুই করতে পারেনি। এর কারণ হচ্ছে পুঁজিবাদ শুধু লাভ (প্রফিট), অতিরিক্ত মুনাফাখোরি, সুদ এবং অন্যান্য মাধ্যমে শোষণ করা ছাড়া মানুষকে কিছুই দিতে পারেনি বলেই আজো বিশ্বব্যাপী দরিদ্রতার হার জ্যামিতিক হারে বেড়েই চলছে। সুতরাং পুঁজিবাদকে বলা যায় Anti poor (দরিদ্রবিরোধী)।
ধনতন্ত্র বা পুঁজিবাদ কেবল দু’-এক দেশের লোকদেরই শোষণ করেনি। বরং সারা বিশ্বের অগণিত মানুষকে শোষণ করেছে, তাদের সিস্টেমের মাধ্যমে। এটা মানবজাতির কল্যাণ বিরোধী। এ ব্যবস্থার আশু অবসান হওয়া দরকার।
‘সমাজতন্ত্র’ও দারিদ্র্য সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। সমাজতন্ত্রের অর্থনীতি সব কৃষি খামার এবং অন্যান্য খামারসহ সব শিল্পকেই জাতীয়করণ করতে বলে। অর্থাৎ, এগুলোকে সরকারের পরিচালনায় আনতে বলা হয়। এর ফল হয়েছে যে, কৃষকেরা উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। শ্রমিকেরাও পারলে ফাঁকি দিয়ে থাকেন। ফলে বেশির ভাগ সরকারি কর্মচারীর দুর্নীতি করার সুযোগ বেড়ে যায়। কেননা এই অফিসাররাই সব খামার এবং শিল্প পরিচালনা করে থাকে।
এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব। কল্যাণ রাষ্ট্র, যেখানে রাষ্ট্র সব দরিদ্রের বাসস্থান, খাবার, চিকিৎসা ইত্যাদি মৌলিক চাহিদা পূরণের দায়িত্ব গ্রহণ করে। এই ব্যবস্থা উত্তর ইউরোপের সাত-আটটি দেশে কায়েম রয়েছে। সেখানে রাষ্ট্র দরিদ্রদের সব দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এর ফলে সেসব দেশে কোনো দারিদ্র্য নেই।
এ প্রসঙ্গে এখন ইসলামের কথা বলব।
ইসলামেও কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণা রয়েছে। ইসলাম বলেছে, সব দুস্থ লোকের দায়িত্ব রাষ্ট্র গ্রহণ করবে; যদি না তার কোনো ধনী আত্মীয় থাকে তাকে পালন করার মতো। রাসূল সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো সম্পদ রেখে যাবে, সেটা তার ওয়ারিশরা পাবে। আর যে, কোনো দুস্থ রেখে যাবে, তার দায়িত্ব রাষ্ট্রের (রাসূল সা:-এর ভাষায় আমার, অর্থাৎ রাষ্ট্রের-সিহাহ সিত্তাহ)
ইসলামী অর্থনীতির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, হারাম মাল উৎপাদন করা যাবে না, সুদ খাওয়া যাবে না, মুনাফাখোরি করা যাবে না এবং রাষ্ট্র জাকাতের বিধান সম্পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠা করবে।
কুরআনে হারাম মালের তালিকা দেয়া হয়েছে। যেমন- মদ ও অন্যান্য মাদক, সব ধরনের জুয়া, শূকরের মাংস, হিংস্র প্রাণী ইত্যাদি। ইসলাম সুদ হারাম করেছে। কেননা সুদের মাধ্যমে গরিব নিঃস্ব হতে থাকে, ধনী আরো ধনী হতে থাকে। সম্পদ কিছু লোকের হাতে পুঞ্জীভূত হতে থাকে এবং মানুষের স্বভাব লোভাতুর হয়ে যায়। যেসব কারণে মানুষ লোভী হয়, তার একটা হচ্ছে সুদ। ইসলাম মুনাফাখোরিকে হারাম ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ, অতিরিক্ত লাভ করে বিশাল জনগোষ্ঠীকে কষ্ট দেয়া যাবে না। কুরআনের মূল বক্তব্য- আল্লাহর আদেশ হলো, ইনসাফ কায়েম করা। জাকাত একটি ব্যাপক ব্যবস্থা। এটা সরকারের আদায় করার কথা। যেখানে সরকার আদায় করে না, সেখানে ব্যক্তি/সমাজকে এটা আদায় করতে হবে। কেবল জাকাতের জন্যই ওমর ইবনে আবদুল আজিজের শাসনামলে দারিদ্র্য উঠে গিয়েছিল দেশ থেকে। এরপর হাজার বছর মুসলিমবিশ্বে আর দারিদ্র্য ছিল না।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা