২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহার ও ট্রাম্পের চ্যালেঞ্জ

-

জনশক্তি এমন এক শক্তি, যা সবকিছু ওলট-পালট করে দিতে পারে। সিরিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ প্রায় থামিয়ে দেয়ার পেছনে রয়েছে এই জনশক্তি। ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট ওবামা পারেননি এই যুদ্ধ কংগ্রেসে অনুমোদন করিয়ে নিতে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে পেন্টাগন ও ফরেন পলিসি এস্টাবলিস্টমেন্ট দীর্ঘদিন থেকে চেয়েছিল সিরিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে। তাই এরা সিরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামল। এই যুদ্ধ ডেকে আনল এক ধ্বংসযজ্ঞ। যুদ্ধের ফলে নিহত ও আহত হলো কয়েক লাখ মানুষ। বাস্তুচ্যুত হলো ৬০ লাখর মতো। দেশ ছেড়ে পালাল ৫০ লাখ সিরীয়। এতে প্রমাণ হলো মার্কিন জনগণ সঠিক ছিল, ভুল করেছে সামরিক লোকজন। জনগণের নির্দেশিত পথে চললে সিরিয়ার এই যুদ্ধ কখনোই হতো না। জনগণের চাওয়া-পাওয়া হিসেবেই এখন এই যুদ্ধের অবসান হতে হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত সপ্তাহে সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। এই গোষণা সিরিয়ায় চলমান যুদ্ধের অবসানের একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

আমরা অনেকেই জানি, ২০১৩ সালে ওবামা প্রশাসন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হাফেজ আল-আসাদের বিরুদ্ধে প্রমাণহীনভাবে অভিযোগ তোলেন, তিনি রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছেন। এর এক বছর পর এই অমূলক অভিযোগে যুদ্ধের হুমকি বেড়ে যায়, একইভাবে যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদও বাড়ে। বিশ্বজুড়ে সিরিয়ার ওপর হামলার প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। যুক্তরাষ্ট্রে জনতা প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমে আসে। টাউন হলগুলোতে চলে প্রতিবাদ-আলোচনা। ওবামা বাধ্য হন বিষয়টি অনুমোদনের জন্য কংগ্রেসে তুলতে। কংগ্রেসের বাইরে চলে ‘পিস ইনসারেকশন’ ক্যাম্পেইন। তাদের দাবি : ‘নো ওয়ার ইন সিরিয়া’। কংগ্রেস অফিসে চলে অবস্থান ধর্মঘট। আসে যুদ্ধবিরোধী ব্যাপক ফোন কল। কংগ্রেসে এই যুদ্ধের অনুমোদন বন্ধ হয়ে যায় ৪৯৯ : ১ ভোটে। এভাবেই অন্য ধরনের সুপার পাওয়ার অর্থাৎ ‘পিপল’ থামিয়ে দিল সিরিয়ার যুদ্ধ। অপর দিকে ওবামা হলেন প্রথম আমেরিকান প্রেসিডেন্ট, যিনি ঘোষণা করলেন বোমা হামলা অভিযানের। তিনি আবার বাধ্য হলেন জনতার প্রতিরোধে পিছু হটতে। কিন্তু যুদ্ধবিরোধীরা বুঝতে পারলেন, তাদের বিজয় হবে ক্ষণস্থায়ী। কারণ, নিওকন ও মিলটারিরা অব্যাহতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সিরীয়বিরোধী যুদ্ধের ব্যাপারে। নয়া ভুয়া সন্ত্রাসের ও মিথ্যা রাসায়নিক যুদ্ধের অভিযোগে মানবিক ধ্বংসযজ্ঞ এগিয়েই চলছিল।

ওয়ার্ল্ড সোশ্যালিস্ট ওয়েব সাইটে (ডব্লিউএসডব্লিইএস) বর্ণনা দেয়া হয় কী করে ওবামা প্রশাসনের অধীনে যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। ওয়েব সাইটটি লিখে : ওবামা প্রশাসনের অধীনে সিরিয়ায় অবৈধ যুদ্ধের শুরু হয় ২০১৫ সালের অক্টোবরে। এ যুদ্ধের অনুমোদন ছিল না জাতিসঙ্ঘের কিংবা সিরিয়া সরকারের কাছ থেকে।

আসাদ সরকার পতনের এই যুদ্ধে আল-কায়েদা লিঙ্কড মিলিশিয়াদের প্রতি সিআইএর সমর্থনে একটি পরিবর্তন আসে। যুক্তরাষ্ট্র সৈন্যরা পরিচালনা করে একটি বিমান হামলা অভিযান। এর ফলে ধ্বংস হয়ে যায় রাক্কা সিটি। সিরিয়ার অন্যান্য কয়েকটি জনপদও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। সরেজমিন তদন্ত করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক প্রতিবেদনে জানায়, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় যুদ্ধাপরাধ সংঘটন করেছে। জনৈক বিজয় প্রসাদের বর্ণনা মতে, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় ‘পার্থিব-নরক’ সৃষ্টি করে চলেছে। এর পরও যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার যুদ্ধে হেরেই চলেছে। রাশিয়া তার মিত্রের সহায়তায় এগিয়ে আসায় হাফেজ আল-আসাদের পতন সম্ভব হচ্ছে না।

একটি নন-ইন্টারভেনশনিস্ট বেস ভোট দিয়ে ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছিল। সেই বেসটির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ট্রাম্প সিরিয়ার যুদ্ধকে আরো এগিয়ে নিয়ে গেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ঠেলে দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের খাদে। করপোরেট মিডিয়াগুলো এ ক্ষেত্রে ট্রাম্পের প্রশংসায় এগিয়ে আসে। এই বোমাবাজি ও প্রেসিডেন্টকে এরা প্রশংসা করে, যদিও তিনি সিরিয়ার বিরুদ্ধে একটি রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অপ্রমাণিত অভিযোগে সিরিয়া যুদ্ধ শুরু করে। পরবর্তী সময়ে এমনকি জেনারেল জেমস ম্যাটিস স্বীকার করেছেন, হাফেজ আল-আসাদের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগের কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণগত ভিত্তি নেই।

২০১৮ সালের প্রথম দিকে ট্রাম্প প্রশাসন ঘোষণা দিয়েছিল, সিরিয়ার এক-তৃতীয়াংশজুড়ে আমেরিকার সেনাবাহিনী অবস্থান করবে একটি স্বায়ত্তশাসিত ডি-ফেক্টো কুর্দি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। সেখানে একটি গ্রাউন্ড ফোর্স হিসেব তাদের সহায়তা দেবে ৩০ হাজার সিরিয়ান কুর্দি সৈন্য। আর এর প্রতি সমর্থন থাকবে ও তাদের প্রতিরক্ষা দেবে মার্কিন প্রক্সি আর্মি। তখন এই ঘোষণাটি দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেটস রেক্স টিলারসন। টিলারসন বলেছিলেন, এদের পেছনে থাকবে বিমানবাহিনীর সহায়তা। এর জন্য তৈরি করা হবে আটটি নতুন ঘাঁটি। তখনকার সময় সিরিয়ায় মার্কিন বিমান হামলার প্রতিবাদ উঠেছিল যুক্তরাষ্ট্রে ও বিশ্বজুড়ে। কিন্তু এখন জানা যায়, সিরিয়ার জনগণ টিকে আছে এবং এরা দেশটির বেশির ভাগ এলাকা দখলমুক্ত করতে পেরেছে। জনগণ বাড়িঘরে ফিরে আসছে এবং কাজ করছে পুনর্গঠনে।

ট্রাম্প সিরিয়া থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। তিনি বলেছেন, আগামী ৬০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে সিরিয়া থেকে আমেরিকার ২ হাজার সৈন্যের সবাইকে প্রত্যাহার করা হবে। তার এই ঘোষণা প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়েছে। এই বিরোধিতা করছে পেন্টাগন, শীর্ষসারির ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানেরা এবং ওয়াশিংটনের ন্যাটো জোটের মিত্ররা। এটি ট্রাম্পের ঘোষণা বাস্তবায়নের জন্য রীতিমতো একটি চ্যালেঞ্জ। গত ১৮ ডিসেম্বর ট্রাম্প তার এক টুইট বার্তায় বলেন : We have defeated ISIS in Syria, my only reason for being there during the Trump Presidency.

এদিকে রাশিয়া সিরিয়ায় এর সামরিক কর্মকাণ্ড কমিয়ে আনছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সিরিয়া বাহিনী রাশিয়ার বিমান দিয়ে যেসব বিমান হামলা চালাচ্ছিল, তার সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমিয়ে এনেছে। ব্যাপক যুদ্ধের সময়ের তুলনায় এখন তা ৯৯ শতাংশ কমিয়ে আনা হয়েছে। তিনি বলেছেন, একসময় দিনে ১০০ থেকে ১১০টি ফ্লাইট চালানো হতো, এখন তা ২-৪টিতে নামিয়ে আনা হয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন স্বীকার করেছেন, আইএসআই পরাজিত হয়েছে এবং তিনি ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত সমর্থন করেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার ব্যাপারে সন্দেহের তীরও ছুড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন : ‘আমরা এখনো মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের কোনো চিহ্ন দেখতে পাইনি। তবে আমি স্বীকার করি, এই প্রত্যাহার সম্ভব।’

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচিত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এই মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে সহায়তা খুব কমই পাওয়া গেছে। অনেক রিপাবলিকান ও করপোরেট মিডিয়া এ জন্য এখন ট্রাম্পের সমালোচনা করছে। প্রথম যে দুইজন ডেমোক্র্যাট এই পদক্ষেপের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন, তারা হলেন রিপাবলিকান টেড লিউ এবং রো খান্না। এর মধ্যে প্রথমজন প্রায়ই ট্রাম্পের সমালোচনা করলেও এই উদ্যোগ সমর্থন করেছেন। কিন্তু বাই-পার্টিসান ওয়ার কংগ্রেস ট্রাম্পের এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর পদত্যাগ করেছেন। তার পদত্যাগপত্রে তিনি ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির সাথে দ্বিমত পোষণ করেন। গণমাধ্যম শোকাভিভূত ম্যাটিসের পদত্যাগের ফলে। মিডিয়া এড়িয়ে চলছে তার যুদ্ধাপরাধের ইতিহাস, যিনি হামলার টার্গেটে পরিণত করেছিলেন বেসামরিক লোকজনকে। কনসোর্টিয়াম নিউজের বিশেষ প্রতিনিধি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন, ম্যাটিস বিখ্যাত ছিলেন একটি সরস বক্তব্যের জন্য : ‘ইট ইজ ফান টু শুট সাম পিপল’। ট্রাম্প চারজনকে অভিহিত করেন ‘মাই জেনারেল’ নামে। তাদের মধ্যে ম্যাটিস চতুর্থ। অন্য তিনজন হচ্ছেন : ডিরেক্টর অব হোমল্যান্ড সেক্রেটারি ও তৎকালীন চিফ অব স্টাফ জন কেলি, ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার এইচআর ম্যাকমাস্টার এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার মাইকেল ফ্লিন।

‘পপুলার রেজিস্ট্যান্স’ সিরিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয়টি সমর্থন করেছে। এরা প্রেসিডেন্টে ট্রাম্পের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। শুধু এরাই ট্রাম্পের সিরিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা সমর্থন করছে না। CODE PINK- এর মেডিয়া বেঞ্জামিন এই সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণাকে বর্ণনা করেছেন ‘অ্যা পজিটিভ কনট্রিবিউশন টু দ্য পিস প্রসেস’ হিসেবে। তিনি সব বিদেশী শক্তির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ যারা সিরিয়া ধ্বংসের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন, তারা যেন এই দেশটির পুনর্গঠন কাজে অংশ নেন। তারা যেন সিরিয়ার শরণার্থীসহ জনগণের সহায়তায় এগিয়ে আসেন। কারণ সিরিয়ার জনগণ বিগত সাতটি বছর অনেক দুর্ভোগ সয়েছে।

‘ভেটারানস ফর পিস’ এই সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছে : The US has 'no legal right to be [there] in the first place'। একই সাথে সংগঠনটি মার্কিন বিমানবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনাও তুলে ধরেছে। একইভাবে ‘ব্ল্যাক অ্যালায়েন্স ফর পিস’ (বিএপি) এই ঘোষণার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। এই জোট লিখেছে: ‘ওয়ার শুড নট হ্যাভ নেভার বিন অ্যালাউড ইন দ্য ফার্স্ট প্লেস’। এরা করপোরেট প্রেসের সমালোচনা করেছে এই সেনা প্রত্যাহারের বিরোধিতা করে তাদের রাজনৈতিক দ্বিচারিতা প্রদর্শনের জন্য। বিএপি স্বীকার করে, এরা যুক্তরাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারণী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লড়াই করবে এই সেনা প্রত্যাহার ও ঘোষিত প্রতিশ্রুতি যেন শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয় সিরিয়া ও অন্যান্য দেশের সাথে এ ধরনের সংশ্লিষ্টতার অবসান ঘটিয়ে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল সেই অভ্যুত্থানের, যার ফলে সে দেশের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের পতন ঘটেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাসিস্ট্যান্ট মিলিটারি অ্যাটাশে স্টিফেন জে. মিয়াডি, যিনি সিআইএ-রও একজন কর্মকর্তা ছিলেন, তিনি এ অভ্যুত্থানের পরিকল্পনায় হাত মিলিয়ে ছিলেন সিরিয়ান চিফ অব স্টাফ হুসনি জায়েমের সাথে। যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন ছিল তুরস্কের সাথে সিরিয়ার সীমান্ত বিরোধ ও তেল পাইপলাইনের ব্যাপারে। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন ছিল বামদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বেড়ে চলা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে সরকারের ক্রমবর্ধমান বন্ধুত্বের ব্যাপারে।

প্রশ্ন হচ্ছে সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের সরকার বদলের ইতিহাসের অবসান ঘটবে কিনা? সিরিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখার যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টার ইতিহাস সুদীর্ঘ, সেই ১৯৪০-এর দশক থেকে। সিরিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখার নীতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া। ১৯৮৬ সালের সিআইএ ডকুমেন্টে বর্ণনা আছে, কী করে যুক্তরাষ্ট্র আসাদ পরিবারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চেয়েছিল। ওবামা প্রশাসনের সময় সিরিয়ায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পরিকল্পনা করা হয়। তবে আসাদকে উৎখাতের পরিকল্পনা করা হয় জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রশাসনের সময়ে। পররাষ্ট্র দফতরের একটি তারবার্তায় সিরিয়ায় সরকার বদলের বিষয়টির প্রমাণ আছে।

ট্রাম্প এই প্রথম বলেননি যে, সিরিয়ার যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন। তিনি তা বলেছিলেন গত মার্চেও। কিন্তু জেমস ম্যাটিস এপ্রিলে বলেছিলেন সিরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর সম্প্রসারণ ঘটাবেন। সেপেটম্বর পেন্টাগন বলল, মার্কিন বাহিনী সিরিয়ায় ততদিন পর্যন্ত থাকবে যতদিন না দামেস্ক ও এর রাজনৈতিক বিরোধীরা পুরোপুরি সেটেলমেন্ট অর্জন করে। তাই বলতে হচ্ছে, ট্রাম্পের এই সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা বাস্তবায়ন আসলেই তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

ট্রাম্পের সর্বসাম্প্রতিক ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় পেন্টাগন বলেছে, এরা সিরিয়ায় বিমান আক্রমণ অব্যাহত রাখবে। পেন্টাগন সেনাপ্রত্যাহারের কোনো টাইমলাইন দেয়নি। এরা এর কারণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাহিনীর প্রতিরক্ষা ও অপারেশনগত নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করেছে। যেহেতু ট্রাম্পের এই সেনা প্রত্যাহার ঘোষণা ফরেন পলিসি স্টাবলিশমেন্টের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, তা যুদ্ধ অবসানের আন্দোলন জোরদার করতে হবে ট্রাম্পের সমর্থনে।

সার কথা হচ্ছে এখন জনগণের আন্দোলনের জোরদার করার মধ্য দিয়েই নিশ্চিত করতে হবে সিরিয়ার যুদ্ধের অবসান। শান্তি আন্দোলনকারীদেরই এগিয়ে আসতে হবে ট্রাম্পের এই ঘোষণার প্রতি সমর্থন জানিয়ে। তাদেরই এ ক্ষেত্রে হতে হবে ট্রাম্পের মিত্র।
সিরিয়া ও আফগানিস্তানের যুদ্ধকে যুক্তরাষ্ট্র কাউন্টার প্রডাক্টিভ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমেরিকার জনগণকেই দাঁড়াতে হবে ২০১৩ সালে শুরু হওয়া সিরিয়ার এই যুদ্ধ থামাতে। আর কখনোই যেন তা না ঘটে সে নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে আমেরিকান জনগণকেই।


আরো সংবাদ



premium cement