ইউসুফ কারজাবির রাষ্ট্রচিন্তা
- শাহ্ আব্দুল হান্নান
- ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৭:৫৯, আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ২০:১০
ড. ইউসুফ আল কারজাবির জন্ম ১৯২৬ সালে। ১৯৭৩ সালে তিনি কায়রোর বিখ্যাত আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন অব ইসলামিক স্কলারসের সভাপতি। এ পর্যন্ত তার ৪২টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ১০টির মতো বাংলা ভাষায় পাওয়া যায়।
এ নিবন্ধে কারজাবির ‘ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা, তত্ত্ব ও প্রয়োগ’ বইটি নিয়ে আলোচনা করব। বইটির মূল আরবি নাম ‘মিন ফিকহি আদ দাওলাহ ফিল ইসলাম’। এটি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট (বিআইআইটি) প্রকাশ করেছে। তাদের ঠিকানা- রোড নম্বর-২, হাউজ নম্বর-৪, সেক্টর-৯, উত্তরা।
লেখক প্রথম অধ্যায়ে ইসলামী রাষ্ট্রের গুরুত্ব প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি প্রথমেই বলেছেন, ‘পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদ এ কথা মুসলিমদের মনে ঢুকিয়ে দিতে সুযোগ হয়েছে, যার সারসংক্ষেপ হচ্ছে ইসলাম কিছু বিধিবিধান সংবলিত ধর্মমাত্র। রাষ্ট্র পরিচালনা এবং রাষ্ট্রীয় বিধানের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই এবং স্থান-কাল-পাত্রভেদে বিদ্যা-বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতার আলোকে মানুষ রাষ্ট্র পরিচালনার নিয়মনীতি প্রণয়ন করবে। আর এখানে ধর্মের কোনো স্থান নেই (পৃষ্ঠা-১)।
ড. কারজাবি আরো বলেন, ‘তাদের ভ্রান্ত স্লোগান হচ্ছে, ধর্ম আল্লাহর এবং রাষ্ট্র সবার।’ এর ভুল ব্যাখ্যা গ্রহণ করা হয়। এ স্লোগানকে সম্পূর্ণ উল্টিয়ে আমরা বলতে পারি, ‘ধর্ম ও রাষ্ট্র উভয়ই আল্লাহর জন্য’ অথবা এটাও বলতে পারি, ‘ধর্ম সবার জন্য এবং রাষ্ট্র আল্লাহর জন্য।’
ড. কারজাবি প্রথম অধ্যায়ে কুরআন, ইসলামের ইতিহাস ও ইসলামের প্রকৃতি থেকে ইসলামী রাষ্ট্রের পক্ষে দলিল-প্রমাণা পেশ করেছেন। তিনি এ প্রসঙ্গে সূরা নিসার আয়াত পেশ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ, রাসূল ও তোমাদের দায়িত্বশীলদের আনুগত্য করো।’ (নিসা : ৫৮-৫৯)
ইতিহাস থেকে তিনি বলেছেন, রাসূল সা: প্রথম থেকেই একটি নির্ভেজাল ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট ছিলেন এবং প্রথম সুযোগেই তিনি মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র স্থাপন করেন। (পৃষ্ঠা-৬) রাসূল সা:-এর ওফাতের পর মুসলিমরা প্রথমে যে কাজটি করেন, তা হলো রাষ্ট্রনায়ক নির্বাচন করা। এ বিষয়টি রাষ্ট্রের গুরুত্ব প্রমাণ করে।
দ্বিতীয় অধ্যায়ে লেখক দেখাচ্ছেন, ইসলামী রাষ্ট্র কোনো থিওক্র্যাসি তথা নেতা বা আলেম শাসিত রাষ্ট্র নয়। এটি একটি নাগরিক ও দেওয়ানি রাষ্ট্র। এটি সাংবিধানিক ও আইনগত রাষ্ট্র। এটা রাজতন্ত্র নয়, বরং পরামর্শভিত্তিক রাষ্ট্র। তিনি বলেছেন, ইসলামী রাষ্ট্র গণতন্ত্রের সর্বশ্রেষ্ঠ নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। তবে এর অর্থ এই নয় যে, ইসলামী রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অনুলিপি। ইসলামী রাষ্ট্র একটি হেদায়াত ও কল্যাণকর রাষ্ট্র। এটা অসহায় ও দুর্বলদের আশ্রয়স্থল। এটি স্বাধীনতা ও অধিকার আদায়ের রাষ্ট্র এবং চারিত্রিক ও আদর্শিক রাষ্ট্র (পৃষ্ঠা-২৬-৫৮)।
তৃতীয় অধ্যায়ে আল কারজাবি ইসলামী রাষ্ট্রের প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করে বলেছেন, এটি একটি বেসামরিক ও নাগরিক রাষ্ট্র; এটি থিওক্র্যাসি নয়। সেকুলারমহলের দাবিÑ ইসলাম ধর্মীয় পুরোহিত শাসিত রাষ্ট্রের কথা বলেছে। এ সন্দেহ তিনি দৃঢ়ভাবে দূর করেছেন। এমনকি তিনি আজকের ইরানকে যারা ‘পুরোহিততন্ত্র’ বলতে চান, তাদের বিরোধিতা করে বলেন, ইরান মূলত একটি নির্বাচিত ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। (পৃষ্ঠা-৬৪-৮৪)
চতুর্থ অধ্যায়ে তিনি কিছু ভুল চিন্তার সংশোধনের চেষ্টা করেছেন। অনেকে মনে করেন, ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধানের নির্দিষ্ট মেয়াদ নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। তিনি দলিল দিয়ে প্রমাণ করেছেন, তা করা যায়। তিনি অনেক প্রমাণ দিয়েছেন, খলিফারা একে অপরের সিদ্ধান্ত যুগের আলোকে পরিবর্তন করেছেন। তিনি আরো মনে করেন, এটি বিদয়াত নয়। প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে, ইসলামে বর্ণিত বিদয়াতের পরিধি শুধু আকিদা-বিশ্বাস, ইবাদত ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু জীবনপথে চলতে গিয়ে স্থান-কাল-পাত্রভেদে পরিবর্তিত বিভিন্ন বিধান, আচার-অনুষ্ঠান, কৃষ্টি- সংস্কৃতি এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকসহ নানাবিধ বিষয়ে বিদয়াতের কোনো অংশ নেই।’ (পৃষ্ঠা-৯৭-১০০)
তিনি আরো একটি বিষয় স্পষ্ট করেছেন, আল্লাহ প্রদত্ত বিধিবিধান মোতাবেক আমল করা অত্যাবশ্যক।
লেখক ঃ সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা