২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

‘মুক্তি অথবা মৃত্যু’

-

‘মানুষ স্বাধীন হয়েই জন্মগ্রহণ করে, কিন্তু সর্বত্রই সে শৃঙ্খলিত।’ কথাটি মনীষী রুশোর। সভ্যতার সুপ্রভাত থেকে মানুষ নিরন্তর চেষ্টা করেছে শৃঙ্খল মুক্তির। কার্ল মার্কস এই শৃঙ্খল মুক্তির জয়গান গেয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সর্বহারার শৃঙ্খল ছাড়া হারানোর কিছু নেই।’ মানুষের মুক্তি সংগ্রামকে পাশ্চাত্যের বুদ্ধিজীবীরা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করেছেন। অন্যদিকে, মার্কসবাদীরা অর্থনৈতিক ধারাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। সাধারণভাবে এ কথাটি এখন স্বতঃসিদ্ধ যে, মানুষের সামগ্রিক মুক্তির জন্য রাজনৈতিক স্বাধীনতা যেমন অনিবার্য, তেমনি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অত্যাবশ্যক। গণতান্ত্রিক বিশ্বে মুক্তি মানেই রাজনৈতিক নিপীড়ন, নির্যাতন ও পাশবিকতা থেকে স্বাধীনতা।

এককালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন বলেছেন, স্বাধীনতার দু’টি অর্থ- ভীতি ও ক্ষুধা থেকে মুক্তি। এ কথা সত্য যে, মানুষ কেবল ক্ষুধা নিবৃত্ত করে ক্ষান্ত হয় না; তার আরো কিছু দরকার। সেটাই মানুষের স্বাধীনতা। কারাগারে কোরমা-পোলাও, কোফতা-কাবাব খাওয়ালেও কেউ সেখানে থাকতে চায় না। তার কারণ, মানুষ চায় নিজের স্বাধীন ইচ্ছায় বসবাস করতে, বিচরণ এবং মত প্রকাশ করতে।

স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি সব সময়ই চেয়েছে মানুষকে তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে। প্রাচীন সম্রাট থেকে বর্তমান স্বৈরাচারী- কেউই মানুষকে অবারিত স্বাধীনতা দিতে চায়নি। নানাভাবে, নানা নামে ও ধামে স্বৈরাচার যুগে যুগে মানুষের ওপর অত্যাচারের ‘খড়গ কৃপাণ’ চালিয়েছে; কিন্তু মানবজাতি তা থেকে মুক্তির জন্য চিরকাল লড়াই করে এসেছে। গণতন্ত্র বা জনগণের শাসনের জন্য ইতিহাসজুড়ে মানবজাতি যুগে যুগে ঢেলে দিয়েছে তাদের তাজা রক্ত। যেহেতু গণতন্ত্র মানুষের একটি প্রিয় শাসনব্যবস্থা, সেহেতু গণতন্ত্রের নামে স্বৈরাচার নিজ কর্তৃত্বকে বৈধ করার চেষ্টা করেছে।

লাখ প্রাণের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে যে দেশটি আমরা অর্জন করেছি, তার লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র বা জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা। পাকিস্তানের সামরিক জান্তা গরিষ্ঠ মানুষের রায়কে অস্বীকার করায় বাংলাদেশের জনগণ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত হয়। কিন্তু স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে ক্ষমতাসীন কর্তৃত্ববাদী শক্তি গণতন্ত্রের নামাবলি গায়ে চড়িয়ে কিছু দিন অতিবাহিত করলেও অচিরেই নিজ স্বভাবে প্রকাশিত হয়। কায়েম হয় ‘এক নেতা এক দল- বাকশাল’। এর পরিণামে সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হলেও বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আশা-আকাক্সক্ষা কখনোই ম্লান হয়ে যায়নি। ১৯৯০ সালে গণতান্ত্রিক অভ্যুত্থানের পর দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা নতুন রূপ পরিগ্রহ করে।

২০০৬ সালে গণতন্ত্রের পুরনো শত্রু ‘বাকশালী’ চক্রের ষড়যন্ত্রে প্রকারান্তরে সামরিক বাহিনী ক্ষমতায় আসে। ১০ বছর ধরে গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি দেশকে পরিচালনা করছে। ২০১৪ সালে একতরফা তামাশার নির্বাচন করে তারাই ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকে। মিথ্যাচার ও কারসাজি তাদের ক্ষমতায় থাকার কৌশল হয়ে দাঁড়ায়। যেমন- ২০১৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর তারা জাতিকে আশ্বস্ত করেছিলেন, অল্প সময়ের মধ্যেই আরেকটি নির্বাচন হবে। ‘খালি মাঠে গোল দেয়া’র পর ২০১৪ সালের ৬ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেছিলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে আলোচনা করেই সমাধান করা হবে। কিন্তু তারপর তারা কী করেছিলেন, গোটা জাতি তার সাক্ষী। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাদের বিশ্বাস করেছিলেন। সেই সরল বিশ্বাসের মূল্য তিলে তিলে দিচ্ছেন কারার অন্তরালে থেকে।

সংলাপের কথা দিয়ে শুরু করলেও গত এক দশকে সংলাপের আহ্বান বারবার প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। অবশেষে আবারো বিরোধীদের সংলাপের আড়ালে কোণঠাসা করার জন্য সংলাপে বসলেন সরকার। স্পষ্ট কথা দেয়া হলো, হামলা-মামলা আর হবে না। এবং বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিরোধিতা করবে না সরকার। অথচ এই হামলা-মামলাই হলো ক্ষমতাসীনদের বড় রণকৌশল। এবার নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে হামলা-মামলার তীব্রতা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নগ্নভাবে দলীয় প্রচারণায় ও প্রতিষ্ঠায় ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তারা ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারো তারা সুকৌশলে একই তামাশা করছেন। ইতোমধ্যে আটটি আসন ‘ধানের শীষ বিহীন’। এ কায়দায় আরো আসন বাগিয়ে নেয়ার অপচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সারা দেশে ভীতির রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। প্রার্থীদের রাখা হয়েছে এক রকম গৃহবন্দী করে। বানোয়াট মামলা দিয়ে কয়েকজন প্রার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কোথাও ধানের শীষের পোস্টার লাগাতে দেয়া হচ্ছে না।

নেতাকর্মীদের নামে গায়েবি ও আজগুবি মামলা দেয়া হচ্ছে। পত্রপত্রিকায় এ ধরনের অদ্ভুত মামলার খবর প্রকাশিত হচ্ছে। সারা দেশ থেকে প্রতিদিন হামলা-মামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের খবর আসছে। সবই বিরোধী দলের বিরুদ্ধে সরকারি দলের। যারা ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিরোধীদের পক্ষে প্রভাব খাটাতে সক্ষম, এ রকম প্রায় সব লোককে আটক করা হয়েছে। যারা পোলিং এজেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তাদের বাড়িছাড়া করা হয়েছে মামলা দিয়ে। ক্ষমতাসীনদের কর্মীরা বলে বেড়াচ্ছেনÑ আমরা ভোট দিলেও জিতবো, না দিলেও জিতবো। ভোটাররা যাতে নির্বাচনকেন্দ্রে না যায়, সে জন্য ক্যাডারবাহিনী ভোটকেন্দ্রের আশপাশে সন্ত্রাসের পরিকল্পনা করছে।

যেকোনো নির্বাচনব্যবস্থায় এর পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নির্বাচন কমিশন এবার দেশী-বিদেশী পর্যটকদের না আসার ব্যবস্থা পাকাপাকি করে মূলত ক্ষমতাসীনদের কারচুপি আড়াল করার সুযোগ দিয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষককে ভিসা দেয়নি সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের এনফ্রেল পর্যবেক্ষক সংস্থার ৩২ সদস্যের পর্যবেক্ষণ টিমটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষক দল। বাংলাদেশ সরকার ভিসা না দেয়ায় তারা আসতে পারছেন না। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এতে হতাশা প্রকাশ করেছে। উল্লেখ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসঙ্ঘ এবারের নির্বাচনী হালচাল দেখে আগেই পর্যবেক্ষক পাঠাতে অস্বীকার করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, তারা পাতানো নির্বাচনে সাক্ষী হবেন না। এ দিকে প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারের মন্ত্রীরা পর্যবেক্ষণ বা এ ধরনের নিয়মরীতির তোয়াক্কা না করে সরকারি সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশী নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের প্রতিও নির্বাচন কমিশন খড়গহস্ত। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ৮১টি দেশীয় পর্যবেক্ষণ সংস্থার পক্ষ থেকে ৩৪ হাজার ৬৫১ জনের জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে আট হাজার ৭৫১ জনের অনুমোদন দেয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, সরকারের ‘পছন্দের’ নয়, এ রকম প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেয়া হয়নি। উদাহরণ হিসেবে, সুপরিচিত মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’-এর কথা বলা যায়।

পরে অবশ্য তারা মামলা করে অনুমতি আদায় করে নিয়েছেন। এবার নির্বাচন কমিশনের একচোখা নীতির ফলে দেশীয় পর্যবেক্ষকদের সংখ্যা অনেক কমে যাবে বলে পত্রিকার খবরে প্রকাশ। আরো বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, পর্যবেক্ষকেরা ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। তারা ফটো তুলতে পারবেন না। অতীতে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকেরা কারসাজির বহু প্রমাণ তুলে ধরেছেন। এ নির্বাচনে সরকারি দলের কারসাজি যাতে বাইরে প্রকাশিত ও প্রচারিত না হয়- সে জন্য কঠোরতা আরোপ করা হয়েছে বলে বিজ্ঞজনেরা মনে করেন। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই ক্ষমতাসীন মহলের কথাবার্তায় অসহিষ্ণুতা ও অধৈর্য প্রকাশ পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সিলেট জনসভায় বলেছেন, ‘তারেককে ধরে নিয়ে এসে রায় কার্যকর করা হবে।’ ঢাকায় আর এক জনসভায় তিনি অভিযোগ করেছেন, বিএনপি নকল ব্যালট ছাপার চেষ্টা করছে।’ তার এ ধরনের মন্তব্য সরকারপ্রধানের মর্যাদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে। এসব নিয়ে দেশে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মানবাধিকার সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’-এর প্রকাশিত প্রতিবেদনে নির্বাচন ঘিরে দমনমূলক রাজনৈতিক পরিবেশের কথা উল্লেখ করেছে। সরকারের রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর চড়াও হওয়া এবং ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সংস্থাটি ক্ষমতাসীনদের দায়ী করেছে। প্রতিবেদনে নিরাপত্তাবাহিনীর বারবার উদ্দেশ্যমূলক গ্রেফতার, বিক্ষোভকারী ও বিরোধীদলীয় রাজনীতিকদের আটক এবং সরকারি ছাত্র ও যুবসংগঠনের হামলার তথ্য উঠে এসেছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার, সব দলের, সব মতের লোকদের নিরাপদে প্রচারণা ও মিছিল-সমাবেশের স্বাধীনতার ওপর জোর দিয়েছেন। জাতিসঙ্ঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ব্রিটেনের তরফ থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার বিষয়ে কঠিন মন্তব্য আসছে। পত্রপত্রিকায় মোটামুটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা দৃশ্যমান হলেও প্রিন্ট মিডিয়া বা চ্যানেলগুলোতে প্রায় একতরফা সরকারপক্ষীয় প্রচারণা চলছে। গত ১০ বছরে বেশির ভাগ টিভি চ্যানেলের অনুমতি দেয় বর্তমান সরকার। সরকারদলীয় লোকজনই এসব চ্যানেলের মালিক। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অনবরত সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিবৃতি ও বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, বেশির ভাগ বিজ্ঞাপনই সরকারি অর্থে প্রদত্ত।

নির্বাচন কমিশন খোলামেলাভাবে সরকারের সমর্থনে কাজ করে যাচ্ছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সবার জন্য সমান সুযোগ প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা যে মন্তব্য করেছেন তা স্পষ্টত রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট। অন্যতম নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের মন্তব্যের তিনি যে উত্তর দিয়েছেন তা লঙ্ঘন করেছে সৌজন্যের সীমা। আরেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম রাজনৈতিক সহিংসতাকে বাংলাদেশী সংস্কৃতির অংশ বলে সরকারি হামলাকে বৈধ করার যে নোস্খা দিয়েছেন তা জনমনে ক্ষোভের ও বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।

মূলত নিরেট ও নিরঙ্কুশ শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন মহল ৩০ তারিখের নির্বাচনকে আরেকটি তামাশায় পরিণত করতে চায়। বিএনপি তথা বিরোধী জোটকে সংলাপের মাধ্যমে ভুয়া আশ্বাস দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিয়ে ক্ষমতাসীন দল মনে করছে, তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। এখন নির্বাচনে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচনকেন্দ্র থেকে তাদের দূরে রাখতে পারলেই আসবে শতভাগ সফলতা। আসলে আওয়ামী লীগ নজিরবিহীন চাতুর্যের সাথে বিরোধী দলকে নির্বাচনে এনে উভয় সঙ্কটে পড়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তাদের ভরাডুবি নিশ্চিত। আবার নির্বাচন ২০১৪ সালের আদলে করতে গেলে সঙ্ঘাত অনিবার্য। এবার তারা ২০১৪ সালের মতো খালি মাঠে গোল দিতে পারবে না, এটা এক রকম নিশ্চিত। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রধান ড. কামাল হোসেন হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন, ‘তামাশার নির্বাচন মেনে নেব না।’

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ব্যাপক কারচুপি করবে- এ কথা প্রায় সবাই বিশ্বাস করেন। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে যদি জনগণ ভোট দিতে না পারে, তাহলে তা ক্ষমতাসীনদের জন্যই বুমেরাং হতে পারে। সে ক্ষেত্রে দেশে গণবিস্ফোরণ ঘটতে পারে। উপমহাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে নজির বিরল নয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যার নায়ক পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ১৯৭৭-এ বোগাস নির্বাচন করেছিলেন। নির্বাচনের পরের দিনই পাকিস্তানে গণবিস্ফোরণ ঘটে ছিল। ১৫ দিনের মাথায় ভুট্টোর ‘বিশ্বস্ত সেনাপতি’ জিয়াউল হক তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। এর পরে ভুট্টোর বিয়োগান্ত পরিণতির কথা সবাই জানেন।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি অবশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। কার্ল মার্কসের কথাটি আজকের বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। মার্কস বলেছিলেন, সর্বহারাদের শৃঙ্খল ছাড়া হারানোর কিছু নেই। আজকে দেশের মানুষের একই অবস্থা। এ দেশের নাগরিক সাধারণ বাস্তবে ভোটাধিকারবঞ্চিত। তাদের নেই মৌলিক মানবাধিকার। দুর্নীতি ও দুঃশাসনের যাঁতাকলে তারা নিষ্পেষিত। লোপাট হয়েছে ব্যাংকগুলো। দ্রব্যমূল্য আকাশছোঁয়া। শিক্ষাঙ্গন সন্ত্রস্ত। পরিবহন ব্যবস্থা পর্যুদস্ত।

যেকোনো মানুষের কাছে তিনটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ- তার জীবন, তার সম্মান ও সম্পদ। বাংলাদেশের রূঢ় বাস্তবতা এই যে, এই সরকারের কাছে মানুষের জীবন, সম্পদ ও সম্মান কোনোটিই নিরাপদ নয়। কিছু সুবিধাভোগী ছাড়া আর সবাই এটা স্বীকার করবেন। সবাই এই সরকারের অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতন, হামলা-মামলার ভুক্তভোগী। ওই নির্বাচন হচ্ছে- এসবের উত্তর দেয়ার একটি সুবর্ণ সুযোগ। বাংলাদেশের মানুষের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও অধিকার, তথা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস ও ঐতিহ্য। ১৯৭১ সালে তারা জীবনবাজি রেখে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল। এবারো তাদের হারানো স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য চাই দৃঢ়শপথ। তাই সব বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে প্রয়োজন ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতি- তাহলে বদলে যাবে পরিস্থিতি। আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক চে গুয়েভারার ভাষায়- ‘মুক্তি অথবা মৃত্যু।’
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement
এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক নোয়াখালীতে ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ‘আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল কাজ করে যাচ্ছে’ পুকুরে পাওয়া গেল ১০০ ইলিশ

সকল