২০১৯ সাল : সঙ্ঘাত-অস্থিরতার মূল্য কতটা
- মাসুম খলিলী
- ২০ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৯:১৫, আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৯:৩৬
সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ এশিয়া সবচেয়ে অস্থির একটি সময় পার করছে। এ অঞ্চলের বৃহৎ দেশ ভারতের ক্ষমতাসীন দল, বিজেপি পাঁচটি রাজ্যের উপনির্বাচনে শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করেছে। এর মধ্যে হিন্দি বলয়ের তিনটি রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল বিজেপি। এ তিন রাজ্যে জয়ী হয়েছে কংগ্রেস। অন্য দু’টিতে আঞ্চলিক দলগুলো জয়লাভ করেছে বিপুলভাবে।
মোদি ম্যাজিক শেষ হয়ে গেছে?
ভারতের এবারের উপনির্বাচনকে ২০১৯ সালের মার্চ-এপ্রিলে অনুষ্ঠেয় ভারতের লোকসভা নির্বাচনের রিহার্সেল হিসেবে মূল্যায়ন করে বলা হচ্ছে, ভারতের রাজনীতিতে মোদি-অমিত শাহর ম্যাজিক শেষ হয়ে গেছে। দেশটিতে ক্ষমতার এক মেয়াদেই মোদি ম্যাজিকের ইতি ঘটতে পারে। রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ ও ছত্তিশগড়ে নির্বাচনের আগে মোদি ও অমিত শাহ ব্যাপকভাবে প্রচারকাজ চালিয়েছিলেন। তাদের এই প্রচারে কোনো প্রভাব পড়েনি নির্বাচনের ফলে।
এ কথা সত্যি, পাঁচটি রাজ্যের উপনির্বাচন নিয়েই ভারতীয় রাজনীতির গতিপ্রকৃতি নিরূপিত হবে, বিষয়টি এমন নয়। কিন্তু এ উপনির্বাচনের পাশাপাশি আরো কিছু তাৎপর্যপূর্ণ সঙ্কেত এমন রয়েছে, যাতে মনে হয়, ভারতে ক্ষমতার পরিবর্তন অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) গভর্নর উরজিত প্যাটেলের ১১ ডিসেম্বর পদত্যাগ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এতে ভারতীয় স্টক মার্কেটে ভয়াবহ পতন ঘটে। অর্থনীতিতে মোদির অব্যবস্থাপনা এবং আরবিআইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে তার সরকারের সামাল দেয়া নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্নের সৃষ্টি হয়।
মোদির পূর্বসূরি মনমোহন সিং আরবিআইয়ের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে হস্তক্ষেপ না করার জন্য হুঁশিয়ার করে দেন। কারণ, তিন ট্রিলিয়ন ডলারের ভারতীয় অর্থনীতির জন্য কেন্দ্রীয় এ ব্যাংকটির ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ‘ব্যক্তিগত কারণে’ পদত্যাগ করেছেন বলে প্যাটেল জানালেও ভারতের একজনও তা বিশ্বাস করে না। এর আগে রঘুরাম রাজনকে দায়িত্বে বহাল রাখতে চাননি মোদি। তিনিই তাকে ওই দায়িত্বে এনেছিলেন। তিনি মোদির নোট বাতিলের পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করাকে অনুমোদন করেছিলেন, যা রাজন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
ফলে আরবিআই সম্পর্কে যারা খোঁজখবর রাখেন, তারা জানেন যে মোদি যখন আরবিআই-কে তার রিজার্ভের এক-তৃতীয়াংশ আলাদা করতে বললেন; তখন প্যাটেল তাতে সায় দেননি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই শীর্ষ ব্যক্তি নিজস্ব কারণ দেখিয়ে মুদ্রা ও আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রকের পদ থেকে সরে দাঁড়ালেও এ বিষয়ে সন্দেহ নেই যে, তিনি নীতিগত অনেক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে একমত হতে পারছিলেন না। বিদায় নেয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর খোলামেলা কোনো কথা না বললেও বিজেপির প্রবীণ নেতা বাজপেয়ী মন্ত্রিসভার সাবেক মন্ত্রী ও পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান মুরলি মনোহর যোশী রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সংবেদনশীল অনেক কিছু ফাঁস করে দিয়েছেন। তিনি ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে হার দেখানো হচ্ছে তার যথার্থতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
যে ‘আচ্ছে দিন’ বা সুসময়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি একধরনের উচ্ছ্বাসের তরঙ্গ তুলে বছর পাঁচেক আগে ক্ষমতায় বসেছিলেন, সেই উচ্ছ্বাস এখন অনেকটাই হারিয়ে গেছে। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির কিছু ঘটে থাকলে তার পেছনে সার্বিক জন-উন্নয়নের ভূমিকা যতটা আছে, তার চেয়ে বেশি ভূমিকা হলো হাইব্রিড করপোরেট গোষ্ঠীগুলোর সামরিক-বেসামরিক শিল্পের বিকাশ।
কূটনৈতিক বা পররাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে মোদি বেশ হাঁকডাক দিয়েই মেয়াদ শুরু করেছিলেন; কিন্তু তার অর্জন খুব বেশি নয়। অতি সম্প্রতি মালদ্বীপের নির্বাচনে ভারতের পৃষ্ঠপোষকতায় বিরোধী জোট সরকার গঠন করেছে। কিন্তু নতুন সরকার একধরনের ভারসাম্য অনুসরণ করবে বলে মনে হচ্ছে। শ্রীলঙ্কায় উত্তাল রাজনীতিতে উচ্চতর বিচার বিভাগের হস্তক্ষেপে ভারতের আনুকূল্যপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে আবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা নিয়েছেন। কিন্তু শ্রীলঙ্কার রাজনীতির গন্তব্যপথ এখানে শেষ হয়েছে বলে মনে হয় না।
শ্রীলঙ্কা : সব কিছু শেষ নয় এখানে
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা চার বছর আগে রাজাপাকসেকে ছেড়ে বিক্রমাসিংহের সাথে জোট করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরের সংসদ নির্বাচনের পর বৃহৎ দুই দলের মহাজোট গঠনের মধ্য দিয়ে দেশটিতে সরকার গঠন করা হয়। সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন ইউএনপি প্রধান রনিল বিক্রমাসিংহে। প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা ফ্রিডম পার্টির চেয়ারম্যান হলেও এর নিয়ন্ত্রণ কার্যত সাবেক প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের কাছে চলে যায়। তিনি সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে একধরনের দোটানা সম্পর্ক বজায় রেখে সরকারবিরোধিতার পথে হাঁটেন শেষ পর্যন্ত।
সরকারের নানা ধরনের ব্যর্থতা ও সংখ্যাগুরু সিংহলীদের জাতীয়তাবাদে আঘাত লাগার মতো তার কিছু পদক্ষেপের কারণে ব্যাপক ক্ষমতাশালী হয়ে পড়েন রাজাপাকসে। ফ্রিডম পার্টির নিয়ন্ত্রণ অনেকখানি তার হাতে চলে যায়। সাম্প্রতিক স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আগে রাজাপাকসে একটি নতুন দল গঠন করেন। দলটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে।
এরপর থেকে শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে এক ধরনের মেরুকরণ শুরু হয়। সিরিসেনাকে তার অবস্থান ধরে রাখতে রাজাপাকসের সাথে পূর্ণ সমঝোতায় যাওয়া অথবা ইউএনপি ও বিক্রমাসিংহের সাথে চূড়ান্ত সমঝোতায় যাওয়ার পথ বেছে নিতে হয়। আন্দোলন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মাঠের বিজয়ী পক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হন রাজাপাকসে। সিরিসেনা সেই পক্ষের সাথে চূড়ান্ত সমঝোতায় যান। প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করা, রাজাপাকসেকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করা, সংসদ ভেঙে দেয়া- সব কিছু সিরিসেনার সেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ফলে একের পর এক ঘটেছে।
শ্রীলঙ্কার সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এবং দেশটির সংসদে দুই দফা আস্থা ভোটে জয়ী হওয়ায় বিক্রমাসিংহেকে আবার প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করতে বাধ্য হয়েছেন সিরিসেনা। তিনি কোনো দিনই বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রী করবেন না বলে যে কথা উল্লেখ করেছিলেন তার ব্যত্যয় এটি। এ ঘটনায় মনে হতে পারে, বিক্রমাসিংহে ও তার বিদেশী সমর্থক ভারতের জয় হয়েছে। শ্রীলঙ্কার রাজনীতির প্রতি যারা গভীর পর্যবেক্ষণ রাখেন তারা একমত হবেন যে, বিষয়টি সে রকম নয়।
কার্যকর সরকারহীন গত মাসাধিককাল সময়ের মধ্যে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির অবস্থা শোচনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজেট পাস করার প্রক্রিয়ার অভাবে সরকারি জনবলের বেতনভাতা পরিশোধে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। শ্রীলঙ্কান টাকার মানের অবনতি ঘটতে ঘটতে তলানিতে ঠেকেছে। বিদেশের দায় পরিশোধে আবারো অচলাবস্থা দেখা দিতে পারে। বিক্রমাসিংহেকে সরকার গঠনের পর এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।
শ্রীলঙ্কান সংবিধান অনুসারে নির্বাহী প্রধান এখনো প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। তিনি মন্ত্রিসভায় সভাপতিত্ব করেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কারণে তিনি বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রী করলেও স্পষ্টভাবে বলেছেন, আগের মত থেকে সিরিসেনা সরে আসেননি।
এতে সরকারের সিদ্ধান্ত প্রণয়নপ্রক্রিয়া নানাভাবে ব্যাহত হতে পারে। অন্য দিকে, সংখ্যাগুরু সিংহলীদের জনমত এখনো রাজাপাকসে শিবিরের দিকেই রয়েছে। সরকার পরিচালনায় যেকোনো বৈরী সিদ্ধান্ত জনগণকে ক্ষুব্ধ করে তুলতে পারে। রাজাপাকসে ও তার দল সরকারের অংশ না হওয়ায় তারা জনগণকে সংগঠিত করে রাজপথে নামবেন।
শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক ঘটনার আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, সংসদে আস্থা ভোটে সিদ্ধান্তকারী ভূমিকা পালন করেছে তামিল দলগুলো। তামিল শিবিরের ১৪ জন এমপির সমর্থন না পেলে বিক্রমাসিংহে প্রধানমন্ত্রী পদে ফিরে আসতে পারতেন না। আপাতদৃষ্টিতে এটি বিক্রমাসিংহের সাফল্যের কারণ হলেও তা ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও নির্বাচনের জন্য বড় দায় হয়ে দেখা দিতে পারে।
বিক্রমাসিংহের ওপর এক দিকে তামিল বিদ্রোহ দমনে জড়িত সেনাকর্মকর্তাদের যুদ্ধাপরাধের বিচারের চাপ থাকবে। আর এ ক্ষেত্রে এগোতে চাইলে তিনি সিংহলীদের সমর্থন আরো ব্যাপকভাবে হারাতে থাকবেন। সেনাপ্রতিষ্ঠানও ধীরে ধীরে তার থেকে দূরত্বে চলে যেতে পারে। এর পুরো সুযোগ নেবেন রাজাপাকসে।
অন্য দিকে শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে দুই পক্ষের লড়াইয়ের বাইরে থেকে প্রভাব বিস্তারের যুদ্ধে লিপ্ত ছিল দিল্লি-বেইজিং। প্রভাব বিস্তারের এই লড়াইয়ে আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে, দিল্লির জয় হয়েছে।
কিন্তু অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার সঙ্কট দূর করতে হলে বেইজিংয়ের মুখাপেক্ষী হওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না বিক্রমাসিংহের। ফলে জয়-পরাজয়ের বিষয়টি এখনই নিষ্পত্তি হয়েছে মনে করার কোনো কারণ নেই।
সার্বিক টানাপড়েনে জানুয়ারির প্রথমে নির্ধারিত নির্বাচন হয়তো এখন আর হচ্ছে না; কিন্তু একটি নির্বাচন যে শ্রীলঙ্কার অদূর ভবিষ্যতে অনিবার্য হয়ে উঠবে তাতে সন্দেহ কমই রয়েছে। সেই নির্বাচনে রাজাপাকসে শিবিরের সাফল্যের সম্ভাবনা বেশি।
আলোচিত বাংলাদেশ ও এর গন্তব্য
২০১৮ সালের বিদায়লগ্নে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে আলোচিত দেশ হলো বাংলাদেশ। আগামী ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করা আছে। এখানে বিগত ১০ বছর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায়। এই সময়ে শান্তিপূর্ণভাবে জনমতের প্রতিফলন ঘটতে পারে এমন নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সংবিধানে ছিল, সেটি তুলে দেয়া হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক তৎপরতা চালানোর অবকাশকে করা হয়েছে সঙ্কীর্ণ।
এ অবস্থায় অবাধ, মুক্ত ও অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচন বাংলাদেশে সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে সংশয় ছিল পুরোমাত্রায়; বিশেষত রাষ্ট্রের আইন ও বিচার বিভাগে যেখানে নির্বাহী বিভাগের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত গণমাধ্যমও সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে বাইরে যেতে পারছে না। রাষ্ট্রের নিরাপত্তাবাহিনী, সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র আর নির্বাচন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দৃশ্যত সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ও বণিক সংস্থাগুলো প্রকাশ্যে সরকারে বিদ্যমানদের আবার নিয়ে আসতে তৎপর হয়ে উঠেছে। সেখানে কতটা সম্ভব হবে মুক্ত ও অবাধ নির্বাচন?
এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত নির্বিচার ধরপাকড়, ‘গায়েবি’ ঘটনা সংঘটিত করে মামলা দেয়া, প্রচার-প্রচারণায় সহিংস বাধা প্রদান, নানা প্রতিষ্ঠানের ঘাড়ে বন্দুক রেখে প্রার্থিতা বাতিলের ঘটনা অব্যাহতভাবে চলছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে জনমতের প্রতিফলন কতটা ঘটতে পারে, সে প্রশ্ন উঠছে। এমন কিছু পদক্ষেপ নেয়ার খবর গণমাধ্যম ও সামাজিক গণমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে, যাতে কারসাজির নির্বাচন অনুষ্ঠানের নানা পরিকল্পনার কথা তুলে ধরা হচ্ছে। এর মধ্যে, ডিএমপির থানাগুলোতে ভোটের আগের রাতে সিল মারা নিয়ে গোপনীয় ব্রিফিংয়ের কথা বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, পরিকল্পনা অনুসারে ভোটের আগের রাতে কেন্দ্রভিত্তিক ৩০ শতাংশ ব্যালটে সিল মেরে রাখার আদেশ দেয়া হয়েছে। থানাভিত্তিক কেন্দ্রগুলোতে পুলিশ কর্মকর্তাদের সমন্বয় করে সিল দেয়ার কার্যক্রম তদারকি করার কথা বলা হয়েছে। থানাভিত্তিক পাঁচ থেকে ১০ জন কর্মকর্তা ওই সিল মারার কাজে নেতৃত্ব দেবেন বলে বলা হচ্ছে। তাদের সহায়তা করবে কেন্দ্রভিত্তিক পাঁচজন আওয়ামী কর্মী। কেন্দ্রভিত্তিক সিল মারার জন্য আওয়ামী লীগ কর্মীদের তালিকা ইতোমধ্যে পুলিশ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির কাছ থেকে সংগ্রহ করেছে বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।
বলা হচ্ছে, যেসব কেন্দ্রে ভোট বেশি, সেসব কেন্দ্রে ওই পুলিশ সিভিল কর্মীদের নিয়ে কাজ শেষ করবেন আর যেখানে ভোট কম সেই কেন্দ্রে নি¤œপদের কর্মকর্তা কাজে নেতৃত্ব দেবেন। যেসব স্থানে একই জায়গায় একাধিক কেন্দ্র, সেখানে সিভিলে এসআই বেশি কর্মী না নিয়ে শুধু পাঁচজন কর্মী নিয়ে কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করবেন বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। পরিকল্পনায় বলা হচ্ছে, প্রিজাইডিং অফিসারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে কারসাজিতে রাজি করানো হবে। রাজি না হলে টাকা ধরিয়ে দিয়ে জব্দ তালিকা করে বলা হবে, ভোট কারচুপির জন্য বিরোধী দলের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে।
দিনের বেলায় দেখানো হবে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে এবং ভোটার লাইনে লোক থাকবে, যাতে ভোট দিতে অনেক সময় লাগে। যেসব কর্মীর দ্বারা সিল মারা হবে, তাদের কাজ শেষে থানা বা কোনো নিরাপদ জায়গায় একত্রে রাখা হবে এবং মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়া হবে। ভোটের রেজাল্ট না হওয়া পর্যন্ত অন্তরীণ থাকবে, যাতে বলতে বা প্রচার করতে বা মোবাইলে যোগাযোগ করতে না পারে অন্য কারো সাথে।
এসব হতাশাজনক পরিকল্পনা ও কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি আরো একটি দৃশ্যপট দেখা যাচ্ছে। সেটি হলো, নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্য অব্যাহত চাপ। এই চাপ আসছে জাতিসঙ্ঘ থেকে এবং যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলো থেকে। এর মধ্যে আমেরিকান কংগ্রেসে সর্বসম্মতভাবে প্রস্তাব পাস হয়েছে বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে। বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতির একটি ভিডিও বক্তব্য এখন সামাজিক গণমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে।
অন্য কয়েকটি প্রসঙ্গের সাথে তিনি উল্লেখ করেছেন, আমেরিকান কংগ্রেসের পাস করা আইনকে উপেক্ষা করা হলে এর পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ উত্তর কোরিয়া বা ইরানের মতো অবরোধের মুখে পড়তে পারে। সেই অবরোধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন আর যুক্তরাজ্য অংশ নিলে তার পরিণতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা অনুমান করা মোটেই কঠিন নয়।
এ ধরনের অবরোধ এলে তার অংশ হিসেবে ইউরোপে জিএসপি স্থগিত হতে পারে, যার প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যে। সরকার এবং নিরাপত্তাবাহিনীর কর্মকর্তাদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে। পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের পণ্য ও জনশক্তি রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে। আরো সামনে এগোলে, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যাংকিং লেনদেনে বিধিনিষেধ আসতে পারে। জাতিসঙ্ঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের ওপর এর প্রভাব অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে। এর মধ্যে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে এ বিষয়ে অবহিত করার কথা শোনা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ উত্তর কোরিয়া বা ইরানের মতো বৈদেশিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা থেকে মুক্ত থাকার পর্যায়ে নেই।
প্রতিবেশী ভারত বাংলাদেশকে নিরাপত্তা সহযোগিতা দিতে পারে, কিন্তু অর্থনৈতিক চাপ মোকাবেলা করা অথবা আন্তর্জাতিক অবরোধের বিপক্ষে সহায়তা করার মতো ক্ষমতা রাখে না। এমনকি রাশিয়াও এ ক্ষেত্রে খুব বেশি সহায়তা করতে পারবে বলে মনে হয় না। বৃহৎ প্রতিবেশীর সর্বাত্মক সহযোগিতায় সরকারের ক্ষমতা করায়ত্ত করে রাখার প্রচেষ্টায় চীন সহযোগী হবে, এমন কোনো বার্তা পাওয়া যাচ্ছে না।
প্রশ্ন হলো- এ অবস্থায় কোন গন্তব্যে যাবে বাংলাদেশ। জবরদস্তিতন্ত্রের সর্বাত্মকবাদী নির্বাচন, যার পরিণাম হবে আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে পড়া নাকি, মোটামুটি একটি অবাধ অংশগ্রহণমূলক কারসাজিমুক্ত ভোট গ্রহণের দিকে হবে গন্তব্য। প্রথম পথে এগোলে সিরিয়া মার্কা বিপর্যয়ের যে সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হচ্ছে, সেটিকে উপেক্ষা করা কঠিন; আর দ্বিতীয়টি হলে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ বিপর্যয়ের অনিবার্য খাদের কিনারে এসেও পেতে পারে রক্ষা।
mrkmmb@gmail.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা