২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিচার পদ্ধতির সংস্কার প্রয়োজন

বিচার পদ্ধতির সংস্কার প্রয়োজন - নয়া দিগন্ত

আমরা পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন সময় দেখেছি, বাংলাদেশের নিম্ন আদালতগুলোতে (ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, জজ কোর্ট) কয়েক লাখ মামলা পড়ে আছে। অন্য দিকে, উচ্চ আদালতেও (হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ) পড়ে আছে অসংখ্য মামলা। মাননীয় প্রধান বিচারপতি ও সাবেক প্রধান বিচারপতিরা দেশের বিচারব্যবস্থার নানা সঙ্কটের কথা উল্লেখ করেছেন।

অন্য দিকে, বিচার কার্যক্রমে বিলম্ব হওয়ার কথাও আমরা জানি। মামলা শুরু হওয়ার পরও বারবার মুলতবি হওয়া এবং অন্যান্য কারণে বিলম্ব হতেই থাকে। এ পরিস্থিতি নতুন নয়, অনেক দিনের। এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না, বরং সমস্যা গভীর হচ্ছে।

তদুপরি সাধারণ মানুষ (শতকরা ৯৫ জন ) আইনজীবীদের উচ্চ ফি দিতে অক্ষম। সুতরাং তাদের পক্ষে সুবিচার পাওয়া প্রায় অসম্ভব। সাধারণ মানুষের অনেক অভিযোগ কোর্টে আসে না। তারা অনেক অত্যাচার-অন্যায় সহ্য করে নিতে বাধ্য হন।

অনেকেই জজের বা বিচারকের সংখ্যা বাড়ানোর কথা বলেছেন। তা বাড়ানোও হচ্ছে, হয়তো আরো বাড়ানো হবে। কিন্তু বিচারপ্রক্রিয়া যদি সহজ করা না হয়, তা হলে মামলার জট শেষ হবে না।

আমরা মনে করি, সুবিচারের স্বার্থে এবং জনগণের জন্য সুবিচার সহজলভ্য করতে বিচারপ্রক্রিয়ায় কিছু সংস্কার প্রয়োজন। আমরা ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দিতে পারি। আব্বাসি ও মুঘল যুগের বিচারব্যবস্থার দিকে নজর দিতে পারি। তাদের সব কিছু আমরা গ্রহণ করতে পারব না; কিন্তু সে ব্যবস্থার ভালো দিকগুলো নিতে পারি, যার ফলে জনগণ সহজেই সুবিচার পেতে পারে।

প্রথমত, তাদের বিচারব্যবস্থায় কোনো কোর্ট ফি ছিল না। আমরাও কোর্ট ফি তুলে দিতে পারি। এতে সাধারণ লোকের পক্ষে কোর্টে আসা সহজ হবে। অসৎ লোকদেরও হয়তো সুবিধা হবে। তা দূর করার জন্য যারা মিথ্যা মামলা নিয়ে আসবে, তাদের শাস্তির বিধান রাখা যেতে পারে। রাষ্ট্রকে বিচারব্যবস্থার খরচ বহন করতে হবে; যেমন- তারা প্রাইমারি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার ক্ষেত্রে করছে। এই ফি গ্রহণের প্রথা ইসলামী খিলাফতের সময় ছিল না।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার হবে কোনো উকিলের মধ্যস্থতা ছাড়া (যে কোর্টের এখতিয়ার) কোর্টে মামলা দায়ের করা, এবং মামলার বাদি বক্তব্য কোর্টকে বলার অধিকার সবাইকে দিয়ে বিচার পদ্ধতি (Judicial procedure) সংশোধন করা। যারা উকিল নিতে সক্ষম, তারা উকিল নিতে পারবেন; কিন্তু যিনি পারেন না, তিনি সরাসরি কোর্টে যেন হাজির হতে পারেন। আসামিও সরাসরি কোর্টে হাজির হবেন বা চাইলে উকিলের মাধ্যমে হাজির হবেন।

কোর্টের অধীনে একজন বা একাধিক আইনজ্ঞ থাকবেন, কোর্ট এবং বাদি-বিবাদিকে সাহায্য করার জন্য। আগের মুসলিম শাসনামলে কোর্টকে সাহায্য করার জন্য মুফতি থাকতেন, যাতে লোকেরা সরাসরি কোর্টে হাজির হতে পারেন, এর খুব সহজ বিধান করে CPC ও CRPC সংশোধন করতে হবে। এ কাজ যত সহজ হয় তত ভালো।

নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার কথা বলি। ১৯৭৫ সালে এক মিথ্যা মামলায় আসামি হয়ে গিয়েছিলাম। আমাকে মাসে মাসে হাজিরা দিতে হতো কোর্টে। কখনো ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব আমাকে দেখেননি বা ডাকেননি। উকিলের মাধ্যমে আমাকে হাজিরা দিতে হতো। আমার তখন আর্থিক অবস্থা খুবই নড়বড়ে ছিল। কিন্তু আমাকে জোগাড় করতে হতো উকিলের পয়সা।

ওপরে যেভাবে ব্যাখ্যা করেছি যদি বিচারব্যবস্থা সেভাবে সংস্কার করা হয়, তা হলে এ ধরনের অবস্থা হবে না। বিচার দ্রুত সম্পন্ন হবে, বাদি নিজেই তার কেস তুলে ধরতে পারবেন, আসামি সরাসরি তার উত্তর দিতে পারবেন। কোর্ট নিজেই প্রশ্ন করে নিশ্চিত হতে পারবেন। এর ফলে মামলা জট কমে যাবে এবং একসময় তা শেষ হয়ে যাবে।

আরেকটি কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন। আমাদের দেশে ‘আইনগত সহায়তা দান’ (Legal assistance) পদ্ধতি সত্যিকার অর্থে কাজ করেনি। এতে খুব বেশি হলে মাত্র এক শতাংশ লোকের কাজ হয়েছে। তাই এ ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করা যায় না।

আরো একটি বিষয় বিবেচনা করা দরকার। বর্তমানে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আপিল স্তর তিন বা চারবারও হয়ে যায়। আমাদের মনে হয়, আপিল স্তর দু’টির বেশি হওয়া উচিত নয়। এটি মামলা নিষ্পন্ন হতে অধিক সময় লাগার অন্যতম কারণ। এ বিষয়টিও বিবেচনা করা এবং এ জন্য আইন সংশোধন করা দরকার।

লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার


আরো সংবাদ



premium cement
দোয়ারাবাজারে শিশু হত্যা মামলার আসামিসহ গ্রেফতার ২ কাউখালীতে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু চুয়েট শিক্ষার্থীদের সড়কে অবস্থান অব্যাহত, ঘাতক বাসচালক গ্রেফতার তামাক পণ্যে সুনির্দিষ্ট করারোপের দাবিতে এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে ২৫ সংসদ সদস্যের চিঠি প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীতে মহিষের আক্রমণে বাবা-ছেলেসহ আহত ৪ গফরগাঁওয়ে গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার তীব্র মাত্রায় হিংস্র হয়ে উঠেছে সরকার : মির্জা ফখরুল মিরসরাইয়ে মৃত্যুর ১৫ দিন পর ব্যাংক কর্মকর্তার কবর থেকে লাশ উত্তোলন দেশে দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং, দুর্ভোগে মানুষ রংপুরে মহানবী সা:-কে নিয়ে কটূক্তি করায় ছাত্রলীগ কর্মী গ্রেফতার বাড়ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি, অনলাইনে ক্লাস চালুর চিন্তা

সকল