২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

আশা-নিরাশার দোলাচলে সংলাপ

আশা-নিরাশার দোলাচলে সংলাপ - ছবি : সংগ্রহ

অবশেষে একদম শেষপর্যায়ে এসে বহুল প্রত্যাশিত রাজনৈতিক সংলাপটি অনুষ্ঠিত হলো। সংলাপটি যেদিন অনুষ্ঠত হলো, সেদিনই প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার অন্য সব কমিশনারকে সাথে নিয়ে রাষ্ট্রপতির অফিসে যান। উদ্দেশ্য, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির সাথে পরামর্শ করা। রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাৎ শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের জানালেন, ৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের সভায় তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত হবে।

অতএব ধরেই নেয়া যায়, শিগগিরই একাদশ জাতীয় সংসদের তফসিল ঘোষিত হতে যাচ্ছে। এ দিকে গত ৩০ অক্টোবর থেকে নির্বাচনের ৯০ দিনের ক্ষণগণনা শুরু হয়ে গেছে। অতএব, ২৮ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। কারণ, তখন বর্তমান সংসদের পাঁচ বছরের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাবে। দীর্ঘকাল ধরেই সরকারের বাইরের রাজনৈতিক দল-জোটগুলো সংলাপের দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু সরকার পক্ষ বারবার বলে আসছিল কোনো সংলাপ হবে না, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

কিন্তু জানি না, হঠাৎ করে সরকার কেন এই সংলাপে রাজি হলো। মনে হয়, যেন একদম শেষ মুহূর্তে লেজে আগুন লাগার মতো অবস্থায় পড়ে আগ্রহভরে সরকার এই সংলাপে মিলিত হলো। কারণ, ঐক্যফ্রন্ট গঠন এবং এর নির্বাচনকেন্দ্রিক সাত দফা দাবি উত্থাপন, এই সাত দফার প্রতি কাদের সিদ্দিকীর দলের অনুসমর্থন এবং বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ ইসলামি কয়েকটি জোট একই ধরনের দাবি তোলায় সরকার পক্ষ যে এক ধরনের অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন- শেষ মুহূর্তে কেন এই সংলাপ? সরকার কি এই সংলাপের যৌক্তিক পরিণতি কামনা করে? না তা শুধু লোক দেখানো সংলাপ করে বিরোধী পক্ষকে সময়ক্ষেপণে ব্যস্ত রাখা? নইলে আরো সময় হাতে নিয়ে কেন এই সংলাপ করা হলো না? এ নিয়ে নানাজনের নানা কথা থাকাই স্বাভাবিক। তবে বিকল্প ধারার শীর্ষনেতা বি. চৌধুরী বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও তার দলকে বিভিন্ন সময় সংলাপে বসার দাবি জানালেও তখন তারা রাজি হননি। আমরা বলেছিলাম সংলাপ করতে বাধ্য হবেন, বাধ্য হবেন, বাধ্য হবেন। সরকার বাধ্য হয়েছে সংলাপে যেতে।’

সে যা-ই হোক, দেশের সাধারণ মানুষ এই বহুল প্রত্যাশিত সংলাপের সাফল্য কামনা করেছিল এবং এখনো সংলাপকে অব্যাহত রেখে এর যৌক্তিক পরিণতি কামনা করে। সাধারণ মানুষসহ রাজনীতিক মহল তো বটেই, দেশের ব্যবসায়ীরাও চায় এ সংলাপের সফল সমাপ্তি। কিন্তু এখন পর্যন্ত মনে হয়, তাদের সেই প্রত্যাশা অপূর্ণই থেকে গেছে। কারণ, এই সংলাপ পারেনি আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিদ্যমান রাজনৈতিক সঙ্কটের জট খুলতে। আমরা জানি, সংলাপটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল সরকারি দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট এবং মাঠের বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে; যার সাথে রয়েছে দেশের ডিফ্যাক্টো বিরোধী দল বিএনপি।

১৪ দলীয় জোটের নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দেন এর শীর্ষনেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। অন্যদের মধ্যে সাথে ছিলেন ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষনেতা ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংলাপে অংশ নেন দুই জোটের ৪৩ জন রাজনীতিবিদ। সংলাপে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেলেও তা সঙ্কটের ঝাঁপির মুখ খুলতে পারেনি বলেই মনে হয়। সংলাপে অংশ নেয়া রাজনীতিবিদদের সংলাপ শেষের প্রতিক্রিয়া থেকে তেমনটিরই আভাস মেলে।

সংলাপ শেষে ড. কামাল হোসেন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘আমরা গণভবনে গিয়েছিলাম। তিন ঘণ্টা আলোচনা হয়েছে। নেতৃবর্গ তাদের অভিযোগের কথাও বলেছেন, সরকারের ব্যাপারে তাদের উদ্বেগের কথাও তুলে ধরেছেন। সবার কথা শোনার পর প্রধানমন্ত্রী লম্বা বক্তৃতা দিয়েছেন। কিন্তু আমরা বিশেষ সমাধান পাইনি।’ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘আমি আমার পক্ষ থেকে বলতে পারি, আজকের সংলাপে আমরা সন্তুষ্ট নই।’ জাসদ নেতা আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘আমাদের ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমরা সংবিধানের বাইরে যেতে পারব না।’ এভাবেই সংবাদ শেষে নেতারা সংলাপ বিষয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগ নেতারা শুরুতেই বিরোধী জোটের নেতাদের নিশ্চিত করেছিলেন আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে বিরোধী জোটের সাথে আরো আলোচনা হবে। তবে সংলাপ শেষে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ঐক্যফ্রন্টের নেতারা চাইলে সংলাপ আরো চলবে। তা ছাড়া ওবায়দুল কাদের গত পরশু বলেছেন ৭ নভেম্বরের পর আর সংলাপ সম্ভব নয়। এতে সংলাপ অব্যাহত রাখার প্রশ্নে সম্ভাবনা কিছুটা ক্ষীণ হয়। তবে সংলাপ অব্যাহত রাখতে ড. কামাল এখন পর্যন্ত ইতিবাচক অবস্থানেই রয়েছেন বলে মনে হয়। সংলাপ সম্পর্কে দেশের মানুষ আশাবাদের জায়গাটি এর মধ্যেই রয়েছে বলে মনে করে। সংলাপকে ঐক্যফ্রন্ট যে এগিয়ে নিতে চায়, তার সুস্পষ্ট আভাস আমরা পাই ড. কামালের কাছে।

আমরা এরই মধ্যে জেনেছি, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠিত সংলাপ প্রশ্নে তার প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, সরকার পক্ষ সংবিধানের বাইরে যেতে পারবে না। আমরা এও জেনেছি, গত বৃহস্পতিবারের সংলাপে ড. কামাল হোসেন বর্তমান সঙ্কট নিরসনে একাধিক বিকল্প তুলে ধরেন। তিনি নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়ার একটি রূপরেখা দেন। একই সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিরোধী দলকে জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্রসহ একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়ার যে প্রস্তাব করেছিলেন, তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো- ড. কামাল সংলাপে দেয়া তার লিখিত বক্তব্যে বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট সংবিধানসম্মত উপায়ে সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহের বিষয়কে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, কোনো বিষয়ে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হলে তা নিয়ে আলোচনা করাও সংবিধানসম্মত।

কারণ, সংবিধান সংশোধনের বিধান সংবিধানেরই অংশ। তিনি আরো বলেন, বিরাজমান পরিস্থিতিতে সঙ্কট থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে সংবিধানসম্মত একাধিক পথ খোলা রয়েছে। তিনি ঐক্যফ্রন্টের সাত দফার পাশাপাশি সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া রায়ের কথাও উল্লেখ করেন। ওই রায়ের পর নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে জাতীয় সংসদ। ড. কামাল বলেন, সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে পরবর্তী দু’টি সংসদ নির্বাচন (দশম ও একাদশ) নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা এবং নির্বাচনের ৪২ দিন আগে সংসদ ভেঙে দিয়ে একটি ছোট মন্ত্রিসভা গঠনসহ বিভিন্ন নির্দেশনার কথা আছে।

সংলাপসংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ড. কামাল হোসেন তার বক্তব্যে সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদ (খ) উপদফায় সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন করা এবং সংবিধানের ৫৬(৪) অনুচ্ছেদে সংসদ ভেঙে যাওয়া এবং পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্যবর্তী সময়ে মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের বিধান রয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, সংসদ ভেঙে নির্বাচন করা সংবিধানসম্মত এবং তা ওয়েস্টমিনস্টার মডেলের সংসদীয় রীতি মেনে চলা বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের অনুশীলনের সাথেও সঙ্গতিপূর্ণ। বাংলাদেশের ২০১৪ সালের নির্বাচন ছাড়া এর ৯টি নির্বাচন সংসদ ভেঙে দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৭৩ সালে গণপরিষদ ভেঙে দিয়েই প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তখন বঙ্গবন্ধু সংসদের সমাপনী অনুষ্ঠানে ঘোষণা দিয়েছিলেন, বিশ্বের বুকে তারা এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। তারা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। ড. কামাল বলেন, সরকার সংলাপে যথাযথভাবে আশ্বস্ত করলে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশন শক্তিশালীকরণ ও এর সামর্থ্য বাড়ানোর জন্য সংবিধানসম্মত একাধিক নির্দিষ্ট প্রস্তাব দ্রুততম সময়ে তারা দিতে পারবেন।

ড. কামাল হোসেন সংলাপে আরো বলেন, বাংলাদেশের বিরোধপূর্ণ রাজনৈতিক ইতিহাসে সংলাপ আনুষ্ঠানিকভাবে সফল না হলেও বিভিন্ন সময় জাতীয় স্বার্থে সমঝোতা বা একটা আপসমূলক অবস্থায় পৌঁছানোর নজির আছে। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করার ইতিহাস বলতে গিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, বিএনপি শুরুতে না চাইলেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন জনপ্রিয় আন্দোলনের মুখে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার সংবিধানে সংযুক্ত হয়েছিল। জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠাবিষয়ক যেসব কারণে তিনি এখানে হাজির হয়েছেন, সেসব নীতিগত কারণে সাম্প্রতিক অতীতেও ব্যক্তিগতভাবে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সহযোদ্ধা ছিলেন বলে উল্লেখ করেন।

ড. কামাল বলেন, ২০০৫ সালের ২২ নভেম্বর পল্টনে মহাসমাবেশে আওয়ামী লীগ, ১১ দল জাসদ ও ন্যাপ নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারে লিখিত রূপরেখা দিয়েছিল। এর কিছু মৌলিক বিষয় আজো প্রাসঙ্গিক রয়ে গেছে। লিখিত বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন বলেন, বিরাজমান পরিস্থিতিতে সফল সংলাপের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারলে বিশ্বের সবচেয়ে বড়মাপের নেতাদের মতো অমর হয়ে থাকবেন শেখ হাসিনা।

জানি না, ড. কামাল হোসেনের এই যৌক্তিক বক্তব্য সরকার পক্ষ কিভাবে নেবে। তবে দেশের মানুষ মনে করে, ড. কামালের এই বক্তব্যের মধ্যে রয়েছে বর্তমান সঙ্কট উত্তরণের যৌক্তিক সমাধান, যা সরকার ও সরকারবিরোধী উভয়পক্ষের জন্য একটি সম্মানজনক সমাধান হতে পারে। সরকার পক্ষ বরাবর বলে আসছে, তারা কোনো মতেই সংবিধানের বাইরে যাবে না। ড. কামাল হোসেন বলেছেন, দ্রুততম সময়ে বর্তমান সঙ্কট উত্তরণে সংবিধানসম্মত একাধিক সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব উপস্থাপন করতে পারবেন, যদি সরকার তাদের যথাযথভাবে আশ্বস্ত করে। দেশের কল্যাণকামী মানুষ মনে করে, সরকার পক্ষের উচিত, ঐক্যফ্রন্টের কাছ থেকে উল্লিখিত ‘সংবিধানসম্মত’ সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আহ্বান করা এবং তা বিবেচনা সাপেক্ষে একটা জাতীয় ঐকমত্যভিত্তিক সমঝোতায় পৌঁছা। তেমনটি সম্ভব হলে জাতি বিদ্যমান সঙ্কট থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারে।

জানা গেছে, সংলাপ-উত্তর প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে ঐক্যফ্রন্ট এই সংলাপকে আরো এগিয়ে নিতে আগ্রহী। এখন তফসিল ঘোষণার আগে যদি আবার ছোট পরিসরে হলেও সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়, তবে ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নির্বাচনকালীন সরকারের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা উপস্থাপন করবেন, যেমনটি তিনি উল্লেখ করেছিলেন সংলাপ চলার সময়। আর যদি সংলাপ না হয়, তবে এই রূপরেখা ডাকযোগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাবেন। ঐক্যফ্রন্টের অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে এমনটিই জানা গেছে। সরকার পক্ষ যদি ঐক্যফ্রন্টের সাথে অধিকতর সংলাপের ব্যাপারে আগ্রহী না হয়, তবে ধরে নেয়া যায় সরকার পক্ষ বরাবরের মতো কঠোর অবস্থান নিয়েই এগিয়ে যাবে।

তখন সমঝোতার যাবতীয় পথই হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে। তখন রাজনীতির গতি-প্রকৃতি কোন দিকে যায়, সেটি দেখার অপেক্ষায়ই আমাদের থাকতে হবে। আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কী ঘটে, সে অনিশ্চয়তা আর আশঙ্কার মধ্যেই আমাদের বসবাস করতে হবে। বিরোধী পক্ষের নেতাদের অনেকের বিশ্বাস, আন্দোলন ছাড়া এই সরকারের কাছ থেকে দাবি আদায় করা যাবে না। কারণ, সরকার যে আরো কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে, এর অনেক আলামতই এখনো দৃশ্যমান। সংলাপ শেষে ওবায়দুল কাদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, তাদের সভাসমাবেশ তথা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। তারা যেখানেই সমাবেশ করতে চাইবে, করতে পারবে। সংলাপের দিন ও তার আগের দিনেও সরকারের অব্যাহতভাবে চলা ধরপাকড় থামেনি। এ দুই দিনে বিএনপি-জামায়াতের ১৮৪ জনকে আটক করা হয় এবং ৫৬ জনকে রিমান্ডে নেয়া হয়।

এ দিকে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা মনে করেন, এখনো তারা তাদের দাবি মানার প্রশ্নে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাননি। ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলো নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে তারা সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করবে। এরা এখন অপেক্ষা করছেন খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার কাছ থেকে গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার বিষয়ে। অনেক নেতাই মনে করেন, সরকার তাদের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। এখন তাদের হাতে একমাত্র বিকল্প হচ্ছে আন্দোলন। তবে ঐক্যফ্রন্টের একজন সিনিয়র নেতা মনে করেন, তারা সংলাপের ব্যর্থতার দায় নিতে যাবেন কেন, বরং তারা নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন সরকারের ইতিবাচক সাড়ার জন্য। তখনো যদি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়া হয়, তখন তারা রাজপথের আন্দোলনে নামবেন। তবে ঐক্যফ্রন্ট আগামী মঙ্গলবার তাদের দাবির সমর্থনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের আয়োজন করবে।


আরো সংবাদ



premium cement