২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভোটের মাঠে ঐক্যফ্রন্টের বাধা-বিপত্তি

ভোটের মাঠে ঐক্যফ্রন্টের বাধা-বিপত্তি -

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট কিভাবে অংশ নিবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। জোটের শরিকদের মধ্যে আসন ভাগাভাগি, নির্বাচনী ইশতেহার, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ইত্যাদি নিয়েও আজ অবধি কোনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি। এরপরও সবাই কেন জানি ঐক্যফ্রন্টকেই বর্তমান রাজনীতির অন্যতম নিয়ামক শক্তি বলে মনে করতে শুরু করেছেন। এর জন্য ঐক্যফ্রন্টের যতটা না কৃতিত্ব, তার চেয়েও বেশি কৃতিত্বের দাবিদার হলো ক্ষমতাসীন সরকার এবং তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা। সরকারি দলের লোকজন ঐক্যফ্রন্টের কয়েকজন নেতা বিশেষ করে ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন এবং ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রতি অম্লমধু ও ঘৃতমিশ্রিত বাণীগুলো অবিরতভাবে বর্ষণের পাশাপাশি তাদের নিয়ে এমন সব কর্মকাণ্ড করে চলেছেন, যা দেখে মনে হতে পারে, ঐক্যফ্রন্টই একমাত্র শক্তি যা সরকার এবং সরকারি দলকে যারপরনাই উত্তেজিত করে অস্থিরতার মধ্যে ফেলে দিতে পেরেছে। এর বিনিময়ে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের কী ধরনের মর্মবেদনা হচ্ছে, তা আমরা বলতে না পারলেও তাদের প্রচার-প্রচারণা যে সরকারি মদদে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এবং প্রকৃতিগতভাবে হয়ে থাকে, সে কথা দিব্যি করে বলতে পারি।

সরকারি মুখ, সরকারি ঠোঁট, সরকারি প্রচারযন্ত্র ও প্রশাসনের যুগপৎ তৎপরতায় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা দিনকে দিন ভোটের মাঠে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন। কিন্তু তারা যদি তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও নির্বাচনী মাঠের প্রকৃত অবস্থা বিবেচনা না করেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা না নেন, তবে তাদের গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা অনেকটা ফাঁপানো-ফোলানো বেলুনের মতো ফলাফল বয়ে নিয়ে আসবে। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে জনসাধারণ, প্রশাসন এবং বন্ধুরাষ্ট্রের কাছে ক্ষমতাসীনদের বিকল্প হিসেবে কাউকে সামান্তরালভাবে চিন্তা করার মতো সুযোগ নেই। সরকারি দল ১০ বছর ধরে রাজনীতির ঘুড়ি যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে উড়িয়ে যে মজা পেয়েছে, তা থেকে তারা স্বেচ্ছায় ঘুড়ির নিয়ন্ত্রণ অন্য কারো হাতে দিয়ে দেবে তা চিন্তা করা আমার মতে একধরনের নির্বুদ্ধিতা। সরকার তার প্রতিপক্ষকে ভয় দেখিয়ে, বিভ্রান্ত করে, কূটকচাল দিয়ে এবং ক্ষেত্রবিশেষে মামলা-হামলা, লাঠি-বাঁশি থেরাপি প্রয়োগ করে যে সফলতা লাভ করেছে, তা তারা আগামী দিনে কেন প্রয়োগ করবে না, সেই গুপ্তকথা জনগণকে না জানানো পর্যন্ত ভোটের মাঠে সরকারবিরোধীরা উত্তাপ ছড়াতে পারবেন না।

বর্তমানের ক্ষমতাসীনেরা একটি ঐতিহাসিক সময় পার করছেন। কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী ও ব্যক্তি কালে-ভদ্রে প্রকৃতির দয়ায় এমনতর সময় উপভোগ করতে পারে। প্রকৃতি অবারিতভাবে তার সব সুযোগ-সুবিধা সরকারি দলের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। রাজকোষ, অর্থকড়ি, সোনাদানা ও ডলার-পাউন্ড ভরা। মন্ত্রী-এমপি, দলীয় ক্যাডার এবং সুবিধাভোগীদের পকেট, পেট ও বুক শান্তিতে সমস্বরে কলরব করে বেড়াচ্ছে। তাদের শরীর-স্বাস্থ্য, মন-মানসিকতা ও পরিবার-পরিজনের মধ্যেও সুখের আবেশ দৃশ্যমান। অসুখ-বিসুখ, রোগবালাই তো দূরের কথা, সর্দি-কাশির মতো নিত্যনৈমিত্তিক দুর্ভোগগুলোও সরকারের নাম শুনলে দৌড়ে গিয়ে বিরোধী দলের লোকজনের শরীরে ভর করে থাকে। রাষ্ট্রের যাবতীয় গুপ্ত ও প্রকাশ্য শক্তিগুলো সরকারের সাথে একাকার হয়ে গেছে। ফলে সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার বাইরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্রে কোনো কিছু ঘটা অসম্ভব ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরকার তার রাজনৈতিক খেলায় সীমাহীন দক্ষতা অর্জন করে ফেলেছে। খেলার জন্য তাদের হাতে সব সময় দু-চারটি বি-টিম, সি-টিম এবং ডি-টিম মজুদ থাকে। পরের ঘরের তরতাজা খবর সংগ্রহ করার জন্য তাদের রয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি এবং সুদক্ষ বেতনভুক এজেন্ট। তারা মোবাইল টেকনোলজি ব্যবহার করে যেকোনো লোকের কথাবার্তা রেকর্ড এবং তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম। তারা যাদের টার্গেট করবেন সেসব দুর্ভাগা লোক যদি মোবাইল ফোনে কথা না-ও বলেন, তবুও তারা তাদের কথাবার্তা রেকর্ড করতে সক্ষম। তারা যদি মোবাইল ফোনটি খোলা রেখে কোনো গোপন বৈঠক করেন, তবে সেই বৈঠকের ধারাভাষ্য সরকার রেকর্ড করতে সক্ষম। প্রযুক্তির এতসব বিস্ময়কর সুযোগ-সুবিধা ছাড়াও তারা তাদের সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ রাজনৈতিক বাঁকগুলোতে নিজেদের বিশ্বস্ত এজেন্ট এমনভাবে অতন্ত্র প্রহরীর মতো বসিয়ে রেখেছেন, যারা কেবল তাদের মালিকের কাছে হালনাগাদ তথ্যই পাচার করেন না, বরং মালিকের ইচ্ছামতো পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূলে রাখার চেষ্টা করে থাকেন। ১০ বছর ধরে তারা এত সফলতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন, যে কারণে এক দিকে যেমন সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে কোনো বিরোধী দল দাঁড়াতে পারেনি, তেমনি বিরোধী শিবিরেও নানামুখী পারস্পরিক অবিশ্বাস, অনাস্থা ও অশ্রদ্ধা পয়দা হয়ে গেছে, যা কাটিয়ে ওঠার জন্য ঐক্যফ্রন্ট কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে সামনে এগোলে ভয়াবহ বিপত্তি ও ভুল বোঝাবুঝির মধ্যে পড়বে।

ভোটের মাঠে যাওয়ার জন্য ঐক্যফ্রন্টের জন্য সবার আগে দরকার পড়বে জনপ্রিয় প্রার্থী, যা কেবল বিএনপি এবং জামায়াতেরই রয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের মধ্যে কেবল চার-পাঁচজন নেতা ধানের শীষ প্রতীকে একাধিক আসন থেকে বিজয়ী হওয়ার মতো জনমত ও জনপ্রিয়তা ধারণ করেন। বাকিরা নেতা হিসেবে অনেক বড়, ব্যক্তি হিসেবে আরো বড় এবং জ্ঞানী-গুণী হিসেবে নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে অতুলনীয়Ñ কিন্তু নির্বাচনের মাঠের বাধা পেরোনোর অবস্থানে নেই। দলীয় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি বা জামায়াতের বিতর্কিত এমপি প্রার্থীরা সারা দেশে নিন্দিত হলেও নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী। ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল এবং নেতারা যদি ভোটের মাঠের বাস্তবতাকে অস্বীকার করে আসন ভাগাভাগিকে অগ্রাধিকার দেন, তবে জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে তারা তখন সন্দেহ ও অবিশ্বাসের পাত্রে পরিণত হয়ে জনগণের হাস্যরসের খোরাকে পরিণত হবেন।

ভোটের মাঠের আরেকটি রূঢ় বাস্তবতা হচ্ছে নির্বাচনী ব্যয়। বাংলাদেশের ৩০০টি আসনের বিজয়ী প্রার্থীদের কম করে হলেও এক কোটি টাকা এবং ক্ষেত্রবিশেষে ২০-২৫ কোটি কিংবা আরো বেশি খরচ করতে হয়। সত্যিকার অর্থে জনপ্রিয় ও গণমুখী প্রার্থীদের কেউ কেউ দরিদ্র, অনেকে মধ্যবিত্ত এবং অল্পসংখ্যক ধনী সম্প্রদায়ভুক্ত। যারা দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত, তারা সব সময় দল থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ সাহায্য পান, যার গড় পরিমাণ প্রতি আসনে ৫০ লাখ টাকার মতো। ঐক্যফ্রন্ট যদি তাদের জোটের মধ্য থেকে দল-মত নির্বিশেষে জনপ্রিয় প্রার্থী বাছাই এবং সেসব প্রার্থীকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতা দিতে না পারেন, তবে শত চেষ্টা-তদবির কিংবা ঝাড়ফুঁক করেও নির্বাচনে জয়লাভ করা যাবে না।

উপরেউল্লিখিত কারণগুলো ছাড়াও বাঙালি জাতীয়তাবাদ, বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, শহীদ জিয়ার আদর্শ, খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, মুজিব কোট, সাফারি স্যুট ও সানগ্লাস ইত্যাদি বিষয় একটি অপরটির সাথে যে বিক্রিয়া করবে, তার কিছু নমুনা ইতোমধ্যে প্রকট হয়ে উঠেছে। ড. কামাল ও সুলতান মোহাম্মদ মনসুর কথায় কথায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্নের বুলিগুলো যাদের শোনাচ্ছেন, তারা জন্ম-জন্মান্তরে আওয়ামীবিরোধী লোক হিসেবে পরিচিত। গত ১০ বছরের সরকারি কর্মকাণ্ডে এসব লোকের মন-মানসিকতায় যে আজন্ম ঘৃণা ও বিদ্বেষ পুঞ্জীভূত ছিল, তা সাম্প্রতিক কালে রীতিমতো দগদগে ঘায়ে পরিণত হয়েছে। কাজেই সেই মানুষদের সামনে যখন তারা বঙ্গবন্ধুর কথা বলেন তা তাদের মনোজগতে কেমন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, সেটি যদি ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বিবেচনায় না নেন, তবে যেকোনো সময় তারা অসম্মানজক ও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন।

ড. কামাল ও সুলতান মনসুররা বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শকে সার্বজনীন করার যে বোধ ও বিশ্বাস নিয়ে চলেন, তা আমাদের দেশে এখনো বাস্তবতা পায়নি। আওয়ামী লীগবিরোধীরা তো দূরের কথা, খোদ আওয়ামী লীগও তাদের এ কাজ করতে দেবে না। আমাদের দেশে যে বিভেদ-বিসম্ব^াদ এবং সাম্প্র্রদায়িকতার রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাতে করে বিএনপি যেমন মুক্তিযোদ্ধা জিয়ার মালিকানা ছাড়বে না, তেমনি আওয়ামী লীগও বঙ্গবন্ধুকে সার্বজনীন মালিকানায় হস্তান্তর করবে না। এটা হয়তো একদিন হবে, তবে সময় লাগবে- হয়তো বহু বছর কিংবা বহু যুগ পেরিয়ে যাবে। কাজেই বর্তমানের বাস্তবতায় বিশেষ করে নির্বাচনপূর্ব এই জটিল-কুটিল সময়ে তারা যদি আওয়ামীবিরোধী জনসমাবেশের বিক্ষুব্ধ মন ও মানসিকতার দগদগে ঘায়ের ওপর প্রতিষেধক ছাড়া অন্য কোনো টনিক প্রয়োগ করতে চান, তবে রাজনৈতিক সুনামি হতে বেশি দেরি লাগবে না।

সরকারি দল দশ মুখে প্রচার করছে, ড. কামাল এবং তাদের সহযোগীরা ঐক্যফ্রন্টের নামে ১৫ আগস্টের হত্যাকারী, ২১ আগস্টের হত্যাকারী, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি এবং যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতের সাথে হাত মিলিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত এবং শেখ হাসিনাকে শেষ করে দিতে চায়। অন্য দিকে, ঐক্যফ্রন্টের নেতারা আওয়ামী লীগের উল্লিখিত অভিযোগের কোনো জবাব না দিয়ে কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তারা ইতোমধ্যে সিলেট ও চট্টগ্রামে দু’টি সফল জনসভা করার পর ঢাকা এবং অন্যান্য বিভাগীয় শহরে জনসভা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যুক্তফ্রন্টের নেতাকর্মীরা এবং সরকারবিরোধী জনমত তাদের বর্তমান দুঃখ ও দুর্দশার মধ্যে ত্রাতা হিসেবে ড. কামালের ওপর বিশ্বাস, আস্থা ও সমর্থন অব্যাহত রেখেছেন অলৌকিক কোনো ফলাফল লাভের আশায়। অন্য দিকে ড. কামালও প্রথা ভেঙে এমনভাবে তৎপর হয়ে উঠেছেন এবং কথাবার্তা ও কর্মে এমন দৃঢ়তা দেখাতে আরম্ভ করেছেন, যা তার কাছ থেকে ইতঃপূর্বে তার শত্রু-মিত্র এবং সমালোচনাকারীরা আশা করেননি। ফলে তিনি সবাইকে একের পর এক চমক দিয়ে চলেছেন। সরকারের সাথে সংলাপের চিঠি এবং তৎপরবর্তী নানা ঘটনা সেই চমকেরই অংশবিশেষ।

আমি সব সময়ই মনে করি, মানবজাতির জন্য সবচেয়ে মূল্যবান হলেন মেধাবী মানুষ। জ্ঞান-বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার চেয়ে শক্তিশালী কোনো অস্ত্র পৃথিবীতে নেই। সৎ ও চরিত্রবান মানুষ যদি বুদ্ধিমান হন এবং সময় ও সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সাহসী হতে পারেন, তবে কোনো অশুভ শক্তি তাদের রুখে দিতে পারে না। অনাদিকালের ওই সব নীতিবাক্য যাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে এমনতর আধা ডজন মানুষ ঐক্যফ্রন্টের সাথে যুক্ত হয়েছেন, যারা নিজেরাই একেকটা প্রতিষ্ঠান। কোনো রাজনৈতিক গুরুত্ব, পদ-পদবি, রাষ্ট্রক্ষমতা ও অঢেল অর্থ এবং গুণ্ডা-বদমাশ ও লুটেরাদের সাহায্য ছাড়াই এসব লোক ৩০-৪০ বছর ধরে এ দেশে টিকে আছেন এবং নিজেদের ব্যক্তিগত সুনাম-সমৃদ্ধি বাড়িয়ে দুষ্ট শয়তানদের ঈর্ষার পাত্রে পরিণত হয়েছেন। তারা দেশ-বিদেশের সফল সুধীজন, জ্ঞানী-বিজ্ঞানী ও চিন্তাশীলদের সাথে একটি নিবিড় বন্ধনের মিত্রতা বজায় রেখে চলেছেন বহুকাল ধরে। দেশের শান্তিপ্রিয় ভালো মানুষ এসব লোকদের শ্রদ্ধা করেন এটা যেমন সত্য, তেমনি দেশের প্রধানতম রাজনৈতিক দলের সক্রিয় নেতাকর্মীরা তাদের নিয়ে নির্বিচারে ব্যঙ্গ-কৌতুক ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে আসছেন অনেক দিন ধরে।

উল্লিখিত বাস্তবতায় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা প্রথমত নিজেরা একধরনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন এবং দ্বিতীয়ত, তাদের প্রতিপক্ষের শক্তিকেও ঝুঁকির মধ্যে রেখেছেন। আমি প্রথমে তাদের ঝুঁকি সম্পর্কে বিস্তারিত বলবÑ তারপর তাদের প্রতিপক্ষের ঝুঁকি সম্পর্কে বলে আজকের নিবন্ধের ইতি টানব। ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের প্রধান সমস্যা হলো, তারা যাদের সাথে হঠাৎ মিত্রতা শুরু করেছেন, সেই মিত্রের সাথে ইতঃপূর্বে কোনো রাজনৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্কের বন্ধন তাদের ছিল না। ফলে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের চিন্তাচেতনা, অভ্যাস, রাগ-বিরাগ, বিশ্বাস-ভালোবাসা, রাজনৈতিক কৌশল, ক্রোধ-ঘৃণা ইত্যাদির সাথে ড. কামাল, আ স ম রব, মান্না প্রমুখ নেতা সম্যক পরিচিত নন। এমনকি বিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবী বলে পরিচিত ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে বিএনপি-জামায়াতের সার্বক্ষণিক এবং একনিষ্ঠ নেতাকর্মীদের কথাবার্তা ও চিন্তাচেতনায় ব্যাপক অমিল এবং ক্ষেত্রবিশেষে বিরোধ রয়েছে। এসবের বাইরে বিএনপি-জামায়াতের নেতা যারা ইতঃপূর্বে বহুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বা আগামীতে মনোনয়নপ্রত্যাশী, তারাও আওয়ামী লীগ নেতাদের মতোই এ ধারণা পোষণ করেন, ঐক্যফ্রন্টের নেতারা ধানের শীষ ছাড়া যেমন নির্বাচনে জিততে পারবেন না, তদ্রুপ বিএনপি-জামায়াতের লোক না গেলে তাদের জনসভায় দুই-তিন শ’ লোকও হবে না।

উল্লিখিত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা যখন ২০ দলীয় জোটের নেতাদের সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে মিলিত হবেন অথবা বৃহৎ পরিসরে আয়োজিত জনসভায় বক্তৃতা দেবেন তখন সেখানে বিশাল এক মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ চলতে থাকবে। ফলে কারো কথাবার্তা, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ কিংবা আকার-ইঙ্গিত ও মারাত্মক ভুল বোঝাবুঝি অথবা অন্য কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারে। অধিকন্তু সরকারি এজেন্টরা যদি এসব দুর্বলতায় ঘি ঢালতে পারেন, তবে বিরোধের আগুন জ্বলতে যে খুব বেশি সময় লাগবে না তা তারা ইতঃপূর্বে ঐক্যফ্রন্ট থেকে যুক্তফ্রন্টের বিযুক্তির ঘটনায় চাক্ষুষ প্রমাণ পেয়ে গেছেন। এ অবস্থায় নির্বাচনের দিন যতই কাছে আসবে অথবা ঐক্যফ্রন্ট নেতারা যত বেশি সফলতার দিকে এগোবেন, ততই তারা কট্টরপন্থী বিএনপি-জামায়াতের কর্মী-সমর্থক এবং ঈর্ষাপরায়ণ শীর্ষ নেতাদের বিরোধের মুখে পড়বেন।

ঐক্যফ্রন্টের নেতারা নিজেদের ঝুঁকির বাইরে তাদের প্রতিপক্ষের জন্যও বিরাট ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারেন। নিজেদের বুদ্ধিমত্তা, সামাজিক অবস্থান, ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও ইতিবাচক ভাবমর্যাদা এবং সুনামের কারণে তারা এমন কিছু চিন্তা করতে পারেন, যা অন্যরা পারেন না। তাদের কাজকর্মের ধরন ও পরিকল্পনা প্রচলিত রাজনীতির বাইরে। কাজেই বর্তমানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেহেতু প্রচলিত রাজনীতির সীমার বাইরে চলে গেছে, সেহেতু প্রচলিত রাজনীতির গলাবাজ টিপিক্যাল রাজনীতিবিদদের মন-মস্তিষ্ক এই মুহূর্তে অন্য সাধারণ সময়ের মতো হুকুম-আহকাম, হুমকি-ধমকি ইত্যাদির জোগান দিতে পারবে না। ফলে রাজনীতির মাঠে বহুকালের অবহেলিত মেধাবী লোকদের ভিন্নধর্মী চিন্তা ও কর্মে যদি প্রথমত, সরকারবিরোধী জনমত সমর্থন জানায়, তবে নিরপেক্ষ লোকজনও তাদের সমর্থন নিয়ে এগিয়ে এসে ঐক্যফ্রন্ট-বিরোধীদেরকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবে।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য


আরো সংবাদ



premium cement
শ্যালকদের কোপে দুলাভাই খুন : গ্রেফতার ৩ তীব্র গরমে কী খাবেন আর কী খাবেন না এবার তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে বললেন এমপি জয় পঞ্চপল্লীর ঘটনায় ন্যায়বিচারের স্বার্থে যা দরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে করার নির্দেশ সরকার ভিন্ন মত ও পথের মানুষদের ওপর নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে : মির্জা ফখরুল ধুনটে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বৃদ্ধের মৃত্যু বাকৃবির এক্স রোটারেক্টরর্স ফোরামের বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠিত পাবনায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড, হিট স্ট্রোকে মৃত্যু ১ দাগনভুঞায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তির ঘটনায় আ’লীগ নেতাকে শোকজ দখলে থাকা ৪ গ্রাম আজারবাইজানকে ফিরিয়ে দেবে আর্মেনিয়া

সকল