২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আইএমএফ ঋণ সম্পর্কে কিছু কথা

আইএমএফ ঋণ সম্পর্কে কিছু কথা -

কিছু দিন আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তুরস্ক আর আইএমএফ থেকে ঋণ নেবে না। তিনি তাদেরকে চিরতরে গুডবাই বলেছেন। তিনি বলেছেন, আইএমএফের কারণে তুরস্ক ঋণে ডুবে গিয়েছিল এবং এর ফলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটা থেকে বাঁচার জন্যই তিনি এ পদক্ষেপ নিয়েছেন।

আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক পাশ্চাত্য প্রতিষ্ঠা করেছে। এদের নিয়ন্ত্রণকারী শেয়ার পাশ্চাত্যের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের। এসব রাষ্ট্র মূলত বড় বড় পুঁজিবাদীর স্বার্থরক্ষা করে থাকে। এসব রাষ্ট্রে পুঁজিবাদীদের নিয়ন্ত্রণ থাকায় আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকও মূলত তাদের স্বার্থরক্ষা করে চলে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকও মূলত এ ধরনের ভূমিকা পালন করে।

আইএমএফ মূলত আমদানি বেশি হলে এবং রফতানি কম হলে যে ব্যবধান দেখা দেয়, তা পূরণ করার জন্য উচ্চ সুদের হারে ঋণ দেয়। কিন্তু কয়েক বছর পর দেখা যায়, আইএমএফের ঋণের সুদ বিরাট আকার ধারণ করেছে। এ সুদ আদায় করতেই ঋণগ্রহীতা দেশে কর রাজস্বের ২০-৩০ শতাংশ ব্যয় হয়ে যায়। শুধু ঋণ শোধের জন্য নতুন করে ঋণ নিতে হয়। এটা চলতেই থাকে। পরবর্তীকালে ঋণ শোধ করার পর দেশের উন্নয়ন করার জন্য অর্থ কমই থাকে।

বর্তমান তৃতীয় বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্র এ অবস্থার সম্মুখীন। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের একই অবস্থা। সুতরাং প্রত্যেক রাষ্ট্রের দায়িত্ব, আইএমএফের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসা। এটা সম্ভব, যেমন তুরস্ক করেছে। আইএমএফ অবশ্য আরো ঋণ নেয়ার জন্য প্রলুব্ধ করতে পারে। তাতে আইএমএফের এবং পাশ্চাত্য পুঁজিবাদী ব্যবস্থার লাভ।

এর থেকে বাঁচার জন্য তিনটি পদক্ষেপ নেয়া যায়। প্রথমত, নতুন সব রাষ্ট্রীয় বাজেট ভারসাম্যপূর্ণ করতে হবে। কর রাজস্ব বা অন্যান্য রাজস্ব যতটুকু হয় আয় হয়, তার ভিত্তিতে বাজেট তৈরি করতে হবে। বাজেটে আইএমএফের কোনো নতুন ঋণের ওপর নির্ভরশীল হওয়া ঠিক হবে না। এর ফলে হয়তো বেশ কয়েক বছর বিশাল প্রজেক্ট (mega project) করা যাবে না। তাতে কোনো ক্ষতি নেই। কয়েক বছর পর তা করা যাবে, যখন আইএমএফের ঋণ শোধ হয়ে যাবে। এ সময়ে বাজেটে কেবল ক্ষুদ্র প্রকল্প ও দারিদ্র্য বিমোচন প্রোগ্রাম নেয়া যাবে। এ ছাড়া সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনিক খরচ বহন করা হবে। প্রয়োজনে কিছু ঋণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বা দেশীয় বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেয়া যাবে। অবশ্য তা যত কম হয়, তত ভালো। দ্বিতীয় পদক্ষেপ হচ্ছে, নতুন করে আর আইএমএফের বা বিশ্বব্যাংকের ঋণ না নেয়া। এতে কয়েক বছর কষ্ট করতে হবে। কিন্তু তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে। দেশের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও উন্নয়নের জন্য এটা জরুরি। কষ্ট খুব বেশি করতে হবে না। সাময়িকভাবে কেবল বড় প্রকল্প কয়েক বছর বন্ধ রাখতে হবে। কিন্তু প্রশাসন, ক্ষুদ্র উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে।

তখন দেশের বাজেট ছোট হওয়ার ফলে আমদানি কমে আসবে, আমদানি-রফতানি বৈষম্য ক্রমে দূর হবে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের ওপর চাপ কমে যাবে। আমদানি কিছুটা কম হওয়ার কারণে আমদানি কর কিছুটা কমবে। সেটা অন্য খাত থেকে পূরণ করে নিতে হবে। দেশের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থেই তা করতে হবে।

তৃতীয় যে পদক্ষেপ নিতে হবে তা হচ্ছে, বর্তমানে আইএমএফের যে বকেয়া ঋণ রয়েছে, তা পরিশোধ করতে হবে। বাজেটে আগে যেমন ২০-২৫ শতাংশ অর্থে ঋণ পরিশোধ করা হতো, তা কমিয়ে ১৫ শতাংশ অর্থে ঋণ পরিশোধ করা যায়। দু-তিন বছরের মধ্যে বকেয়া ঋণের পরিমাণ কমে আসবে। তখন বাজেটের সামান্য অংশ ঋণ পরিশোধে ব্যয় হবে। পাঁচ-সাত বছর পর আর কোনো ঋণ বাকি থাকবে না। ঋণ পরিশোধের জন্য বাজেটে অর্থও বরাদ্দ রাখতে হবে না। তখন প্রয়োজনে বড় প্রকল্প নেয়া যাবে এবং অনেক বেশি অর্থ উন্নয়নে ব্যয়ও করা যাবে।
যে পদ্ধতির কথা বললাম, সেভাবে বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশ আইএমএফের ঋণ থেকে মুক্তি পেতে পারে।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার


আরো সংবাদ



premium cement
চীনা কোম্পানি বেপজা অর্থনৈতিক জোনে ১৯.৯৭ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে মৃত মায়ের গর্ভে জন্ম নিলো নতুন প্রাণ দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদ সমাবেশে কেউ মারা যায়নি : পুলিশ সুপার হামাসকে কাতার ছাড়তে হবে না, বিশ্বাস এরদোগানের জাহাজভাঙা শিল্পে শ্রমিক নিরাপত্তার উদ্যোগ ভালো লেগেছে : সীতাকুন্ডে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ১০ দেশের অংশগ্রহণে সামরিক মহড়া শুরু করল আরব আমিরাত গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের পর ২ হাজার ফিলিস্তিনি নিখোঁজ ৯ বছর পর সৌদি আরবে আসছে ইরানি ওমরা কাফেলা দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা : প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশের হামলার নিন্দা হেফাজতে ইসলামের ভর্তি পরীক্ষায় জবিতে থাকবে ভ্রাম্যমাণ পানির ট্যাংক ও চিকিৎসক মিয়ানমার থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশীরা কারা?

সকল