১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে জাতীয় ঐক্যের সূচনা

ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে জাতীয় ঐক্যের সূচনা -

বিগত এক দশকে বিপর্যস্ত ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে প্রায় সব রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বের ঐক্য সূচিত হয়েছে। জনগণের অন্তর্নিহিত দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ এক দশকে এটি ক্রমেই গ্রথিত ও অগ্রসর হয়েছে। এখন প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান হবে। রাজনীতির স্বাভাবিক নিয়মে সব রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বে বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিকতা অর্জন করেছে। যদিও এই দীর্ঘ সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের স্বাভাবিক কর্মসূচি পালন করতে পারেনি, তবুও নাগরিকসাধারণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দলগুলো ভেতরে ও বাইরে জনগণের মৌলিক দাবিকে এগিয়ে নিতে চেয়েছে। রাজনীতিসচেতন নাগরিক মাত্রই অবগত আছেন, দেশী ও বিদেশী ষড়যন্ত্রে সামরিক বাহিনীর কথিত সমর্থিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

সামরিক বাহিনী অবশেষে নিজেদের সুরক্ষার জন্য একটি প্যাকেজ ডিলের আওতায় বাস্তব গণতন্ত্রবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেছেন। ২০০৮ সালের এই সংসদ নির্বাচন বহুবিধ প্রশ্নে বিদ্ধ থাকলেও বৃহত্তর রাজনৈতিক দলগুলো ‘সামরিক শক্তির চেয়ে রাজনৈতিক দল শ্রেয়’- এ যুক্তিতে নির্বাচনী ফলাফল মেনে নেয়। সে সময়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ক্রমেই তাদের প্রকৃত গণতন্ত্রবিরোধী চরিত্রেরই প্রকাশ ঘটেছে। তৎকালীন জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে না দিয়ে সংসদীয় রীতিনীতি অকার্যকর করা হয়। এ দিকে বিএনপির লাগাতার সংসদ বর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশে সংসদীয় রাজনীতি বিরাট হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। সংসদের বাইরে বিএনপিসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে না দিয়ে সরকার নিপীড়নের পথ বেছে নেয়। অনাচার, অত্যাচার ও সুশাসনের অভাবে ক্রমেই জনগণ সরকারবৈরী হয়ে ওঠে। কিছু নির্বাচনে ও বিভিন্ন মাধ্যমে সরকার যখন নিশ্চিত হয় যে, একটি স্বাভাবিক ও সাধারণ নির্বাচনে তাদের ক্ষমতায় ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব, তখন তারা ইতঃপূর্বে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। শুধু তাই নয়, ২০১৩ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের এমন সব পরিবর্তন আনা হয়, যা নাগরিকসাধারণের মৌলিক অধিকার বহুলাংশে খর্ব করেছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা খোদ সংসদীয় কমিটি এবং সংশ্লিষ্ট এমিকাস কিউরিদের সুপারিশে না থাকলেও বিকারগ্রস্ত ব্যক্তিতন্ত্রের একক ইচ্ছায় এটি বাতিল করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের যে রায়ের অজুহাতে তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা বাতিল করা হয়, এতেও আরো দ্ইুবারের জন্য এ ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার সুপারিশ থাকলেও ক্ষমতা স্থায়ী করা এবং মানুষের ভোটাধিকার হরণের জন্য ক্ষমতাসীন দল চরম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সংসদীয় গণতন্ত্রের স্বাভাবিক ব্যবস্থায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বিরোধী পক্ষের বিজয় লাভ করার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ তো এক অস্বাভাবিকতার দেশ। ১৯৭২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত কোনো ক্ষমতাসীন সরকারের পরিচালিত নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল পরাজিত হয়নি। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসতে থাকে, বিরোধীদের রাজনৈতিক আন্দোলন ততই উত্তাপ ছড়াতে থাকে। বিশেষ করে নিকট অতীতে পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির নিরঙ্কুশ বিজয় ক্ষমতাসীনদের মাথা খারাপ করে দেয়। এ সময়ে ক্ষমতাসীনরা নানা ধরনের নাটক করে জনমতকে বিভ্রান্ত করার প্রয়াস পায়।

গাছের গোড়া উপড়ে ফেলে ডগায় পানি ঢালার মতো তারা বলেছেন, কথিত নির্বাচনকালীন সরকারে স্বরাষ্ট্রসহ তাদের মন্ত্রিত্ব দেয়া হবে। অথচ তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল যে খুন, জখম, রক্তপাত, প্রতারণা- অর্থাৎ যে কোনো মূল্যের বিনিময়ে তারা ক্ষমতা সংহত করবেন। এ অবস্থায় প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। নির্বাচন অনুষ্ঠান এক রকম অসম্ভব হয়ে ওঠে। এ সময়ে আওয়ামী লীগের নিমজ্জমান নৌকা উদ্ধারে এগিয়ে আসে ভারতে তখন ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সরকার। তারা সব কূটনৈতিক রীতিনীতি ভঙ্গ করে সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রবল চাপ দেয়। সুস্থ এরশাদকে জবরদস্তি করে সিএমএইচে ভর্তি করা হলো। স্ত্রী রওশন এরশাদকে এরশাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো হয়। আরো হাসির বিষয় এরশাদ নিজে তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলেও তাকে ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা’য় এমপি ঘোষণা করা হয়। জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন হাওলাদারের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। এত কিছুর পরেও ক্ষমতাসীন সরকার একটি দৃশ্যমান ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হয়। সংসদের ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। অন্যান্য আসনে হাস্যকর প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং মাত্র ৫ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছে। এ ধরনের অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্যতা দিতে বলা হলো যে, এটি একটি নিয়ম রক্ষার বা সাংবিধানিক আবশ্যকতার নির্বাচন এবং শিগগিরই একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

কিন্তু কূটনৈতিক প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও সে নির্বাচন আর কখনোই অনুষ্ঠিত হয়নি। বিএনপি সূচিত, নির্বাচন বর্জনের যে আন্দোলন সফল হতে যাচ্ছিল প্রতারণামূলক প্রতিশ্রুতিতে তা ব্যর্থ হয়ে যায়। আজ যে ভোটাধিকারপুনরুদ্ধার আন্দোলন সূচিত হয়েছে তার একটি পটভূমি ব্যাখ্যা করার জন্য এত কথা বলা হলো। আওয়ামী লীগের শাসনে গত এক দশকে মানুষের ভোটের অধিকার ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়েছে। এ সময় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশন নির্বাচন পর্যন্তÑ কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়নি। তারা দলীয়করণকে প্রাতিষ্ঠানিকতা দিয়েছেন। দলীয় নমিনেশনই প্রকারান্তরে নির্বাচন বলে ধরে নেয়া হয়েছে। ছিটেফোঁটা কোথাও কোথাও বিরোধীদলীয় প্রার্থী নির্বাচিত হলেও জেল-জুলুম তার জীবনকে ‘হারাম’ করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রের নমুনা ও নির্বাচনের ধরন বোঝার জন্য রীতিমতো গবেষণা আবশ্যক। একেকটি নির্বাচনে একেক ধরনের কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে। সর্বশেষ, সিটি করপোরেশনের নির্বাচনগুলো পাঠক মনে করতে পারেন। গাজীপুরে কারচুপি, খুলনায় কারসাজি, বরিশালে রংবাজি এবং সিলেটে প্রদর্শন- কোনো অপকৌশলই বাদ যায়নি। স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ১০০টা স্থানে হারলেও আওয়ামী লীগের সরকারের পতন হতো না; কিন্তু তারা সে সামান্য উদারতাও দেখাতে পারেননি।

এখন সমাগত জাতীয় নির্বাচন। এ নির্বাচনে হারলে তাদের ক্ষমতাচ্যুতি ঘটবে। সুতরাং মনোভাব হলো- যেকোনো অপকৌশলে তাদের জিততেই হবে। সেই ফন্দিফিকির নিয়েই তারা কাজ করছেন। গত দশ বছরে অত্যাচারের স্টিম রোলার চালানো হয়েছে। সেটাই আগামী নির্বাচনে তাদের বিশ্বস্ত হাতিয়ার। আওয়ামী লীগ এর বাহন বানাতে চাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। ইতোমধ্যে সংবাদপত্রে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী নীলনকশা বেরিয়েছে। নির্বাচনে বিএনপি যদি না আসে তাহলে তাদের পোয়াবারো। যদি আসে তাহলে বিএনপিকে প্রতিহত করার জন্য ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে পুলিশ। শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে পোলিং এজেন্ট পর্যন্ত সবাইকে মামলার মহাজালে আটকে দেয়ার ছক করা হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করছেন, হাজার হাজার মামলায় বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। সুতরাং জনগণের ভোট নয়, মামলাই ক্ষমতাসীনদের ভরসা। ইতঃপূর্বে খুন, জখম ও গুম ও বন্দুকযুদ্ধের নামে বিএনপিসহ বিরোধী দলের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এখন সারা বাংলাদেশে দুঃশাসন চলছে। মানুষ এ থেকে মুক্তি চায়। সে জন্য পরিবর্তনের পথ দুটো। সমাগত নির্বাচনে নিয়মতান্ত্রিক পথে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটানো। দ্বিতীয়ত, আওয়ামীলীগ যদি আগের মতোই ভোটবিহীন নির্বাচন করতে চায় তাহলে গণ-আন্দোলন বা গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পরিবর্তন ঘটানো।

বাংলাদেশে সব রাজনৈতিক দল নিয়মতান্ত্রিক পরিবর্তনে বিশ^াসী। যারা অনিয়মের মাধ্যমে পরিবর্তন চায় তারা আছে বটে, কিন্তু তাদের প্রতি জনসমর্থন নেই। এ দেশের জনগণ অস্থিরতা ও অরাজকতায় বিশ্বাস করে না। সময়ান্তরে যে নির্বাচনের বিধান রয়েছে, সেটি ১০০% কার্যকর দেখলেই জনগণ খুশি। এ দেশের মানুষ অতিমাত্রায় রাজনীতিসচেতন। অতীত এর প্রমাণ। আইয়ুব খানের উন্নয়নের এক দশক অথবা এরশাদীয় উন্নয়নের ৯ বছর তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। মানুষের কাছে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র অত্যন্ত মূল্যবান। তারা জেলে বসে কোর্মা-পোলাও, কোর্মা-কাবাব খেতে চায় না। তারা তাদের মতো করে পান্তাভাত খেতে চায়। তবে জনগণ সংগঠিত নয়। রাজনৈতিক দলই জনগণের সংগঠন। তারা সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করে। দেশের দলগুলো বসে থাকেনি। বিগত এক দশক ধরে ক্রমাগতভাবে মানুষের ভোটাধিকার যখন শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। তখন রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের পক্ষেই আন্দোলন করেছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বোগাস নির্বাচনের পর সরকারকে এক বছর সময় দিয়েছিল পুনর্নির্বাচনের জন্য; কিন্তু তাদের আন্দোলনকে সরকার নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেছে। প্রথমত, সরকার গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ‘জঙ্গিবাদ’রূপে প্রমাণের চেষ্টা করেছে। অপর দিকে নিজ দল ও এজেন্সিকে দিয়ে নাশকতা করিয়ে বিরোধী দলকে দোষরোপ করার চেষ্টা করা হয়েছে। সরকার তার গতানুগতিক কৌশল অবলম্বন করে হামলা-মামলা ও গুমের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে নস্যাৎ করে দিয়েছে। সে সময় মাঠে প্রথমত চার দলীয় ঐক্যজোট ও পরে ২০ দলীয় ঐক্যজোট গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয় থাকে। যতই দিন অতিক্রান্ত হয়েছে, ততই অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং সিভিল সোসাইটি জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য হয়েছে সচেষ্ট। প্রায় ১০ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর এখন বাংলাদেশের প্রায় সব বিরোধী রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী ও ব্যক্তি এক হয়েছে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য।

বাংলাদেশে সুস্থ ও সুন্দর রাজনীতির জন্য নন্দিত মানুষেরা একত্র হয়েছেন। প্রবীণ নেতা ড. কামাল হোসেন ‘জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া’র মাধ্যমে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস পেয়েছেন। অপর দিকে, সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রফেসর বদরুদ্দোজা চৌধুরী কিছু গণতান্ত্রিক দল ও ব্যক্তি নিয়ে গঠন করেছেন ‘যুক্তফ্রন্ট’। নাগরিকসমাজের প্রতিনিধিরূপে অধিকতর পরিচিত মাহমুদুর রহমান মান্না গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বেশ অগ্রসর হয়েছেন। দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি তাদের সাথে একাত্ম হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করেছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া মিলে নতুন জোট গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে। যদি অভিন্ন জোট গঠন সম্ভব না হয় নেতারা এক মঞ্চ থেকেই আন্দোলন ও নির্বাচন করার চিন্তা করছেন। তারা শিগগিরই দেশব্যাপী আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি দেবেন বলে খবর বেরিয়েছে। দাবি মেনে নেয়ার জন্য অসহযোগের মতো চূড়ান্ত আন্দোলনের কথাও তারা ভাবছেন। শুধু আন্দোলন ও নির্বাচন নয়, ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে ‘সুশাসন’ নিশ্চিত করার রূপরেখা প্রণয়নেও তারা সচেষ্ট। বাম ধারার রাজনৈতিক দলগুলো একত্র না হলেও এই উদ্যোগের বাইরে জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য আন্দোলন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।

এসব রাজনৈতিক দল ও আন্দোলনের বাইরে একটি বৃহৎ শক্তি বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের নেতা চরমোনাই পীর মুফতি রেজাউল করীম। প্রচলিত ধারা থেকে একটু স্বাতন্ত্র্য ও স্বকীয়তা নিয়ে তারা কাজ করছিলেন। গত ৫ অক্টোবর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত বিশাল জনসভায় পীর সাহেব জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে তার সংকল্পের কথা ব্যক্ত করেন। তিনি যেসব দাবি উত্থাপন করেছেন তা পূর্বোক্ত নেতাদের দাবির অনুরূপ। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে ১. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়া, ২. নতুন নির্বাচন কমশিন গঠন, ৩. নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান, ৪. নির্বাচনে সেনা মোতায়েন ও তাদের বিচারিক ক্ষমতা প্রদান। পীর সাহেব দুর্নীতি, দুঃশাসন, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত রাষ্ট্র গঠনের অঙ্গীকার করেছেন। তিনি আরো বলেন, জনগণ গত ১০ বছরে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেনি। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন কেউ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে না। মানুষ তামাশা ও প্রহসনের নির্বাচন মেনে নেবে না। এসব দাবির মধ্য দিয়ে পীর সাহেব জনগণের মনের কথাটি বলেছেন। তার উত্থাপিত দাবিগুলো অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও শক্তি উচ্চারণ করেছে। তার এ বক্তব্যের মাধ্যমে চলমান আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশিত হলো। উল্লেখ্য, চরমোনাই পীর সাহেবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন একটি দৃঢ়, আদর্শবাদী ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। সাম্প্রতিক উপনির্বাচন এবং স্থানীয় নির্বাচনে দলটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।

১৯৭০ সালে গণতন্ত্রের দাবিকে অস্বীকার করার কারণে একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অর্জিত হয়েছে। গণতন্ত্র বাংলাদেশর মানুষের মজ্জাগত। যেভাবে গত ১০ বছরে গণতন্ত্র বিপর্যস্ত হয়েছে তা যেকোনো নাগরিককে বিচলিত না করে পারে না। মানুষ শুধু খাওয়ার জন্য বাঁচে না। বাঁচার জন্য চাই তার স্বাধীনতা, চাই গণতন্ত্র। সর্বস্তরের রাজনৈতিক নেতৃত্ব গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে আন্দোলন শুরু করেছে, প্রতিটি দায়িত্বশীল নাগরিকের উচিত সে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা। তাহলেই নির্বাচন হবে সুষ্ঠু। মুক্তি পাবে গণতন্ত্র। আমরা ফিরে পাবো নাগরিক স্বাধীনতা।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement