২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাজনীতির গ্যাসট্রিক এবং খোস-পাঁচড়া

রাজনীতির গ্যাসট্রিক এবং খোস-পাঁচড়া - ছবি : সংগৃহীত

কোনো রোগ বালাইয়েরই বাবা-মা নেই। নেই কোনো দয়ামায়া কিংবা সুশীল-কুশীলের জাতপাতের বাছ-বাছাই। রোগবালাই যেভাবে নারী-পুরুষ, ধনী-গরিব, ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় ইত্যাদি ভেদাভেদ করে না, তেমনি ওগুলো মানবদেহের মতোই পশুদেহ, বৃক্ষলতা, কীট-পতঙ্গ এবং জলজপ্রাণীর দেহে বাসা বাঁধে অবাধে এবং নির্বিচারে। মাঝে মধ্যে রোগগুলো আকাশ-বাতাস, পানি ও মাটিতে বংশবিস্তার শুরু করে। কখনোবা এরা মানুষের মন-মস্তিষ্কের চিন্তা-চেতনা এবং কর্মকে পর্যন্ত পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে ফেলে। কোনো প্রাণীর দেহ কিংবা প্রকৃতিতে রোগ-বালাইয়ের উপদ্রব হলে প্রাকৃতিক চিকিৎসা থেকে শুরু করে হোমিওপ্যাথি, অ্যালোপ্যাথি, কবিরাজি, ঝাড়ফুঁক, তাবিজ-কবজ, জাদু-টোনা-বান ইত্যাদির মাধ্যমে নিরাময় লাভের বহু পদ্ধতি অনাদিকাল থেকে চলে আসছে। রোগের প্রতিক্রিয়া মারাত্মক হলে অনেক সময় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অঙ্গহানি করে হলেও রোগাক্রান্তকে সারিয়ে তোলা সম্ভব হয়। অন্য দিকে, রোগবালাই যদি প্রকৃতি ও পরিবেশের মাটি- পানি-বায়ুকে কলুষিত করে তাহলেও সমস্যা নেই। কারণ আমাদের আধুনিক বিজ্ঞান ওসবের প্রতিষেধক আবিষ্কার করে ফেলেছে। কিন্তু রোগাক্রান্ত রাজনীতির নিরাময়ের কোনো ওষুধ-পত্র কিংবা অস্ত্রোপচার আজ অবধি বিজ্ঞান আবিষ্কার করতে পারেনি।

দেশ-বিদেশের রাজনীতি বহুকাল থেকেই বহুভাবে রোগাক্রান্ত হয়ে আসছে। রাজনীতির জ্বর, কাশি-হাঁচি, ক্যান্সার, জন্ডিস, ডায়রিয়া, পক্ষাঘাতগ্রস্ততা, গুটিবসন্ত, জলবসন্ত ইত্যাদি শব্দমালা প্রায়ই বক্তৃতা মঞ্চের পরিধি অতিক্রম করে সমাজের অন্যান্য অংশে মহামারীরূপে ছড়িয়ে পড়ে। রাজনীতির গ্যাসট্রিক এবং খোস-পাঁচড়া উল্লিখিত রোগবালাইয়ের মতো আলোচিত না হলেও এগুলোর প্রতিক্রিয়া অন্য যেকোনো রোগের চেয়ে আমাদের সমাজকে বেশিমাত্রায় ভোগায়। গ্যাসট্রিক এবং খোস-পাঁচড়া আক্রান্ত রাজনীতি কিভাবে বিপদ-বিপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার আগে রোগ দু’টি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা যাক।

আমরা এ কথা সবাই জানি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, দূষিত পানি ব্যবহার এবং ময়লাযুক্ত কাপড়-চোপড় পরিধানের পাশাপাশি পচা ও বাসি খাবার থেকে সাধারণত খোস-পাঁচড়া সৃষ্টি হয়। কিছু খোস-পাঁচড়া পুঁজ ও রক্ত-ফোঁড়ার আকৃতি দিয়ে মানব শরীরকে মারাত্মক যন্ত্রণায় ফেলে দেয়। অন্যগুলো কেবল চুলকানির মাধ্যমে মানুষের স্বাভাবিক জীবন বিপর্যস্ত করে ফেলে। মানুষের পরিচ্ছন্নতার জ্ঞানের অভাব, অথবা জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও ময়লা-আবর্জনা ও কুৎসিত বস্তু ভোগের অভ্যাস তাদের খোস-পাঁচড়ায় আক্রান্ত করে ফেলে। এ ছাড়া অসাবধানতাবশত অথবা এড়ানো সম্ভব নয় এমন পরিস্থিতির কারণেও মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে থাকে। রোগীর সংস্পর্শ, তার পরিধেয় ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র এবং বাতাস-পানি ও মাটির মাধ্যমেও খোস-পাঁচড়া সংক্রামিত হয়। এই রোগ ব্যক্তিকে সবসময় উত্তেজিত ও অস্থির অবস্থায় রাখে। তার মেজাজ-মর্জি বিগড়ে দেয়। তার রুচি, চিন্তা-চেতনা, কর্মোদ্দীপনা ইত্যাদি সব কিছুকে রোগাক্রান্ত করে তোলে। সে যেরূপ নিজে অশান্তি ও অসুস্থতার মধ্যে দিন কাটায় তদ্রূপ তার আশপাশের লোকজন, সমাজ-সংসার ও পরিবেশ প্রতিবেশকে খোস-পাঁচড়ায় আক্রান্ত করে ছাড়ে।

খোস-পাঁচড়ার প্রসঙ্গ ছেড়ে এবার গ্যাসট্রিক নিয়ে কিছু বলা যাক। রোগটি সাধারণত কয়েকটি বিশেষ কারণে হয়ে থাকে। প্রথমত, যাদের জিহ্বা, মুখগহ্বর, পাকস্থলী ও রেচনতন্ত্রের মধ্যে কোনো সমন্বয় থাকে না তারাই বেশি বেশি গ্যাসট্রিকে আক্রান্ত হয়। মানুষ যখন সব খাদ্যদ্রব্য বিশেষ করে যা হজম করা যায় না কিংবা হজম করতে খুব কষ্ট হয় সেগুলো নির্বিচারে গিলতে থাকে, তখন গ্যাসট্রিক তার জন্য অপরিহার্য্য হয়ে পড়ে। অন্য দিকে, ছোট মুখে বড় খাবার ঢোকানোর জন্য যারা অজগরের মতো হা করে মুখ ভর্তি করে এবং কোনো রকম চর্বণ বা প্রক্রিয়াজাত না করেই গিলে ফেলে তারাও এই রোগে আক্রান্ত হয়। অনেকে আবার পাকস্থলীর ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি পরিমাণ খাবার খায় এবং হজম ও বর্জনের কথা চিন্তা না করে পুরো পরিপাকতন্ত্রকে বিপদের মধ্যে ফেলে দেয়। গ্যাসট্রিকের কারণে মানুষের পেটের মধ্যে জ্বালাপোড়া শুরু হয় এবং বিকট দুর্গন্ধযুক্ত গ্যাস সৃষ্টি হয়। গ্যাসট্রিক আক্রান্ত রোগীর বিষাক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত গ্যাস তার নাক, মুখ, লোমকুপ এবং পায়ুপথে প্রবল বেগে বের হয়ে এসে আশপাশের পরিবেশকে কলুষিত করে। এই গ্যাস রোগীকে ঠিকমতো ঘুমাতে দেয় না। এমনকি সে ঠিকমতো জেগেও থাকতে পারে না। পেট ও বুকের জ্বালাপোড়া অনেক সময় সংক্রমিত হতে হতে গলা পর্যন্ত উঠে যায়। মানুষের পেটের মধ্যে যেসব প্রাকৃতিক প্রাণী যথা কৃমি নীরবে প্রাকৃতিক রসায়ন ঘটানোর জন্য পয়দা হয় তারাও গ্যাসট্রিকের যন্ত্রণায় অনেক সময় রোগীর মাথার মধ্যে ঢুকে যায় অথবা গলা বেয়ে উপরে উঠে মুখের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর আলো বাতাসে এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।

মানুষের অবিবেচনা ও লোভ-লালসা যখন তার জিহবা, চোখ ও নাকে ভর করে হাত ও মুখকে বিভিন্ন খাদ্যের ওপর জোর জবরদস্তি ও জুলুম-অত্যাচারে প্রলুব্ধ করে তখনই গ্যাসট্রিকের উপদ্রব শুরু হয়ে যায়। খাদ্য নিয়ে মানুষের অনিয়ম ও অতিভোজনের পাশাপাশি অনাহার ও অর্ধাহারের কারণেও গ্যাসট্রিক হতে পারে। তবে অনাহার ও অর্ধাহার সৃষ্ট গ্যাসট্রিক পরিবেশ-প্রতিবেশ নষ্ট করে না- এমনকি পেটের মধ্যকার প্রাণীকুলেরও বিনাশ সাধন করে না। এটা গ্যাস উৎপন্ন না করে রোগীর পেটের মধ্যে আলসার জাতীয় এক ধরনের ঘা সৃষ্টি করে, যা রোগীকে প্রবলভাবে যন্ত্রণাকাতর করে তোলে। উল্লিখিত কারণ ছাড়াও মানুষ গ্যাসট্রিক আক্রান্ত হয় শরীর-মন-পরিবেশ ও খাদ্যের পরস্পরবিরোধী রসায়নের কারণে। পচা, নষ্ট, দূষিত খাবার যেমন পেটে গ্যাস সৃষ্টি করে তেমনি অনেক খাবার রয়েছে, যা কোনো ব্যক্তিবিশেষের শরীর ও মন ঠিকমতো গ্রহণ করতে পারে না। ফলে ওই সব খাবারের কারণেও মানুষ বিপদে পড়ে।

গ্যাসট্রিকের রোগীর নানা উপসর্গ রয়েছে। বদ মেজাজ, অলসতা এবং অকারণ নড়াচড়া তাদের সাধারণ লক্ষণ। যেকোনো শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে অশান্ত করতে এবং পাকপবিত্র স্থানকে অপবিত্র করে তুলতে এ ধরনের রোগীদের সাথে অন্য কারো তুলনা করা চলে না। তাদের মাথার চুল উঠে যায়, ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায় এবং মুখ ও দাঁতের নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। তাদের ঘামসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক বর্জ্য যেমন প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়ায় তেমনি তাদের মুখের লালা, থুথু এবং নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসও দুর্গন্ধ ও রোগজীবাণু ছড়িয়ে পরিবেশকে নষ্ট করে ফেলে। তাদের চলাফেরা, কথাবার্তা ও আচরণে প্রায়ই ছন্দপতন ঘটে। নিয়ম ভঙ্গ করা, অধৈর্য হয়ে পড়া এবং অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করার ব্যর্থ চেষ্টা করে তারা তাদের রোগের প্রকোপকে আরো বাড়িয়ে তুলতে থাকেন। তারা খুব বেশি মাত্রায় রোগাক্রান্ত হলে অনেক সময় আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। তাদের মন ও শরীরের ওপরও অনেক সময় নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব বজায় রাখতে পারেন না। ফলে ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও তারা দুর্গন্ধের কারিগররূপে প্রকৃতি ও পরিবেশকে নষ্ট করতে থাকেন এবং একসময় এসব করে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হওয়ার পরিবর্তে কৌতুক অনুভব করেন। তারা ধীরে ধীরে লজ্জা ও সঙ্কোচ হারিয়ে ফেলেন এবং লোক সমাগমে প্রকাশ্যে এবং হাসিমুখে গ্যাসট্রিকের বাদ্য বাজাতে আরম্ভ করেন।

প্রাণীদেহের খোস-পাঁচড়া এবং গ্যাসট্রিক যখন রাজনীতিকে সংক্রমিত করে, তখন সারা দেশে অস্থিরতা এবং দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। যেসব কারণে প্রাণীদেহে ওসব রোগ-বালাই বাসা বাঁধে ঠিক একই কারণে রাজনীতির ময়দানও রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। রাজনীতিতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব হলে তা যেমন মহামারী আকারে বাড়তে থাকে তেমনি বড় কোনো বিপ্লব, গণ-অভ্যুত্থান বা অন্য কোনো উপায়ে রোগাক্রান্ত রাজনীতিবীদেরা নির্মূল না হলে দেশ-জাতির পরিত্রাণ লাভ হয় না। রাজনীতিতে এই রোগের প্রাদুর্ভাবে অন্তর্নিহিত কারণ এবং রোগের প্রভাবে কী কী অনাসৃষ্টি হয়ে থাকে তার বাস্তব নমুনার বহু সংখ্যক উদাহরণ পৃথিবীব্যাপী রয়েছে। যেদিন থেকে রাজনীতি শুরু হয়েছে সেদিন থেকেই অন্যান্য রোগের মতো গ্যাস্ট্রিক ও খোস-পাঁচড়ার আক্রমণে দেশ-জাতি, স্থান-কাল-পাত্র এবং মহাকালের ইতিহাস বারবার কলঙ্কিত হয়েছে। প্রায় প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক বিবর্তন, ভৌগোলিক পরিবর্তন এবং সময় ও সুযোগের যাঁতাকলে পড়ে রোগাক্রান্ত রাজনীতিবিদেরা নির্মূল হয়েছেন।

রাজনীতির শীর্ষ নেতা যখন অন্ধকারে থাকতে পছন্দ করেন, তখন তাকে কেন্দ্র করে বহু রাজনৈতিক আগাছা-পরগাছা এবং বিষবৃক্ষের জন্ম হয়ে যায়। অসচ্ছতা, জবাবদিহিহীনতা, অশিক্ষা-কুশিক্ষা, অসুস্থ চিন্তা ইত্যাদির কারণে কোনো রাজনৈতিক নেতা যখন তার কর্মপরিকল্পনা নিয়ে প্রকাশ্যে আসতে ভয় পান, তখন অন্ধকার জগৎ এবং অপরিচ্ছন্ন পথই তার সাফল্যের পাথেয় হয়ে ওঠে। ফলে যেসব কারণে মানবদেহে খোস-পাঁচড়া হয় ঠিক একই কারণে ওই নেতার চিন্তা-চেতনা, অনুভব, বিশ্বাস ও ভালোবাসায় খোস-পাঁচড়ার রক্ত, পুঁজ, ব্যথা-বেদনা ও চুলকানির প্রাদুভাব লক্ষ করা যায়। মানুষের শরীরের রোগের তুলনায় তার মস্তিষ্ক অর্থাৎ চিন্তার রোগ বহুগুণ অধিক ভয়াবহ। আবার মস্তিষ্কের রোগের চেয়েও মনের রোগ বেশি ভয়ঙ্কর। কোনো সাধারণ মানুষের মন ও মস্তিষ্ক যদি রোগাক্রান্ত হয় তবে সবার আগে রোগী নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হন এবং পর্যায়ক্রমে পরিবার-পরিজন ও নিকটজনকে দুর্ভোগ-দুর্দশায় ফেলেন। কিন্তু রাজনৈতিক নেতার চিন্তা এবং মনোভাব যদি রোগাক্রান্ত হয়, তবে তিনি তার সেই রোগ দিয়ে। তার দলের বেশির ভাগ নেতাকর্মী ও সমর্থককে আক্রান্ত করে ফেলেন। নেতাটি যদি রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন থাকেনও তাহলে জমিনে রীতিমতো কিয়ামতের আলামত শুরু হয়ে যায়।

খোস-পাঁচড়ার রাজনীতিতে অর্থনীতি, সমাজ ও রাষ্ট্র অস্থির হয়ে পড়ে। রাষ্ট্রের আবশ্যকীয় উপাদানগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক, বিশ্বাস-ভালোবাসার বন্ধনের মধ্যে চুলকানির প্রাদুর্ভাব হয়। পরে ক্রমাগত চুলকানির ফলে রাষ্ট্রের মৌল ভিত্তিগুলোর মধ্যে বড় বড় বিষফোঁড়া সৃষ্টি হয়। ব্যথা-বেদনা, টাটানি ও পুঁজ রক্তের দুর্গন্ধে রাষ্ট্রশক্তি ও জনগণ পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে পড়ে। নেতার পক্ষাঘাতগ্রস্ত মন-মানসিকতার কারণে রাজনীতির ময়দানের সহমর্মিতা, সমঝোতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সৌজন্যে পচন ধরে। রোগাক্রান্ত নেতা খোস-পাঁচড়ার রোগীর মতো দিনে-রাতে নির্বিচারে আপন-পর, প্রতিপক্ষ, শত্রু-মিত্র প্রমুখ সবাইকে তার ধারালো ও ময়লাযুক্ত নখ দিয়ে সমানতালে আঁচড়াতে থাকেন। ফলে তার অধীনস্থ সুস্থ লোকেরাও একসময় তারই মতো খাউজানির রোগীতে পরিণত হয়ে জ্যামিতিক হারে নিজেদের বংশবদ বাড়াতে থাকেন ত্রিমাত্রিক উপায়ে অর্থাৎ প্রজনের মাধ্যমে, যান্ত্রিক উপায়ে এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে।

আলোচনার এই পর্যায়ে আমরা রাজনীতির গ্যাসট্রিক নিয়ে আলোকপাতের চেষ্টা করব। সাধারণত বোকাসোকা প্রকৃতির বেহিসেবী লোক যখন রাজনীতির শীর্ষপর্যায়ে আসীন থাকেন, তবে গ্যাসট্রিকের রাজনীতি শুরু হয়ে যায়। নেতা যখন অধিকতর ক্ষমতাশালী হওয়ার বাসনায় আক্রান্ত হন তখন কিছু সুবিধাবাদী, চাটুকার, ধান্ধাবাজ এবং শয়তানি বুদ্ধির বাটপারেরা তাকে ঘিরে ফেলার সুযোগ লাভ করেন। তাদের অতিরিক্ত তোষণের কারণে নেতা অনাহূত তিরস্কার করে পৈশাচিক পুলক পেতে আরম্ভ করেন। চাটুকারদের তৈলমর্দনে নেতার শরীর-মন-মস্তিষ্ক দুর্গন্ধময় বিষাক্ত গ্যাসে ফুলে ফেঁপে ওঠে। বেলুনের মধ্যে গ্যাস ভরা হলে সেটি যেমন ওজন হারিয়ে আকাশে উড়তে চায় তেমনি গ্যাসট্রিকের রাজনীতির খলনায়কও ওজন হারিয়ে ফেলেন। তিনি নিজের মূল্য বোধ-বুদ্ধি ও ক্ষমতা সম্পর্কে যেমন ধারণা করতে পারেন না তদ্রূপ তার প্রতিপক্ষ এবং জনগণকে মূল্যায়ন করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন।

মোটা মাথার গ্যাসট্রিকের রাজনীতির খলনায়কের সবচেয়ে বড় বিপদ হলো তার পাশে থাকা ধুরন্ধর প্রকৃতির চরিত্রহীন বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক, আমলা-কামলা ও সাংবাদিক- এসব লোক কবিতার ছন্দে নেতার দুর্বল হাতকে পারমাণবিক বোমার মতো শক্তিশালী ও বিধ্বংসী বলে প্রচার করতে থাকেন। তারা নেতার পেটকে মহাসাগরের মতো বিশাল এবং হা করার ক্ষমতাকে আসমানের উচ্চতায় পৌঁছে দেন। নেতার খাদ্যগ্রহণের ক্ষমতা ও হজম করার ক্ষমতাতে বহুমাত্রিক স্নেহজাতীয় পদার্থ অর্থাৎ ঘি, মাখন, তেল ইত্যাদি মাখিয়ে এত বিশাল ও ব্যাপক বলে প্রচার করেন যে, নেতা বুঝতেই পারেন না তার নিজের মুখ-পেট ও পায়ুপথের ব্যাস ও পরিধি কতটুকু! ফলে তিনি অবাধে এবং নির্বিচারে সব কিছু উদরস্থ করতে গিয়ে পাকস্থলী ও রেচনতন্ত্রের সর্বনাশ ঘটিয়ে বিষাক্ত গ্যাস উৎপন্ন করতে আরম্ভ করেন। ফলে তিনি রোগাক্রান্ত হয়ে নিজের সুখ-শান্তি বিনষ্ট করেন এবং পর্যায়ক্রমে নিজের অসুখ দ্বারা অন্য সবাইকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে অসুস্থ ও অপবিত্র করার যুদ্ধে নেমে পড়েন।

রাজনীতির গ্যাসট্রিক সাধারণ গ্যাসট্রিকের মতো অহরহ ও সাধারণ কোনো রোগবালাই নয়। এ ধরনের রোগীরা কালেভদ্রে রাজনীতির শীর্ষ নেতৃত্বে পৌঁছাতে পারেন। অন্য দিকে, তারা রাষ্ট্রক্ষমতার মালিক বনে যান কোনো ব্যতিক্রমী ঘটনা অথবা প্রকৃতির অদ্ভুত আচরণের কারণে। রাজনীতির এই রোগ এবং এ ধরনের রোগীর কারণে যে জটিল জৈবরসায়ন সৃষ্টি হয় তার বিষক্রিয়া একটি জাতিকে বহুকাল পর্যন্ত ভোগাতে থাকে। সাধারণ গ্যাসট্রিক ছোঁয়াচে নয় কিন্তু রাজনীতির গ্যাসট্রিক রীতিমতো মহামারী প্রকৃতির ছোঁয়াচে। এই রোগ রাজনীতির মধ্যে ঢুকে গেলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রজনন সক্ষম হয়ে পড়ে এবং পথে প্রান্তরে-মাঠে-ঘাটে, শহরে-বন্দরে নতুন নতুন গ্যাসস্ট্রিক পুত্র বা গ্যাসট্রিক কন্যাদেরকে উৎপাদন করতে থাকে। ফলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে রাজনীতির গ্যাসট্রিকের বিষাক্ত গ্যাসের ধোঁয়া, আগুন-উত্তাপ, দুর্গন্ধ এবং শব্দ পুরো দেশ-কাল ও জনপদকে আচ্ছন্ন করে ফেলে।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য


আরো সংবাদ



premium cement
জামায়াতের ৫ নেতাকর্মীকে পুলিশে সোপর্দ যুবলীগ কর্মীদের, নিন্দা গোলাম পরওয়ারের চায়ের সাথে চেতনানাশক খাইয়ে স্বর্ণালঙ্কার চুরি ঈশ্বরগঞ্জে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ব্যারিস্টার ফারজানাকে সংবর্ধনা যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে‘ভিত্তিহীন' তথ্য ব্যবহারের অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের মোদির মুসলিমবিরোধী মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় সংখ্যালঘু নেতাকে বহিষ্কার ফ্লোরিডায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের নতুন কনসাল জেনারেল সেহেলী সাবরীন চান্দিনায় পানিতে ডুবে একই পরিবারের দুই শিশু মৃত্যু কেএনএফ সম্পৃক্ততা : গ্রেফতার ছাত্রলীগ নেতা সম্পর্কে যা জানা গেছে দেশে টিআইএনধারীর সংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ শ্রমজীবি মানুষের মাঝে ক্যাপ, পানি ও স্যালাইন বিতরণ করেছে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর পশ্চিম নোয়াখালীতে হিট স্ট্রোকে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

সকল