১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নারীর সামগ্রিক অবস্থার উন্নয়নে কিছু পদক্ষেপ

নারীর সামগ্রিক অবস্থার উন্নয়নে কিছু পদক্ষেপ - ছবি : নয়া দিগন্ত

বেশ কিছু সিনিয়র নারী শিক্ষাবিদের সাথে আমার আলোচনা হয়েছে- যাদের সবাই বিভিন্ন বিষয়ে পিএইচডি করেছেন এবং তাদের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বাকিরা সহযোগী অধ্যাপক। তারা আমাকে জানালেন, নারীদের সার্বিক অবস্থা সন্তোষজনক নয়। বিশেষ করে মুসলিম নারীদের অবস্থা। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের শিক্ষায় গুরুত্ব কম দেয়া হয়। ছেলেরা শিক্ষা কমবেশি পায়, উচ্চ শিক্ষা নিতে পারে; কিন্তু মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয় এবং বিয়ে দেয়ার পর তারা আর পড়তে পারে না। ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ মেয়ের ক্ষেত্রে বিয়ের পরে তাদের আর পড়ার সুযোগ থাকে না। ফলে বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, মুসলিম নারী সমাজে তার যে দায়িত্ব পালন করার কথা, সেটা তারা করতে পারছেন না। মানুষ যে আল্লাহর খলিফা, মুসলিম নারীও যে আল্লাহর খলিফা ও একই রকম খলিফা এবং পুরুষের মতোই খলিফা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গেলে যা লাগে সেটা হচ্ছে তার শিক্ষা। খলিফার দায়িত্ব কখনোই পালন করা যাবে না, যদি তিনি পর্যাপ্ত শিক্ষা না পান।
আমাদের সমাজে, মুসলিম সমাজে, এমনকি সারা দুনিয়ার বেশির ভাগ জায়গায় বিশেষ করে আফ্রিকার দেশগুলোতে (কোথাও বেশি, কোথাও কম) নারীরা শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন না। অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে উচ্চ শিক্ষা নিতে পারছেন না। এ প্রসঙ্গে তারা আমার বক্তব্য জানতে চেয়েছেন। সেখানে আমি যা বলেছিলাম-

গত পঞ্চাশ বছরে যে উন্নতি হয়েছে, সেটা আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। সেই উন্নতি হলোÑ এখন তাত্ত্বিকভাবে এটা মেনে নেয়া হয়েছে যে, নারীর অধিকার আর পুরুষের অধিকার প্রায় এক। ‘প্রায় এক’ বললাম এ কারণে যে, তারা যেকোনো চাকরিতে যেতে পারেন। এখন খুব বড় আলেমও বলবেন না যে, মেয়েরা চাকরিতে যেতে পারে না এবং তারা এ কথাও বলবেন না যে, তারা কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিতে পারে না।
আজকে এটা স্বীকৃত হয়ে গেছে যে, নারীরা রাজনৈতিক নেতৃত্বে যেতে পারেন, তারা সংসদ সদস্য হতে পারেন, এমনকি প্রধানমন্ত্রীও হতে পারেন, তারা দলের নেত্রী হতে পারেন; যেমন- মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি নবাগত আজিজাহ হচ্ছেন দলের নেত্রী এবং একই সাথে উপ-প্রধানমন্ত্রী।

শিক্ষার অধিকারের ব্যাপারেও নীতিগতভাবে তারা একমত, বিশেষ করে যারা ইসলামকে প্রতিনিধিত্ব করেন, ইসলামি নেতৃত্বের যে অংশ গুরুত্ব বহন করে, তারা নারী শিক্ষার বিরোধী নন। এ ব্যাপারে ইসলামি চিন্তাবিদদের কেউই বলেননি যে, নারী শিক্ষার দরকার নেই।

নারী নেত্রীদের বললাম, বাস্তবতা যদি এটা হয়েও থাকে যে, নারীর সামাজিক ভূমিকা সে পর্যায়ে পৌঁছেনি, যে পর্যায়ে পৌঁছা যেত এবং এই সমস্যাগুলো আছে যে, নারীরা শিক্ষা পাচ্ছে না বা বিয়ে হওয়ার কারণে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে; তারপরেও নীতিগতভাবে নারীদের যে আইনি অবস্থান এবং শরিয়তের দৃষ্টিতে তাদের যে আইনগত মর্যাদা ও অধিকার- সার্বজনীনভাবে তার একটি স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সুতরাং আমি অনুরোধ করি, এখন শুধু জেন্ডার ইস্যুর ওপর কাজ করার দরকার নেই। আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আপনারা নারী, আপনারা পুরুষও হতে পারতেন। নারী হিসেবে এখন শুধু জেন্ডার ইস্যুর ওপর আপনাদের কাজ করা ঠিক মনে করি না। আপনাদের সব ইস্যুতে কাজ করতে হবে। জেন্ডার ইস্যু, একটি ইস্যুমাত্র। আপনাদের কাজ করতে হবে শ্রমিকের অধিকার নিয়ে, আপনাদের কাজ করতে হবে গণতন্ত্রকে সংহত করার জন্য। যেসব দেশে গণতন্ত্র নেই, সেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্র সংহত করার জন্য কাজ করতে হবে। এ ছাড়া, যত সামাজিক সমস্যা আছে, যেমন রাস্তাঘাটে লোকেরা পড়ে আছে- এসব ইস্যুসহ আপনাদের সব ইস্যুতে নজর দিতে হবে, শুধু জেন্ডার ইস্যুতে নয়।

বিশেষ করে, যে দুটি ইস্যু তারা তুলেছিলেন সে আলোকে আমি তাদের বলেছি, এটা ঠিক যে, শিক্ষা বেশির ভাগ এলাকায় মুসলিম মেয়েরা পাচ্ছেন না বা কম পাচ্ছেন, মধ্যবিত্তরা হয়তোবা পাচ্ছেন; কিন্তু নি¤œ মধ্যবিত্তরা হয়তোবা পাচ্ছেন না। আবার অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে মধ্যবিত্ত পরিবারের নারীরা শিক্ষার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারছেন না। সাধারণভাবে যদি হতো যে, বিয়ের পরেও শিক্ষা অব্যাহত থাকবে, তাহলে আর এ সমস্যা সৃষ্টি হতো না। ফলে আমি তাদের সাথে একমত হয়েছি এবং তারাও আমার সাথে একমত যে, এ দু’টি কাজ করতেই হবে:

প্রথমত, ১৮ বা ১৬ বছর বয়সের আগে বিয়ে বন্ধ করার চেষ্টা করতে হবে। শরিয়ত এটা ফরজ করে দেয়নি, তবে শরিয়তে অনুমতি আছে। শরিয়তের দৃষ্টিতে অল্প বয়সে বিয়ে করা কোনো ওয়াজিব নয়। যদি কোনো ক্ষেত্রে অল্প বয়সে বিয়ে হয়ও, তাহলে তার লেখাপড়ার অধিকার (যদি আর্থিক অবস্থা ভালো থাকে), তার অভিভাবকদের সেটা তার ছেলের মতোই অব্যাহত থাকতে দিতে হবে। অর্থাৎ বিয়ে হলেও যাতে মেয়েদের একটা বড় অংশ উচ্চ শিক্ষা পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। এটা একটি কঠিন বিষয় এবং এর ফর্মুলা বের করা হতে পারে কঠিন; কিন্তু হতে পারে তা সময়ের ব্যাপার।

দ্বিতীয়ত, শিক্ষা পুরোপুরি সবার। এ ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল সা: বলেন, তালাবুল ইলমে ফারিদাতুন আলা কুল্লি মুসলিমিন। এ ছাড়া, আল্লাহ যখন বললেন ‘ইকরা’-(ৎবধফ), তখন তিনি বললেন না, মুসলিম বা পুরুষের জন্য শিক্ষা। সুতরাং শিক্ষাকে আল্লাহ তায়ালা ও আল্লাহর রাসূল সা: সবার জন্য সমানভাবেই গুরুত্ব দিয়েছেন এ জন্য যে, শিক্ষা ছাড়া কেউ কোনোভাবেই আল্লাহর খলিফা হতে পারবেন না এবং দুনিয়াতে খেলাফত কায়েম করতে পারবেন না। খেলাফত মানে- আল্লাহ যা চান তা প্রতিষ্ঠা করা, আল্লাহ যে রকম মানুষ চান, সে রকম মানুষ হিসেবে নিজেকে তৈরি করা, আল্লাহ যে রকম সমাজ চান তেমন সমাজ তৈরি করা, আল্লাহ যে রকম অর্থনীতি চান সে ধরনের অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করা, আল্লাহ যে রকম রাজনৈতিক ব্যবস্থা চান (যেখানে মানুষের অধিকার থাকবে) তা প্রতিষ্ঠা করা। শিক্ষা ছাড়া তো এগুলো সম্ভব নয়।

সার্বিকভাবে আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে গোটা মুসলিম জাতির দায়িত্ব আছে, আলেম সমাজের দায়িত্ব আছে, সরকারের দায়িত্ব আছে, ইসলামি চিন্তাবিদদের দায়িত্ব আরো বেশি এবং পুরুষদেরও আরো বেশি দায়িত্ব। নারীরা কমবেশি বঞ্চিত, এটা মেনেই আমাদের এগোতে হবে।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার


আরো সংবাদ



premium cement
মুন্সীগঞ্জে ২ পক্ষের হামলা পাল্টাহামলায় আহত ৭ শুকিয়ে খাঁ খাঁ করছে বড়াল বন্ধ সেচ কার্যক্রম ও নৌপথে ব্যবসা সাম্প্রদায়িকতার মাধ্যমে আমাদের ঐতিহ্যকে নষ্ট করতে দেবো না : নাছিম দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জি এম কাদেরের আইআরজিসিকে নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন দেখেন না সাবেক ব্রিটিশ গোয়েন্দা প্রধান বেতাগীতে সরকারি চাল দামি প্যাকেটজাত করে বিক্রি কোপেনহেগেনের ঐতিহাসিক স্টক এক্সচেঞ্জ ভবনে আগুন ওমরাহ ভিসার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের হুঁশিয়ারি বিভিন্ন স্থানে বাংলা বর্ষবরণ কাশ্মিরে নৌকাডুবিতে ৪ জনের মৃত্যু উজিরপুরে মাদক মামলায় জামিনে এসে সাংবাদিকের ওপর হামলা

সকল