২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মিডিয়ার রাঙানো চশমায় কতটা লাভ হলো

মিডিয়ার রাঙানো চশমায় কতটা লাভ হলো - ছবি : সংগৃহীত

সাংবাদিকদের ওপর হামলার জন্য সম্পাদক পরিষদ একটি বিবৃতি দিয়ে গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে। একই ঘটনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নও উদ্বেগ জানিয়েছে। তার আগে আন্দোলনকারী শিশুদের ওপর নির্বিচারে হামলার জন্য জাতিসঙ্ঘ ও যুক্তরাষ্ট্র বিবৃতি দিয়েছে। তথ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে জাতিসঙ্ঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া বিবৃতি প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত বক্তব্য রেখেছেন। উভয় মন্ত্রী সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। সাংবাদিক ও ছাত্রদের ওপর হামলাকারী অনেকে চিহ্নিত হলেও তাদের একজনকেও এখনো ধরা হয়নি। ভিডিও ফুটেজে তাদের দেখা গেছে। উল্টো ছাত্র-আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে ৩৯টি মামলা হয়েছে। তাদের ২২ জনকে ধরে রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। তার আগে আন্দোলন প্রসঙ্গে বিদেশী সংবাদমাধ্যমকে বলতে গিয়ে রোষের শিকার হয়েছেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম।

প্রথম আলো ৬ আগস্ট লিখেছে, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে রক্তাক্ত হয়েছেন সাংবাদিকেরা। লাঠি, রড ও রামদা দিয়ে তাদের বেধড়ক আঘাত করা হয়। ভাঙচুর করা হয়েছে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের গাড়ি। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের সাংবাদিকদের খোঁজা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গতকাল রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও এর আশপাশের এলাকায় পৃথকভাবে এই হামলার শিকার হন সাংবাদিকেরা। আহতদের মধ্যে আটজন ফটোসাংবাদিক। তিনজন রিপোর্টার ও একজন গাড়িচালকের পরিচয় পাওয়া গেছে। এর আগে গত শনিবারও এমন হামলার শিকার হয়েছেন সাংবাদিকেরা। ওইদিন ডেইলি স্টারের পাঁচজনসহ অন্তত ১০ জন মারধরের শিকার হন। ধানমন্ডির ঝিগাতলায় এসব ঘটনা ঘটে।’

আহত সাংবাদিকেরা জানিয়েছেন, হামলাকারী বেশির ভাগ যুবকের মাথায় হেলমেট ছিল। পুলিশের সাথে চলছিল এ যুবকের দল। হাতে মুঠোফোন বা ক্যামেরা দেখলেই তেড়ে আসছিল তারা। ছবি না তোলার জন্য হুমকি দিচ্ছিল তারা। প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আহমেদ দীপ্ত জানান, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ছিলেন ধানমন্ডি এক নম্বর সড়কে। সেখানে তিনিসহ কয়েকজন সাংবাদিক দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় ঢাকা কলেজ থেকে আসা ছাত্রলীগের একটি মিছিল শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করে। ধাওয়ায় সেখানে কর্মরত সাংবাদিকেরাও দৌড় দেন। হামলাকারীদের একজন তার পায়ে রড দিয়ে আঘাত করলে তিনি পড়ে যান। এরপর ২০-২৫ জন মিলে লাঠি ও রড দিয়ে তাকে মারধর করে।

এখন পুরান ঢাকার সেই গরিব দর্জির কথা মনে পড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। তাকে প্রতিযোগিতা করে কুপিয়েছিল ছাত্রলীগ। এই ছাত্রসংগঠনের সদস্যরা যেন এক বুনো উদ্দামতা নিয়ে ‘খাবারের’ ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এখানে প্রতিযোগিতা চলে আঘাত করার ব্যাপারে। কে সর্বোচ্চ ‘দক্ষতা’ প্রদর্শন করতে পেরেছে। এ ক্ষেত্রে শব্দটি দক্ষতা না হয়ে সম্ভবত নিষ্ঠুরতা-বর্বরতা হতে পারে। যে যত বেশি পৈশাচিকতা দেখাতে পারবে, তার মূল্য তত বেশি। এ অবস্থায় মিডিয়ায় যদি তার ছবিটি কায়দামতো চলে আসে, তাহলে তার দাম নিশ্চিত বেড়ে যাবে। পরবর্তী কমিটিতে তার পদোন্নতি হবে অথবা বিদ্যমান কমিটিতে তার প্রভাব বেড়ে যাবে।

এবারকার ছাত্রলীগের হামলায় সবচেয়ে বেশি মারধরের শিকার হন অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) ফটোসাংবাদিক এ এম আহাদ। তার ওপর মর্মান্তিক হামলার একটি ভিডিও চিত্র ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে। তিনি ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু তার আগে থেকে ছাত্রদের আন্দোলনের খবর নিয়ে এপি ‘সুন্দর’ নিরপেক্ষতা দেখিয়েছে। সংবাদ সংস্থাটি ছাত্রদের আন্দোলন নিয়ে প্রতিবেদনের শিরোনাম করেছে, ‘ছাত্রদের প্রতিবাদের মধ্যে বাংলাদেশের রাজধানীতে সন্ত্রাস অব্যাহত।’ ছাত্রদের স্বতঃস্ফূর্ত রাস্তায় নেমে এসে ট্রাফিক সংস্কারমূলক কাজকে এই প্রতিবেদনে এপি আন্দোলন বলার মতো উদারতা দেখাতে পারেনি। শিরোনামে প্রাধান্য পাওয়া ‘ভায়োলেন্স’ শব্দটির যথার্থতা প্রতিবেদনে যৌক্তিকতা পায়নি। কারা এই সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে, সেটিও স্পষ্ট করা হয়নি। যদিও এপির ফটোসাংবাদিক এ এম আহাদকে কারা নৃশংস কায়দায় পিটিয়েছে, প্রথম আলো স্পষ্ট করে লিখেছে পরে।
এপি নিয়ে আমরা কলামে কথা বলছি, কারণ সংবাদ প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশ প্রতিনিধি ছাত্রদের আন্দোলন নিয়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছেন। ২ আগস্ট তিনি তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘কোমলমতি তো বটেই, তাই বলে আবেগের আতিশয্যে চরম বিশৃঙ্খলা তৈরির স্কুলিং গ্রাউন্ড হয়ে গেল নাকি ঢাকার রাজপথ? শিক্ষার্থীদের মোটামুটি সবাই প্রশ্রয় দিয়ে আসছে তাদের দাবির যৌক্তিকতার কারণে, তবে তার মানে এই নয় যে, যা ইচ্ছা তাই করে অরাজকতা সৃষ্টি করা হবে এবং সেটি সচেতন অভিভাবক বা শিক্ষকেরা উসকানি দিতে থাকবেন। এটি কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।’

এপি প্রতিনিধির ফেসবুকে দেয়া বক্তব্যটি আমরা মিলিয়ে দেখতে পারি। ছোট ছোট শিশু মূলত বড়দের দেখিয়ে দিয়েছে, কতটা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করা যায়। তাদের কর্মকাণ্ডের মধ্যে আক্রমণাত্মক কিছু শেষ পর্যন্ত দেখা যায়নি। অনেক ক্ষেত্রে সাংবাদিক আহাদের মতোই তারাও একই গোষ্ঠীর মারধরের শিকার হয়েছে। ছাত্ররা যেভাবে রাস্তায় আন্দোলন করেছে, এ ধরনের ছাত্র-আন্দোলন বিরল। এত কমবয়সীরা এতটা ধৈর্য-সহিষ্ণুতা দেখিয়েছে, যা এর আগে দেখা যায়নি। রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর কিংবা কারো ওপর আক্রমণ এমনটি তারা করেনি। যদিও কম বয়সের উত্তেজনার বসে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যাওয়া স্বাভাবিক ছিল।

এপির প্রতিনিধি জুলহাস আলম ওই স্ট্যাটাসে আরো লিখেছেন, “যারা দূরে দাঁড়িয়ে বা ভালো মানুষীর ভাব ধরে এই ‘কোমলমতি’দের ওয়াক অভার দিচ্ছেন, তারা ঘরে গিয়ে আগে নিজের ঘরটা পরিষ্কার করেন। প্রজন্মের দাবির প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেই বলছি, সন্তানদের ঘরে ফেরান, স্কুলে ফেরান, নয়তো দেরি হয়ে যেতে পারে।” জুলহাসের মধ্যে একটা আশঙ্কা কাজ করেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। যেমনটি সরকার ও তার সতীর্থদের মধ্যে দেখা গেছে। প্রকৃতপক্ষে, কারা দেশের জন্য ক্ষতিকর, কাদের শিক্ষা দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে, সেটির প্রমাণ পাওয়া গেল এই আন্দোলনের মধ্যে। অন্তত আহাদসহ কয়েক ডজন সাংবাদিকের ওপর চালানো নির্যাতন থেকে সেটা প্রমাণিত।

সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী যে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নয়, তা বাস্তবে দেখা গেল। এপির এ এম আহাদের অপরাধ হচ্ছে, তিনি ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসের ছবি তুলছিলেন। ছাত্রলীগ-যুবলীগের এই সন্ত্রাসীরা জানত না আহাদের সহকর্মী জুলহাস সংস্কারকামী ছাত্রদের এই সামান্য ক’দিন রাস্তায় থাকাকে পছন্দ করছেন না। যেমনÑ সরকার ও তার অঙ্গসংগঠন তাদের নিজেদের জন্য ছাত্রদের রাস্তায় নেমে আসাকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছিলেন। তারা হয়তো এই কমবয়সী স্কুল-কলেজের ছাত্রদের হুমকি মনে করছিলেন। যারা সংস্কারে নেমেছেন, তারা কি সন্ত্রাস তৈরি করছেন? না যারা সংস্কারকামীদের ওপর সন্ত্রাসী কায়দায় আক্রমণ করছেন, তারা সন্ত্রাস তৈরি করছেন? সন্ত্রাসের ছবি সংগ্রহ করতে গিয়ে তাদের হাতে নারকীয় কায়দায় মারধরের শিকার হওয়ার পরও কি এপির কাছে ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়নি?

জুলহাস চমৎকার করে ওই স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আজ যে পরিস্থিতি এমন হয়েছে তা আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতা, অভিভাবক হিসেবে আমাদের, রাজনীতিবিদ হয়ে আমাদের, শিক্ষক হয়ে আমাদের, আমলা হয়ে আমাদের, পুলিশ হয়ে আমাদের, সাংবাদিক হয়ে আমাদের, ব্যবসায়ী হয়ে আমাদের, নাগরিক হয়ে আমাদের, সকলের। সরকারের দায় বেশি, কোনো বিতর্ক নেই তাতে; তবে বুকে হাত দিয়ে বলুন তো আপনি, আমি, আমরা সম্মিলিতভাবে এ সমাজকে এই জায়গায় নিয়ে আসিনি?’ তার এই সুন্দর কথাগুলো গুরুত্ব হারিয়ে ফেলল সরকারের সতীর্থদের ভাষায় কথা বলে আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার কারণে।

ক্ষমতাসীনদের সন্ত্রাসের দায় বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমেরও বহন করতে হবে। বরাবর এ দেশের প্রধান ধারার সংবাদমাধ্যম এই ক্ষমতাসীনদের দায়মুক্তি দিয়ে এসেছে। বর্তমান সরকার দুই মেয়াদে যেভাবে বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষকে দমিয়েছে, কোনোভাবে একটি গণতান্ত্রিক সরকার তা করতে পারে না। মিডিয়ার কিছু কিছু ব্যক্তিত্ব সরকারের এমন দমন-নিপীড়ন নানাভাবে সমর্থন করেছেন। এ দেশের প্রধান ধারার সংবাদমাধ্যম সঠিক সংবাদটি পরিবেশন না করে অনেক সময় সরকারের পক্ষপাতিত্ব করেছে। তাদের অন্যায় কর্মকাণ্ডকে তুলে ধরেনি। অনেক ঘটনা সংবাদমাধ্যমে খবরের মর্যাদাও পায়নি। ফলে সরকার তার অন্যায় কর্মগুলোকে সহজে এগিয়ে নিতে পেরেছে।

জঙ্গি দমনে এ সরকারের সফলতা আছে। কিন্তু জঙ্গিদের দমনের নামে প্রথমে যখন ইসলামি মনোভাবাপন্নদের নির্মূল করা হলো, অনেক মিডিয়া এর সাথে তাল মিলিয়েছে। এ ধরনের নির্মূল অভিযান যখন প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ওপর নেমে এলো, তখন মিডিয়া খুব একটা আগ্রহ দেখাল না। শেষে দেখা গেল বিএনপির মতো একটি বিশাল দল ন্যায্য দাবিতে রাস্তায় নামতে পারল না। এমনকি মানববন্ধনের মতো নিরীহ কর্মসূচিও পুলিশ নির্মমভাবে পিটিয়ে পণ্ড করে দিয়েছে। যেনতেনভাবে ধরে নিয়ে গিয়ে তাদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। পরে বিএনপি ঘরোয়া কর্মসূচি করতে বাধ্য হয়েছে। ফলে সরকারের অন্যায়কে প্রতিহত করতে পারে, এমন কোনো শক্তি রাস্তায় আর অবশিষ্ট রইল না। মূলত মিডিয়ার এক ধরনের সহযোগিতা নিয়ে সরকার এমনটি করতে পেরেছে। মিডিয়াও যে এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আহাদের মতো পেশাদার সাংবাদিকদের মার খাওয়ার মাধ্যমে তা আজ প্রমাণ হচ্ছে।

ছাত্রদের নৈতিক শক্তি যেভাবে গর্জে উঠেছে, সেটি জাতীয় শুদ্ধি অভিযানের সূচনা করতে পারত। আন্দোলনে এর লক্ষণ ফুটে উঠেছিল। এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলন অনেকটাই তাচ্ছিল্যের শিকার হয়েছে। সম্ভবত তার শক্তির বহর দেখে সরকার এমন তাচ্ছিল্য করেছে। কোমলমতি ছাত্রদের আন্দোলনকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যায়নি। ছাত্রদের ছিল আন্দোলনের ব্যাপকতা, উন্নত নৈতিক মনোবল, আত্মবিশ্বাস এবং অপরপক্ষে নিজের অনৈতিক অবস্থান ও বৈধতার অভাব সরকারকে দুর্বল অবস্থানে ফেলে দেয়। তড়িঘড়ি করে এখন ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। আওয়ামী লীগ তার অঙ্গসংগঠন দিয়ে রাস্তায় ছাত্রদের ওপর হামলা করলেও প্রকাশ্যে তাদের শক্তিকে যথেষ্ট সমীহ করেছে। আবার প্রকাশ্যে ছাত্রদের নৈতিক অবস্থানকে সমর্থন করেছে।

সরকারি দল ও এর অঙ্গসংগঠন রাস্তায় যে সন্ত্রাস চালিয়েছে, এবারো তাকে জায়েজ করে নিতে পেরেছে সরকার। প্রথমত, মিডিয়া আন্দোলনটিকে যথার্থ কাভারেজ দেয়নি। এর চেয়ে অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এ দেশের টিভি মিডিয়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইভ কাভারেজ দিয়েছে। অথচ রাস্তায় ছাত্ররা যে ইতিবাচক ধারার সংস্কার কর্ম দেখিয়েছে, সেটি ২৪ ঘণ্টা সরাসরি কাভারেজ দেয়ার মতো ছিল। মিডিয়া শুধু এড়িয়ে যায়নি, তাদের ওপর যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটেছে, সেটিকেও অনেক ক্ষেত্রে গুম করে দিয়েছে। এমনকি সাংবাদিকদের ওপর চালিত সন্ত্রাসকে তারা যেন চোখে দেখতে পায়নি। ফলে ব্যাপক গুজব সৃষ্টি হয়েছে।

এই গুজবের মধ্যে ছিল ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ কার্যালয় নিয়ে এমন সব কথা, যা বিশ্বব্যাপী প্রচার হয়েছে, সেটি লজ্জাজনক। ব্যাপকভাবে প্রচার হয়েছে, সেখানে ছাত্রদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। আরো দুঃখজনক হলো ছাত্রীদের ওপর পৈশাচিক নির্যাতনের খবর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া। ইলেকট্রনিক মিডিয়া লাইভ কাভারেজে গেলে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ থাকত না। মিডিয়া আওয়ামী লীগকে নগদ সামান্য সুযোগ দিতে গিয়ে মূলত বড় ক্ষতি করেছে।

প্রিন্ট মিডিয়াও ছাত্রদের সংস্কারমূলক এ আন্দোলন নিয়ে সঠিকভাবে খবর প্রচার করেনি। দুঃখজনক হচ্ছে, দু’টি মিডিয়া এই সংস্কার আন্দোলনকে ইতিবাচক কাভারেজ দিতে গিয়ে আক্রমণের শিকার হয়েছে। তাদের সংবাদকর্মীদের প্রকাশ্যে খোঁজা হয়েছে। দলের বিভিন্ন পর্যায় থেকে তাদের বিরুদ্ধে হুমকি-ধমকি দেয়া হয়েছে। অন্য পত্রিকাগুলোর মনোভাবের মধ্যে দ্বিচারিতা দেখা গেছে। এসব মিডিয়ার ভাষায়- ছাত্ররা ভালো একটি কাজ করছে। প্রচারের ক্ষেত্রে সেটিকে তারা উপযুক্ত গুরুত্ব দেয়নি। খবরের সীমানা তারা এভাবে নির্ধারণ করার চেষ্টা করেছে যে- ছাত্ররা সঠিক, তবে সরকারের কোনো দোষ নেই। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা নেই। তোমাদের দাবি বাস্তবায়ন হোক সেটা ঠিক আছে, তবে তোমরা ঘরে ফিরে যাও। এ ধরনের দ্বিমুখী বার্তায় অস্পষ্টতা তৈরি করেছে। ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক, সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে গিয়ে মিডিয়া একটি সত্যকে আড়াল করেছে।

৭ আগস্টের একটি পত্রিকার প্রথম পাতায় ছবির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, লাঠিসোটা নিয়ে আফতাব নগরে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে হামলা করেছে একদল যুবক। এই যুবকদের পরিচয় সাংবাদিকেরা না জানার কথা নয়। সেখানে পাশাপাশি পুলিশ ও বিজিবি ছিল। যেমনটি রাজধানীতে বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সাথে লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। লাঠিসোটা নিয়ে পুলিশের সাথে থেকে ছাত্রদের ওপর হামলাকারীদের পরিচয় এই দিন প্রথম আলোও আর দেয়নি। এদেরকে তারা আক্রমণকারী যুবক বলে চিহ্নিত করেছে। অর্থাৎ, আক্রমণকারীদের কাছ থেকে একে একে সবাই পিছু হটছে। মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের উচিত পেশাদার অবস্থান গ্রহণ করা। এ ধরনের অবস্থান নিতে পারলে আজ বিরোধী দলের করুণ দশা হতো না এবং এর ধারাবাহিকতায় মিডিয়ারও আজ করুণ দশা হতো না।
jjshim146@yahoo.com

 


আরো সংবাদ



premium cement