কিশোরীদের যৌন হয়রানি : বিশ্বসমাজের করণীয়
- শাহ্ আব্দুল হান্নান
- ২১ জুন ২০১৮, ১৮:৩৭
আলজাজিরা সংবাদমাধ্যমের এক রিপোর্ট পড়ে হতভম্ব হয়ে যাই। রিপোর্টটি জাপানসংক্রান্ত, তবে আমার এক আমেরিকান বন্ধু এবং অন্যরা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপেও একই অবস্থা বিদ্যমান। রিপোর্টটি তৈরি করেছেন অনিতা একিন ও শিওরি ইতো। রিপোর্টের কিছু অংশের অনুবাদ নিচে দিচ্ছি-
‘তাকওয়া ওগাওয়া যখন ১০ বছরের, তখন তিনি প্রথম যৌন নির্যাতনের শিকার হন। দিনটি ছিল ছুটির দিন। তখন তিনি পাতাল রেলস্টেশনে ছিলেন। একজন পুরুষ পেছন থেকে হাত দিয়ে তার আন্ডারওয়ার নামিয়ে ফেলে তার নিচের খালি অংশ হাতাতে থাকে এবং জাপটে ধরে।’ ‘তিনি যখন সিনিয়র হাইস্কুলে পড়েন তখন প্রথম দিনেই আবার তার সাথে এ ঘটনা ঘটে এবং প্রায় প্রতিদিনই ঘটতে থাকে। পুরুষ তাদের আন্ডারওয়ারে হাত ঢুকিয়ে আঙুল যৌনাঙ্গে ঢুকাতে চেষ্টা করত।’
তিনি আরো বলেন, ‘যখন আমি হাইস্কুলে ছিলাম তখন প্রায় প্রত্যেক মেয়েই এই হেনস্তা সহ্য করত। আমরা কিছুই করতে পারতাম না।’
তারা একে ইংরেজিতে Groping (হাত ঢুকানো) বলতেন। ওগাওয়া আরো লিখেছেন, ‘আমাকে অনেক মেয়ে বলেছে, পুরুষেরা তাদের আঙুল নারীর যৌনাঙ্গেও ঢুকিয়ে দিত। তারা অনেক সময় তাদের ওপর বীর্যপাতও করত।’
জাপানি সমাজ এটাকে খুব বেশি গুরুত্ব দেয় না, বরং তারা মেয়েদের আরো সতর্ক হতে বলে। অভিযোগ করলে বলা হয়- মিথ্যা অভিযোগ। এসব বিষয় রিপোর্ট করতে অনুৎসাহিত করা হয়।
এখানে মূলত রিপোর্টের একটি ক্ষুদ্র অংশ অনুবাদ করেছি। পরে জানতে পারি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং আরো বেশ কিছু দেশেও একই অবস্থা। আমি মনে করি, এর প্রতিকার হওয়া প্রয়োজন। বিশ্বব্যাপী এর বিরুদ্ধে আন্দোলন হওয়া দরকার। এ ব্যাপারে আমি কিছু সুপারিশ করে রিপোর্টটিসহ তা আমি ছড়িয়ে দিই। এসব সুপারিশ সব দেশের জন্যই। কেননা সমস্যা সব দেশেই আছে, কোথাও কম আবার কোথাও বেশি।
সুপারিশগুলো নিম্নরূপ-
১. সবার জন্য নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং শিক্ষার সব স্তরেই তা করতে হবে।
২. স্কুল ও কলেজে ‘সহশিক্ষা’ বন্ধ করা। কারণ, ‘সহশিক্ষা’ থাকলে অবাধ মেলামেশার সুযোগ হয়। তখন ছেলেমেয়েরা অবৈধ যৌন সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে লিপ্ত হয়।
৩. সব দেশেই ছেলেমেয়েদের বিয়ের দায়িত্ব পিতা-মাতার হওয়া উচিত, যেমনটি ইসলাম বলেছে। তবে ছেলেমেয়েদের সম্মতিও তারা নেবে। পাশ্চাত্যে এখন রেওয়াজ হচ্ছে, ছেলেমেয়েরা নিজেদের বিয়ে নিজেরাই ঠিক করবে। এ ব্যাপারে পিতা-মাতারা এখন দায়িত্ব নেন না, অথচ আগে ওই সব দেশেও বিয়ে দেয়া বাবা-মায়ের দায়িত্ব ছিল। ছেলেমেয়েরা তাদের বিয়ে নিজেরা ঠিক করতে গিয়ে অনেক ছেলেমেয়ের সঙ্গে মেলামেশা করে। যার ফলে তাদের মধ্যে যৌনমিলনও হয়। বিয়ের আগে অনেক সময় গর্ভ ধারণ হয় এবং গর্ভপাত হয়।
৪. আইন করে অশালীন পোশাক নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অনেক মুসলিম দেশে পোশাকবিষয়ক কিছু নীতিমালা আছে।
আমি এসব প্রস্তাব ইংরেজিতে অনেকের কাছে পাঠাই। সঙ্গে আলজাজিরার রিপোর্টটিও পাঠাই। আমার এক আমেরিকান বন্ধু মন্তব্য করে লিখেছেন, ‘আমার এ প্রস্তাব বাস্তবসম্মত নয়।’ তিনি বলেন, ‘সমস্যা অনেক গভীরে, নারীর বিরুদ্ধে পুরুষের আক্রমণাত্মক ব্যবহারের কোনো সমাধান নেই। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, ‘পুরুষেরা যৌন বিষয়ে কয়েক মিনিট পর পর চিন্তা করে থাকেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিয়ে বাবা-মায়ের মাধ্যমে ঠিক করা (Arranged Marriage) কোনো সমাধান নয়। বর্তমানে পাশ্চাত্যে যে ব্যবস্থা প্রচলিত আছে, তাতে ২১ বছরের আগেই ছেলেমেয়েদের এক থেকে ছয়জনের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক হয়, অসংখ্য ক্ষেত্রে নয়।’ তার মতে, ‘এটা ঠিক আছে, এতে অভিজ্ঞতা বাড়ে।’
উত্তরে আমি তাকে জানাই, আমি স্রষ্টায় বিশ্বাস করি। নিশ্চয়ই কারণ আছে, যে জন্য আল্লাহ জিনা বা অবৈধ যৌনসঙ্গম নিষিদ্ধ করেছেন। ইসলাম ছাড়া ইহুদি, খ্রিষ্টান, হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ ধর্মেও জিনাকে (অফঁষঃবৎু) নিষেধ করা হয়েছে। বর্তমান সমাজ অতিরিক্ত বস্তুবাদ ও সেকুলারিজমের ফল। তাই এসব আচরণ অস্বাভাবিক, এটা চলতে দেয়া যায় না। এভাবে পাত্রপাত্রী নির্বাচন এবং পরে বিয়ে একত্রে চলতে পারে না।
মুসলিম ও হিন্দুদের মধ্যে পিতা-মাতা কর্তৃক ঠিক করা বিয়ে কোনো অসুবিধা সৃষ্টি করে না।
যা হোক, ইসলামের দৃষ্টিতে এটি ভয়াবহ সমস্যা যে, এভাবে নারী-পুরুষ জিনায় জড়িয়ে যাবে। গোটা বিশ্বকে পথে আনার জন্য ধর্মে বিশ্বাসীদের চেষ্টা করতে হবে, বিশেষ করে মুসলিমদের। এটা অসম্ভব নয়। প্রয়োজন যথাযথ পদক্ষেপ।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা