২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

তুরস্কে নির্বাচন : এরদোগান পছন্দের প্রার্থী

তুরস্কে নির্বাচন : এরদোগান পছন্দের প্রার্থী - ছবি : সংগৃহীত

এক বছর আগেই তুরস্কে প্রেসিডেন্ট ও সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সবাই বলছেন তুরস্কের এই নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। এরদোগানের জন্য এটি লিটমাস টেস্ট। এরদোগান ঘরে-বাইরে ইসলামি ও আন্তর্জাতিক বিশ্বে অনেক কর্মসূচি নিয়েছেন। এসব কর্মসূচি দেখে পশ্চিমারা তাকে ‘নব্য সুলতান’ আখ্যা দিয়েছেন। আখ্যা দিয়েছেন ‘নব্য ওসমানি খেলাফতের প্রবক্তা’। এরদোগান লাখ লাখ সিরীয় উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দিয়েছেন। চিকিৎসা ও লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেছেন। রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের ঘরবাড়ি করে দিয়েছেন। তাদের সমস্যা নিরসনের জন্য বাংলাদেশের সাথে রয়েছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। দেশের মধ্যে কুরআন শিক্ষা প্রচলন করেছেন এবং আরবি ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। হিজাব পরিধানসহ ইসলামি শিক্ষা-সংস্কৃতিকে দেশের সংস্কৃতির অংশ ঘোষণা করেছেন। ইসলামি বিশ্বের ঐক্যের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। আবার কুর্দিদের তিনি একহাত নিয়েছেন। তিনি ফিলিস্তিন ও জেরুসালেম সমস্যা নিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে দুইবার ওআইসির বিশেষ সম্মেলন ডেকেছেন এবং জেরুসালেম উদ্ধারে ইসলামি আর্মি গঠনের ডাক দিয়েছেন। কাতার সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা তদবির করে আসছেন। কুয়েত যাতে আক্রান্ত না হয় সে জন্য কুয়েতে সেনাবাহিনী পাঠিয়েছেন। আফ্রিকার মুসলিম দেশেও উন্নয়ন ও ধর্মীয় কৃষ্টি সম্প্রসারণের কাজ করেছেন। সুদানেও সেনা পাঠিয়েছেন। দেশের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানে জড়িত হাজার হাজার তুর্কির বিচার করছেন। এখন তুরস্ক সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পথে। এরদোগানের আমলে জিডিপি ২০০ শতাংশ বেড়েছে। যে জন্য তুরস্কের আমজনতা খুবই খুশি। এ সবের রূপকার এরদোগান ও তার একে পার্টি।
ফিরিস্তি আরো অনেক লম্বা।

মুসলিম বিশ্বের স্বার্থ রক্ষায় তার দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তিনি একই সাথে আমেরিকা-রাশিয়াসহ বৃহৎ শক্তিবর্গের রোষানলে পড়েছেন। তারা চেষ্টা করেছেন কোনো সামরিক বা বেসামরিক অভ্যুত্থান বা জন-প্রতিরোধের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা। এই মুহূর্তে এরদোগানের পক্ষে-বিপক্ষে ৫৫-৪৫ শতাংশ। মনে রাখতে হবে, গত নির্বাচনেও তিনি সামান্য ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিলেন। তাই সঙ্গত কারণেই এই নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে বোঝা যাবে, এরদোগান ও তার আন্তর্জাতিক পলিসি থাকবে, না নুতনভাবে অন্য কিছু হবে। ফতেহ উল্লেহ গুলেন আমেরিকায় বসে কলকাঠি নাড়ছেন। তার অবস্থাও এই নির্বাচনে স্পষ্টভাবে দেখা যাবে। অনেক জেনারেল, পুলিশ অফিসার, সিভিল সার্ভিসের লোকজন ও সাধারণ সরকারি কর্মচারী দেশ ছেড়েছেন; তাদের শক্তি কতটুকু তাও পরিস্ফুট হবে এই নির্বাচনে, মানুষ ইসলাম না সেকুলারিজম চায় তাও নির্ধারিত হবে এবার। দেশের মানুষ কি সত্যিই পরিবর্তন চায়, তার ভোট হবে এবার। এরদোগান ও তার দল আবার নির্বাচিত হলে তুরস্কে নতুন সিস্টেম পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হবে। দেশে ইসলামিকায়ন অভিযান জোরদার হবে। এরদোগান চান তার রাজনৈতিক কর্মসূচি সঠিক কি না, তা জনগণ চূড়ান্তভাবে নিরূপণ করুক। অবশ্য জনগণ এপ্রিল ২০১৭ সালে রেফারেন্ডামের মাধ্যমে তার প্রতি সমর্থন দিয়েছিলেন। এরদোগান ভিশন ২০২৩-এর রূপরেখা দিয়েছেন। তিনি বিশ্বের সেরা ১০টি আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ দেশের মধ্যে স্থান করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই প্রস্তাবে যোগাযোগ, কৃষি, জ্বালানি ও স্বাস্থ্য খাতে ইতোমধ্যে প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে। আর মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতিশ্রুত উন্নয়ন কর্মসূচি শেষ করতে চান। বিরোধী দল এরূপ বিস্তারিত কোনো উন্নয়ন কর্মসূচি দিতে পারেনি।

মূলত ২০১৬ সালের ক্যু-এর পর তুরস্কের ভাগ্য বদলে যেতে থাকে। পুরাতন ধারা থেকে নতুন ধারার দিকে তুরস্ক ধাবমান হয়। নতুন যুগের নতুন তুরস্কের প্রকৃত সংস্কারক হিসেবে এরদোগান আবির্ভূত হন। পার্লামেন্টারি থেকে প্রেসিডেন্সিয়াল সিস্টেমে প্রবর্তিত হয়। তুরস্কের মানুষ ‘ধর্মহীন কামাল মতবাদ’, সেকুলারিজম, ‘পশ্চিমা শিক্ষা, সংস্কৃতির নাস্তিকতাবাদের ধারক গোষ্ঠী’ ও গুলেনবাদ থেকে নিষ্কৃৃতি পেতে চান। তবে ওদের শিবিরেও সদস্য নেহায়েত কম নয়।

কামাল-মতবাদ তুরস্কের বুকে ও মানুষের মস্তিষ্ককে সাফ ধোলাই করে দিয়েছিল। পশ্চিমারা এই বিবর্ণ মরুতে পশ্চিমা সংস্কৃতির পানি সেঞ্চন করে বছরের পর বছর তুরস্কের সমাজ ব্যবস্থাকে সঞ্জীবিত করার প্রয়াস পেয়েছে। পশ্চিমারা তুরস্ককে একটি আধুনিক চারণভূমি হিসেবে বিবেচনা করে। অথচ পরিতাপের বিষয়, তুরস্ক ইউরোপীয় অংশ হওয়া সত্ত্বেও ইউরোপীয় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনি মুসলমানদের দেশ হওয়ার কারণে। তুর্কিদের এতদিন চোখ খোলেনি কেন বোধগম্য নয়। এরদোগান এসে সে ঝড়ের বিরুদ্ধে কৌশলে এতদিন ধরে কাজ করেছেন। এখন তার বোঝাপড়ার সময়। তাই এই নির্বাচনে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন এগিয়ে যাবেন না থেমে পড়বেন। এখন তুরস্কের আগামী ২০০ বছরের জন্য আধুনিকীকায়নের পথে এগিয়ে নেয়ার নীতি নির্ধারণীর সময়। এরদোগান তাই বলেন। যারা এতদিন তুরস্কের মুসলমান পরিচয় মুছে ফেলার কাজ করেছে ও ইতিহাসের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে বদলা নেয়ার সময়। এ জন্য তুরস্কের সেনাপ্রধান বলেছেন, ‘দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষ হয়েছে, কিন্তু প্রথম মহাযুদ্ধ শেষ হয়নি।’ বিরোধী শিবিরের নেতারা বলছেন, প্রেসিডেন্সিয়াল সিস্টেমের বড় সমস্যা হলো একজনের হাতে ক্ষমতা চলে যায়। একে পার্টি বলছে, ‘ইতিহাসের দুর্ভাগ্যগুলো সংশোধনের জন্য তুরস্কের এমন ক্ষমতার দরকার।’ তাই তুরস্কের জন্য এই নির্বাচন ঘুরে দাঁড়ানোর সন্ধিক্ষণ। অনেক নেতা বলছেন, এরদোগান শুধু একজন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী নন, তিনি তুরস্কের জাতীয় হিরো। ইতিহাসের স্বর্ণযুগকে ফিরিয়ে আনা এবং জাতীয় শত্রুদের পরিচিহ্নিত করার জন্য এরদোগানের বিকল্প নেই। তিনি যদি জেতেন, তবে তার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানোর আর কোনো পথ থাকবে না। এরদোগান এমনটি চাইছেন তার পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করার জন্য।

জোট
এবারের তুরস্কের নির্বাচন মূলত দু’টি জোটে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একটি পিপলস অ্যালায়েন্স, এখানে আছে এরদোগানের একে পার্টি, ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টি ও গ্রেট ইউনিটি পার্টি। অপরটি ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সে। চারটি দল আছে- শক্তিশালী রিপাবলিকান পিপলস পার্টি, ফ্যালিসিটি পার্টি, আই পার্টি ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একটি বড় সুবিধা হলো এরদোগান পিপলস অ্যালায়েন্সের একক প্রার্থী, অন্যরা নিজ নিজ পার্টি থেকে দাঁড়িয়েছেন। তাই এবারো এরদোগানকে টপকানো সম্ভব হচ্ছে না। প্রায় ৩০ লাখ তুর্কি বিদেশে রয়েছে, তারাও ভোট দেবেন। এই ভোট বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। ৬০টি দেশে ১২৩টি মিশনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

ইউরোপীয়রা কি এরদোগানের বিজয় চায়?
ইউরোপীয় অনেক দেশ এরদোগানের বিরুদ্ধে কাজ করছে। নেদারল্যান্ড অনেক আগে থেকেই তুরস্ক বিরোধী রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে। জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ডের মতো তুর্কিদের র‌্যালি নিষিদ্ধ বলবৎ আছে। আমেরিকা ফতেহ উল্লেহ গুলেন ও তার অনুসারীদের ব্যবহার করছে নির্বাচনে গোলযোগ সৃষ্টি করার জন্য। কলামের শুরুতেই বলা হয়েছে, পশ্চিমারা এরদোগানের নেতৃত্ব চায় না। বিদেশীদের ও বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর এমন চাপের মধ্যেই এরদোগান নির্বাচনী কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

১৮৭৬ সালে বুলগেরিয়ার বাতাক যুদ্ধে বুলগেরিয়ার শোচনীয় পরাজয় হয়েছিল। এখনো পশ্চিমারা তুরস্কের বিরুদ্ধে ঢোল পেটায়, ‘তুরস্কের বাতাক নৃশংসতা’র কথা বলে বেড়ায়। পশ্চিমারা এই সূত্রে প্রচার করে যে, ‘নির্দিষ্ট সংখ্যক নাস্তিক হত্যা করলে বেহেশত পাওয়া যাবে।’ তুর্কি মুসলমান ও সালতানাতের বিরুদ্ধে এভাবে বিশ্বব্যাপী বিষবাষ্প ছড়িয়েছিল, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। পশ্চিমারা বাতাক যুদ্ধের পরাজয়ের ইতিহাস বিকৃত করেই চলেছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তুরস্ক মসজিদ ও স্কুল নির্মাণ করে, স্থানীয় মুসলমানদের সহায়তা দেয়। অস্ট্রিয়ার সাথে তুরস্কের বিরোধ সেই সুলতানি আমল থেকে যখন অস্ট্রিয়া ও ভিয়েনার বিরাট অঞ্চল তুরস্ক খেলাফতের অংশ ছিল। কয়েকদিন আগে অস্ট্রিয়া তুরস্কের নির্মিত সাতটি মসজিদ বন্ধ করে দিয়ে ৬০ জন ইমামকে বহিষ্কার করেছে। এরা তুর্কিদের যেন সহ্য করতে চায় না।

তুরস্ক তার কৌশলগত মিত্রদের কাছ থেকে সহায়তার পরিবর্তে সাবধান বাণী ও হুমকি পাচ্ছে। আমেরিকা তুরস্কে এফ-৩৫ বিমান বিক্রি করবে না মর্মে জানিয়েছে। এ ছাড়াও অন্যান্য সমরাস্ত্র বিক্রি করার প্রস্তাব রদ করেছে, অথচ তালিকার অনেক উন্নত সমরাস্ত্র পিকেকের ওয়াইপিজিকে বিনামূল্যে সরবরাহ করছে যাতে তুর্কি সৈন্যদের সাথে সাহসের সাথে যুদ্ধ করতে পারে। আমেরিকা এক চালানে পাঁচ হাজার ট্রাক বোঝাই বিপুল অস্ত্র তাদের দিয়েছে মর্মে এরদোগান এনটিভির এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এটি তুরস্কের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

বিরোধীদের পদক্ষেপ
নির্ধারিত সময়ের এক বছর আগে নির্বাচন করা এরদোগানের একটি রাজনৈতিক কৌশল। বিরোধী দলগুলো ধীরসুস্থে যে পদক্ষেপ নেয়ার চিন্তাভাবনা করছিল, তাড়াহুড়ার নির্বাচনে তা ভেস্তে যায়। বিরোধী শিবির এরদোগানের বিপরীতে গুলকে দাঁড় করানোর চেষ্ট করেছে। গুল এরদোগানের সমালোচনা করলেও তিনি কোনো দল থেকে প্রার্থী হননি। ফলে বিরোধীদের আরো একটি প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়।

এরদোগানের মেনিফেস্টোতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তুরস্কের অর্জন, পরিকল্পনা ও আবেদন বিধৃত হয়েছে। তুরস্ক এখন কিভাবে বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর রোষানলে আছে এবং তুর্কিরা তা থেকে বের হওয়ার চেষ্ট করছে তার বিবরণও রয়েছে। দেশের নিরাপত্তা বিধান ও জনগণের শান্তি ও সমৃদ্ধির গুরুত্ব তিনি তুলে ধরেছেন মেনিফেস্টোতে।

বিরোধী শিবিরের ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স সমন্বিত ও পূর্ণাঙ্গ ফিরিস্তি দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। আগের নির্বাচনগুলোতেও এরদোগানের বিপক্ষ দল এরকম ভুল করেছিলেন। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, অতীতের ভুল থেকে এরদোগান বিরোধী শিবির তেমন কিছু শিখতে পারেনি। দেখা গেছে, তুরস্কের জনগণ আগের চেয়ে বেশি সংবেদনশীল। ফলে জনগণ এ বিষয়গুলো অবশ্যই বিশ্লেষণ করবে। তারা এমন সব আচরণ করছে, মনে হয় তুরস্কে এসব দল নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছে এবং জনগণের দোড়গোড়ায় সেভাবে পৌঁছতে সক্ষম হয়নি। গত দুই শুক্রবার ধরে জুমার নামাজের সময় বিরোধী প্রার্থীরা আঙ্কারার বাইরাম মসজিদের মতো প্রসিদ্ধ মসজিদে যাচ্ছেন। অন্য এক প্রার্থী বাম রাজনীতির স্লোগান তুলছেন। এভাবে এত অল্প সময়ে ভোটারের মন বদলানো সোজা কাজ নয়। জনগণ জানে, এসব পার্টির কাজ কি এবং অতীতে তারা কি করেছিল।

ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স জনগণকে এরদোগানের বিপরীত ‘আরো উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির মেনিফেস্টো দিতে পারেনি। তাদের মূল কথা হলো, ‘পুরনো তুর্কি’কে নিয়ে আনা হবে। অথচ পুরনো তুরস্কের ইতিহাস, ক্যু, রাজনৈতিক ও অথনৈতিক অস্থিরতা, মুদ্রাস্ফীতি, বিদেশীদের কাছে নতজানু ছাড়া কিছুই ছিল না। সামনের দিকে না গিয়ে পশ্চাৎমুখিতা জনগণ দেখতে চায় না। আধুনিক বিশ্বের সাথে তুরস্ক এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায়। জনগণের মনের ওই বাসনার কোনো প্রতিফলন বিরোধী শিবিরের মেনিফেস্টোতে নেই।

বিরোধী ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স জোর গলায় বলছে তুরস্ককে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির পরিবর্তে পার্লামেন্টারি পদ্ধতি ফিরিয়ে নেয়া হবে। কিন্তু তা কি এত সহজ? তুর্কি জনগণই তো কিছুদিন আগে রেফারেন্ডামে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতিকে স্বাগত জানিয়েছে। রেফারেন্ডামে কোনো জালিয়াতির অভিযোগ আসেনি। তাহলে? যদি এরদোগান ছাড়া কোনো প্রার্থী জয়লাভ করে, তিনি প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ছেড়ে সংবিধান সংশোধনের কাজে নামবেন তা আশা করাও বাতুলতা। তা ছাড়া কুর্দি পিকেকে ও গুলেনবাদী গোষ্ঠীগুলো বিরোধীদলকে সমর্থন দিচ্ছে, তুর্কির বেশির ভাগ জনগণ তা পছন্দ করছে না। জনগণ চায় না তাদের রাজনৈতিক দলগুলো দেশের শত্রুদের দ্বারা পরিচালিত হোক।

বিরোধী শিবির জনগণের সমর্থন পাওয়ার জন্য ব্যাপকভাবে সোশাল মিডিয়া ও নেটওয়ার্ক কাজে লাগাচ্ছে। সত্যিকারের পরিবতর্নের জন্য জনগণের ভোট দরকার টুইট বা ফেসবুক নয়। তা ছাড়া ডজন ডজন ভুয়া অ্যাকাউন্টের কারণে ব্যবহারকারীরা ইতোমধ্যে অস্থির ও বিরক্ত, এ নিয়ে তুর্কি পত্রপত্রিকায় অভিযোগের অন্ত নেই। বিশ্লেষকেরা বলছেন, তুরস্কের সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার কারণে যে সার্বিক পরিস্থিতি বিরাজমান, তাতে মনে হয় না বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে এরদোগানকে কেউ পরাজিত করতে পারবে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব
বাংলাদেশ সরকার ও গ্রন্থকার

 


আরো সংবাদ



premium cement