২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অফশোর ব্যাংক, বিমান বাংলাদেশ বনাম স্যাটেলাইট

অফশোর ব্যাংক, বিমান বাংলাদেশ বনাম স্যাটেলাইট - ফাইল ছবি

দুই লাখ কোটি টাকা চুরি। ২) স্যাটেলাইটের মালিকানা দুই ব্যক্তির হাতে। পরিচয় গোপন রেখে, আন্ডারগ্রাউন্ড ক্রাইম এন্টারপ্রাইজের দিকে ইঙ্গিত করা হলো, আশাবাদীখ্যাত মহাসচিব এটা করলেন। প্রয়োজনীয় সমালোচনাগুলো ৫ জানুয়ারির আগেই বেশি বেশি ‘ঝেড়ে কাশলে’, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকার বাধ্য হতো। কবিগুরু যথার্থই বলেছেন, কোনো কিছুই না বলে অনেক কথাই বলা যায়। ফখরুলরা অতিমাত্রায় অন্যের করুণার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় বিএনপি প্রায় নির্বংশ হওয়ার পথে। আজ অবধি আমার অনুমান খুব কমই ভুল হয়েছে। আন্ডারওয়ার্ল্ডের দুই ব্যক্তির অসীম ক্ষমতা এবং বিশাল পোর্টফোলিও তাদেরকে করেছে বিশ্বখ্যাত। এমন কোনো দুর্নীতি নেই যার প্রমাণ দেয়া হয়নি। কিন্তু তারপরও সর্বস্তরের মানুষ তাদেরকে পূজা করতে এক রকম যেন বাধ্য। রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গই তাদের দাপটে অস্থির। বেশির ভাগ সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবীই ডরায়। প্রশ্ন, কেনেডিতে বিমান বাংলাদেশ নাকি স্যাটেলাইট, কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ?

ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের সর্বশেষ সংযোজন, ব্যক্তিদ্বয়ের সর্বশেষ টাঁকশাল। পোস্টারে পৃথিবীর ছবির ওপর দুই পাখাবিশিষ্ট মহাকাশযানের ওপর পারিবারিক প্রচারণা যেন ব্যর্থতার পর ব্যর্থতা এড়াতে জাতির সঙ্গে মারাত্মক চালাকি! অথচ ৫৬টি দেশের পাঁচ হাজারের বেশি স্যাটেলাইট আকাশে। ১৯৫৭ সালে স্পুটনিক-১ নামের প্রথম স্যাটেলাইটটি পাঠায় রাশিয়া। তাহলে কেন হইচই? জাতীয় নির্বাচনের আগেই আকাশে ওড়াতে যত ধস্তাধস্তি এবং বারবার বিকলাঙ্গ হওয়ায় যন্ত্রটির ভবিষ্যৎ নিয়ে নিদারুণ শঙ্কিত। কারণ পদ্মা সেতুর বেলায়ও বছরের পর বছর ব্যর্থতা। কেউ জানে না, শেষ পর্যন্ত পদ্মা সেতুর গন্তব্য কোথায়!

প্রশ্ন, স্যাটেলাইটের মালিকানা দুই ব্যক্তির হলে, তারা কারা? টাকার উৎস ও ডেস্টিনেশন? কোষাগারের সঙ্গে ব্যক্তিদ্বয়ের সম্পর্ক? কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট? প্রকল্পের নামে লাখ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দের নেপথ্যে? উপরিউক্ত এন্টারপ্রাইজের আওতায়, কাদের ভরণপোষণ?

২.
বরাবরই আমি বক্রচিন্তার মানুষ। এবার সাংবাদিক, শিক্ষক, সাধারণ মানুষসহ শহরের পাঁচজনকে কয়েকটি প্রশ্ন করলাম। একটি প্রশ্ন- ছয় মাস আগেও এক ডলারে ৮২, কিন্তু এখন ৮৫। টাকার মূল্য বাড়ল না কমলো? তাদের যুক্তি, ৮৫ টাকা মানেই আগের চেয়ে তিন টাকা বেশি। বললাম, আগে যা ৮২ টাকা দিয়ে কিনতেন, এখন সেটা ৮৫ টাকা। এর মানে টাকার মূল্য কমেছে।
এটাই যখন গড়পড়তা বুদ্ধির সূচক, সব আবর্জনাই খাওয়ানো সম্ভব। ৯ বছর ধরে সেটাই কি হচ্ছে না? লাখ লাখ কোটি টাকার ব্যাংক ডাকাতি বা হাজার হাজার কোটি টাকার দেউলিয়া ঘোষণার অজানা উত্তর এগুলো। ফখরুলেরা একটু ঝেড়ে কাশলে, এভাবে নির্বংশ করতে পারত না।
বারবার আন্ডারওয়ার্ল্ডের প্রমাণ দিয়েছে- পদ্মা সেতু, সুন্দরবন, ট্রানজিট, সাবমেরিন, পারমাণবিক প্রকল্প, মেট্রোরেল, স্যাটেলাইট...। প্রতিটি ঘটনার পরই ব্যাপক লুটপাটের খবর কয়েকটি মিডিয়ায়। কিছু দিন হইচই, তারপরই শেষ। কারণ, ক্ষমতার কাছে সবাই পরাজিত। সুতরাং, স্যাটেলাইটের প্রকৃত মূল্য বনাম কত শত কোটি টাকা খরচ দেখানো হলো, কেউই জানবে না।

বিশেষ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে যিনি, ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের’ সুস্পষ্ট প্রমাণ। নানা অন্যায় ও অনিয়মের ভূস্বর্গ এই মন্ত্রণালয়। অতীতে একজন মন্ত্রী, অমুকের মাসিক দুই লাখ ৬০ হাজার ডলার তুলে নেয়ার খবর ফাঁস করলে কপাল পুড়ল তার। সেই পারিবারিক উপদেষ্টাই এখন প্রচণ্ড শক্তিশালী। আন্তর্জাতিক লবিস্টদেরও প্রিয়মুখ। স্যাটেলাইটের খরচ সম্পর্কে যা বলা হলো, ফ্রান্সের সঙ্গে চুক্তির কাগজ না দেখালে, বিশ্বাস করা কঠিন। নাসাতে গিয়ে উন্নতির ঢাক পেটানো কিংবা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কক্ষ ভাড়া করে বারবার ‘মহীষাসুর’ ব্যক্তিত্বের আরেক উপদেষ্টার ফালতু প্রচার বুঝি। গরিবের ঘাম ঝরানো টাকা দিয়ে উন্নতির নামে কী চলছে? কোটি কোটি টাকার পোস্টার-বাণিজ্যের বেনিফিশিয়ারি কারা?

ক্ষমতাসীনেরা কথায় কথায় আমেরিকার তুলনা দিয়ে থাকেন। সর্বশেষ উদাহরণ, নাসিম জানতে চেয়েছেন, আমেরিকায় নির্বাচনের আগে সরকার পদত্যাগ করে কি না! ‘করে না।’ কিন্তু উন্নতির নামে নোংরামি দেখাতে পারবে কি? বিশেষ ব্র্যান্ডের কোট পরা ওবামার একটি ছবি টাইমস স্কোয়ারে লাগানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই হোয়াইট হাউজের নির্দেশে নামিয়ে ফেলতে হলো। নিউ ইয়র্কের দু’টি বড় এয়ারপোর্টের মাঝখানে থাকি। আমার ডানে মাত্র ১২ মিনিট দূরত্বে কেনেডি। বামে ২০ মিনিট দূরত্বে লাগার্ডিয়া এয়ারপোর্ট। সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন লাগার্ডিয়ার অবস্থা দেখে অসন্তুষ্ট হলে সাত বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেন। আধুনিকায়নসহ দু’টি এয়ারপোর্টের মধ্যে রেল সংযোগ স্থাপনের অভূতপূর্ব উন্নতি মাত্র দেড় বছরে। যে উন্নতির কোনো দাবিদার নেই; থাকবেও না।
নেপথ্য বসদের প্রতিহত করতে আমরা কী করছি? উল্টো তাদের সমর্থনে সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের হাতে অন্যায়ের প্রমাণ। এ ছাড়াও মাত্র ৪ ঘণ্টা দূরত্বে দুবাই এখন গোটা পৃথিবীর ডেস্টিনেশন। বুর্জ আল খলিফা এবং এমিরেটস এয়ারলাইন্সের মতো অভূতপূর্ব উন্নতির পেছনে শেখ পরিবার।
কাকতালীয় হলেও দুই দেশেই শেখ পরিবারের পারিবারিক শাসন। এমিরেটস এয়ারলাইন্সের জন্ম মাত্র ১৯৮৬ সালে। কত অল্প সময়ে সারা পৃথিবীকে জোড়া লাগিয়েছে। ৪০ বছরেও ডলারের বিনিময়ে কারেন্সি এক চুল নড়েনি। কোথায় এসবের প্রচারণা! জানি না, ঢাকা এয়ারপোর্টে নেমে বিদেশীদের কী ধারণা হয়। পোস্টারে টাইলস লাগানো, সিলিং মেরামতের প্রচার, কোনো বিজ্ঞাপন কোম্পানির হলেই ভালো। না হয়, দেশের ভাবমূর্তি শেষ।

৩.
মৌলিক প্রশ্নটি ছিল, দুর্নীতির টাকার ডেস্টিনেশন। চুক্তিগুলো হওয়ার কথা প্রকাশ্যে; কিন্তু প্রতিটি চুক্তিই হয় দায়মুক্তিসহ গোপনে। পরিকল্পনা কমিশনের দেয়ালজুড়ে পারিবারিক পোস্টারগুলো কিন্তু গোপন কিছুর কথাই বলছে। ২০১৩ সালে লিখেছিলাম এক বিলিয়ন ডলারের হ্যান্ডশেকের বিস্তারিত। এখন সেটা ১৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। ভারত, ফ্রান্স, আমেরিকা, নেদারল্যান্ডস, চীন, ব্রিটেন, রাশিয়া... দেশের অর্থনীতির সর্বনাশ করে, বিদেশীদের উন্নতি করছেন হাইকমান্ড। ফখরুলের অভিযোগ- ‘৯ বছরে দুই লাখ কোটি টাকা চুরি।’ পাবলিকের ধারণা, টাকার অঙ্ক বেশি। যা লক্ষণীয়, যারাই ৫ জানুয়ারির বিরুদ্ধে ছিল, প্রত্যেকেই বাণিজ্য পেয়ে মুখে ঠুলি সেঁটেছে।
উন্নত দেশের সরকারগুলোর নির্ভরতা বহুজাতিক কোম্পানির হাতে। ওদের প্রফিটের আরেক নাম- অর্গানাইজড ক্রাইম। করপোরেট পৃথিবীর এই শকুনেরাই আমাদের নির্বাচনের পথের কাঁটা। প্রতিযোগিতা করে ঋণ দিচ্ছে। আবার সুদে-আসলে লুটছে। বিনিময়ে অবৈধ সরকারকে সমর্থন। অন্যথায়, খালেদার এত বড় ঘটনায় প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো নীরব কেন? অতীতে শুধু রাশিয়া, ভারত, ভুটান ছাড়া কেউই অবৈধ সরকারকে সমর্থন করেনি। এখন করছে। আশাবাদীখ্যাত ফখরুলেরা এখনো ‘সাবালক’ না হলে পরিপূর্ণ নির্বংশ হয়ে যাবে বিএনপি।

বহুবার লিখেছি, প্রতি বছরই বাজেটের আকার ও ঘাটতি বাড়ানোর কারণ অন্য কোথাও। শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষের প্রকৃত আর্থসামাজিক অবস্থার সঙ্গে এমন বাজেটের সম্পর্ক নেই। থাকলে প্রতি বছরই লাখ লাখ বেকার যোগ হতো না। মাথাপিছু আয় এবং প্রবৃদ্ধির দাবির তলে প্রভাবশালীর নেপথ্য ঠিকানা। যে আকারের ঋণ সংগ্রহ, শোধরানোর ক্ষমতা কোথায়? ফলে বিশেষ করে আফ্রিকান দেশগুলোর মতো নির্দিষ্টকালের জন্য করপোরেট পৃথিবীর হাতে হয়তো জিম্মি হয়ে গেল বাংলাদেশ। এতে দুই উপদেষ্টার পোয়াবারো।

৪.
কেন স্যাটেলাইট? কেন কেনেডিতে বিমান নয়? কোনটার প্রয়োজন বেশি? প্রয়োজনীয় উন্নতির সূচক কোনটা? রেমিট্যান্স জোগানদাতাদের প্রত্যাশা কোনটি? প্রতি বছরই আমেরিকায় বাংলাদেশীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা কেন চলে যাচ্ছে অন্য এয়ারলাইন্সের হাতে!
কেনেডি বিমানবন্দরে একটি বিমানের আশায় ৯ বছর পার করলাম। স্যাটেলাইটও এলো। সাবমেরিন- কাঁড়ি কাঁড়ি অস্ত্র এলো। সুন্দরবন, বহুদলীয় সংসদ... গেল। অথচ ৯ বছর পরও কেনেডিতে বিমান নামল না! নামলে কত বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হতো। এমিরেটস একাই নিচ্ছে, যাচ্ছে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার। ৯টি সেপ্টেম্বর, এলো আর গেল। প্রতি বছরই জাতিসঙ্ঘে সফরসঙ্গীর সংখ্যাও বাড়ল। তিন লাখ ডলারের নাগরিক সংবর্ধনায় প্রতি বছরই শুনলাম, বিমান আসছে। কিন্তু কেউ কি কেনেডিতে ‘বিমান বাংলাদেশ’ দেখেছেন? এই একটি উদাহরণই দেখিয়ে দেয় উন্নতির আসল চেহারা।

বাস্তব যে, খালেদাই কেনেডিতে বিমান নামিয়েছিলেন। এ বিমানবন্দরে ঢোকার পথে বড় সাইনবোর্ডে লেখা থাকত ‘বাংলাদেশ বিমান।’ ভারত-পাকিস্তানের থাকলেও আমাদেরটা উধাও। উল্টো বিমান মন্ত্রণালয় হয়েছে, নিরাপদে গরিবের টাকা লুটে নেয়ার এন্টারপ্রাইজ। ১৫ বছর স্যাটেলাইট চলার বদলে কেনেডিতে ১৫ বছর বিমান চললে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের হিসাব কার? উত্তর কোরিয়ার মতো, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি দিয়ে সবাইকেই কিনে ফেলা হয়েছে। এন্টারপ্রাইজের বৈশিষ্ট্যই তা। নাসাকে নিয়ে হইচই করানোর কারণও এটা। দলবাজ প্রবাসীদের অনেকেই কিন্তু নানান প্রকল্পের বেনিফিশিয়ারি।

৫.
প্রশ্ন, অগণিত টাকার গন্তব্যস্থল এবং যেভাবে যাচ্ছে টাকার ফ্লাইট। তারল্য সঙ্কটের নেপথ্যে এটা! অর্থসন্ত্রাসীদের বিচার না হওয়ার কারণ কী? স্যাটেলাইটের ফাঁকে ভারতের সঙ্গে নতুন পাঁচটি প্রতিরক্ষা চুক্তি।

বিষয়টি জানতে হলে বিভিন্ন অফশোর অ্যাকাউন্ট বুঝতে হবে। নওয়াজ শরিফকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দেয়ার পরই ‘পানামা পেপার্স’ নামটি বিখ্যাত হলো। ব্রিটেনের রানী, সোনিয়া গান্ধী, ডেভিড ক্যামেরন, অমিতাভ বচ্চন, ঐশ্বরিয়া রায়, প্রিন্স মুসা... বিখ্যাত-কুখ্যাত অনেকের নাম পেপারে।
বিষয়টি এ রকম। সাম্রাজ্য সঙ্কুচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অস্তিত্ব রক্ষায় যে পদক্ষেপ নিল ব্রিটিশ, সেটাই অফশোর অ্যাকাউন্ট। করপোরেট পৃথিবীর অর্ধেক টাকার গন্তব্যস্থল। প্রায় ৩৬ ট্রিলিয়ন ডলারের মধ্যে অর্ধেকের মালিকই ১০০টি পরিবার। এ ছাড়া উন্নত বিশ্ব চলতে পারত না। অ্যাপল-গুগলের মতো বহুজাতিক কোম্পানি ছাড়াও মাফিয়া গোষ্ঠী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ হরেক রকম অর্থের গন্তব্যসহ। অ্যাকাউন্টের কোনো তথ্যই প্রকাশ না করার কঠোর আইন ব্রিটিশের পর আমেরিকারও। ব্রিটিশের আইল্যান্ড ন্যাশনগুলোর অন্তর্ভুক্ত- বারমুডা, ভার্জিন আইল্যান্ড, কেমেন আইল্যান্ড...। সুইজারল্যান্ড একাই প্রায় ৩৫ ভাগ অবৈধ টাকার ভূস্বর্গ। পানামা, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, সিঙ্গাপুর, নেভিস... কয়েক গজ দূরে দূরে মুদিখানার মতো অফশোর ব্যাংক। শর্ত পূরণ করলেই গোপন অ্যাকাউন্ট এবং গ্লোবাল কানেকশনের অবারিত সুযোগ।

অতি সম্প্রতি কেমেন আইল্যান্ডে সুইস ব্যাংকের এক কর্মচারীর সঙ্গে উইকিলিক্সের গোপন যোগাযোগ হলে রানীর নামও বেরিয়ে আসে। যে কর্মচারী এসব তথ্য ফাঁস করেছিলেন, বর্তমানে জেলে। কারণ অফশোর অ্যাকাউন্ট আইনে অবৈধভাবে বৈধ করা টাকার বিরুদ্ধে কোনো কিছু ফাঁস করা বেআইনি। এ কারণেই কয়েক লাখ অফশোর অ্যাকাউন্টের খবর কেউই জানবে না।
উদাহরণস্বরূপ, নাইজেরিয়ার বাজেট ঘাটতি ১৭০ বিলিয়ন ডলার। অথচ অফশোর অ্যাকাউন্টে জমা এক ট্রিলিয়নের বেশি! কিভাবে? কেমেন আইল্যান্ডের জনসংখ্যা মাত্র ৬০ হাজার। অফশোর ব্যাংক ডিপোজিট দুই ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি! গোপন টাকা প্রথমে ছোট ব্যাংকে জমা হয়। পরে চলে যায় পশ্চিমের বড় ব্যাংকে। সেই টাকায় বিনিয়োগের ভূস্বর্গ। প্রয়োজনে কালো টাকা সাদা করে দেশেও ফিরিয়ে আনা হয়।

যেভাবে ধরা খেলেন সোনিয়া গান্ধী। অবসরে যাওয়ার পর বেশির ভাগ পশ্চিমা রাজনীতিবিদই কনসালটিং ফার্মে চাকরি নেন। রাজনৈতিক প্রভাব খাটাতে এদের কিনে নেয় ওয়াশিংটনের লবি ফার্ম। ৯ বছরে এদের কাছে বাংলাদেশ একটি সুপরিচিত নাম। ভাবমূর্তিতেও চকমকা।
পুঁজিবাজার, হলমার্ক, ডেসটিনি, বাচ্চু, মখা, আতিউর... মুখোশের তলেও মুখোশ আছে। মুখোশ যতই শক্তিশালী হোক, এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে এখনো সতর্ক না হলে, যেটুকু আছে সব খেয়ে ফেলবে।

এতগুলো ব্যাংকের ভরাডুবির পর ফারমার্স ব্যাংকেরও এই অবস্থা কেন? টাকাগুলো নিশ্চয়ই কোথাও গেছে। মুহিত সেটা জানেন না, এটা মনে করা যায় না। কারণ তারপরও নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দিচ্ছেন। এত তারল্য সঙ্কটের পরও বাজেটের আকার ও ঘাটতি বাড়িয়ে নিশ্চয়ই কারো পকেট ভরা হচ্ছে। নওয়াজ শরিফের মতো একটি তদন্ত করলেই বের হতো, অফশোর অ্যাকাউন্টে যাদের নাম! প্রবাসের কেরানীগঞ্জে, বেগমগঞ্জে বিনিয়োগ তাদের! একটা তদন্তে হাত দিলেই কেঁচো খুঁড়তে সাপ। উন্নতির বাগাড়ম্বরে ব্রেনওয়াশ না হয়ে এগুলোই আসল কর্ম।

নেটে অফশোর তথ্য ভূরি ভূরি। উদাহরণস্বরূপ, ‘স্পাইডার ওয়েব, ব্রিটেন্স সেকেন্ড এম্পায়ার’ নামের তথ্যচিত্রটির কথা বলা যায়। অধিকারবলে যেভাবে মাকড়সার জালের মতো অফশোর অ্যাকাউন্টের সুবিধা দিয়ে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করছে পশ্চিমারা। তথ্যচিত্রে রয়েছে, এদের কারণেই অনুন্নত দেশগুলো বছরের পর বছর পেছনে পড়ে আছে।
সুতরাং আমি নিশ্চিত, অফশোর অ্যাকাউন্টগুলোই বেশির ভাগ তারল্য সঙ্কটের কারণ।
ই-মেইল : farahmina@gmail.com
ওয়েবসাইট : www.minafarah.com


আরো সংবাদ



premium cement