২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

দ্যুতি ছড়ালেন মুশফিক মুমিনুল

দারুণ একদিন শেষ করে ড্রেসিংরুমে ফিরছে বাংলাদেশ দল। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে লিডের পর দ্বিতীয় ইনিংসে সফরকারীদের ৯ রানেই ২ উইকেট তুলে নেয়। মাঠ ছাড়ার সময় তাই দর্শকদের অভিনন্দনের জবাব মুশফিক-মুমিনুলদের : নয়া দিগন্ত -

আগের জার্সি নাম্বার ‘৬৮’ বদলে এবার খেলছেন ‘০৭’ পরে। ৭ সংখ্যাটা সব সময়ই সৌভাগ্যের প্রতীক। মুমিনুলের জন্য ‘লাকি সেভেন’ জার্সি পরে শুরুটা হলো নজরকাড়া। অধিনায়ক হিসেবে নিজের জায়গা থেকে তৃপ্তি নিয়েই ফিরলেন। তার নেতৃত্বে থাকা সতীর্থরাও কার্পণ্য করেননি উজাড় করে দিতে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরি পেরিয়ে আগের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করলেন ‘১৫’ নাম্বার জার্সিতেই বিশ্বাস রাখা মুশফিক। আরেকটি ডাবল এলো তার ব্যাট থেকে। ২৮টি বাউন্ডারিতে ২০৩ রানে অপরাজিত থাকলেন তিনি।
টেস্ট পূর্ববতী সংবাদ সম্মেলনে মুমিনুল বলেছিলেন, বড় জুটি গড়ার এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে ১০০, ২২০ কিংবা ৩০০ রান করার। কথা রেখেছেন মুমিনুল। গতকাল প্রথম সেশনেই মুশফিক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে হাফ সেঞ্চুরির পর বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেন মুমিনুল। এই সেঞ্চুরিতে তামিম ইকবালের পাশে নাম লিখিয়েছেন মুমিনুল। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৯ টেস্ট সেঞ্চুরি করেছেন তামিম ও মুমিনুল। তামিম খেলছেন ৬০ টেস্ট, মুমিনুল ৪০টি।
মুমিনুল কথা দিয়েছিলেন শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে নয়, অধিনায়ক হিসেবেও। তার কথা মনে রেখে সেঞ্চুরির পথেই হেঁটেছেন সঙ্গী ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীমও। ৯৯তম ওভারে মুশফিক ব্যক্তিগত ৯৯ রানে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যান। ফিরে এসে দ্বিতীয় ওভারে অর্থাৎ ১০১তম ওভারের তৃতীয় বলে আবার বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মুশফিকুর রহীম। এর আগে ৯৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন ওই বাউন্ডারি মেরেই। ১৬০ বলে করলেন সেঞ্চুরি। আর ১৫০ রান করলেন ২৫৪ বলে। ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকালেন ৩১৮ বলে। কাকতালীয় ব্যাপার এই যে, বাউন্ডারি হাঁকিয়েই করলেন ৫০, ১০০, ১৫০, ২০০ রান।
১৫ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রায় ১০ বছর ধরে ‘এসএস’ ব্যাট দিয়েই খেলেছেন মুশফিক। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কা সফরের গল টেস্টে এই ব্যাট দিয়েই প্রথম বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে করেছেন ডাবল সেঞ্চুরি। একই ব্র্যান্ডের ব্যাটে আবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করলেন দুর্দান্ত সেঞ্চুরি। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ব্যবহার করতেন ‘ডিএসএস’ ব্র্যান্ডের ব্যাট।
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের অন্যতম ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম। তার ব্যাটের ওপর নির্ভর করে দলের জয়-পরাজয়ের গল্প। ভারতের বিপক্ষে দুই টেস্টে তিনি একাই লড়েছিলেন। দুটোতেই হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। এবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি করলেন তিনি। যা পেলেন ঠিক ১০ ইনিংস পর। এর আগে এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই ক্যারিয়ারসেরা ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেছিলেন মুশফিক। গতকাল আরো একটি ডাবল এলো তার হাত ধরে।
অধিনায়ক হিসেবে মুমিনুলের এটি প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মুমিনুলের আগে বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে সেঞ্চুরি পেয়েছেন শুধু মাহমুদুল্লাহ ও মোহাম্মদ আশরাফুল। শেষ পর্যন্ত ১৩২ রানে হাল ছাড়েন মুমিনুল। ১১০.২ ওভারে দলীয় ৩৯৪ রানে এনদুলোভোর বলে তাকেই ক্যাচ দিয়ে ফিরেন মুমিনুল। ১৪টি চারে ইনিংসটি সাজান তিনি। ১৬ মাস পর সেঞ্চুরি খাতায় ফের নাম লেখালেন। সর্বশেষ টেস্ট সেঞ্চুরি করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০১৮ সালের নভেম্বরে। জিম্বাবুয়ে বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার পথে ১২টি বাউন্ডারির মাঝে আটটি চারই মেরেছেন অনসাইডে। বাকি চারটি চার কাভার ড্রাইভে।
ছন্দে ফেরাটা মোটেও সহজ ছিল না মুমিনুলের। বাজে সময় পার করেছেন গত বছর। ১০ ইনিংসে ১৪.৪ গড়ে করেছেন ১৪৪ রান। ৭ বছরের ক্যারিয়ারে এত বাজে গড় আর কোনো বছরে হয়নি। ২০১৮ সালে যেখানে চারটি সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন, সেখানে গত বছর ম্যাজিক্যাল ফিগারে পৌঁছতে পারেনি একবারো। এমন সময়ে তার কাঁধে উঠেছে গুরুদায়িত্ব। সাকিব আল হাসান নিষিদ্ধ হওয়ায় পেলেন বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়কত্ব। নেতৃত্বের ভারেই কি না গত নভেম্বরে ভারত সফরটা কেটেছে বাজেভাবে। দুই টেস্টে করলেন ৪৪ রান। কলকাতা টেস্টে পেয়েছিলেন ‘পেয়ার’।
স্কোরকার্ড
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে
টস : জিম্বাবুয়ে
জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংস (প্রথম দিন ২৬৫/১০)
বাংলাদেশ ইনিংস (দ্বিতীয় দিন শেষে) ২৪০/৩, (মুমিনুল ৭৯ ব্যাটিং, মুশফিক ২৩)

তৃতীয় দিন
রান বল ৪ ৬
মুমিনুল ক চাকাভা এনডিলভু ১৩২ ২৩৪ ১৪ ০
মুশফিকুর রহীম নটআউট ২০৩ ৩১৮ ২৮ ০ মিঠুন ক চাকাভা এনডিলভু ১৭ ২৩ ৩ ০
লিটন দাস ক চাকাভা ব রেজা ৫৩ ৯৫ ৫ ০
তাজুল ইসলাম নটআউট ১৪ ১৯ ১ ০
অতিরিক্ত ২১

মোট (৬ উই:, ১৫৪ ওভার) ৫৬০
উইকেট পতন : ১/১৮, ২/৯৬, ৩/১৭২, ৪/৩৯৪, ৫/৪২১, ৬/৫৩২।
বোলিং : ডোনাল্ড ত্রিপানো ৩০-৬-৯৬-১, ভিক্টর নায়াউসি ২৭-৩-৮৭-১, সিকান্দার রাজা ৩০-২-১১১-১, চার্লটন টিসুমা ২৫-২-৮৫-১, অ্যান্সলে এনডিলভু ৪২-৪-১৭০-২।
জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ইনিংস
রান বল ৪ ৬
মাসভাউরে ব নাঈম ০ ২ ০ ০
কেভিন ব্যাটিং ৮ ১৮ ০ ০
ডোনাল্ড ক লিটন ব নাঈম ০ ১ ০ ০
টেইলর ব্যাটিং ১ ৯ ০ ০
উইকেট পতন : ১/৭, ২/১১৮, ৩/১৩৪,
বোলিং : নাঈম হাসান ৩-১-৪-২, তাইজুল ইসলাম ২-০-৫-০ ।

 


আরো সংবাদ



premium cement