২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গণতান্ত্রিক পরিবেশ কি থাকছে?   বাফুফের নির্বাচন

-

ভোট করার অধিকার সবার। যার ইচ্ছে সে দাঁড়াতে পারে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ( বাফুফে) নির্বাচনে এটাই নিয়ম। দফায় দফায় ফিফার হস্তক্ষেপে নিশ্চিত হয়েছে আগ্রহীদের প্রার্থিতা এবং কাউন্সিলরদের ভোটাধিকার। তবে এর পরও বন্ধ হয়নি নোংরামি। গত শতাব্দীর শেষ সময় থেকে বাফুফেতে নির্বাচন প্রথা চালু হয়েছে। নির্বাচিত কমিটি ভেঙে অ্যাডহক কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া এবং পরে ফিফা কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়ে পরে আবার নির্বাচিত কমিটিকে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়া সব তিক্ত অভিজ্ঞতাই বাংলাদেশের ফুটবলে আছে। এরপরও ক্ষমতার লিপ্সায় সব অপচেষ্টাই চলে। আজ যিনি বাফুফের সভাপতি সেই কাজী সালাউদ্দিনকে এই পদে ২০০৮ সালে পাশ করে আসতেও কম নোংরামি ও তীব্র প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে হয়নি। গত কয়েকবছর ধরে কোটি কোটি টাকা খরচ করে প্রচারণা চালিয়েছিলেন তরফদার রুহুল আমিন। উদ্দেশ্য ছিলÑ এপ্রিলের বাফুফের নির্বাচনে সভাপতি পদে নির্বাচন করা। ব্যাপক প্রচারণা আর ক্লাব ও বিভিন্ন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে স্পন্সরের মাধ্যমে অবস্থানও পোক্ত ছিল এই ফুটবল সংগঠকের। কিন্তু হঠাৎ তার সরে পড়াটা বিস্মিত করেছে সবাইকে। বিশেষ করে চরম হতাশ তার পক্ষের লোকেরা। তাদের অভিযোগ, চাপে পড়ে এই সময়ে এসে সরে পড়েছেন তরফদার। যদিও সরে পড়াটাকে ¯্রফেই ব্যক্তিগত বললেন তরফদার রুহুল আমিন। ব্যক্তি কারণ হলে কোনো সমস্যা নেই। তবে যদি চাপে পড়েই সিদ্ধান্ত বদলের মতো ঘটনা ঘটে তাহলে তা প্রশ্নের মুখে ফেলে দেবে নির্বাচনে গনতান্ত্রিতিক পরিবেশকে।
এই যে এখন কাউন্সিলর হওয়া ছাড়াই বাফুফেতে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আইন করা- তা এই অগণতান্ত্রিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতেই। নির্দিষ্ট কারো পছন্দমাফিক না হলে তাদের প্রার্থিতা ঠেকাতে হতে দেয়া হতো না কাউন্সিলর। উল্লেখ্য, আগে নিয়ম ছিল কাউন্সিলর না হলে বাফুফের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া যাবে না। এই আইনের অপপ্রয়োগ রোধেই কাউন্সিলর না হলেও নির্বাচন করার নিয়ম পাশ করিয়ে আনা ফিফা থেকে। অবশ্য বর্তমান নিয়মে কাউন্সিলরশিপ ছাড়া প্রার্থীর ভোটধিকার নেই। এতে তার একটি ভোট কমে গেল। ২০১৬ সালের নির্বাচনে সাবেক ফুটবলার সাইফুর রহমান মনি বহু চেষ্টা করেও কোনো ক্লাবের কাউন্সিলর হতে পারেননি। তার অভিযোগ ছিল ফুটবল ফেডারেশনেরই এক ব্যক্তি তাকে কাউন্সিলরশিপ পেতে বাধা দেয়। সেই নির্বাচনে মনিও পারেননি পাশ করতে।
বাফুফের মতো কোনো দেশের ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচনে সরকারের হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই সহ্য করে না ফিফা। ফলে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার এই বিষয়ে সতর্ক। ২০০৮ সালের বাফুফের নির্বাচনে সভাপতি পদে নির্বাচন করা কাজী সালাউদ্দিনকে শুরু থেকে নানাভাবে থামানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সাবেক এই ফুটবলার সাহসের সাথে সব প্রতিবন্ধকতা ডিঙ্গিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভও করেন। ২০১২ সভাপতি পদে নির্বাচন করার কথা বলেও পরে সরে পড়েন আবদুর রহিম। যে কারণে অন্য পদগুলোতে নির্বাচন হলেও সভাপতি পদে নির্বাচন হয়নি। ২০১৬ সালের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল কাজী সালাউদ্দিনকে। নানা ধরনের চাপ এবং অপপ্রচার। এতে বাফুফের নির্বাচনে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয় প্রবলভাবে। তরফদার রুহুল আমিন তখন ছিলেন সালাউদ্দিনের প্রধান সহযোগী। একপর্যায়ে তাকে হঠাৎ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়তে দেখা যায়। সবই ছিল পুরোপুরি অখ্যাত কামরুল ইসলাম পোটনকে বাফুফের মতো গুরুত্বপূর্ণ সভাপতি পদে পাশ করানোর চেষ্টায়। সেখানেও সালাউদ্দিনের অনঢ় অবস্থান। সাথে একেবারে শেষ সময়ে দৃশ্যপটের পরিবর্তন। ফলে সাবেক তারকা ফুটবলারের বিপুল ভোটে পাশ করা। যদিও পোটন পেয়েছিলেন বিস্ময়করভাবে ৫০ ভোট।

 


আরো সংবাদ



premium cement