২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মতিন কারিশমায় সেমিতে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ (মতিন ২, ইব্রাহিম)৩ : ০ শ্রীলঙ্কা
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জোড়া গোল করা মতিন মিয়াকে ঘিরে বাংলাদেশ দলের ফুটবলারদের উল্লাস হমোহাম্মদ শরিফ -

কে করবেন গোল। এই ছিল টেনশনের বিষয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কাল বাংলাদেশের জয়ের বিকল্প ছিল না। একই অবস্থা ছিল লঙ্কানদের। যে জিতবে তারাই ‘এ’ গ্রুপ রানার্সআপ হিসেবে চলে যাবে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সেমিতে। কিন্তু জিততে হলে যে গোল করা দরকার তা করবে কে লাল-সবুজদের। বাংলাদেশী স্ট্রাইকাররা গোল করতে পারছিলেন না। করলেও এক-দু’টি। এই গোলগুলোর মধ্যে সময়ের বিস্তর ফারাক। তাই কে কাল বাংলাদেশকে পার করাবেন শ্রীলঙ্কান হার্ডল, এটা ছিল চিন্তার কারণ। শেষ পর্যন্ত দেশের সব ফুটবলপ্রেমীদের এই গভীর চিন্তা থেকে মুক্ত করলেন মতিন মিয়া। তার করা জোড়া গোলের ওপর ভর করেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩-০ গোলের বড় জয় লাল-সবুজদের। ফলে জেমি ডে বাহিনীই এখন ২৩ জানুয়ারি সেমিতে পাচ্ছে আফ্রিকান দেশ বুরুন্ডিকে। সে সাথে টানা চারবার বঙ্গবন্ধু কাপেই সেমিতে উঠল লাল-সবুজরা।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের পাল্লা ভারী। ২০১৬ সালের বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপেও তাদের বিপক্ষে ৪-২ গোলে জয়। এটাও ছিল বাড়তি প্রেরণা। তবে আগের ম্যাচে ফিলিস্তিনের কাছে হারে ধাক্কা তারা সামলে উঠতে পারবে কি না সেটাও ছিল প্রশ্ন। সাধারণত এই ধরনের মাস্ট উইন ম্যাচে জয়ের রেকর্ড নেই বাংলাদেশের। তা গত ২০ বছরে। কাল সে প্রতীক্ষার অবসানও হলো। মানে এক ঢিলে দুই পাখি মারার। মাস্ট উইন ম্যাচে জয়ের দেখা এবং সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করা।
জিততেই হবে এই মিশনে কাল বাংলাদেশ দলে চারটি পরিবর্তন। ফিলিস্তিনের বিপক্ষে গত ম্যাচ খেলা ইয়াসিন জ্বরের কারণে ক্যাম্প ছেড়েছেন। অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার ইনজুরি পুরোপুরি সারেনি। রায়হান হাসান এবং অভিজ্ঞ মামুনুলকে একাদশের বাইরে রেখে কাল জেমি ডে একাদশে সুযোগ দেন, বিশ্বনাথ ঘোষ, রিয়াদুল হাসান রাফি, মাহাবুবুর রহমান সুফিল ও মানিক হোসেন মোল্লাকে। তাদের মধ্যে মানিকের কাল জাতীয় দলে অভিষেক গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে। জামালের অনুপস্থিতিতে এই ম্যাচে লাল-সবুজদের নেতৃত্বে ছিলেন তপু বর্মণ। কিন্তু সারা ম্যাচ চমৎকার খেলা এই ডিফেন্ডার ৮৯ মিনিটে লাল কার্ড পেয়ে সর্বনাশ করেছেন সেমিফাইনালের জন্য। নকআউট পর্বের সেই ম্যাচে তার খেলা হবে না বুরুন্ডির বিপক্ষে। কাল বদলি হিসেবে নেমে জাতীয় দলে অভিষেক হয় মিডফিল্ডার রাকিব হোসেনেরও।
কোচ জেমির এই বাধ্য হয়ে একাদেশ বড় পরিবর্তনে কোনো সমস্যা হয়নি মতিন মিয়ার কল্যাণে। কোচের আক্রমণাত্মক কৌশলে স্ট্রাইকার ছিলেন সুফিল ও মতিন। ১৬ ও ৬৪ মিনিটে মতিনের গোলই লাল-সবজুদের দাপট অব্যাহত রাখা লঙ্কানদের ওপর। ১১ মিনিটে সাদ উদ্দিনের নির্বুদ্ধিতায় লিড নিতে পারেনি বাংলাদেশ। ইব্রাহিমের ক্রসে তিনি পোস্টে টোকা না মেরে রিসিভ করতে গিয়ে নষ্ট করেন সুযোগ। অবশ্য এগিয়ে যেতে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি টুর্নামেন্টের স্বাগতিকদের। জাতীয় দলের হয়ে প্রথম খেলতে নামা মানিক মোল্লার থ্রু নিয়ন্ত্রণে নেন মতিন মিয়া। বসুন্ধরা কিংসের সিলেটের এই ফরোয়ার্ড এরপর কাটান এক ডিফেন্ডরাকে। বাকি কাজ সারেন বিপক্ষ কিপার রুয়ান অনুরসিরিকে ডান দিক দিয়ে পরাস্ত করে। মতিনের কোনাকুনি শট অনুরাসিরির হাতের বাধা ডিঙ্গিয়ে গোললাইন অতিক্রম করে। সাথে সাথে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে উপস্থিত হাজার দশেক দর্শকের বাঁধভাঙা উল্লাস। ২০ মিনিটে মতিনের টোকা বাইরে যাওয়ায় ব্যবধান বাড়েনি।
তবে ২২ মিনিটে ইব্রাহিমের স্বার্থপরতায় স্কোর দ্বিগুণ হয়নি। তিনি ফাঁকায় থাকা সুফিলকে বল না দিয়ে নিজে গোলরক্ষকের গায়ে মেরে নষ্ট করেন সুযোগ। ২৭ সুফিল পারেননি গোল করতে। বিরতির পর ৪৮ মিনিটে শ্রীলঙ্কার রাজ্জাক ও ৫৭ মিনিটে জোহার মোহাম্মদ অল্পের জন্য পারেননি দলকে খেলায় ফেরাতে। ততক্ষণ পর্যন্ত টেনশনে বাংলাদেশ দল। অবশেষে ৬৪ মিনিটে চিন্তা মুক্তি। মাঝ রেখার ওপর বিপক্ষ ডিফেন্ডার জুডি সুপানের কাছ থেকে বল নিয়ে এক দৌড়ে বক্সে ঢুকে পড়েন মতিন মিয়া। এরপর গোলরক্ষককে কাটিয়ে টোকায় নিজের দ্বিতীয় গোল করেন। ৮৩ মিনিটে বাংলাদেশের তৃতীয় গোল রাকিবের পাসে ফাঁকায় থাকা ইব্রাহিম আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করায়। এর আগে সোহেল রানা দু’টি, মতিন একটি এবং ৯০ মিনিটে রাকিব ব্যর্থ গোল করতে।
বাংলাদেশ দল : রানা, রাফি, তপু, বিশ্বনাথ, রহমত, মানিক (রাকিব ৭৩ মি.), সোহেল রানা, সুফিল ( মামুনুল ৬০ মি.) মতিন, ইব্রাহিম ( সুশান্ত ৮৫ মি.) ও সাদ উদ্দিন।

 


আরো সংবাদ



premium cement