২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ফুটবলে কেন এই ব্যর্থতা

-

২০১৬ এস এ গেমস পুরুষ ফুটবলে ভারতের কাছে সেমিতে হেরে বাদ পড়া বাংলাদেশের। ২০০৬ এর এস গেমসেও ভারতের কাছে গ্রুপের শেষ ম্যাচে হেরে সেমিতে যেতে ব্যর্থ হওয়া। এর আগে ১৯৯৫, ১৯৮৫ এর সাফ গেমসে এই ভারতের কাছে হেরে স্বর্ণপদক জেতা হয়নি বাংলাদেশের। তাই এবারের কাঠমান্ডু-পোখারা এস এ গেমসে পুরুষ ফুটবলে ভারতের অনুপস্থিতি স্বর্ণ পুনরুদ্ধারে বাড়তি আত্মবিশ^াস জোগায় লাল-সবুজদের। তার উপর স্কোয়াডের ২০ ফুটবলারের মধ্যে ১৮ জনই মূল জাতীয় দলের। অথচ ২০১০ এর এসএ গেমস এবং ১৯৯৯ এর সাফ গেমসে স্বর্ণজয়ী বাংলাদেশ দল এবারো খেলতে পারেনি ফাইনালে। গতবারের মতো এবারো তাদের ব্রোঞ্জ পদকে সন্তুষ্টি। যে দল চার ম্যাচে মাত্র একটিতে জিততে পারে তাদের কাছে এর চেয়ে বেশি আশা করা কি ঠিক?
কিন্তু কেন জেমি ডে বাহিনীর এই ব্যর্থতা। এই ফুটবলাররাইতো বিশ^কাপ বাছাই দুর্দান্ত ম্যাচ খেলেছিল কাতার ও ভারতের বিপক্ষে। এর মধ্যে ভারতের মাটিতে জিততে জিততে শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলে ড্র নিয়ে বাড়ি ফেরা। সেই দলই কি না এবারের এসএ গেমসে চার ম্যাচের তিনটিতেই জিততে ব্যর্থ। মালদ্বীপের সাথে ড্র আর নেপাল ও ভুটানের কাছে হার। যে দল চার ম্যাচের তিনটিতেই জিততে পারে না, হেরে বসে ভুটানের মতো দলের কাছে তাদের কাছে কিভাবে স্বর্ণপদক আশা করা যায়? দলটি কোনো ম্যাচেই স্বাভাবিক খেলা উপহার দিতে পারেনি।
এই না পারার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রসঙ্গ সামনে আসছে। সামনে লিগ, ক্লাবগুলো থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়েছেন ফুটবলাররা। সাফ গেমসে সিরিয়াসলি খেলে ইনজুরিতে পড়লে তাদের ক্লাব সার্ভিস পাবে না এই মওসুমে। দলটি নেপাল যাওয়ার আগে ঠিকমতো প্রস্তুতি নিতে পারেনি। খেলা হয়নি কোনো প্র্যাকটিস ম্যাচ। বসুন্ধরা কিংস তাদের খেলোয়াড় আট খেলোয়াড়কে না ছাড়ায় এই প্রস্তুতির ঘাটতি। বাফুফের কর্মকর্তারাতো বলছেনই, ক্লাব ফুটবলার না ছাড়লে আমাদের কি করার আছে। ঠিক মতো প্রস্তুতি না থাকলে এমনটাতো হবেই।
বসুন্ধরা কিংস খেলোয়াড় ছাড়েনি, এখন এই যুক্তি সামনে আনা হবেই। কিন্তু ফুটবলাররাতো প্র্যাকটিসেই ছিলেন। ওমান থেকে ১৪ নভেম্বর ম্যাচ খেলে এসেই কয়েকদিনের বিশ্রামে যান জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা। এরপর তারা যার যার ক্লাব অনুশীলনে যোগ দেন। সুতরাং তাদের ফিটনেসে কোনো ঘাটতি ছিল না। আর নেপাল যাওয়ার আগে যে টিম কম্বিনেশনের অভাবের কথা বলা হচ্ছে সেটাও কি যুক্তিযুক্ত? এই ফুটবলারাই তো এর এক সপ্তাহ আগে ন্যাশনাল টিমের ক্যাম্পে ছিলেন। এস এ গেমসের চার ম্যাচে বাংলাদেশ দলে যারা খেলেছেন তাদের মধ্যে একমাত্র মিডফিল্ডার আল-আমিন ছাড়া সবাই বিশ^কাপ বাছাই দলে ছিলেন। তাহলে কিভাবে টিম কম্বিনেশনের কমতির কথা বলা হচ্ছে।
দায় কি এড়াতে পারেন খোদ কোচ জেমি ডে? তার তো অধিকাংশ সময়ই কাটে নিজ দেশে। জাতীয় দলের খেলা হলে আসেন, ক্যাম্প করেন এরপর ফের ইংল্যান্ডগামী বিমানে ওঠা। নিশ্চিত নেপাল থেকে ফিরে আবার দেশে চলে যাবেন। অথচ ১৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে ফেডারেশন কাপ। এবার বসুন্ধরা কিংস খেলোয়াড় না ছাড়ায় যে দিন অনূর্ধ্ব-২৩ দলের ক্যাম্প স্থগিত হয়ে যায় এরপরের দিনই তিনি চলে যান ইংল্যান্ডে। দলের সাথেও তিনি নেপাল যাননি। ইংল্যান্ড থেকে নেপাল গিয়ে যোগ দেন দলের সাথে। ঘরোয়া লিগ বা টুর্নামেন্ট হলে খেলা দেখতে জেমি ডে’র বড্ড অনীহা। তখন থাকেন নিজ বাড়িতে। এতে করে তার পক্ষে লিগে পারফর্ম করা সব ফুটবলারকে দেখা সম্ভব হয় না। ফলে ঘুরে ফিরে যে কয়জনকে নিয়ে তিনি প্রথম থেকে ক্যাম্প করাচ্ছেন তাদের দিয়েই গড়ছেন জাতীয় দল ও অনূর্ধ্ব-২৩ দল। ঠিক যেমনটা ডাচ কোচ লর্ড উইগ ডি ক্রুয়েফ করেছিলেন তার সময়ে। নেপালের কাছে গতপরশু হারের পর জেমি ডে বলেছিলেন, ফুটবলারা ক্লান্ত। নেপাল টানা দুই দিন ম্যাচ খেলে হারিয়েছে মালদ্বীপ ও বাংলাদেশকে। সেখানে লাল-সবুজরা ৫ তারিখে খেলে দুই দিন বিশ্রাম নিয়ে ৮ তারিখে নেপালের সামনে পড়ে। এর পরও বাজে পারফরম্যান্স দেখিয়ে হেরে বসে। ক্লান্ততো হওয়ার কথা ছিল নেপালিদের।
২০১৬ সালে ভুটানের কাছে হারের পর দেশের ফুটবল বড় একটা ধাক্কা খেয়েছিল। এরপর বাকী সর্বনাশটা বাফুফেই করেছিল জাতীয় দলকে ১৭ মাস আন্তর্জাতিক ম্যাচের বাইরে রেখে। পরে সাফ ফুটবল, বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ, প্রীতি ম্যাচ, বিশ^কাপ প্রাক বাছাই এই সব ম্যাচ খেলে সাফল্য পেয়ে আবার জেগে উঠেছিল দেশের ফুটবল। কিন্তু এবারের এস এ গেমসে স্বর্ণের দেখা না পেয়ে ফের ব্যাকসিটে চলে গেল ফুটবল। এখন জানুয়ারির বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে ভালো করে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এরপর মার্চ থেকে শুরু হওয়া বিশ্বকাপ বাছাইয়ের অন্য খেলাগুলোতে।


আরো সংবাদ



premium cement