২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সবার ওপরে সাকিব

-

বিশ্বকাপ ক্রিকেটে আবার রেকর্ড রান অতিক্রম বাংলাদেশের। সে মাইলফলকের নায়ক আবার সাকিব আল হাসান। টানা চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলছেন। এক দশকেরও বেশি সময় বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অলরাউন্ডারদের অন্যতম তিনিÑ সেই খেতাবটি আবার জানান দেয়ার পর বাকি বিশ্ব তাকিয়ে রয়েছে সাকিবের দিকে। এবারের বিশ্বকাপ যেন সাকিবময়। যে বিশাল রানের পাহাড় বাংলাদেশের সামনে দাঁড় করিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তাতে দক্ষতা, দায়িত্বশীলতা, অলরাউন্ডারের খেতাবকে সামনে ধরে, শান্ত মস্তিষ্কে খেলে বাংলাদেশকে তুলে এনেছেন বিশ্বকাপের পয়েন্ট তালিকার ৫ নম্বরে।
দ্বাদশ আসরে স্বপ্নের মতো সময় কাটছে সাকিব আল হাসানের। ব্যাট ও বল হাতে ধারাবাহিকভাবে জ্বলছেন টাইগার অলরাউন্ডার। গত সোমবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। তাতেই বিশ্বকাপের অভিজাত সব ক্লাবে জায়গা করে নিয়েছেন স্টাইলিশ এ বাঁ হাতি। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার অ্যারন ফিঞ্চকে পেছনে ফেলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছেন সাকিব।
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে চার ম্যাচে ৩৪৩ রান করে তালিকায় শীর্ষে ছিলেন অস্ট্রেলিয়া দলের ওপেনার অ্যারন ফিঞ্চ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত সেঞ্চুরির পর পাঁচ ম্যাচে ৩৮৪ রান করে তালিকায় সবার ওপরে আছেন সাকিব। চার ম্যাচে ২৬০ রান নিয়ে ৫ নম্বরে ছিলেন তিনি। উইন্ডিজদের বিপক্ষে ৯৯ বলে ১২৪ রান করে শীর্ষে উঠে আসেন সাকিব। ফিঞ্চ ৩৪৩ রান নিয়ে দ্বিতীয় এবং ভারতের রোহিত শর্মা ৩১৯ রান নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন।
ইংল্যান্ড আসরের প্রথম তিন ম্যাচের একটি সেঞ্চুরি ও দু’টি হাফ সেঞ্চুরি নিয়ে টনটনে নামেন সাকিব। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেই দারুণ এক রেকর্ড গড়েন। মাত্র চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরের প্রথম চার ইনিংসে ৫০ বা ততোধিক রানের সংগ্রহ গড়ার কীর্তি গড়েছেন সাকিব। অসাধারণ কীর্তির দিনে হাফ সেঞ্চুরিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিয়েছেন সাকিব। ৮৩ বলে ১৩ চারের সাহায্যে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারের দেখা পান বিশ্বের নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার। এর আগে সিধু, শচিন ও গ্রায়েম স্মিথ বিশ্বকাপের এক আসরের প্রথম চার ইনিংসে ফিফটি প্লাস রান করার কীর্তি গড়েন। সিধু ১৯৮৭ বিশ্বকাপে এই রেকর্ড গড়েন। শচিন ১৯৯৬ সালে ও স্মিথ ২০০৭ বিশ্বকাপে অভিজাত এ ক্লাবে জায়গা করে নেন।
চলতি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৫ রানের ইনিংস খেলে দুর্দান্ত শুরুর ইঙ্গিত দেন সাকিব। দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৬৪ রান করেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচে ১২১ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলার পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে নিলেন ব্যাক-টু-ব্যাক সেঞ্চুরির স্বাদ।
অসাধারণ মাইলফলকের দিনে আরেকটি কীর্তি গড়েছেন সাকিব। আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে ৬ হাজার রান পূর্ণ করেন তামিমের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে। ৬ হাজার রান পূর্ণ করে ওয়ানডেতে ২৫০ উইকেটের সঙ্গে অনন্য ডাবলসের রেকর্ডও স্পর্শ করেন সাকিব। ইতিহাসের মাত্র চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে ৬ হাজার রান ও ২৫০ উইকেটের ডাবলসের রেকর্ড করলেন বাংলাদেশ অলরাউন্ডার। এই অভিজাত ক্লাবে আগে নাম লিখিয়েছেন শহিদ আফ্রিদি, জ্যাক ক্যালিস ও সনাৎ জয়সুরিয়া। তবে ম্যাচের হিসেবে সাকিবই দ্রুততম। গত সোমবার ২০২তম ম্যাচে সাকিব ডাবলসের কীর্তি গড়েন। আফ্রিদি ২৯৪, ক্যালিস ২৯৬ ও জয়সুরিয়া ৩০৪ ম্যাচে ডাবলসের কীর্তি গড়ে ছিলেন।
সাকিবদের সাবেক গুরু ইয়ান পন্ট টুইটারে জানান, সাকিবের সব থেকে বড় গুণ হচ্ছে ও সবসময় শোনে ও শেখে। সে একদম শিশুদের মতো আর দুর্লভ ট্যালেন্ট। এই জয়টা বাংলাদেশের প্রাপ্য। পন্ট মনে করিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমের সেই গানটাও, ‘আমরা করব জয়’।
অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের সাবেক তারকা ব্যাটসম্যান হার্শেল গিবস। ‘সাকিব এই বিশ্বকাপের বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান। দারুণ চিত্তাকর্ষক, আরেকটি সেঞ্চুরি আসছে।’
টাইগারদের এমন জয়ের কৃতিত্ব কোচিং স্টাফদেরকেও দিলেন অলরাউন্ডার সাকিব। তার মতে ড্রেসিংরুমে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখেন কোচিং স্টাফরা। বিশেষ করে বাড়তি চাপ মাথায় নেয়ার ব্যাপারটি দূর করার জন্য কোচিং স্টাফরা যথেষ্ট সাহায্য করেন। সাকিবের কথায়, ‘আগে যেটি হতো যে আমরা ড্রেসিংরুমে প্যানিক করে ফেলতাম। এটা অনেক বড় সমস্যা ছিল। এখন ভালো ব্যাপার হচ্ছে যে কোচিং স্টাফরা এত শান্ত থাকে যে আমাদের আসলে প্যানিক হওয়ার সুযোগটি আসে না। যখন দেখি যে কেউ রেডিও শুনছে বা গল্প করছে, কোনো স্টেজেই মনে হয় না যে ওরা কোনোভাবে টেনশন নিচ্ছে। কোচিং স্টাফরা এই বিষয়টি ড্রেসিংরুমে দেয়ার চেষ্টা করছে এবং আমার কাছে মনে হয় এটি অনেক বড় একটি কারণ আমাদের এরকমভাবে রান তাড়া করার।’

 

এখন পর্যন্ত সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যান

ব্যাটসম্যান ম্যাচ রান সর্বোচ্চ ১০০/৫০ ৪/৬
সাকিব ৪ ৩৮৪ ১২৪* ২/২ ৪৩/২
জো রুট ৫ ৩৬৭ ১০৭ ২/২ ৩২/২
অ্যারন ফিঞ্চ ৫ ৩৪৩ ১৫৩ ১/২ ৩০/১৪
রোহিত শর্মা ৩ ৩১৯ ১৪০ ২/১ ৩০/৬
ডেভিড ওয়ার্নার ৫ ২৮১ ১০৭ ১/২ ২৬/১


আরো সংবাদ



premium cement