২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

টস জিতে ফিল্ডিং কতটা সঙ্গত

উইকেট নিলেন সাইফ। তারপর মিরাজের সাথে আনন্দে মেতে উঠলেন : এএফপি -

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে টস জিতে পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ যখন ফিল্ডিং নিয়েছেন তখন অনেকেই নাক সিটকিয়েছেন। ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের বিপক্ষে কী করে পাকিস্তান ফিল্ডিং নিলো সে সমালোচনা ছিল ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করার নজির দেখল বিশ্বক্রিকেটপ্রেমীরা। সে তালিকায় ছিল বাংলাদেশের অসংখ্য ক্রীড়াপ্রেমী ও বোদ্ধারা। আর গতকাল একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করল বাংলাদেশ। টনটনে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গতকাল টসে জিতে আগে ফিল্ডিং নিয়েছেন মাশরাফি। এর আগের ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও একই সিদ্ধান্ত নিয়ে বড় পরাজয়ের পর সমালোচনার মুখে পড়েছিল টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি। তাতেই গতকাল অধিনায়কের সিদ্ধান্তের পর প্রশ্ন উঠেছে টস জিতে ফিল্ডিং নেয়াটা কতটা সঙ্গত।
অভিজ্ঞ মাশরাফি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টসে জিতে আগে বোলিং করার সিদ্ধান্তের পর শুরুটা হয়েছিল চমৎকার। নির্দয় গেইলকে দ্রুত ফিরিয়ে শুরুর ১০ ওভারে ক্যারিবীয়দের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে বাংলাদেশ। কিন্তু ‘সকালের সূর্য ওঠা দেখে দিনটা কেমন যাবে’ উক্তিটি পরবর্তীতে ঠিক থাকেনি। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় উইন্ডিজের দুই ব্যাটসম্যান এভিন লুইস ও শাই হোপ। ২৪.৩ ওভার পর্যন্ত টিকে ছিলেন ওপেনার লুইস। দলকে ১২২ রান পর্যন্ত নিয়ে সাজঘরে ফিরেন তিনি (৭০)। প্রথমে গেইলকে ফিরিয়ে যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছিল সেটি ক্রমেই ধোঁয়াশা হতে থাকে। অথচ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাশরাফির ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্তের বাজে প্রভাব পড়তে শুরু করেছিল প্রথম থেকেই। শেষতক ১০৬ রানের বিশাল পরাজয় হজম করে সিদ্ধান্তের খেসারত দিয়েছিল মাশরাফি গংরা।
উঠে আসে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের টস সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা সমালোচনা। পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইমরান খান টুইটারে পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদকে টস জিতলে ব্যাটিং নেয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু সরফরাজ আহমেদ সেই পরামর্শ আমলে না নিয়ে ফিল্ডিংকেই যুতসই মনে করেন। এবারের বিশ্বকাপে টস জিতে বেশির ভাগ দলের মতো তিনিও ফিল্ডিং নিয়েছেন। এর পেছনে সবাই বৃষ্টিকে যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন। বৈরী আবহাওয়ায় পিচের আর্দ্রতাকে কাজে লাগিয়ে শুরুতে বোলিং করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে দলগুলোর মাঝে। গতকালসহ ২৩টি ম্যাচের ১৬টিতেই অধিনায়কেরা আগে প্রতিপক্ষকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ বাদে ১৬টি ম্যাচের মধ্যে ১৫টি ম্যাচে ফলাফল হয়েছে আর একটি ম্যাচ ভেসে গেছে বৃষ্টিতে। ফলাফল হওয়া ১৫টি ম্যাচের মাঝে আগে ফিল্ডিং করা দল ৬টি ম্যাচে জয় পেয়েছে। বাকি ৯টিতে হেরেছে। আবার টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে তিন ম্যাচে দু’বারই হেরেছে টসজয়ী দল।
এই পরিসংখ্যানকে আমলে নিলে একটি বিষয় সামনে আসে, আর তা হচ্ছে দিন শেষে টস জিতে ব্যাটিং বা ফিল্ডিং বেছে নেয়া জয়-পরাজয় নির্ধারণে তেমন একটা ভূমিকা রাখছে না। কারণ পিচের আর্দ্রতার সুবিধা কাজে লাগাতে বোলিং আক্রমণ হওয়া চাই গতি-বৈচিত্র্যে ভরা। বাজে বোলিং আক্রমণ নিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে টসের সিদ্ধাস্তকে দোষারোপ করা অমূলক। আবার ভালো ব্যাটিং লাইনআপ ছাড়া আগে ব্যাট করেও লাভ হচ্ছে না কারো।
আগেই সবার জানা ছিল টনটনের মাঠ আকারে ছোট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো মারকুটে এবং পেশিশক্তির ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে চার পেসার খেলানোর কথা থাকলেও টিম ম্যানেজমেন্ট ও অধিনায়ক তিন স্পিনেই কেন ভরসা করলেন সেটিও একটি প্রশ্ন। যেখানে রুবেল হোসেন ধরেই নিয়েছিলেন টনটনে তার অভিষেক হচ্ছে। সব পরিকল্পনা পাল্টে দিয়ে মিঠুনকে বাদ দিয়ে নেয়া হলো লিটন দাসকে। পেসার মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাইফউদ্দিন, মুস্তাফিজুর রহমানকে রেখে স্পিনে রাখা হয়েছে সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে। একমাত্র সাকিবই ৮ ওভারে ৫৪ রান খরচায় পেয়েছেন দুই উইকেট। মিরাজ ৯ ওভারে ৫৭ রান ও মোসাদ্দেক ৬ ওভারে ৩৬ রান খরচ করে উইকেটশূন্য ছিলেন। পেসারদের মাঝে মুস্তাফিজ ৯ ওভারে ৫৯ রানে পেয়েছেন ৩ উইকেট, সাইফউদ্দিন ১০ ওভারে ৭২ রানে ৩ উইকেট পেলেও অধিনায়ক ৮ ওভারে ৩৭ রান খরচায় ছিলেন উইকেটশূন্য। শেষ পর্যন্ত ৩২১ রানে থামে ওয়েস্ট ইন্ডিজদের ইনিংস। বাংলাদেশ জয়ী হলে সব কিছু দেখা হবে স্বাভাবিক নিয়মে। ব্যতিক্রম হলে টস সিদ্ধান্ত এবং পেসার কম খেলানোর প্রশ্নে ঝাঁঝরা হবেন মাশরাফি। তা সহজেই অনুমেয়।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল