২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ভারতেরই দখলে সাফের শ্রেষ্ঠত্ব

-

টানা পঞ্চম শিরোপা নিশ্চিতের পর বিরাতনগরের শাহিদ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে পতাকা হাতে দৌড়াচ্ছিলেন ভারতীয় ফুটবলাররা। তাদেরকে হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানাতে দেখা গেল না কাউকে। বরং স্থানীয়রা বেশি ব্যস্ত নেপাল দলকে নিয়েই। গ্যালারি ভর্তি দর্শকরা তাদের মেয়েদের হাততালি দিয়ে এবং কারো কারো সাথে হাত মিলিয়ে সান্ত্বনা দিয়েছেন। এর মাধ্যমে নেপালিদের একধরনের হতাশা লাঘবেরই চেষ্টা। তারা এসেছিলেন প্রিয় দলের প্রথম বারের মতো সাফ শিরোপা জয়ের উল্লাস দেখতে। অথচ শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফিরতে হলো হার নিয়েই। কাল এই নেপালকে ফাইনালে ৩-১ গোলে হারিয়ে মহিলা সাফের শ্রেষ্ঠত্ব নিজেদের দখলেই রেখে দিলো ভারত। অন্য দিকে অন্তত আরো দুই বছরের জন্য অপেক্ষা নেপালের। আগের তিন আসরের মতো এবারো রানার্সআপ তারা। ২০১৬তে অবশ্য তাদের বিদায় সেমিতে এই ভারতের কাছে হেরে।
ভারত কাউন্টার অ্যাটাকে ভয়ঙ্কর। তাদের আছে গতিসম্পন্ন কয়েকজন ফরোয়ার্ড এবং মিডফিল্ডার। বাংলাদেশের বিপক্ষে সেমিফাইনালের দিন তা জানিয়েও দেয় ভারত। এ থেকে কোনো শিক্ষাই নেননি নেপালের কোচ হরি খাড়কা। লাল-সবুজদের যেভাবে ভারত কাবু করেছিল সেমিতে কাল ফাইনালে ঠিক সেই কৌশলেই স্বাগতিকদের পরাজয়ের স্বাদ দেয় এই উপমহাদেশের সেরা ফুটবল শক্তিটি। নেপালিদের ভাগ্য ভালো আরো বেশি গোল তারা হজম করেনি। ২০ মার্চ গোলাম রাব্বানী ছোটন বাহিনী ১-০তে পিছেয়ে পড়ার পর অলআউট আক্রমণে গিয়ে অরক্ষিত রাখে ডিফেন্স লাইন। এই সুযোগে ভারত লবে বল ফেলে কাউন্টার অ্যাটাকে আরো তিন বার পরাস্ত করে রুপনা চাকমাকে। কাল সেমিতে বিরতির পর সেই ভুলই করেন নেপালের কোচ। ভারতকে চেপে ধরে লিড নিতে আক্রমণে ওঠে। ডিফেন্স লাইন তখন মাঝরেখার কাছে। এই সুযোগের অপেক্ষায় থাকা ভারতীয়রা ৬২ মিনিটে দ্বিতীয় দফা লিড নেয়। এরপর ৭৬ মিনিটে আবার গোল। ফলে ম্যাচের ১৪ মিনিট আগেই আগাম সাফ এবং নেপাল জয়ের উৎসব শুরু।
এই ভুল কিন্তু প্রথমার্ধে করেনি নেপাল। ২৬ মিনিটে গোলরক্ষক আঞ্জিলার ভুলে মাঝ মাঠ থেকে ফ্রি-কিকে ভারতকে এগিয়ে নেন দালিমা চিবের। নেপালি কিপার বলের ফ্লাইট মিস করার তা চলে যায় জালে। এরপর নেপাল মরিয়া আক্রমণে না গিয়ে পরিকল্পিত আক্রমণে ওঠে ৩৩ মিনিটেই সমতা আনে। লব থেকে আসা বলে সামনে থাকা ডিফেন্ডারকে টপকে হেডে সাবিত্রা ভান্ডারী পরাস্ত করেন ভারতের ইউরোপিয়ান লিগে খেলা গোলরক্ষক অদিতি চৌহানকে। বিরতির পর অতি-আক্রমণাত্মক হতে গিয়েই সব শেষ নেপালিদের।
অবশ্য এই সাবিত্রা যদি আরো তিনটি মিস না করতেন তাহলে হয়তো লিখতে হতো নেপালিদেরই প্রথম সাফ জয়ের কাহিনী। প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে তার পর পর দু’টি শট রুখে দেন ভারতীয় কিপার। খুব কাছ থেকে নেয়া সাবিত্রার প্রথম শট ডান দিকে শরীর ফেলে আটকে দেন অদিতি। ফিরতি বলে সাবিত্রার শটে পা লাগিয়ে তা কর্নার করেন। ৮২ মিনিটে আবার সাবিত্রা হতাশ এই অদিতির প্রতিরোধে।
প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমের ওই দুই দফা বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া ভারত ৬২ মিনিটে ফের এগিয়ে যায়। ডিফেন্স থেকে আসা লবে বলের দখল নেন গ্রাসি দাংমেই। এরপর আগুয়ান কিপার এবং এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বল গোললাইন অতিক্রম করান। ৭৬ মিনিটে পাল্টা আক্রমণ থেকে বল নিয়ে সতীর্থের সাথে ওয়াল করে এরপর দলের জয় এবং শিরোপা নিশ্চিত করেন অঞ্জু তামাং। এ নিয়ে সাফের ফাইনালে ভারতের কাছে চারবার হার নেপালের।
ম্যাচ শেষে ভারতের কোচ মায়মল রকি বললেন, ‘১-১ এ প্রথমার্ধ শেষের পর আমি খেলোয়াড়দের বলেছি তোমরা স্বাভাবিক খেলা খেল। তারা তাই করেছে এবং আমাদের চ্যাম্পিয়নশিপ ধরে রাখার মিশন সফল হয়েছে।’ নেপালের কোচ হরি খাড়কার বক্তব্য, এই ম্যাচ ছিল ফিফটি-ফিফটি। ভারত প্রাপ্ত চান্স কাজে লাগিয়ে জিতেছে। আমরা গোল মিসের খেসারত দিয়েছি।


আরো সংবাদ



premium cement