২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কতটা এগিয়েছে মহিলা ফুটবল?

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দল :বাফুফে -

‘মহিলা ফুটবলে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ভুটান একই পর্যায়ে। সাফ অঞ্চলে এই চার দেশের চেয়ে এগিয়ে ভারত ও নেপাল।’ এবারের সাফের প্রথম সেমিফাইনাল শেষে সংবাদ সম্মেলনে শ্রীলঙ্কার সহকারী কোচ ধাম্মিকা আথুকোরালার এই মন্তব্যে একটু বিস্ময়ই ঠেকল। এখনো কি বাংলাদেশের মহিলা ফুটবল দুই দ্বীপরাষ্ট্র এবং এক পাহাড়ি দেশের সমপর্যায়ের আছে? পাঁচ সাফের তিনটির সেমিফাইনালিস্ট, একটির রানার্সআপ। ভুটান এখনো গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়। মালদ্বীপ একবারই সেমিতে খেলেছে। এদের চেয়ে একটু এগিয়ে লঙ্কানরা। তাদের সাফের সেমিতে খেলার অভিজ্ঞতা তিনবার। সিনিয়রদের বাইরে বয়সভিত্তিক ফুটবলে বাংলাদেশ দুইবার সাফ চ্যাম্পিয়ন। একবার রানার্সআপ। অনূর্ধ্ব-১৬তে এশিয়ার সেরা আটে তিন বছর ধরে। এর ধারে কাছেই তো নেই বাকি তিন দেশ। তাহলে কিভাবে তাদের সাথে এক কাতারে ফেলা হলো লাল-সবুজদের?
ধাম্মিকা আথুকোরালার এই মন্তব্য সঠিক হতে অবশ্য তিন ঘণ্টার বেশি সময় লাগেনি। ২০ মার্চ বিকেলেই বাংলাদেশ চলে এলো লঙ্কানদের সারিতে। সকালে প্রথম সেমিতে নেপাল ৪-০তে পরাজিত করে শ্রীলঙ্কাকে। বিকেলে ভারতও অপর সেমিতে ৪-০তে হারায় ছোটন-সাবিনার দলকে। এর আগে গ্রুপ ম্যাচে ভারত ৫-০তে লঙ্কানদের এবং নেপাল ৩-০তে পরাজিত করে বাংলাদেশকে। শ্রীলঙ্কান কোচের এই মন্তব্য আর ম্যাচগুলোর রেজাল্ট প্রশ্ন জাগাচ্ছে, আসলেই কতটা এগিয়ে বাংলাদেশের মহিলা ফুটবল। এ অবস্থার মধ্যে গতকাল দেশে ফিরেছে ছোটন বাহিনী। তাদের এখন লক্ষ্য, এপ্রিলের বঙ্গমাতা আন্তর্জাতিক ফুটবল।
এবারের সাফ মিশন ব্যর্থই বলতে হবে বাংলাদেশের জন্য। তারা গত আসরের ফাইনালিস্ট। মানে রানার্সআপ। এবার তাদের লক্ষ্য থাকা উচিত ছিল আরো একধাপ এগিয়ে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখা। কিন্তু দলটি তিন ম্যাচের দু’টিতে পরাজিত হয়ে এবং ভুটানকে হারিয়ে শুধু সেমিতে ওঠার প্রথম লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছে। কিন্তু সেমিতে ভারতের কাছে নাস্তানাবুদ হয়ে দ্বিতীয় লক্ষ্য ফাইনালে খেলতে ব্যর্থ।
গত সাফে তারা ভারতকে টপকে গ্রুপ সেরা হয়েছিল, যা তাদের সেমিতে দুর্বল মালদ্বীপকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো ফাইনালে যেতে সহায়তা করে। এবার তারা ‘এ’ গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো কোনো কাজই করতে পারেনি। পারেনি গ্রুপে ভুটানকে কমপক্ষে চার গোল দিতে বা এরপর শেষ ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে কাক্সিক্ষত জয় পেতে। জিততেই হবে এই পরিস্থিতিতে উল্টো হার। ফলে গ্রুপ রানার্সআপ হয়েই তাদের সেমিতে ভারতের মুখে পড়তে হয়। অথচ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে সেমিতে পেত অপেক্ষাকৃত দুর্বল লঙ্কানদের।
ভারত ও নেপালই এই মুহূর্তে সাফে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিপক্ষ। এই দুই দলের বিপক্ষে একটি করে ড্রই আছে। এবার সেই ড্রও করা সম্ভব হয়নি। বরং দুই ম্যাচে তাদের কাছে ৭ গোল হজম। ২০১০-এর সাফে পরপর দুই খেলায় ৯ গোল হজম করেছিল লাল-সবুজেরা। তা এদেরই কাছে। নেপাল ২০১০ এবং ২০১৬ সালে বাংলাদেশকে ৩-০তে হারিয়েছিল। এবার আবার তারা একই ব্যবধানে জয় পেল। ভারত অলিম্পিক এবং সাফ মিলিয়ে পরপর দুই মোকাবেলায় বাংলাদেশের জালে ১১ বার (৭-১ ও ৪-০) বল পাঠিয়েছে। আগে বাংলাদেশ দলের অনুশীলন হতো স্বল্প সময়ের জন্য। তখন ভারতের কাছে ৬-৭ গোলে হারের বিষয়টি মানা যেত; কিন্তু এখন টানা প্রশিক্ষণে থেকে থাকা দলের এই রেজাল্ট কি গ্রহণযোগ্য? ফলাফল জানিয়ে দিচ্ছে, আগের অবস্থানেই দেশের মহিলা ফুটবল।
এই প্রসঙ্গে কোচ ছোটনের জবাব, ‘অবশ্যই এখন মহিলা ফুটবলে অনেক উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। এখন আমরা পুরো নব্বই মিনিটই খেলতে পারছি শক্তিশালী দলের বিপক্ষে।’ টেকনিক্যাল এবং স্ট্র্যাটিজিক্যাল অ্যান্ড টেকনিক্যাল ডিরক্টর পল স্মলির বক্তব্য, অবশ্যই এগিয়েছে মহিলা ফুটবল। দেখুন কতজন অনূর্ধ্ব-১৬ এবং অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলার খেলছে জাতীয় দলে। এরাই তো উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। এদের নিয়েই আমি আশাবাদী।

 


আরো সংবাদ



premium cement