১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দুঃখ নিয়ে ঢাকা ছাড়লেন বিদেশী কোচ

-

তিন মাসের জন্য ব্যাডমিন্টন এশিয়া থেকে বাংলাদেশে আসলেন মালয়েশিয়ান কোচ অরভিন্দ বর্মা। শুরুতে যতটা আগ্রহ নিয়ে কাজ শুরু করেন ঠিক ততটাই আঘাত পেতে থাকেন শেষের দিকে। ক্লাসরুমে যদি ১৪ জনের মাঝে দু‘চারজন (এলিনা, শাপলা, উর্মি, রেশমা) নিয়মিত উপস্থিত থাকেন তাহলে সেই শিক্ষকের অবস্থা সহজেই উপলদ্ধি করা যায়। এমনিতেই করুণ অবস্থা প্রশিক্ষণ নিয়ে তার ওপর বিদায়ের প্রাক্কালে তাকে সঙ্গ দেয়নি ফেডারেশনের কোনো কর্মকর্তা। মহৎ এই কোচকে বিদায় জানালেন ফেডারেশনের এক অফিস বয়।
তবে এগুলো নাড়া দেয়নি অরভিন্দকে। তিনি মর্মাহত হয়েছেন শাটলারদের ক্যাম্পে অনুপস্থিত থাকা। অথচ কী উন্নত মানসিকতা নিয়েই তিনি এসেছিলেন বাংলাদেশে। ব্যাডমিন্টন এশিয়ার কোচ হয়েই প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে পাকিস্তান গিয়েছেন অরভিন্দ। তুলনা করে বলেন, ‘তোমাদের ট্যালেন্ট বেশি এবং শেখার আগ্রহ প্রচুর। সবাই যদি টাস্কগুলো ঠিকমতো করে তাহলে উন্নতির মুখ দেখবে। তবে এটি এক-দু’দিনের ব্যাপার নয়। সাধনা করতে হবে। এলাম-খেললাম-চলে গেলাম। তাহলে হবে না। মানসিকতায় গভীরভাবে লালন করতে হবে। মেন্টালিটি, এক্সপোজ, ইন্টারন্যাশনাল গেম, স্ট্র্যাজেডি ডেভেলপ করতে চাই।’
কিন্তু বাংলাদেশের শাটলারদের নিয়ে তার উচ্চাসা তিমিরেই রয়ে গেল। ঢাকা ছাড়ার আগে বলে গেলেন, ‘তোমাদের প্রতিভা আছে বিকাশের সুযোগও আছে কিন্তু তোমরা সেটি মনের মধ্যে লালন কর না। এটিকে তোমরা খেয়াল-খুশি মতো ব্যবহার করছো। আন্তরিকতা নেই। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেউ সুযোগ হাতছাড়া করে, তোমাদের এখানে না এলে বুঝতাম না।’
অরভিন্দের কাছে নিয়মিত প্রাকটিস করা শাপলা আক্তার জানান, ‘আর কারো হোক না হোক আমি অনেক উপকৃত হয়েছি। ফিটনেস বেড়েছে। এখন আমাদের যা দরকার তা হলো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলতে পারা। তখনি বুঝা যেত আমার কতটুকু উন্নতি হয়েছে। দেশে তো শুধু আমি আর এলিনা। ক্যাম্পের আগে নেপালে খেলে এসেছি। এখন যদি অন্য কোনো দেশের শাটলারদের সাথে খেলার সুযোগ হতো তাহলে কনফিডেন্স লেভেল বাড়ত।’
ফেডারেশন বিষয়ে শাপলা বলেন, ‘বলতে বলতে এখন নিজেদেরই লজ্জা লাগে। কিন্তু ফেডারেশন বাস্তবে কোনো উদ্যোগ নেয় না। আজ কেন অন্য মেয়েরা ব্যাডমিন্টনে নিরাপদ নয়। যারা নারী কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত তারা যেন ফেডারেশনে থাকতে না পারে। আমার ও এলিনার স্বামী আছে বলে কিছুটা নিরাপদ। এক্ষেত্রে অন্যরা কতটা নিরাপদ। মহিলা শাটলার পেতে হলে ফেডারেশনকে আরো মনোযোগী হতে হবে।’
অরভিন্দ এবং প্রাকটিস নিয়ে এলিনা সুলতানার মন্তব্য, ‘অরবিন্দ একজন ভালো মানের কোচ। কিন্তু তার প্রশিক্ষণের মূল্যায়ন তখনি হতো যখন আমরা একটা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলতে পারতাম। ক্যাম্প শেষ হওয়ার পর আমরা এখন ঘুরাঘুরি করব। কী লাভ হবে। বেশি বেশি টুর্নামেন্ট খেলতে পারলে কনফিডেন্স লেভেল বাড়ত। সাফ গেমস যেহেতু খেলতেই হবে তখন এমন প্রাকটিস কন্টিনিউ করা উচিত।’
ছেলে শাটলারদের না আসার কারণ হিসেবে এলিনা মনে করেন, ‘এ ব্যর্থতা ফেডারেশনকে নিতে হবে। আজ যদি শাটলারদের কোনো স্পন্সর কিংবা ফেডারেশন থেকে আর্থিক নিশ্চয়তা থাকত তাহলে তারা খেপ খেলে বেড়াত না। অবশ্যই ক্যাম্পে থাকত।’
ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন বাহার জানালেন, ‘আমরা তাকে ১৪ ফেব্রুয়ারিতেই বিদায় দিয়েছি। তার পাওনা পরিশোধ করেছি। এরপর সে বাড়তি আরো দু’দিন ছিল। এটা ঠিক যে সে সময়ে তার কোনো খবর নেয়া হয়নি।’
জাপান থেকে জাতীয় কোচ এনায়েত উল্লাহ খান জানান, ‘এমন যদি হয়ে থাকে তাহলে তা মোটেও উচিত হয়নি। একজন বিদেশী কোচের সাথে কী সৌজন্যতা দেখানো উচিত তা আমরা কবে শিখব। আমি দেশে থাকলে মোটেও এ রকম হতো না।’

 


আরো সংবাদ



premium cement