২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মোহামেডানের টানা চতুর্থ হার

মোহামেডান (বাপ্পী)১:২ (ড্যানিশ, দেইনার)সাইফ স্পোর্টিং
-

গ্যালারিতে উপস্থিত মুষ্টিমেয় দর্শকের গালমন্দ শুনতে শুনতে স্টেডিয়াম থেকে বের যেতে হলো দলের এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে। ডাগ আউটে তখন আত্মসমালোচনায় লিপ্ত কয়েক ফুটবলার। বাকিরা একেবারেই নিশ্চুপ। কোচ আলী আসগর নাসিরের মুখ দিয়ে বের হচ্ছিল না কে দলের একাদশ গড়েন আর কে ফুটবলার বদল করেন। গতকাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে হারের পর এই ছিল মোহামেডান শিবিরের চিত্র। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় দল তারা। এখনো পেশাদার লিগে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও পাঁচ বছর আগেও জিতেছিল স্বাধীনতা কাপ। সেই দলেরই এখন করুন অবস্থা। টানা চার হারের লজ্জা এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে। পেশাদার লিগে এবারই প্রথম টানা চার ম্যাচে পরাজয় সাদা কালো শিবিরে। কাল তাদের বিপক্ষে ২-১ গোলের জয় দিয়ে শিরোপার রেসে টিকে থাকলো সাইফ স্পোর্টিং। ৬ খেলায় ১৩ পয়েন্ট তাদের। অন্য দিকে মোহামেডানের সংগ্রহ ৫ খেলায় ৩। ৬ খেলায় ১৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ঢাকা আবাহনী। ৪ খেলায় ১২ পয়েন্ট বসুন্ধরা কিংসের।
কেন টানা চার হার মোহামেডানের? কোচ নাসির এ জন্য মানহীন ফুটবলার সংগ্রহকেই দায়ী করলেন। তার মতে, ‘দলের এটাইতো সংগ্রহ। এদের মধ্যে যে বেশি ভালো তাকেই খেলাচ্ছি।’ তবে জাপানি মিডফিল্ডার উরু নাগাতার ইনজুরি দলকে ভোগাচ্ছে বলে উল্লেখ করলেন তিনি। তবে এখনো তিনি স্বপ্ন দেখেন ঘুরে দাঁড়ানোর। এ জন্য মধ্যবর্তী দল বদলে খেলোয়াড় বদলের পরামর্শ তার। আরো জানান, সাইফের বিপক্ষে ম্যাচে আমরা নিশ্চিত গোলের চান্স কাজে লাগাতে পারিনি। অন্য দিকে সাইফ ২০ শতাংশ চান্সের বলে গোল করেছে। এটার জন্য ভাগ্যও দায়ী।
ম্যাচের ১১ মিনিট বয়সে লিড সাইফের। দক্ষিণ কোরিয়ান মিডফিল্ডার সিউল গিল পার্কের পাস থেকে গোলরক্ষক সারোয়ার জাহানের মাথার উপর দিয়ে বল জালে পাঠান রাশিয়ান স্ট্রাইকার ড্যানিশ বলশাকভ। ক’দিন আগে বাবা হারানো ডিফেন্ডার মিন্টু শেখ বলটি হেডে ক্লিয়ার করলে এই গোল হতো না, মন্তব্য কোচের। ২৮ মিনিটে অবশ্য কপাল জোরে দ্বিতীয় গোল হজম থেকে রক্ষা ঐতিহ্যবাহী দলটির। বক্সে পার্ককে ফাউল করেন গোলরক্ষক সারোয়ার। রেফারি সুজিত ব্যানার্জী চন্দনের দেয়া পেনাল্টি থেকে শট নেন পার্ক। কিন্তু তা প্রতিহত হয় পোস্টে। এরপর ৩৮ ও ৪২ মিনিটে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার কর্নারে রাফির দু’টি হেড বার উঁচিয়ে গেলে ব্যবধান বাড়েনি।
অবশ্য ৪৭ মিনিটে দ্বিতীয় গোল আদায় গত বছর এএফসি কাপের প্লে-অফে খেলা সাইফের। পরিকল্পিত আক্রমণ থেকে পার্কের পাসে ডান পায়ের শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন কলম্বিয়ান স্ট্রাইকার দেইনার আন্দ্রেস কর্দোভা। এরপর গোল পরিশোধে মরিয়া চেষ্টা চালায় মোহামেডান। ৬৮ মিনিটে আমির হাকিম বাপ্পীর হেডে পরাস্ত গোলরক্ষক জিয়া। পাশবনের কর্নারে নাইজেরিয়ান এনকৌচা কিংসলের হেডে ব্যাক হেড নেন বাপ্পী। গত বছর বিসিএলে অগ্রণী ব্যাংকের হয়ে ৬ গোল করা বাপ্পীর এটাই প্রিমিয়ারে প্রথম গোল।
শেষ ১৫ মিনিটে সাদা কালো শিবির ড্র করতে সাঁড়াশি আক্রমণ চালায়। সাইফ স্পোর্টিং তখন ছন্ন ছাড়া। কিন্তু দ্বিতীয় গোল আর পায়নি নাসিরের দল। ৯০ মিনিটে বাপ্পীর আরেকটি হেড গোলরক্ষক সোজা যাওয়ায় টানা চার হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় মোহামেডানকে। দলটি এর আগে গত তিন ম্যাচে মাথানত করে মাঠ ছেড়েছিল আরামবাগ, ব্রাদার্স ও শেখ রাসেলের কাছে হেরে। দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার পর মোহামেডান মাঠে নামায় দুই স্ট্রাইকার এমিলি ও মিঠুনকে। তারা কিছুই করতে পারেননি বিপক্ষ কিপার জিয়ার দিকে তেড়ে যাওয়া ছাড়া। হলুদ কার্ডও পান দুইজনে।
ম্যাচ শেষে দলের জয়ে সাইফের ইংলিশ কোচ জোনাথন ম্যাকেনট্রি খুশি হলেও তার আপত্তি রেফারিং নিয়ে। জানান, রেফারি আমাদের খেলোয়াড়দের অযথা কার্ড দেখিয়েছে। দেয়নি দু’টি ন্যায্য পেনাল্টি। তবে শেষ দিকে আমরা ভালো খেলতে পারিনি ফুটবলাররা কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়ায়।
মোহামেডান এর আগে ২০১০ সালের লিগে এবং গত বছর টানা তিন ম্যাচে হেরেছিল। এবার চার ম্যাচ হেরে করেছে রেকর্ড।

মোহামেডানের টানা হারগুলো
২০১০
রহমতগঞ্জ ২-০ মোহামেডান
ব্রাদার্স ২-০ মোহামেডান
মুক্তিযোদ্ধা ১-০ মোহামেডান
২০১৭
শেখ জামাল ২-০ মোহামেডান
চট্টগ্রাম আবাহনী ১-০ মোহামেডান
ঢাকা আবাহনী ১-০ মোহামেডান
২০১৮-১৯
আরামবাগ ৩-০ মোহামেডান
ব্রাদার্স ১-০ মোহামেডান
শেখ রাসেল ৩-০ মোহামেডান
সাইফ ২-১ মোহামেডান

 


আরো সংবাদ



premium cement