২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নিজের কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে দিলেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী

-

দেশে ক্রীড়া ফেডারেশন, ক্রীড়া অ্যাসোসিয়েশন ও ক্রীড়া সংস্থা মিলে ৫৩টি। দায়িত্ব নিয়েই গতকাল সব ফেডারেশনের ও অ্যাসোসিয়েশনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে মতবিনিময় করলেন নতুন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী। এই মতবিনিময়ে ফেডারেশনগুলো যথারীতি তাদের অভাব-অভিযোগ, সাফল্য, সম্ভাবনা ও চাহিদাগুলো তুলে ধরলেন। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল মনোযোগ দিয়ে শুনলেন সবার কথা। নিজ হাতে নোটও করলেন অনেক কিছু। নির্দিষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি বা আশ্বাস তিনি দেননি। তবে পরিষ্কার করে দিয়েছেন তার কঠোর অবস্থানের কথা। কাজ না করে বছরের পর বছর ফেডারেশনের সভাপতি-সেক্রেটারির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ আঁকড়ে থাকার সুযোগ নেই। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ টাওয়ারে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী স্পষ্ট করেন, ‘ক্রীড়ার প্রতি ভালোবাসা না থাকলে এমন লোকদের না থাকাই ভালো। এমনও লোক ফেডারেশনে আছেন যারা খেলাধুলার খোঁজও রাখেন না।’ জাহিদ আহসান রাসেল কঠোর ভাষায় জানান, ‘আমি কী কাজ করছি আমার সেই কাজ দেখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আছেন। আর আপনারা কী কাজ করছেন তা দেখার জন্য আমি আছি।’
এসব ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে ২১টিতেই নির্বাচিত কমিটি নেই। চলে অ্যাডহক কমিটি দিয়ে। এসব ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনে নির্বাচনের গুরুত্ব তিনি উল্লেখ করলেন। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য, নির্বাচিত কমিটি না থাকলে আশানুরূপ ফলও পাওয়া যায় না। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী হিসেবে জাহিদ আহসান রাসেল নতুন হলেও ক্রীড়াঙ্গনে তিনি বেশ পুরনো। দুই মেয়াদে তিনি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান। তাই ক্রীড়াঙ্গনের নাড়ি নক্ষত্র তার জানা। সেটি তিনি উল্লেখও করলেন। জানান, ‘আমি সবাইকেই চিনি। জানি তারা কী কাজ করছেন।’
বিভিন্ন ফেডারেশনের দাবি-দাওয়া সম্পর্কে এই প্রতিমন্ত্রীর জবাব, আপনারা লিখিত আকারে আপনাদের ১, ৩, ৫ বছরের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার কথা জানান। তাহলে এগুলো নিয়ে আমি অর্থের জন্য কথা বলতে পারব অর্থমন্ত্রীর সাথে। অর্থমন্ত্রীর সাথে আমার প্রাথমিক কথা হয়েছে। উনি ক্রীড়াঙ্গনেরই লোক। সহযোগিতা করতে প্রস্তুত তিনি। উনি বলেছেন প্রজেক্ট দিতে। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী উল্লেখ করলেন, যতই বাজেট হোক না কেন কার্যক্রম না থাকলে বাজেটে কাজ হবে না।
দেশে ক্রমেই খেলার মাঠ কমে যাচ্ছে। তা নিজের খেলোয়াড়ি জীবনের কথা টেনে এনেই বললেন, আগে টঙ্গীর যেসব মাঠে খেলতাম এখন সেখানে ২-৩টির বেশি মাঠ নেই। তার বক্তব্য, খেলাধুলাই পারে যুব সমাজকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ এবং মাদক থেকে মুক্ত রাখতে। নিজের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘আমি খেলাধুলা করেছি বলেই অন্য নেশা তো দূরের কথা কোনো সিগারেট পর্যন্ত খাইনি।’ উল্লেখ্য, ভালো পেস বোলার ছিলেন জাহিদ আহসান রাসেল। ব্যাটিংয়েও ছিলেন দক্ষ।
লম্বা সময় ক্রীড়াঙ্গনের সাথে সম্পৃক্ত থেকে তিনি ভালো করেই জানেন ইনডোর গেমসের জন্য স্থানের খুব অভাব। এ জন্য অলিম্পিক ভিলেজ তথা ক্রীড়া কমপ্লেক্স তার সময়েই করার চেষ্টার কথা বললেন তিনি। জানান, আমি আমার পাঁচ বছরে সবার সহযোগিতা চাই।
ক্রীড়াঙ্গনের জন্য থোক বরাদ্দের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করবেন বলে উল্লেখ করেন। বলেন, প্রধানমন্ত্রী ক্রীড়া বিষয়ে খুবই উৎসাহী। উনি ক্রীড়ার জন্য দিতেই চান।
এটাই যে শেষ নয় ফেডারেশনগুলোর সাথে বসা, তা তিনি নিশ্চিত করেছেন। ‘এটিই শেষ নয়। আমরা ফের বসব ফেডারেশনগুলোর সাথে।’
এই মতবিনিময় সভায় হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সভাপতি নুরুল ফজল বুলবুল ক্রীড়াঙ্গনের জন্য পাঁচ বছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বাজেট প্রণয়নের দাবি করেছেন। তার মতে, ‘প্রধানমন্ত্রী ক্রীড়াবান্ধব, সেনাপ্রধানও ক্রীড়াপ্রেমী, অর্থমন্ত্রীও ক্রীড়াঙ্গনের লোক। আপনিও ক্রীড়ার লোক। তাই এটি সম্ভব।’ বুলবুল নিজে ৫০০ কোটি টাকা জোগাড় করে দেয়ার আশ্বাস দেন। একই সাথে ক্রীড়ার সামগ্রীর জন্য ট্যাক্স ফ্রি করারও দাবি বুলবুলের। ভলিবল ফেডারেশনের সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, আপনারা তিন মাস ট্রেনিং করিয়ে পদক চাইলে আমরা বলব, দুঃখিত। বরং আপনারা বাজেট দিন, টার্গেট দিন, আমরা করে দেখাব। তবে ৯০ দিনে নয়।
ভারোত্তোলন ফেডারেশনের সহসভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ তথ্য দেন, ১৯৮৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ভালোত্তোলন ১০ স্বর্ণসহ ১০২টি আন্তর্জাতিক পদক জয় করেছে। এর মধ্যে আছে দু’টি এসএ গেমস স্বর্ণ। এখন আমাদের দরকার সরঞ্জাম, জিমন্যাসিয়াম, কোচ ও হোস্টেল। দাবা ফেডারেশন সেক্রেটারী সৈয়দ শাহাবুদ্দিন আহমেদ ৩০০ দাবাড়– নিয়ে আসর করার রুম চেয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement