২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গুরুত্বহীন ম্যাচে জয় চাইবে উভয় দল

-

আফগানিস্তান দল যখন একটা ভালো সময়ে তখনই কিনা পদত্যাগ করলেন আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (এসিবি) চেয়ারম্যান আতিফ মসাল। আফগান খেলোয়াড়রা বিষয়টি কিভাবে দেখছেন বা এতে তাদের খেলার ওপর কোনো প্রভাব পড়বে কি না সেটা সময়ই বলে দিবে। তবে এই মুহূর্তে টাইগার অধিনায়ক মাশরাফির ভাবনায় এশিয়া কাপের সূচি। আবুধাবিতে গরমের মধ্যে একটানা খেলতে হবে বলে কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তারপরও আফগানদের বিপক্ষে তরুণদেরকেই বললেন হাল ধরতে।
তামিম ইকবাল ছিটকে গেছেন ইতোমধ্যেই। শোনা যাচ্ছে, মুশফিকুর রহীমকেও বিশ্রাম দেয়া হতে পারে। আফগানিস্তানের সাথে ম্যাচ এক অর্থে এখন গুরুত্বহীন। সুপার ফোরের সূচিও ঠিক হয়ে গেছে, গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলে বাড়তি কোনো লাভ হচ্ছে না বাংলাদেশের। এই অবস্থায় মাশরাফি ম্যাচটি তরুণদের জন্য সুযোগ হিসেবেই দেখছেন। শ্রীলঙ্কার সাথে প্রথম ম্যাচে বলতে গেলে একাই লড়েছেন মুশফিক। শুধু মিঠুনই তাকে যা একটু সঙ্গ দিতে পেরেছেন। আফগানিস্তানের সাথে ম্যাচে লোয়ার অর্ডার থেকে আরেকটু বেশি সাহায্য চান মাশরাফি। ‘আমাদের লোয়ার অর্ডার সেট করতে চাচ্ছি। টপ অর্ডারে তামিম-সাকিব বিকল্প শুরু থেকেই এনেছি। বিকল্প কেউ খেললে এখান থেকেই খেলবে। আমি মনে করি, তামিমের মতো খেলোয়াড় চোট পাওয়া আমাদের জন্য ভালো কিছু না। তামিম খুব ভালো ফর্মে ছিল। ও উইকেটে থাকলে অনেক কিছু হয়, এটা আমাদের জন্য সুবিধা হতো। একই সময়ে তরুণদের এ ধরনের টুর্নামেন্টে নিজেদের মেলে ধরার দারুণ সুযোগ।’
তরুণদের অভয় দিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘তাদেরকে চাপমুক্ত থেকে নিজেদের খেলা খেলতে হবে। আমি ওদের নিয়ে আশাবাদী। ওদের কাছ থেকে তামিমের মতো কিছু চাইছি না। তবে পজিটিভ থাকলে, মানসিকতা ঠিক থাকলে অনেক কিছুই হতে পারে।’
প্রথম ম্যাচের পর পাঁচ দিনের বিরতি। আফগানিস্তানের সাথে সেই ম্যাচটিও এখন হয়ে পড়েছে নিয়মরার। কিন্তু পরদিনই আবার মাঠে নামতে হচ্ছে বাংলাদেশকে, সুপার ফোরে মুখোমুখি ভারতের। ২৩ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের সাথে খেলতে হবে আবুধাবিতে। আর ২৬ সেপ্টেম্বর নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলবে পাকিস্তানের সাথে। এমন ঠাসা সূচি নিয়ে চিন্তায় মাশরাফি। এ দিকে আজকের ম্যাচে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলেও সূচিতে কোনো পরিবর্তন আসবে না, সে েেত্র কোনো সুবিধা পাবে না বাংলাদেশ। ‘এটা একটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ, টুর্নামেন্টের দিকে তাকালে এই ম্যাচ কোনো হেলপ করবে না। এই ম্যাচের পর গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলো পর পর খেলতে হচ্ছে, সেখানেই সমস্যা।’
এবারের এশিয়া কাপ যেন শুরু থেকেই আভাস দিচ্ছিল ভিন্ন কিছুর। গত ম্যাচে পাঁচবারের এশিয়া কাপ বিজয়ী শ্রীলঙ্কাকে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়েছে আইসিসির নবীন সদস্য আফগানিস্তান। ৯১ রানে জয় পেয়ে নিজেদের এবং বাংলাদেশের সুপার ফোর নিশ্চিত করেছে তারা। একই ভেনুতে লাল-সবুজদের প্রতিপক্ষ তারা। আবুধাবির উইকেটের চরিত্র বোঝা দায়। মিডিয়াম পেসার থিসারা পেরেরা যেখানে একাই পাঁচ উইকেট নিয়েছেন, সেখানে শ্রীলঙ্কাকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন তিনজন আফগান স্পিনার মোহাম্মদ নবি, রশিদ খান ও মুজিব-উর-রহমান। তবে পেসবান্ধব উইকেট ছিল না। কারণ, লাসিথ মালিঙ্গা একটি মাত্র উইকেট পেয়েছেন। আর পাঁচ উইকেটের তিনটিই এসেছে আফগানিস্তানের ব্যাটিং ইনিংসের শেষ ওভারে। তাই উইকেটে শেষ বল পর্যন্ত খেলে আসা আফগানিস্তান নিজেদের ২৪৯ রান পর্যন্ত নিয়ে যেতে পেরেছে বলে তারা সফল। রহস্যময় এই উইকেটে আফগান স্পিনাররা আরো রহস্যময়। শ্রীলঙ্কা ১৫৮ রানে গুটিয়ে গেছে স্পিনারদের দাপটে।
তবে আফগান শিবিরে যদি থাকেন রশিদ খান, মোহাম্মদ নবি ও মুজিব তাহলে বাংলাদেশ শিবিরেও রয়েছেন সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ ও মাহমুদুল্লাহ। চোটের কারণে থাকছেন না তামিম ইকবাল। মুশফিকুর রহীমেরও পাঁজরের হাড়ে চোট। সাকিবের চোট সামান্য আঘাতেই গুরুতর হতে পারে। তাই লিটন দাস, মোহাম্মদ মিঠুনরা আফগান আক্রমণ সামলাতে পারবেন কি না, সে প্রশ্ন স্বাভাবিক। শ্রীলঙ্কার বিপে নিজেকে সব ধরনের বোলিং আক্রমণের বিপে প্রমাণ করেছেন মিঠুন। নিজের দিনে লিটন দাস দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়ার সামর্থ্য রাখেন। তামিমের পরিবর্তে দলে আসতে পারেন মুমিনুল হক। তিনিও ভালো স্পিন খেলেন। তাই স্পিনারদের সমীহ করে খেলতে হলেও খুব বেশি ভয় পাওয়ার কিছু নেই টাইগারদের।
আবুধাবির মাঠে গড় প্রথম ইনিংস রান ২৪৭ এবং দ্বিতীয় ইনিংস রান ২০৭। সেই হিসাবে, যারা প্রথমে ব্যাট করেছে, বেশির ভাগ সময় জিতেছে তারাই। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২৫০ রান বা তার বেশি তাড়া করে জেতার রেকর্ড মাত্র তিনটি।
এ দিকে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে পাঁচ বছরের মেয়াদে আফগান ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্ব নিয়েছিলেন আতিফ। তার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়ায় আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডেও চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আসছেন আজিজ উল্লাহ ফজল। তিনি একটা সময় এসিবির ভাইস চেয়ারম্যান এবং উপদেষ্টা ছিলেন। আতিফের অধীনে সবচেয়ে বড় সাফল্য ২০১৭ সালের জুনে টেস্ট মর্যাদা পাওয়া। চলতি বছরের জুনে ভারতের বিপে ব্যাঙ্গালুুরুতে নিজেদের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট খেলেছেন আফগানরা। ওয়ানডেতেও র‌্যাংকিংয়ের ১০ নম্বরে রয়েছে আফগানিস্তান। বোর্ডের কর্তা বদল হলেও মাঠে তারা চাইবে কোনো প্রভাব না পড়ে। যে কারণে সুপার ফোরে কোনো পরিবর্তন না হলেও এবং ম্যাচটি নিয়মরক্ষার হলেও আফগানরা চাইবেন জয়। বাংলাদেশও হার মানতে চাইবে না। প্রেস্টিজিয়াস ম্যাচটি তাই হতে পারে আকর্ষণীয়।


আরো সংবাদ



premium cement