১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বীরোচিত অভ্যর্থনায় সিক্ত ফ্রান্স ও ক্রোয়েটরা

প্যারিসের প্রেসিডেন্ট প্যালেসে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ফ্রান্সের গোলকিপার লোরিস বিশ্বকাপ হাতে। পাশে সতীর্থরা। (ডানে) লাখো জনতার ঢল ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলারদের উৎসব-আনন্দে বরণ করে নেয় : এএফপি -

লাখো ভক্তের বীরোচিত অভ্যর্থনায় সিক্ত বিশ্বকাপ জয়ী ফ্রান্সের ফুটবলারেরা। দ্বিতল বাসের খোলা ছাদে ট্রফি হাতে উচ্ছ্বসিত খেলোয়াড়দের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় বরণ করে নিলেন অসংখ্য ফরাসিরা। সোমবার বিকেলের প্যারিস কার্যত পরিণত রাশান বিশ্বকাপ জয়ী টিম ফ্রান্সের ফুটবলারদের বীরোচিত সংবর্ধনা প্রদানের কেন্দ্রবিন্দুতে। বিমানবন্দর থেকে নিয়ে সিটি সেন্টার পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে ঢল নামে ফরাসিদের। রোববার ফাইনালে ক্রোয়েটদের বিপক্ষে ৪-২ ফ্রান্সের গোলের জয়ের পর থেকেই প্যারিস রূপ নেয় উৎসবের নগরীতে। সারা রাতই উন্মাদনায় মেতে ছিলেন ভক্তরা। এর পরও তাদের ক্লান্তি গ্রাস করতে পারেনি! অসংখ্য জনতার উপস্থিতিতেই বিশ্বকাপের শিরোপা প্যারেড সম্পন্ন করেছে ফ্রান্স।
সোমবার সকালে রাশিয়াকে গুডবাই জানিয়ে ফ্রান্সের উদ্দেশে রওনা হন বিশ্বকাপ জয়ী ফুটবলারেরা।
স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় তাদের প্যারিস এয়ারপোর্টে অবতরণের মধ্য দিয়েই সূচনা ফরাসিদের ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ জয়ের প্যারেড। এয়ার ফ্রান্সের বিশেষ বিমানের উন্মোচিত দরজায় ট্রফি হাতে হুগো লরিসের হাস্যোজ্জ্বল উপস্থিতি উন্মাদনার ঢেউ বইয়ে দেয় ফ্রান্সের ক্রীড়ামন্ত্রীসহ অপেক্ষারত দর্শনার্থীদের মাঝে। রানওয়েতে বিছানো লাল গালিচায় পা ফেলে এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে খোলা ছাদের দ্বিতল বাসে চড়েন ফ্রান্সের ফুটবলারেরা। এ সময় তাদের মাথার ওপর আকস্মিকভাবে আবির্ভাব ফরাসি এয়ারফোর্সের ৯টি ফাইটার জেটের। বিশ্বকাপ জয়ী ফুটবলার ও কোচের উদ্দেশ্যে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় অনার প্রদানে বিশেষ স্যালুট প্রদান করেন। দেশটির প্রেসিডেন্টের ঘোষণা অনুযায়ী এ সম্মাননা দেয় হয় ফুটবলারদের। এ সময় রাস্তার দুই ধারে অপেক্ষারত অসংখ্য ভক্তের মাথার ওপর ফরাসি জাতীয় পতাকার তিন ধরনের রঙের উপস্থিতি অভূতপূর্ব এক দৃশ্যের অবতারণায় উদ্ভাসিত প্যারিসের কেন্দ্রস্থল সিটি সেন্টার।
প্যারিসের চার্লস এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে প্রাথমিক আনুষ্ঠানিকতা শেষে খোলা ছাদের বাস থেকে নেমে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাকরনের সাথে বিশেষ সাক্ষাতে মিলিত হন বিশ্বকাপ জয়ী ফুটবলাররা। এ সময় প্রেসিডেন্টের স্ত্রী ব্রিজিটিও ছিলেন। প্রথানুযায়ী জাতীয় সঙ্গীতের সাথে উপস্থিত প্রত্যেকেই প্রেসিডেন্ট প্যালেসের নির্দিষ্ট স্থান প্রদক্ষিণ করেন। এ সময় ম্যাকরন ফ্রান্সের ফুটবলারদের ধন্যবাদ জানান। আরো বলেন, ‘কখনো ভুলে যেও না প্রত্যেক্যের উৎসস্থল। ফ্রান্সের যেসব ক্লাব সবাইকে লালন করেছে।’
প্রেসিডেন্ট প্যালেসের আনুষ্ঠানিকতা শেষে দ্বিতীয়বারের মতো খোলা ছাদের দ্বিতল বাসে চড়ে সিটি সেন্টারে অপেক্ষারত লাখো দর্শকের শিরোপা প্যারেডে যোগ দেন ফুটবলারেরা। ট্রফি হাতে নেচেগেয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেন ভক্তদের উন্মাদনার সাথে। শিরোপা প্যারেডে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বয়স কোনো বাধা হতে পারেনি ফরাসিদের। পুরুষ-মহিলাদের পাশাপাশি বৃদ্ধ ও কিশোরের উপস্থিতিও চোখে পড়েছে। ১৪ বছর বয়সী ফাতিমা সিটি সেন্টারে উপস্থিত হন তার পাঁচ বছর বয়সী ভাইকে নিয়ে। ফাতিমা বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের ফুটবলারদের দেখতে। কারণ তাদের কৃতিত্বে আমরা গর্বিত।’
এদিকে স্বপ্নের ফাইনালে হার সত্ত্বেও স্বদেশে নায়কোচিত সংবর্ধনা পেলেন ক্রোয়েট ফুটবলাররা। হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় তাদের বরণ করে নিতে জারগেবের রাস্তার দুই ধারে উপস্থিতি হন মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাশং ক্রোয়েশিয়ান।
গত সোমবার প্রায় লাখ ক্রোয়েট জনতা ঘর ছেড়ে রাজধানীর রাস্তায় নেমে আসেন রাশান বিশ্বকাপে বাজিমাত করা ফুটবলারদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন স্মরণীয় করে রাখতে। শিরোপা লড়াইয়ে হারের পরও ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলাররা চ্যাম্পিয়ন অর্ভ্যথনায় সিক্ত হয়েছেন সাধারণ জনতার কাছ থেকে। স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে তারা বীরোচিত সংবর্ধনা দেন লুকা মডরিচ অ্যান্ড কোংকে।
গত রোববার ফিফার ২১তম বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সের তারকাসমৃদ্ধ দলের বিপক্ষে মোটেও সুবিধা করতে পারেনি জøাটকো ডালিচের ক্রোয়েশিয়া। বলকান অঞ্চলের দলটিকে ৪-২ গোলে উড়িয়ে ইতিহাসের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়োৎসবে লেস ব্লুস খ্যাত ফ্রান্স। ফাইনালে হারলেও রাশান টুর্নামেন্টে ক্রোয়েটদের চমক জাগানিয়া নৈপুণ্য পেরিয়ে গেছে প্রত্যাশার গণ্ডি। ২০১৮ সালের আসর শুরুর আগে কারো কল্পনাতেও আসেনি ক্রোয়েটদের ফাইনালের অংশগ্রহণ। গ্রুপ-পর্বে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয় ক্রোয়েট ইতিহাসের যুক্ত হয়েছে স্মরণীয় সাফল্য হিসেবে।
ডার্কহর্স হিসেবে রাশান মেগা আসরে বাজিমাত করার যোগ্য সম্মাননা দেশে পা রেখেই বুঝে পেলেন ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলাররা। ফাইনালে হারের পরও চ্যাম্পিয়ন মর্যাদায় তাদের বরণ করল পাঁচ লাখের বেশি জনগণ। সোমবার জাগরেব এয়ারপোর্ট থেকে নিয়ে রাজধানীর কেন্দ্রস্থল পর্যন্ত ঢল নামে সাধারণ ক্রোয়েট জনগণের। সাড়ে চার মিলিয়ন জনসংখ্যার ১০ ভাগের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায় রাস্তার দুই ধার। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে দ্বিতল বাসে করে ভক্তদের মাঝ দিয়ে জাবরেবের কেন্দ্রস্থলে উপস্থিত হন ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলাররা। তাদের দ্বিতল বাসের ভ্রমণ অন্যরকম আবেগময় হয়ে উঠে প্রত্যাশাকে হার মানানো জনতার উপস্থিতিতে। ভক্তদের আভিবাদনের জবাব দেয়ার পাশাপাশি সেলফির আবদারও পূর্ণ করেন ফুটবলাররা। রাস্তায় দীর্ঘ সময় ব্যয় করেন উপচেপড়া জনতার উপস্থিতির কারণে। সাধারণত ১৫ মিনিটের রাস্তা দ্বিতল বাসে চড়ে পাড়ি দিতে প্রায় চার ঘণ্টা প্রয়োজন পড়েছে ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলারদের।

 


আরো সংবাদ



premium cement