২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রথম ম্যাচ জয়ী জাপান ও সেনেগাল মুখোমুখি

-

এশিয়ার জাপান ও আফ্রিকার সেনেগাল নিজেদের গ্রুপ এইচ থেকে দ্বিতীয় পর্বে যাওয়ার লড়াইয়ে ফুটবল বিশেষজ্ঞদের মতে পিছিয়ে ছিল মানে তাদের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয়ার সম্ভাবনা দেখছিলেন ফুটবল পণ্ডিতেরা। কিন্তু নিজেদের প্রথম ম্যাচে এই দুই দেশ গ্রুপ এইচ ফেবারিট কলম্বিয়া ও পোল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ী হয়ে সবাইকে অবাক করে দেয় এবং দু’টি দেশ নিজেদের প্রথম ম্যাচে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে একই ব্যবধান ২-১ গোলে জয়ী হয়। রোববার নিজেদের ম্যাচে জয়ী হয়ে এই দু’টি দেশের একটি নকআউট পর্বের খুব কাছে চলে যেতে পারে। জয় বা পরাজয় অথবা যেকোনো ফলাফলই হোক না কেন গ্রুপ এইচ থেকে জাপান ও সেনেগাল নিজেদের শেষ ম্যাচ পর্যন্ত থাকছে রাশিয়া বিশ্বকাপে। কারণ নিজেদের শেষ ম্যাচেই এ দুই দেশের ভাগ্য নির্ধারিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রাশিয়া বিশ্বকাপে প্রতিটি গ্রুপ থেকেই কোন দুই দল দ্বিতীয় পর্বে যেতে তার একটা অনুমান করা যায় কিন্তু গ্রুপ বা সবচেয়ে শেষের গ্রুপ যেন এখনো খোলা বইয়ের মতো এখান থেকে চারটি দেশের যেকোনো দু’টি দ্বিতীয় পর্বে স্থান করে নিতে পারে। গ্রুপ এইচের ফেবারিট কলম্বিয়া ও পোল্যান্ডের বিপক্ষে জাপান ও সেনেগালের জয় এই গ্রুপকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। বিশেষ করে কলম্বিয়ার বিপক্ষে জাপানের ২-১ গোলের জয় ছিল আশ্চর্যজনক। যদিও ব্লু সামুরাইরা পুরো ম্যাচে প্রাধান্য বিস্তার করে খেলেছেন এবং কলম্বিয়ার বিপক্ষে তাদের জয়টিকে দাপুটে জয়ই বলা চলে। দক্ষিণ আমেরিকার কলম্বিয়া এর জন্য নিজেদেরও কিছুটা দায়ী করতে পারে। খেলা শুরু হওয়ার মাত্র ৩ মিনিটের মাত্রায় কলম্বিয়ার কার্লোস সানচেজ ইচ্ছাকৃত হাত দিয়ে বল ধরে নিজের দলের বিপক্ষে পেনাল্টি দিয়েছেন এবং লাল কার্ড পেয়ে পুরোটা খেলাতেই কলম্বিয়াকে ১০ জনের দলে পরিণত করেছিলেন। জাপানের অভিজ্ঞ ফুটবলার শিনজি কাগাওয়া স্পট কিক থেকে গোল করতে ভুল করেননি। যদিও হোসে প্যাকারম্যানের কলম্বিয়ার কার্লোস কুইন্টেরো একটি ফ্রি কিক থেকে অসাধারণ দক্ষতা ও চতুরতার সাথে সমতা নিয়ে এসেছিলেন কিন্তু ৭৩ মিনিটে হেড থেকে জয়সূচক গোলটি করে রাশিয়া বিশ্বকাপে জাপানের প্রথম ম্যাচেই অবিস্মরণীয় জয় এনে দিয়েছে ওসাকো। জাপান প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে কোনো দক্ষিণ আমেরিকান দেশের বিপক্ষে জয়ী হলো এ জয়ের মাধ্যমে এবং ইউরোপের মাটিতে এ জাপানের প্রথম জয়। যেখানে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফ্রিকার দেশগুলোতে হতাশজনক খেলা উপহার দিয়েছে সেখানে গ্রুপ এইচ থেকে পোল্যান্ডের বিপক্ষে ২-১ গোলের জয় দিয়ে সেনেগাল এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। রবার্ট লেভানডস্কির পোল্যান্ডের বিপক্ষে সেনেগালকে সবাই দ্বিতীয় সেরা হিসেবে ভেবেছিল, কিন্তু লিভারপুলের সাদিও মানের সেনেগাল পোলিশদেরকে পরাজিত করে গ্রুপ এইচকে যেমন উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, তেমনি ফুটবল বিশ্বকে অবাক করেও দিয়েছেন। এ জয়কে তুলনা করা হচ্ছে তাদের প্রথম বিশ্বকাপ ২০০২ সালে ফ্রান্সের বিপক্ষে পাপা বোবা দিয়ুফের একমাত্র গোলের জয়টির সাথে। যদিও পোলিশদের বিপক্ষে লায়ন্স অব তেরাঙ্গাদের দ্বিতীয় গোলটি নিয়ে বিতর্ক আছে কিন্তু লেভানডস্কির দলের বিপক্ষে প্রাধান্য বিস্তার করেই তারা যোগ্য দল হিসেবে জয়ী হয়েছে। ২০০২ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে তৎকালীন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে হারিয়ে দিয়ে সেনেগাল দ্বিতীয় পর্বে যাওয়ার লড়াইয়ে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিল এবং দ্বিতীয় পর্বে জায়গা করে নিয়েছিল। এবারো প্রথম ম্যাচে পোলিশদের বিপক্ষের জয়টি তাদেরকে দ্বিতীয় পর্বে যাওয়ার লড়াইয়ে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে। জাপান ও সেনেগালের মধ্যে যে দল জয়ী হবে, গ্রুপ এইচ থেকে তারা দ্বিতীয় পর্বে যাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে যাবে এবং পরাজিত দলকে নিজেদের শেষ পোল্যান্ড বা কলম্বিয়ার মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতে হবে। কলম্বিয়ার বিপক্ষে জাপানের বুন্দেসলিগায় এফসি কোলনের হয়ে খেলা ফুটবলার ইয়োইয়া ওসাকো বেশ চমৎকার খেলেছেন এবং নিজের প্রতিভার আলো ছড়িয়েছেন। তার এ অসাধারণ পারফরম্যান্স দ্বিতীয় ম্যাচে কোচ আকিরা নিশহিনোকে শিনজি ওকাজাকিকে একাদশের বাইরে রাখতেই বাধ্য করবে। এ ছাড়া কোচ আকিরা নিশহিনো দলের প্রথম একাদশে বড় কোনো পরিবর্তন আনবেন না, কারণ এ দলই কলম্বিয়ার বিপক্ষে বেশ ভালো খেলে জয় পেয়েছে। নিশহিনো সেনেগালের বিপক্ষে ৪-২-৩-১ ফরমেশনেই দলকে খেলাবেন। আলিয়ু সিসে তার দলকে ৪-৪-২ ফরমেশনেই খেলাতে পছন্দ করেন কিন্তু নিজেদের চেয়ে দুর্বল জাপানের বিপক্ষেও সিসেও তার দলকে প্রতিপক্ষের মতোই ৪-২-৩-১ পদ্ধতিতে খেলাতে পারেন। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে স্টোক সিটির হয়ে খেলা মামে বিরাম তেমন একটা ভালো করতে পারেননি কলম্বিয়ার বিপক্ষে; তাই তার পরিবর্তে দিফরা শেখু, কেইতা বলতে, মোসা শ এবং কন্টে অপেক্ষা করছে কোচ আলিয়ু সিসে তাদের যেকোনো একজনকে খেলাতে পারেন। ১৯ বছর বয়সী মোসা উগুইকে খেলানো সেনেগালের কোচের একটা চমক ছিল। তাকে খেলিয়ে লেমিনে গাসামাকে জাপানের বিপক্ষে সাইড বেঞ্চে বসিয়ে রাখবে খুব একটা অবাক হওয়ার কিছু হবে না। সিসে তার পরিচিত ফরমেশন ৪-৪-২ তেই দলকে খেলাবেন। এই দু’টি দেশ শুধু একবার নিজেদের মুখোমুখি হয়েছিল ২০০৩ সালে এবং সেই ম্যাচে জাপান ১-০ গোলে জয়লাভ করেছিল। সেনেগালের প্রধান তারকা লিভারপুলের আক্রমণভাগের খেলোয়াড় সাদিও মানে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে গত মওসুমে সে বেশ ভালো করেছে ফিরমিনো, সালাহর সাথে জুটি হয়ে। সেনেগালের রক্ষণভাগকে খুব একটা মজবুত ও শক্তিশালী বলা চলে না তাই একতারিনবার্গে জাপানের বিপক্ষে আফ্রিকার সেনেগালের একটি দারুণ লড়াই হবে।


আরো সংবাদ



premium cement