১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আর্জেন্টিনাকে হারানোর এটাই শাস্তি?

-

জার্মানির বিপক্ষে মেক্সিকোর জয়ের সাথে সাথে কেঁদেই ফেললেন আর্জেন্টিনার এক মহিলা সাংবাদিক। তার এই কান্না আনন্দ মিশ্রিত। সাথে নিজে না পারলেও অন্যকে দিয়ে প্রতিশোধ নেয়ার শামিল। অনেকটা নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করার মতো। নিজেদের সামর্থ্য নেই কিন্তু অন্য জন তো পেরেছে। মনে হয় এই বলে সান্ত্বনা। অ্যাঞ্জেলিনা নামের এই সাংবাদিকের মতে, ‘এটা আমাদের গত বিশ্বকাপের ফাইনালে হারের বদলা।’ এই জার্মানির বিরুদ্ধে আর্জেন্টিাইনদের ক্ষোভের শেষ নেই। ১৯৮৬ সালে পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতলেও পরে চারবার এই ইউরোপিয়ান দেশের কারণে তাদের শিরোপা জেতা হয়নি। এর মধ্যে দুইবার ফাইনালে হেরে স্বপ্নভঙ্গ। তা ১৯৯০ সালে এবং ২০১৪ সাল। বিশ্বকাপ ফুটবলে চমৎকার একটা কাকতালীয় বিষয় আছে এই ল্যাতিন দেশটির ক্ষেত্রে। তা ১৯৮২ সাল থেকে। যে দেশই আর্জেন্টিনাকে বিদায় করেছে পরের ম্যাচেই তার বিদায়। এবার কি তাহলে জার্মানির পালা।
গত বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির কাছে ১-০তে হেরেছিল মেসি- সাবেলার দল। সেই জার্মানি এবার প্রথম ম্যাচেই কিভাবে নাস্তানাবুদ হলো মেক্সিকোর কাছে। চার বছরের ব্যবধানে ঠিক বিশ্বকাপের পরের ম্যাচেই হার জার্মানির। হেরে এখন গত আসরের শিরোপা জয়ীদের বাদ পড়ার শঙ্কা।
১৯৮২ সালের স্পেন বিশ্বকাপে এভাবেই ম্যারাডোনার দলকে বিদায় করে পরের ম্যাচে করুণ পরিণতি বরণ করতে হয়েছিল ব্রাজিলকে। দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ৩-১-এ জয় ব্রাজিলের। কিন্তু পরের ম্যাচেই সেমিতে ইতালির কাছে ৩-২ গোলে হেরে বিশ্বকাপ পর্ব শেষ অপর ল্যাতিন দেশটির।
টানা তিন বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা জার্র্মানি ১৯৯০ সালে শিরোপার দেখা পায় অর্জেন্টিনাকে হারিয়ে। এই ‘অপরাধে’ তাদের আর পরের দুই আসরে ফাইনাল খেলা হয়নি। ১৯৯৪ সালে বিদায় কোয়ার্টার ফাইনালে বুলগেরিয়ার কাছে ২-১ গোলে হেরে। ১৯৯৮ সালে তাদের বিদায় শেষ আটে। সেবার তাদের ৩-০তে বিধ্বস্ত করে ক্রোয়েশিয়া। ২০০২ সালে ফাইনাল খেললেও ব্রাজিলের কাছে জার্মানদের হার ২-০তে। গত বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জয় পাওয়া জার্মানরা এবার ঠিক পরের ম্যাচেই হারের কবলে। এটা কি চার বছর আগে পাওয়া জয়েরই ‘শাস্তি’?
১৯৯৪ সালে রুমানিয়া কোয়ার্টার ফাইনালে ৩-২-এ হারিয়েছিল বাতিস্তুতা-ক্যানিজিয়ার দলকে। লক্ষণীয় বিষয় পরের খেলাতেই রুমানিয়ানদের বিদায় সুইডেনের কাছে ৫-৪-এ টাইব্রেকারে। নির্ধারিত সময়ের খেলা ২-২-এ শেষ হয়েছিল। ১৯৯৮-এ একই পরিণতি নেদারল্যান্ডেসের। কোয়ার্টারে তাদের জয় ২-১-এ। এরপর তাদের সেমিতে ব্রাজিলের কাছে ধরাশায়ী হওয়া টাইব্রেকারে ৪-২-এ। ১-১-এ শেষ হয় ১২০ মিনিটের খেলা। ২০০২ সালে বাতিস্তুতা, ওর্তেগা ও হারনান ক্রেসপোদের প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় করে সুইডেন। জয়ের বদলে সে ম্যাচে ১-১-এ ড্র করেছিল কোচ মার্সেলো বিয়েলসার আর্জেন্টিনা। মজার ব্যাপার হলোÑ পরের খেলাতেই অর্থাৎ দ্বিতীয় রাউন্ডেই সুইডেনকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় সেনেগাল। ২-১-এ ম্যাচ জয় আফ্রিকানদের।
২০০৬ ও ২০১০-এ আর্জেন্টিনার কোয়ার্টার ফাইনালে হার জার্মানির কাছে। প্রথমবার ১-১-এ ১২০ মিনিট শেষ হওয়ার পর টাইব্রেকারে ৪-২-এ। পরেরবার কোচ ম্যারাডোনার দল ৪-০তে উড়ে যায়। দুইবারেই জার্মানির বিদায় হয়েছিল পরের খেলায় মানে সেমিতে হেরে। ২০০৬ সালে ইতালির কাছে ২-০তে কাবু হয় এবং ২০১০-এ স্পেনের কাছে ১-০তে মাথা নত করে মাঠ ছাড়ে। এবার কি জার্মানরা সেই বৃত্তেই আছে? নাকি এই কাকতালীয় বিষয়টি দূর করতে পারবে?
১৯৯০ সালে আগেরবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে ১-০তে হারিয়ে কী চমকই না দেখিয়েছিল ক্যামেরুন। ম্যারাডোনার দলের অবশ্য শেষ পর্যন্ত ফাইনাল পর্যন্ত যাওয়া হয়েছিল। আর ক্যামেরুন পৌঁছেছিল কোয়ার্টার পর্যন্ত। সেই ক্যামেরুন এরপর আর নক আউট পর্বে যেতে পারেনি বিশ্বকাপে। গ্রুপ পর্বেই ইতি। এবার তো রাশিয়ার টিকিটই পায়নি এই আফ্রিকানরা।

 


আরো সংবাদ



premium cement