২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

মিসর বনাম উরুগুয়ে : দৃষ্টি থাকবে সালাহ সুয়ারেজ ও কাভানির ওপর

-

মিসর তাদের বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে তৃতীয়বারের মতো অভিযান শুরু করবে দক্ষিণ আমেরিকার উরুগুয়ের বিপক্ষে। যারা দুবার বিশ্বকাপ ফুটবলের শিরোপা ঘরে তুলেছে এবং বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম আসরটির স্বাগতিক দেশের নামও ছিল উরুগুয়ে ১৯৩০ সালে যা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দুটি দেশই তাদের রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটি ভালোভাবে শুরু করতে চাইবে, যাতে স্বাগতিক রাশিয়াকে পেছনে ফেলে তারা দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে পারে এবং তুলনামূলকভাবে সহজ প্রতিপক্ষের সাথে ম্যাচের আশা নিয়েও তারা এই ম্যাচে মুখোমুখি হবে। এসব হিসাব-নিকাশের বাইরে এই দুটি দেশের খেলায় দৃষ্টি থাকবে ভক্ত-সমর্থক ও ফুটবলপ্রেমীদের দুই দেশের তিন বড় তারকা সুয়ারেজ, কাভানি এবং বিশেষ করে মিসরের মোহাম্মদ সালাহর ওপর। মিসরের এই তারকা ইনজুরি কাটিয়ে প্রথম ম্যাচই খেলতে পারবে কি না এটিই থাকবে সব মিসরীয় ফুটবলপ্রেমীর জিজ্ঞাসা। হেক্টর কুপারের মিসর সাতবার আফ্রিকান নেশন্স কাপ জয় করলেও বিশ্বকাপ ফুটবলের বেলায় তাদেরকে নবীনদের কাতারেই ফেলা যায়। এই অনভিজ্ঞতাই উরুগুয়ের বিপক্ষে একটি নিয়ামক শক্তি হয়ে দেখা দিতে পারে। ফারাওরা গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ খ্যাত বিশ্বকাপ ফুটবলে ১৯৯০ সালের পর আবার অংশ নিতে যাচ্ছে। আবারো বলতে হচ্ছে ফারাওদেরকে তাদের সেরা তারকা মোহাম্মদ সালাহকে ছাড়াই প্রথম একাদশ মাঠে নামাতে হতে পারে। ফারাওদেরকে রাশিয়া বিশ্বকাপে নিয়ে আসার পেছনে মূল ভূমিকায় ছিলেন মোহাম্মদ সালাহ। লিভারপুলের এই ট্যালিসম্যাটিক খেলোয়াড় ও গোলমেশিন বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে কঙ্গোর বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে শেষ মুহূর্তে গোল করেই মিসরকে রাশিয়া বিশ্বকাপে নিয়ে আসেন। তা ছাড়া বাছাই পর্বে তার পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে পাওয়া কাঁধের ইনজুরি তাকে ভোগাচ্ছে এবং এই ম্যাচে তাকে দেখা না গেলে মিসরীয়দের জন্য সেটা বড় দুঃসংবাদই বয়ে আনবে। মোহাম্মদ সালাহর এই মওসুমে অতিমানবীয় পারফরম্যান্সই মিসরকে বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব থেকে রাশিয়া বিশ্বকাপে নিয়ে এসেছে উগান্ডা, ঘানা এবং কঙ্গোকে পেছনে ফেলে যাদের বিপক্ষে প্রাথমিকপর্যায়ে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে তাদের পারফরম্যান্স খুব একটা ভালো ছিল না। তাকে ছাড়াও ফারাওরা তাদের সাম্প্রতিক ফর্ম খুব একটা ভালো দেখাতে পারছে না। নিজেদের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হওয়ার পূর্বে তারা প্রীতি ম্যাচে পরপর ছয়টি ম্যাচে জয় বঞ্চিত আছে। অবশ্য পর্তুগালের বিপক্ষে ২-১ গোলের পরাজয়ে এবং কলম্বিয়ার বিপক্ষে গোলশূন্য ড্রর ম্যাচটিতে তাদের পারফরম্যান্স খুব একটা খারাপ ছিল না। কুপার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই মিসরের রক্ষণভাগ বেশ ভালো হয়ে উঠেছে এবং ২০১৫ সালে তার দায়িত্ব নেয়ার পর মিসর একটি ম্যাচে মাত্র একাধিক গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে। তাদের চিন্তা এখন মাঠের অন্য প্রান্ত নিয়ে। মানে আক্রমণভাগ। সালাহ ইনজুরি আক্রান্ত হওয়ার পর তারা মাত্র একটি গোল করতে পেরেছে চারটি ম্যাচ থেকে। কুয়েতের বিপক্ষেও তারা ১-১ গোলে ড্র করে নিজেদের হতশ্রী চেহারাটাই প্রকাশ করেছে। নিজেদের সর্বশেষ ছয় ম্যাচের তিনটিতে তারা ড্র করেছে এবং তিনটিতে পরাজিত হয়েছে। উরুগুয়ের বিপক্ষে সালাহ খেলতে পারবে কি না এটাই সবচেয়ে বড় নিউজ। উরুগুয়ের বিপক্ষে তার খেলাটি হয়তো একটু ঝুঁকিপূর্ণই হয়ে যাবে। তাই তাকে বিশ্রাম দেয়া হতে পারে। যদি সে প্রথম একাদশে নাই থাকে তাহলে কুপার হার্ডসফিল্ড টাউনে নতুন চুক্তিভুক্ত আক্রমণভাগের খেলোয়াড় রামাদান সোবিহকে প্রথম একাদশে রাখতে পারেন। তার সাথে সৃষ্টিশীল প্লেমেকার আব্দুল্লাহ এল-সাইদ থাকবে। মোহাম্মদ এলনেনি ফারাওদের মাঝমাঠে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আর্সেনালের এই ফুটবলারের ওপর বেশ ভরসা হেক্টর কুপারের। তার সাথে থাকবে তারেক হামেদ। কুপার দলকে ৪-২-৩-১ ফরম্যাশনে খেলাবেন। দুইবারের বিশ্বকাপ জয়ী হিসেবে গ্রুপ ‘এ’-এর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশটির নাম উরুগুয়ে। যদিও এটা বলতে হয় যে, তারা সর্বশেষ শিরোপাটি জয় করেছিল ১৯৫০ সালে। বর্তমান ফুটবলের চালচিত্রের হিসেবে সেটা খুবই পুরনো মনে হতেই পারে। সাম্প্রতিক বিশ্বকাপে তাদের সেরা পারফরম্যান্স ছিল ২০১০ সালে চতুর্থ স্থান লাভ করা। সেই বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে তারা নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৩-২ গোলে পরাজিত হয়েছিল এবং তৃতীয় স্থান নির্ধারণী খেলায়ও একই ব্যবধানে জার্মানির কাছে পরাজিত হয়েছিল। বার্সেলোনার তারকা ল্ইুস সুয়ারেজ এবং পিএসজির এডিসন কাভানির জন্যই তাদেরকে গ্রুপ ‘এ’ থেকে ফেভারিট মনে করা হচ্ছে। এই দুই তারকা মিলে গত মওসুমে ক্লাবপর্যায়ে ৭১টি গোল করেছেন ৯৯ ম্যাচ থেকে। জাতীয় দলের হয়ে সুয়ারেজ ৯৮ ম্যাচ থেকে ৫১ গোল করেছেন এবং রাশিয়া বিশ্বকাপে যদি আরো তিনটি গোল করতে পারলে সুয়ারেজ হবে দেশের সর্বোচ্চ গোলদাতা। তাদের সর্বশেষ ছয়টি ম্যাচে লা সেলেস্তেরা মাত্র একটি ম্যাচে পরাজিত হয়েছে এবং তিনটি ম্যাচে কোনো গোল খায়নি। অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে অস্কার তাবারেজের উরুগুয়ে ২-১ গোলে পরাজিত হলেও সর্বশেষ প্রস্তুতি ম্যাচে উজবেকিস্তানকে ৩-০ গোলে পরাজিত করে নিজেদের ভালো ফর্মের ইঙ্গিত দিচ্ছে। উরুগুয়ের আরো একটি কারণে মিসরের বিপক্ষে ভালো খেলার কারণ আছে কারণ তারা কখনো ফারাওদের বিপক্ষে পরাজিত হয়নি। নিজেদের সর্বশেষ ছয় ম্যাচে উরুগুয়ে তিন জয়, দুই ড্র এবং একটি ম্যাচে পরাজিত হয়েছে। উরুগুয়ের প্রথম একাদশে খুব একটা পরিবর্তন হবে না। সর্বশেষ যে ম্যাচে তারা উজবেকিস্তানকে পরাজিত করেছিল সেই ম্যাচের একাদশকেই নামাতে পারেন অস্কার তাবারেজ। নাথিয়ান নেনডেজের পরিবর্তে হয়তো ক্রিশ্চিয়ান রড্রিগেজকে দেখা যেতে পারে। তাবারেজের সামনে সুযোগ রয়েছে অভিজ্ঞ মার্টিন ক্যাসারেসকে একাদশে রাখার গাস্টন সিলভার পরিবর্তে। আক্রমণভাগের দায়িত্বে থাকবে এডিসন কাভানি এবং তার কিছুটা পেছনে বার্সেলোনার তারকা লুইস সুয়ারেজ। অস্কার তাবারেজও দলকে ৪-২-৩-১ ফরম্যাশনে খেলাবেন।


আরো সংবাদ



premium cement