২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ছেঁড়া কম্বল

-

শীতের আগমনী বার্তাটা খুব খারাপ হয় রহিমা বেগমের জন্য। বিশেষ করে রাতগুলো ভীষণ যন্ত্রণার হয় তার কাছে। বিছানার নিচে অনেক শুকনো খড়কুটো দিয়ে রাখেন উষ্ণতা পাওয়ার জন্য। কিন্তু এবার যে হারে শীত চেপে ধরেছে তাতে আর রক্ষে হবে কি না সন্দেহ আছে! কোনো মতে কুঁজো হয়ে শীতের রাত পার করে দেন তিনি। সন্ধ্যা বেলায় অবশ্য ভালোই কাটে রহিমা বেগমের। কারণ জ্বলন্ত উনুনে কয়লার সামনে অনেক্ষণ বসে থাকেন। শীত নিবারণের চেষ্টা করেন। রহিমা বেগম বয়স প্রায় ষাট পেরিয়েছে। দু’বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন তিনি। দুই ছেলে এক মেয়ে। ছেলে দুটো শহরে থাকে। মেয়ে নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। কারোই সময় হয় না তাদের মায়ের খোঁজ নেয়ার। রহিমা বেগম নিজের জন্য চড়ুইভাতির মতো অল্পস্বল্প রান্না করেন। তা দিয়েই কোনোমতে দিন চলে যায়।
রাত কাটিয়ে পরদিন সকালে রহিমা বেগম একটা সিদ্ধান্ত নেন। পাশের ঘরের রমজানের মোবাইল থেকে ছেলেমেয়েদের কাছে ফোন করবেন। ছেলেদের কাছে জানতে চাইবেন এ মাসে তারা আসবে কি না? এলে একটি কম্বল চাইবেন। মোবাইলের মালিক রমজান অবশ্যই একটু গোঁ গোঁ করবে। কিন্তু রহিমা বেগম যেই হাতে বিশ টাকার নোট গুঁজে দেবেন অমনি সে দাঁত কেলিয়ে বলবে, ‘চাচী আপনার যতক্ষণ মন চায় ততক্ষণ কথা বলেন’।
বছরে কত দিবস আসে! আর সেই দিবসে ছুটিও মেলে। এসব ছুটিতে ছেলেরা তাদের বউ আর নাতি-পুতি নিয়ে আগে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসত। দু’বছর ধরে তাও আসে না। এসব দিনগুলোতে রহিমা বেগমের নাতি-পুতিরা গ্রামে এসে আনন্দ করত। এমন সুখের দৃশ্যগুলোই তার মনের ভেতর ঘোরপাক খায়! ছেলেরা রহিমা বেগমের খোঁজখবর না নিলেও দায়িত্ব পালনের ছুতোয় মাসে মাসে কিছু টাকা পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু এ টাকায় রহিমা বেগমের সুখ আসে না। বেঁচে থাকার জন্য খাওয়ার প্রয়োজন না থাকলে এ টাকার প্রয়োজনও রহিমা বেগমের ছিল না।
নিজের সংসার খরচ বাদ দিয়ে রহিমা বেগম কিছু টাকা জমিয়েছেন। কথাটা মনে হতেই তিনি সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলেন। খুব দৃঢ়তার সাথে স্থির ভাবনায় আসেন। না তিনি ছেলেদের কাছে কম্বল চাইবেন না। নিজের জমানো টাকায় একটি কম্বল কিনে নিবেন। এতে করে অন্তত শীতের কষ্টটা লাঘব হবে। নিজের মনের কথা তিনি পাশের প্রতিবেশী জুলেখা বেগমকে জানালেন। জুলেখা বেগম মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহিণী। রহিমা বেগমের মতো এতটা হতদরিদ্র আর নিঃস্ব নন। জুলেখা বেগম রহিমা বেগমের মনের আকুতি শুনলেন। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘আমার ছেলেরা আমাকে এই শীতে একটা নতুন কম্বল কিনে দিয়েছে, ‘আমার পুরানো কম্বলটা তোমায় দিতে পারি!’ বলেই ঘর থেকে কম্বল খানা এনে রহিমা বেগমের হাতে দিলেন। এটাও জানালেন এ জন্য কোনো টাকা দেয়া লাগবে না।
কম্বল খানা হাতে পেয়ে রহিমা বেগমের দুচোখ ছল ছল করে উঠল। রাতে কম্বল গায়ে দিতে গিয়ে রহিমা বেগম খেয়াল করলেন কম্বলের একটা পাশের কিছুটা অংশ ছেঁড়া। ভাবলেন ক্ষতি কী ! ছেঁড়া হলেও এই হিম শীতল রাতে গর্ভজাত সন্তানের চেয়ে এই কম্বলকেই রহিমা বেগমের খুব আপন মনে হলো। আর এই ছেঁড়া কম্বল জড়িয়েই পরম সুখে নিদ্রা যেতে চেষ্টা করবেন তিনি।
প্রিয়জন -১৬২৪


আরো সংবাদ



premium cement